নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার: জনসমর্থনের উত্থান-পতন

০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৬


গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ইতিহাসে বাংলাদেশের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান একটি অনন্য অধ্যায়। দেশের তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন ব্যাপক গণআন্দোলনে রূপ নেয়, তখন তা শুধু একটি সরকারের পতনই ঘটায়নি, বরং রাজনৈতিক পরিবর্তনের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার প্রাথমিকভাবে যে ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করেছিল, তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল।

প্রথম দিকে এই সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা ছিল আকাশছোঁয়া। দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের পর মানুষ আশা করেছিল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজের নির্মাণ। কিন্তু এক বছর পার হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে, সেই প্রাথমিক উৎসাহ ও সমর্থনে ভাটা পড়েছে। সামাজিক মাধ্যমের প্রতিক্রিয়া, জনপরিসরে আলোচনা এবং বিভিন্ন মহলের মতামতে এই পরিবর্তনের ছাপ স্পষ্ট।

এই জনসমর্থন হ্রাসের পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত, দেশব্যাপী মব সন্ত্রাসের বিস্তার একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বিভিন্ন স্থানে সংগঠিত অপরাধী চক্রের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি সৃষ্টি করেছে। বিশেষত ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের ঘটনাগুলো ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা বা নিষ্ক্রিয়তা অনেকের কাছে হতাশাজনক মনে হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে নতুন সমস্যা। গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন হতাহতের ঘটনাগুলোর বিচারের নামে নির্বিচারে মামলা দায়ের এবং আসামি করার প্রবণতা দেখা গেছে। এর ফলে একদিকে প্রকৃত অপরাধীদের বিচার কঠিন হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে অনেক নিরীহ ব্যক্তি হয়রানির শিকার হয়েছেন। এই পরিস্থিতি ন্যায়বিচারের প্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।

তৃতীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রাজনৈতিক ট্যাগিং এর সংস্কৃতির পুনরাবির্ভাব। পূর্ববর্তী সরকারের আমলে যেমন সমালোচকদের বিভিন্ন নেতিবাচক তকমা দেওয়া হতো, নতুন পরিস্থিতিতেও সেই একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যারা সরকারের নীতি বা কার্যক্রমের সমালোচনা করেন, তাদের 'ফ্যাসিবাদের দোসর' হিসেবে চিহ্নিত করার প্রবণতা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক।

চতুর্থত, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির মতো অপরাধমূলক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের পেছনে ভয়ভীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের কাছে অগ্রহণযোগ্য। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

পঞ্চমত, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি অবমাননামূলক আচরণ অনেক মানুষকে বিচলিত করেছে। যদিও গণঅভ্যুত্থানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্লোগান ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল, পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও স্মারকের প্রতি অবহেলা বা ক্ষতিসাধনের ঘটনা জাতীয় ঐক্যের জন্য ক্ষতিকর হয়েছে।

ষষ্ঠত, উপদেষ্টা পরিষদের কিছু সদস্যের দক্ষতা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জরুরি ভিত্তিতে সরকার গঠনের কারণে যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ সীমিত থাকলেও, কিছু উপদেষ্টার অপ্রতুল দক্ষতা সরকারের সামগ্রিক কর্মক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের ভারসাম্যহীনতাও একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা।

সবশেষে, নির্বাচনের সময়সূচী নিয়ে অনিশ্চয়তা জনগণের মধ্যে হতাশা বৃদ্ধি করেছে। গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যাশা থাকলেও, এ বিষয়ে সরকারের অস্পষ্ট অবস্থান বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।

এই সমস্যাগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে রয়েছে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ। একদিকে তাদের রয়েছে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত নৈতিক বৈধতা, অন্যদিকে প্রতিদিনের শাসনিক সমস্যা ও জনপ্রত্যাশা পূরণের চাপ। এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধনই হলো মূল চ্যালেঞ্জ।

জনসমর্থন ফিরে পেতে হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে কয়েকটি ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিয়ে মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিচার ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে হয়রানিমূলক মামলার অবসান ঘটাতে হবে। তৃতীয়ত, রাজনৈতিক সহনশীলতা বৃদ্ধি করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। চতুর্থত, দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। পঞ্চমত, জাতীয় ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। ষষ্ঠত, অদক্ষ উপদেষ্টাদের পরিবর্তন করে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে। এবং সবশেষে, নির্বাচনের একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সব পক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকারের একার পক্ষে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী এবং সর্বোপরি সাধারণ জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই গণতান্ত্রিক রূপান্তর সম্ভব নয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:০৪

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: এক বছর পর আপনি এখন ও আশাবাদী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, মব, চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি নিরসনে।
কিন্তু দৃশ্যত ও কার্যকর কোন পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত নেওয়া‌ হয়নি।
আজকে কিংস পার্টির সমাবেশের কি অবস্থা?
লাখ খানেক মানুষের জমায়েতে হয়েছে নাকি? :P

০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:২৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: তিনহাজার লোক এসেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.