নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হুমায়ূন আহমেদের বই যখন পড়ি, তখন আমার লেখার ইচ্ছাটা জেগে উঠে। আপাতত ছোট গল্প দিয়ে না হয় শুরু করলাম..

রব্বানী রবি

রব্বানী রবি

রব্বানী রবি › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীহারিকা

১৮ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৩৪

নীহারিকা।ছোটবেলায় নাকি বাবা-মা আদর করে ডাকতেন নীহা। নীহার বুঝ হওয়ার আগেই বাবা - মা মারা যান। বাবা - মায়ের আদর বোঝার আগেই কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো তারা।একেবারে রাতের আকাশের তারা হয়ে গেলো।

বড় ভাইয়ের পরিবারে বড় হতে লাগলো নীহা। ঘরের সবকাজ ঠিকঠাক মতো করে রাখতো।

কখন যে নীহার বিয়ের বয়স হয়ে গেলো কেউ সেটা টেরই পেলো না। একে একে বিয়ের জন্য পাত্র আসে, আর বড় ভাই ফিরিয়ে দেয়। এখন নাকি নীহাকে বিয়ে দেওয়া সম্ভব না। বোনের প্রতি কেমন যেনো আদরটা কমে যাচ্ছিলো।

কিছুদিন পর নীহার ছোট ভাই গ্রাম থেকে শহরে আসে। একটা চাকরি খুঁজতে থাকে। পেয়েও যায়। কিছুদিন পর বিয়েও করে ফেলে। বিয়ের পর নীহাকে তার কাছে নিয়ে আসে ।

এদিকে,নীহার বয়স ৩০ পার হয়ে গেলো। বিয়ের বাজারে বয়স অনেক বেশী। ছোট ভাই শাওন বোনের জন্য পাত্র খোঁজা শুরু করে। কিন্তুু যে ছেলেই আসে, তারা সবাই পূর্বে একবার বিয়ে করেছে। কেউবা এক বাচ্চার বাবাও। শাওন এসবে মত দিতে পারে না।

এদিকে গ্রামে নীহার এক খালাতো ভাই, নাম তার শুভ। নীহাকে খুব পছন্দ করে। তারা তাদের ভবিষৎ নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যায়।
শুভ নীহার মাথায় হাত রেখে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, তারা বিয়ে করবে।
কিন্তুু শুভর পরিবার, নীহাকে মেনে নিতে রাজি নয়।
শুভ পরিবারের মতেই বিয়ে করে।
নীহা খুব ভেঙ্গে পড়ে। নিজেকে বোঝাতে পারে না, এমন কেনো হলো তার সাথে ।

এদিকে ছোটভাই পাত্র খোঁজার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। নীহার ছোট ভাবীর ভাই, নাম তার সুমন মাঝে মাঝে দেখতে আসে, তার বোনকে। তখন নীহার সাথে সুমনের সাক্ষাৎ হয় । তাদের মাঝে একটা বন্ধুত্ব তৈরী হয়ে যায়। নীহা তার অপূর্ণতা সব সুমনকে জানাতো। এভাবে যতই সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, তাদের মাঝে কিছু একটা কাজ করা শুরু করলো। দুজনের সঙ্গ দুজনের খুবই পছন্দ। একসময় তাদের মাঝে ভালোলাগা কাজ করতে শুরু করলো।
নীহার ছোটভাই এসবই খেয়াল করতো। একদিন শালাকে আসতে নিষেধ করে দিলো বাসায়।

তাদের এ ভালোলাগা একসময় ভালোবাসাতে পরিণত হয়। মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো পড়ে দুজনেই।

তাই তারা বাহিরে চুপিচুপি দেখা করতো। কথা বলতো । একদিন প্ল্যাণ করে তারা পালিয়ে যাবে। কোথাও গিয়ে দুজনে শান্তিতে বসবাস করবে। দুজন দুজনকে খুব সময় দিবে, ভালোবাসবে।

সুমনের কি একটা কাজ পড়ে গেলো ঢাকায়। নীহাকে বলে গেলো, ঢাকা থেকে ফিরেই বিয়ে করবে তারা। সুমন যাওয়ার আগে একটা বাসাও ঠিক করে গেলো।

সুমন চলে যাওয়ার পর, নীহা স্বপ্নের ঘোরে চলে গেলো। কি কি কিনবে বাসার জন্য তার একটা লিস্ট সাজাতে লাগলো মনে মনে। বাসার সামনে থাকবে ফুলের বাগান। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাগানে হাঁটবে তারা দুজন আর ফুলের ঘ্রাণ নিবে।

ওদিন রাতে নীহার বড় ভাই এলো। বললো সুমন নাকি এক্সিডেন্ট করেছে ঢাকায়। সবাই ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হলো। নীহা চট্টগ্রামে রয়ে গেলো।

যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে গিয়ে তারা ২ টা লাশ দেখলো। কোনটাই সুমনের সাথে মিলছে না। তারা অনেক খোঁজাখুঁজি করলো। পাচ্ছে না সুমনকে। কিন্তুু তারা খবর নিয়ে এসে জানতে পারলো সুমন এই বাসেই ছিলো।
তখন তারা বাহিরে এসে খোঁজখবর নিতে শুরু করলো। একজন লোক এসে বললো, আরো একটা লাশ আছে।

বাহিরে তখন ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। নীহার ছোটভাবীর চোখও বৃষ্টির আভাস দেখা গেলো।
৩য় লাশটার সামনে গিয়ে দেখা গেলো, সুমন শুয়ে আছে মাটিতে। তাজা রক্তের দাগ শরীর জুড়ে।

দুর্ঘটনার পরও অনেকক্ষণ বেঁচে ছিলো। কেউ হাসপাতালে নিয়ে যায় নি। সবাই দেখে দেখে আফসোস করে চলে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সুমন না ফেরার দেশে চলে গেলো ।

এদিকে নীহা ঘুমাতে পারছে না আতঙ্কে। প্রিয় মানুষটার কিছু হয় নি তো এই ভয়ে।
যখন সকাল হলো, তখন বাসার সামনে দেখে লাশবাহী গাড়ি। সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না, এই গাড়ি তার বাসার সামনে কেনো !

এতোদিনের বোনা সব স্বপ্নগুলা শেষ হয়ে গেলো । কেনো এমন হলো আবার তারসাথে ! কতো স্বপ্ন দেখেছিলো নীহা সুমনকে নিয়ে। এসব ভাবনা চলে এলো। চোখের পানি চোখেই শুকিয়ে গেলো ।

দুঃখ যে প্রকাশ করবে বা গলা ফাটিয়ে কাঁদবে তারও কোন পথ খোলা ছিলো না। হয়তো কারো সন্দেহের ভয়ে। কলঙ্ক লেগে যেতে পারে। দাঁত চেপে সব সহ্য করে যেতে লাগলো।

এদিকে সুমন হারিয়ে যাওয়ার ১ সপ্তাহের মাঝেই ছোটভাই শাওন, তার জন্য ছেলে দেখা শুরু করলো।
এদিকে নীহা ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। কাউকে কিছু বলতেও পারছে না।

কিছুদিন পর বিয়ে ঠিকও হয়ে গেলো নীহার।
বিয়ের দিন সে শুধু অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছিলো।যখন তাকে গাড়িতে তুলে দেওয়া হলো, তখনও হুশ নেই তার।

এখন সে দু বাচ্চার মা। অনেক সুখেই সংসার করছে।বর - বাচ্চা নিয়ে খুবই ব্যস্ত নীহা।

সেদিন আমার বাসায় এসে নীহা বললো, দেখ দেখ, আমার জামাইয়ের ছবিটা অনেক সুন্দর হইছে না রে ? এই ছবিটাতে ওকে সুমনের মতো লাগে।
কথাটা শুনে মন ভিজে উঠলো আমার। চোখ ভিজে উঠার আগেই অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম !

এখনো ভুলতে পারে নি, পুরনো দিনের কথা। স্মৃতিতে রয়ে যায়, একসাথে কাটানো সময়ের পান্ডুলিপি..

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৫৭

সাপলুডু বলেছেন: বড্ড খাপছাড়া হয়ে গেলো মনে হলো। গল্পের গাথুনিটা আরো জোড়ালো হলে ভালো হয়। শুভ কামনা।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:০৮

রব্বানী রবি বলেছেন: ধন্যবাদ। এমন মন্তব্যের জন্য। আশা করি গেঁথে নিবো আরো শক্ত করে, লেখার গাঁথুনি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.