![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে সেদিন ভোর হয়েছিল ১৪ বছরের এক কিশোরের জন্য। চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে, লাঠি আর রডের আঘাতে তার শরীর ভেঙেছে, শ্বাস রুদ্ধ হয়েছে। মাহিনকে রশির বাঁধনে বেঁধে বর্বরভাবে পেটানো হয়েছে। তার চিৎকার, তার কান্না, এমনকি তার বাবা-মায়ের আকুতি সবকিছুই হিংস্র জনতার কানে ছিল অর্থহীন। বাবা যখন মিনতি করে বললেন, "আমার ছেলে যদি দোষ করে থাকে, আমি জরিমানা দেবো," তখন সেই ক্ষুধার্ত ভিড় তাকেও মারতে ছাড়েনি। পুলিশ যখন এলো, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। মাহিন নামের সপ্তম শ্রেণির সেই কিশোর তখন আর এই পৃথিবীতে নেই। এই ভোরের আলো কাকে আলোকিত করলো? একটি শিশুর নিথর দেহকে, নাকি আমাদের সমাজের গভীর অন্ধকারকে ?
মাহিন, তার বন্ধু মানিক ও রাহাত কক্সবাজার গিয়েছিল, অভিযোগ ছিল চুরি করা টাকায়। সত্য-মিথ্যা যাই হোক, ফিরে আসার পর সিএনজি ভাড়া নিয়ে চালকের সাথে ঝগড়া শুরু হয়। এরপরই স্থানীয় কিছু প্রাপ্তবয়স্ক লোক, যাদের মধ্যে ছিলেন মাস্টার নাজিম, দোকানদার তৈয়ব এবং পল্লী চিকিৎসক নোমানের মতো শিক্ষিত ও প্রভাবশালী মানুষ, "চোর চোর" বলে চিৎকার শুরু করে। এই চিৎকারে উন্মত্ত জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিন ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চললো, অথচ কেউ ফোন ধরেনি। শেষমেশ যখন ৯৯৯-এ ফোন করা হলো, ততক্ষণে সব শেষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি আর স্থানীয়দের কথা সাংঘর্ষিক, কিন্তু চরম সত্যটা হলো একটি শিশু রাষ্ট্রের সুরক্ষা পেল না। এখানেই আসল সংকট। রাষ্ট্র যদি শুধু ঘটনার পর মামলা করার জন্য থাকে, তাহলে মানুষ ভরসা রাখবে কার ওপর? এই ভরসাহীনতা থেকেই জনতা নিজের হাতে বিচার তুলে নেয়।
মাহিন ডানপিটে ছিল, ছোটখাটো চুরির অভিযোগও ছিল তার নামে। বাবা দোকানে বসাতে চাইতেন, কিন্তু তার মন টিকত না। ধর্মীয় শিক্ষা পেলেও, তা তার চরিত্রে প্রতিফলিত হয়নি। প্রশ্ন হলো, একজন কিশোর যদি বিপথে যায়, তার দায় কি কেবল তার? নাকি বাবা-মা, সমাজ এবং শিক্ষাব্যবস্থাও সমানভাবে দায়ী? যখন একটি পরিবার সন্তানকে সঠিক সময় ও দিকনির্দেশনা দেয় না, তখন সে বাইরের জগতে পথ খুঁজে নেয়, যেখানে তাকে টানে গ্যাং, অপরাধ, আর মিথ্যা আনন্দের হাতছানি। একসময় পাড়া-প্রতিবেশীরা অন্যের সন্তানের দেখভাল করত। এখন আমাদের সংস্কৃতি হলো "নিজ নিজ ঘরে নিরাপদ।" মাহিনকে যখন ব্রিজের সাথে বেঁধে পেটানো হচ্ছিল, শত শত মানুষ পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। কেন? কারণ প্রত্যেকেই ভেবেছে, "তার ঝামেলায় আমি কেন যাবো?" এই নিষ্ক্রিয়তাই আমাদের সমাজকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। আমরা শুধু মুঠোফোন ক্যামেরা দিয়ে মৃত্যু রেকর্ড করতে শিখেছি।
মাহিন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল, কিন্তু স্কুল কি তাকে মানুষ বানাতে পেরেছিল? আমাদের স্কুল এখন কেবল নম্বরের পেছনে দৌড়ায়, চরিত্র গঠনের শিক্ষা সেখানে গৌণ। মানসিক স্বাস্থ্যের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে নেতৃত্বের ক্ষমতাসম্পন্ন কিশোররা হয়ে ওঠে গ্যাং লিডার, স্টুডেন্ট লিডার নয়। যদি মাহিন সঠিক দিকনির্দেশনা পেত, হয়তো তার ক্ষমতা সমাজকল্যাণে কাজে লাগতো। এই ঘটনার পেছনে মাহিনের বাবার সঙ্গে তৈয়ব সওদাগরের ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। ১৪ বছরের একটি ছেলে সেই বিরোধের বলি হলো। এটি প্রমাণ করে, আমাদের সমাজে "বড়রা ছোটদের রক্ষা করে" এই মৌলিক নৈতিকতা ভেঙে গেছে। শিশুরা এখন প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিশোধের খেলায় শিকার।
এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি যেমন সচেতনতা তৈরি করে, তেমনি হিংসাকেও স্বাভাবিক করে তোলে। ২০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মিলে একটি শিশুকে ঘন্টার পর ঘণ্টা পেটাল এটি একটি গোষ্ঠীগত উন্মাদনার চিত্র। মনোবিজ্ঞানে যাকে বলা হয় deindividuation, যেখানে ভিড়ের মধ্যে মানুষ নিজের নৈতিকতা ভুলে যায়। আজকের কিশোররা অতিরিক্ত সময় কাটায় সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন গেম আর ইন্টারনেটে। এতে তারা বাস্তব জীবনের সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলে। ভার্চুয়াল জগতে সব কিছু সহজ মনে হলেও, বাস্তবে প্রতিটি কাজের যে পরিণতি আছে, এই বোধ তাদের থাকে না। মাহিন হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে দ্রুত বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল, আর সেই মানসিকতা থেকেই জড়িয়ে পড়েছিল অন্যায় কাজে।
মাহিন আজ আর নেই। কিন্তু আমরা কি শুধু মাহিনকেই হারিয়েছি ? না, এই হত্যাকাণ্ডে আমরা খুন করেছি আমাদের মানবিকতা, ভেঙে ফেলেছি সামাজিক বন্ধন, আর মুছে দিয়েছি আইন ও ন্যায়বিচারের প্রতি শেষ ভরসাটুকু। সবচেয়ে ভয়ংকর প্রশ্ন হলো, আজ আমরা যদি নীরব থাকি, কাল কি আমাদের সন্তান সেই একই উন্মত্ত ভিড়ের হাতে নিহত হবে না? মাহিন আজ আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলছে, "আমি কি একাই মরেছি, নাকি তোমরাই তোমাদের ভবিষ্যৎকে কবর দিয়ে এসেছ?"
Click This Link
২৫ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:১২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এই দায় সবার । ইনটেরিম কি বলেছে তোমরা শিশুকে পিটিয়ে মারো ?
২| ২৫ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:১০
কামাল১৮ বলেছেন: চুরি করলে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে।গায়ে হাত দেয়ার অধিকার কারো নাই।আমাদের দেশের লোক আইন জানে না মানেও না।
২৫ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:১৩
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপনার সাথে একমত ।
৩| ২৫ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:১৫
শেরজা তপন বলেছেন: আহা
কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করার সামর্থ্য না থাকলেও এমন ঘটনা ভিডিও করে গনমাধ্যমে ছড়িয়ে দিলেও অন্তত অপরাধী সনাক্ত হয়!
*খাচায় পুরে একটা বেজীকে পুড়িয়ে মারা দেখেছেন? উফ্ কি ভয়ঙ্কর দানব হয়ে যাচ্ছি আমরা!!!
২৫ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:১৯
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: উফ্ কি ভয়ঙ্কর দানব হয়ে যাচ্ছি আমরা!!!
৪| ২৬ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:১০
আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: খুব সুন্দর টেক ব্যাক বাংলাদেশ চলছে
২৬ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:১৩
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সামনে না এগিয়ে পিছিয়ে যাওয়ার কথা যারা বলছে এরা বেকুব ।
৫| ২৬ শে আগস্ট, ২০২৫ ভোর ৬:৫৮
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
মবের রাজত্বে এর চেয়ে ভালো আর আপনি কী আশা করতে পারেন?
২৬ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:১১
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সবার দায় আছে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:০৬
কামাল১৮ বলেছেন: এই সরকার ক্ষমতায় আসছে মব সৃষ্টি করে।এই সরকার যতদিন থাকবে মব বন্ধ হবে না।