নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিশ্চুপ কাব্যিক

নিশ্চুপ কাব্যিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'অধিকার\' তুমি কি,,,,,? কতখানি?(পর্ব:-০১)

২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৫

ঘটনা:-০১,
.
ভদ্রলোক আমার সমনে বসেই ডক ডক করে চাঁ
গিলছিলেন আর রাজ্যির গল্প করে যাচ্ছিলেন স্ব-দম্ভে
কোন এক পরিছিত জনের সাথে।
আমার বন্ধু মহলের একজন কানেমুখে বলে দিলেন
'উচ্ছস্বরে বকবক করে যাওয়া লোকটাই এ এলাকার
সবচেয়ে প্রভাবশালি এবং প্রতাপশালি। আরো ববললেন,
এমনি এমনি প্রতাপশালি হননি,! সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, মাদক
ব্যাবসা, নারী পাচার থেকে নিয়ে হেন কোন কাজ নেই যা
তার দ্বারা হয় না।"
.
আমি সাধু অধিকার সচেতন একজন সত্যবাদী যুবক!
সত্যবাদীতা আর অধিকারের সঠিক প্রয়োগের এমন
মোক্ষম সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করাতো অন্তত
আমার পক্ষে সাজে না!! আমি সুযোগের সদ্ধবহার করতে
একপায়ে দাড়িয়ে গেলাম আর শুরু করে দিলাম 'চেতনার
ওয়াজ',,,,,, :এইযে মহাশয় আপনি যে এত চিল্লিয়ে কথা
বলছেন, কারন কি শুনি! লজ্জা নামক জিনিসটাতো
আপনার থাকা উচিত! নাকি? আপনি একটা দুর্নীতিববাজ,
মাদক ব্যাবসায়ী, নারী প্রাচারকারী, সুদখোর ইত্যাদি।
তবু এত দম্ভকরে, উচ্ছস্বরে কথা বলছিস কেন হুম? চোর
একটা,,,,,,,,,,, ,,,,
:- ভদ্রলোক প্রথমদিকে ব্যাবাচেকা খেলেও পর-মুহূর্তেই
ঘুরে দাড়ালেন আর সাথে পাঞ্জাবীর হাতা গুছিয়েই শুরু
করে দিলেন 'বড়কাজ। সাথে সাঙ্গপাঙ্গরাও দাড়িয়ে
থাকলেন না।তারপরের দৃশ্যখানা আমি আর মনে করতে
পারছি না।
.
পরেরদিন আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম হসপিটালের
বেডে।পাশে বসে আছে আমার সেই কানেমুখে কথাবলা
বন্ধু। ভাবলাম প্রশ্ন করব 'আমাকে যখন ওসব জঙ্গীরা
গো-বৎসের ন্যায় কেলাচ্ছিল, তখন তুই ওদের বাধা
দিলিনা কেন?'
.
কিন্তু বিধি বাম, বন্ধু আমাকেই প্রশ্ন করে বসল 'আমি
নাহয় তোকে কানেমুখে কথাটা বললাম, তাইবলে তুই কেন
ওই লোকটার মুখের সামনে কথাগুলো বলেদিতে গেলি?'
:- বারে আমিকি কিছু মিথ্যাকাথা বলেছি? সবকথাই তো
সত্যি বলেছি, আমিকি সত্যকথা বলবনা? সত্যকথা বলার
কি আমার অধিকার নেই?
:- ও, তুই থাক তোর অধিকার নিয়ে।এখনতো উহ আহ
করতে ভালো লাগছে তাইনা?
:- আরে সালা, আমিতো সত্যকথাই বলেছি, কিন্তু ওরা
আমাকে কেলাবে কেন?
:-কেন আবার জানিসনা? তুই তোর অধিকার প্রয়োগ
করেছিস আর তারা তাদের অধিকার প্রয়োগ করেছে! বাছ,
সমানে সমান!!!!!!
:-আরে সেলুকাস,!!! কেউ সত্যকথা বললে তাকে তিন/
চারজন লোকে গরুর মত কেলাবে! এটা কিভাবে অধিকার
হতে পারে? আর তাছাড়া তুই দেখলিনা লোকটা এতসব
নোংরা কাজ করেও কত ধবধবে সাদা একটা পাঞ্জাবী
পড়েছে আর মুখে কেমন নিতীর কথা শোনাচ্ছে। ওর বেশ
দেখেইতো মানুষ প্রতারিত হবে! আর আমি চুপ করে
থাকবো?
:-হুম, তুমি ঐলোকটার ভদ্রবেশি মুখোশটা সত্যবলার
দোহাই দিয়ে সবার সামনে ক্ষসিয়ে দিবে, এটা তোমার
অধিকারর! আর লোকটা যে এতদিন তীল তীল করে
গড়েতুলল ভদ্রতার মুখোষ, সে মুখোশ রক্ষা করা কি
তার অধিকারের পর্যায়ে পড়ে না?
.
.
.
ঘটনা:-২
"
কলেজ ফাঁকি দেওয়া মোটামুটি একটা উভ্যেশে পরিনত
হয়েছে। মনির,তারেক,রাহাত,জুয়েলরা আমার সিগারেট
খোর বন্ধু। শুধু সিগারেট খোর না! সেরাম
সিগারেটখোর!!!
.
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পার্কে বসে বন্ধুদের সাথে সিগারেটে
ভাগ বসানো এখন আমার নিত্যনৈমিত্তিক কাজ হয়ে
দাড়িয়েছে।
.
এসব সিগারেটখোর বন্ধু ছাড়াও সবদিক বিবেচনায়
মোটামুটি আমার একজন ভালো এবং বেশ ভদ্র বন্ধু
আছে, তার নাম রাসেল। ভদ্র বলছি এজন্য যে, আমাদের
মত সিগারেট খোর না, কোন মেয়ের পাল্লায় এখনো
পড়েনি,কাউকে কোন কথা দিলে জান দিয়ে সেটা রক্ষ
করবে মানে আমাদের সিটিং করেনা, সাদাসিধে সত্যবাদী
যুবক।
.
একদিন রুটিন অনুসারে ক্লাস ফাঁকিদিয়ে পার্কে বসে
সিগারেটেরর ধোঁয়া ছাড়ছি। ঠিক এমন সময় পার্কের
সামনেরর রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে বন্ধু রাসেল।ডাক
দিলাম, 'বন্ধু এদিকে আয়তো।'
:- কেনরে?
:- আরে আয়না, একটু বসি।
:-নারে বন্ধু, আমার বাড়িতে কাজ আছে, চলে যাচ্ছি।
:-আরে শোন, আমারও কাজ আছে, একসাথে যাবো দাড়া,
সিগারেটে শেষ টানটা দিয়ে নিই।'
দুজন একসাথে বাড়ি আসলাম। রাত্র যখন খেতে বসলাম,
আমার পেশায় শিক্ষক আব্বাজান পুলিশের মত জেরা
করতে শুরু করলেন,,,,
:-আব্বাজান, আজকে কলেজে কত ঘন্টা যেন হয়েছে?
:-(আমি অপ্রস্তুত হয়ে) ইয়ে,, মানে তিন ঘন্টা।
:-তাই? না?
:- জ্বি আব্বু, ঐ বাংলা,পিজিক্স আর বায়োলজি।
:-তা আব্বাজান, আপনি যদি ক্লাসই করে থাকেন তবে
পার্কের ব্যাঞ্চে বসে সিগারেটে শেষ টানটা কে দিয়েছিল
শুনি?
(আমিত আকাশ থেকে পয়দা হলাম, এমন একটা সিক্রেট
কথা আব্বুকে বলে দিল! এমন সর্বনাসা কাজটা কে করতে
পারে? রাসেল?!! নাহ ওতো আমার ভালো বন্ধু, ও কেন
বন্ধু হয়ে এমন সর্বনাস করতে যাবে আমার।তাছাড়া
আমিযে নিয়মিত সিগারেট খাদক নয়,সেটা রাসেল জানে,।
পার্কে বসে বন্ধুদের সাথে সখের বসে দুএকটা টান দেয়া
ছাড়া আমিত সেগারেট ধরিই না। কিন্তু কথাটা আব্বুকে
বলল কে?)
যাইহোক আমি মাথা নিচু করে বাধ্য ছেলেটি হয়ে
পড়ালেখা বন্ধের হুমকি সমৃদ্ধ একটি সাইক্লোন ঝড়ের
মোকাবেলা করলাম।
.
দোকানে গিয়ে বসে আছি মন খারাপ করে। দোকানদার
পরিছিত একজন, বললেন মন খারাপ কেন? ক্লাস ফাঁকি
দিয়ে পার্কে বসে সিগারেট খেয়েছ বলে বাবা বকা দিয়েছে,
তাইনা?
(আমিতো সালা ফুরাই টাষ্কিত,! আব্বাজান জানে, হতে
পারে আব্বাজানের কোন বন্ধু ভুল করে দেখেতে পেয়ে
জানিয় দিয়েছে। কিন্ত চাঁ দোকানদার কেমনে জানবে,
তাছাড়া আমাদের দেশে চাঁ দোকানে খবরাখবর বিবিসি
সিএনএনের আগে প্রভাহিত হয়।)
যাইহোক আমাকে চিন্তিত দেখে তিনিই আবার বললেন,,,
:-'কি ভাবছ? আমি কিভাবে জানলাম এই কথা?
:-না চাচা মানে,,,,,,
:- শোন মিয়া, তোমার বন্ধু রাসেল আছে না, ওই
তোমার আব্বারে আমার দোকানে পাইয়া কইল এসব
কথা।
:-সে কি কইল চাচা?
:-তোমার আব্বাই এখানে বইসা চাঁ খাইতেছিল, ও আইসা
কইল 'আংকেল আপনার সাথে একখান কথা ছিল। তোমার
আব্বায় কইল 'কি কথা কওনা।' ও কইল 'আংকেল আপনি
এলাকার একজন সম্মানিত লোক, সবাই আপনাকে
সম্মান শ্রদ্ধা করে, কিন্তু আপনার ছেলে ক্লাস ফাঁকি
দিয়ে পার্কে বসে বাজে ছেলেদের সাথে সিগারেট খেলে
আপনার সম্মান কি আর কিছু থাকে? বলেন?'
(সালা জায়গা মতই দিছে এক চামুচ! জানি, শুধু আব্বায়
কেন? এলাকার কোন লোকই রাসেলের কথা অবিশ্বাস
করেনা! সত্যবাদি হিসেবে এলাকায় তার এমনই শুনাম।
আব্বায়ও তার ব্যাতিক্রম নয় যে তার প্রমানতো পেয়েই
গেলাম। কিন্তু সালা বন্ধু হয়ে আমারে এতবড় বাঁশটা দিতে
পারল? সিক্রেট বিষয়টা বুঝল না?!!! আজ সালারে একটা
শিক্ষা না দিলেই নয়।)
একমুহুর্ত দেরি না করেই ফোন দিলাম সে সব
সিগারেটখোর বন্ধুদের। আমি জানি করতে হবে। এখন
বাজে রাত সাড়ে নয়টা।মাত্র ত্রিশমিনিট পরই তিন
রাস্তার ঐ অন্ধকার মোড়টা দিয়ে সালা রাসেল্লার বাচ্ছা
আসবে টিউশনি শেষ করে। এই অন্ধকারেই বেটারে
আচ্ছামত একটা কেলানি দিতে হবে।
.
রাস্তার মোড়ে সেই অন্ধকার জায়গাটাতে আমরা পাঁচজন
দাড়িয়ে আছি যেখানে ল্যাম্পপোষ্টের আলো আমাদের
ছুতে পারেনি। দুরে কাকে যেন দেখা যাচ্ছে ধীরে ধীরে
এদিকেই এগিয়ে আসছে। হ্যাঁ, কাছে আসতেই স্পষ্ট হল
এটা সেই সত্যবাদি গিরিংগি রাসেল। আমাদের পাঁচজনকে
দেখেও না দেখার বান করে স্বাভাবিক গতিতেই এগিয়ে
যাচ্ছিল, মনেহয় মেধাবি ছাত্র রাসেল বিষয়টা কিছুটা আঁছ
করতে পেরেছে। তবু পেছন থেকে ডাক দিয়ে থামালাম।
নিজেকে খানিকটা কাপুরুশোচিত লাগছে বিনয়ি রাসেলকে
দেখে, ও কে দেখে মনে হচ্ছে কিছুটা ভয় পেয়েছে। তবু
আমরা পাঁচজন দাড়িয়েছে একটা নিরিহ ছেলেকে কেলানোর
জন্য। পাশ থেকে রাহাত বলে উঠল 'বন্ধু শুরু করে দে,
দেরি করা ঠিক হবেনা, কেউ এসে পড়তে পারে।' সবাই
রাহতকে সাপোর্ট করল। আমার ততক্ষনে রাসেলের জন্য
সহমর্মিতা দুর হয়ে মনের কোনে জমিয়ে রাখা ক্ষোভ
একত্রিত হতে শুরু করেছে,,,,,,
আমি বললাম,'ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পার্কে বসে সিগারেট
খেয়েছি, এই খবর আব্বুজানের কানে গেল কেমনে?
:-(রাসেল ভয়ে ভয়ে বলল) বন্ধু, আমি বলেছি,। কারন, তুই
ছেলেগুলার সাথে থেকে খারাপ হয়ে যাচ্ছিস,। তুই আগে
সিগারেট খাইতিনা, এখন প্রতিদিন কলেজ ফাঁকি দিয়ে
সিগারেট খাছ। বিশ্বাস কর বন্ধু, আমি তোর ভালোর
জন্য বলেছি।
(বন্ধুরা ইতিমোধ্যে হাতা গুছিয়ে নিয়েছে, আর আমার
ইঙ্গিতের অপেক্ষায় আছে।)
:-তুইতো খুব ভালো কাজ করেছিস! আগে আব্বু আমাকে
জানতো আমিখুব ভদ্র, বাজে আড্ডা দিইনা, ঠিক মত
ক্লাস করি, কোন মেয়ের পাল্লায় পড়িনি!! আর এখন
জানে, আমি খুব নষ্ট হয়েগেছি, বাজে আড্ডা দিই,
সিগারেটখোর, ওনার টাকা ধ্বংসের মেসিন ইত্যাদি
ইত্যাদি। খুব ভালো করেছিসনা তুই?
:- আরিফ প্লি,,,,,,,,,,,
:- আরে রাখ তোর আরিফ, তুই কি করেছিস জানিস?
রিতিমত একাটা বখাটে বানিয়ে দিয়েছিস আব্বুজানের কাছে
আমাকে।আব্বুজান এখন আমার পড়ালেখা বন্ধ করে দিবে,
তুই জানিস না এগুলো সিক্রেট বিষয়? সবকথা
সবযায়গায়/সবাইকে বলতে হয়না জানিস না তুই? (বন্ধুরা
আর দেরি না করে শুরু করে দিয়েছে তাদের হাতের কাজ।
আর আমি? দুইটা দিয়ে 'খেমা দিয়েছি।';)
.
.
.
মোরাল:- উপরের সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের গল্পদ্বয়
থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া যায় যে, আমরা কখনো
কখনো যেকাজটাকে নিজেদের অধিকার ভেবে করি, ঠিক সে
কাজটাই একি সসময়ে অন্যকারো অধিকার নষ্টের কারন
হচ্ছে। যে অধিকার অন্যকোন অধিকারকে নষ্ট করে তা
কখনো অধিকার হতে পারে না............................
..........(!)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.