নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

A self-centered person, though not selfish! I just like to be alone with my dreams and thoughts!

মেহেদী হাসান শাহাদ

একজন প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষ। নিজের আয়ত্তে থাকা বিষয় গুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতেই এখানে আসা।

মেহেদী হাসান শাহাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহুরে বর্ষার এক বিকেল ও ধূর্ত মিস্টার বিন

২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৪৭




বর্ষার কোন এক বিকেল। গত কয়েকদিন ধরেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই এখন দিনের বেশিরভাগ সময়ই বাসায় বন্দী হয়ে থাকতে হয়। চাইলেই যখন ইচ্ছা তখন বের হতে পারি না। আজকে দুপুর থেকে বৃষ্টি নেই। আকাশও তেমন মেঘাচ্ছন্ন দেখাচ্ছে না। তাই সেই চারটা থেকে ঘড়ির দিকে চেয়ে আছি কখন পাঁচটা বাজবে, কখন আসরের আযান দিবে সেই আশায়। এখনকার দিনগুলো যে কেন এত বড় বুঝিনা, কিছুতেই বিকাল হতে চায় না! আর আসরের আজানের আগে আমাকে কিছুতেই বাসা থেকে বের হতে দিবে না। পাঁচটা বাজার একটু আগে আসরের আজান দিতে শুরু করা মাত্রই আমি দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম। আমাদের ফ্লাট বাসাটা একটি তিনতলা বিল্ডিং এর দ্বিতীয় তলায়। উঠা-নামার সময় বিল্ডিং এর সিঁড়িগুলো আমি কখনোই ঠিকমত পার হই না। দৌড়ে, লাফ দিয়ে পড়ে নাক-মুখ ভাঙ্গার যতটুকু সম্ভাবনা আছে সেটা ঘাড়ে নিয়েই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যাই। আজকেও তার ব্যতিক্রম হলো না।

তিন দিক থেকে আসা তিনটে গলি যেখানে একত্রে মিলিত হয়েছে, ঠিক সেখানটাতেই দাঁড়িয়ে আছে আমাদের বিল্ডিংটা। মোড়ে হওয়ায় এলাকার যত ছেলেপেলে আছে সবাই এই বিল্ডিংয়ের নিচে এসেই আড্ডা দেয়। কিন্তু এখন এই বিকাল ৫টায়ও এলাকার ছেলেপেলেদের কাউকে দেখছি না বলে একটু অবাক হলাম। মনে মনে ভাবলাম হয়ত আকাশ মেঘলা হওয়ায় সবাই বিছানায় শুয়ে অলস সময় পার করছে। আমার সাথে এলাকার বড় ছেলেদের সম্পর্ক মোটামুটি ভালো। তাদের সবাই পড়ালেখা শেষ করে ফেলেছে। এখন যাদের বাপের ভুরিভুরি টাকা আছে তারা এখানে এসে নিশ্চিতে আড্ডা দেয়। আর বাকিরা চাকরি-বাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে এখানে এসে হা-হুতাশ করে। আমাদের বিল্ডিংয়ের নিচে একটা দোকান আছে। দোকানটা শাহিন মামার। মোড়ে কাউকে না পেয়ে শাহিন মামার দোকানে এসে মামার সাথে গল্প করছি। শাহিন মামা বিদেশফেরত মানুষ। এখন দোকানদারি করেন। তার দোকান থেকেই বড় ভাইরা বিড়ি-সিগারেট কিনে খায়। আর যখন তারা গলির খালি প্লটগুলোতে বসে আড্ডা দেয় তখন আমাদের মতো পিচ্ছি ছেলেদের দিয়ে সিগারেট আনিয়ে নেয়। এখন দোকানে কোন কাস্টমার না থাকায় শাহিন মামা আমার সাথে কথা বলে সময় পার করার চেষ্টা করছেন। আমিও তাই করছি। মামার সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ লক্ষ্য করলাম মিস্টার বিন মেইন রোড থেকে গলির রাস্তায় ঢুকে এই দিকেই হেঁটে আসছে।

দেখতে, চালচলনে এবং কাজকর্মে মিস্টার বিনের মতো হওয়ার হৃদয় নামের এই ছেলেটার খেতাবী নাম মিঃ বিন। তবে ওকে ওর মা ছাড়া দুনিয়ার আর অন্য কেউ মিঃ বিন না ডেকে হৃদয় ডাকে কিনা তা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। বেশিরভাগ ছেলে তো ওর আসল নামই জানে না। মিস্টার বিন নামের জনপ্রিয়তার নিচে ওর আসল নামটাই ঢাকা পড়ে গেছে। দু-এক মিনিটের মধ্যেই মিঃ বিন শাহিন মামার দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো। আমাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলঃ
-কিরে বাংলা! কি করস?
-কিছু না। হুদাই বইসা মামার লগে কথা কইতাছি।
-ওঠ! আয় মাঠে যাই।
-আয়।
(বলে রাখা ভালো যে কোন এক কারণে আমার সমবয়সী ছেলেরা আমাকে ‘বাংলা’ বলে ডাকত। এলাকার বড় ভাইদের কেউ ডাকত ‘বাংলা’ আবার কেউ ডাকত ‘বাংলাদেশ’ নামে। আর এলাকার ছোট ছেলেপেলেদের কাছে আমি ছিলাম ‘বাংলা ভাই’!)
মিস্টার বিনের সাথে হাঁটতে হাঁটতে গলির যেখানটায় চার-পাঁচটা প্লট খালি পড়ে আছে সেখানে গেলাম। এই খালি প্লটগুলোর উপর সভ্যতার অশুভ দৃষ্টি এখনো পড়েনি। প্লটগুলোর মালিকেরা বোধহয় এখনো বহুতল দালান করার মতো যথেষ্ট বিত্তবান হননি। তাই এগুলো অনাথের মতো পড়ে রয়েছে। এলাকার ছেলেদের খেলার জায়গা বলতে এই প্লটগুলোই অবশিষ্ট আছে। প্রতিদিন বিকালে এলাকার ছেলেরা এখানেই ক্রিকেট আর ফুটবল খেলে। এখানকার এই প্লটগুলো একটু ঢালু হওয়ার সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়। আর তার উপর এখন তো বর্ষাকাল! খালি প্লটগুলোর ওপর মালিকেরা এখনো দালান খাঁড়া না করালেও ২-৩ ফুট উঁচু দেয়াল তুলে সীমানা নির্ধারণ করে রেখেছেন জমি-জামা সংক্রান্ত বিবাদ থেকে বাঁচতে। আমি আর মিস্টার বিন সেইরকম একটা অসম্পূর্ণ দেয়ালে গিয়েই বসলাম। কি নিয়ে যেন কথা বলছিলাম আমরা দুজন, হঠাৎ লক্ষ্য করলাম আমাদের পাশের বিল্ডিং এর সাত-আট বছরের ছেলেটা গলির রাস্তা দিয়ে হেঁটে প্লটের বদ্ধ পানির কিনারায় এসে হাত দিয়ে মাছের পোনা ধরার চেষ্টা করছে। উল্লেখ্য, প্রতিবছর বর্ষাকালে সেই বদ্ধ প্লটগুলোতে পানি জমার পর সেখানে দু-তিন প্রকার মাছের পোনা পাওয়া যেত। আমি অনেক শখ করে হাত দিয়ে সেখান থেকে ছোট ছোট কই আর টাকি মাছ ধরতাম। ছোট ছেলেটাকে দেখে মিস্টার বিনের মাথায় একটা কুবুদ্ধি চলে এলো। কুবুদ্ধিটা ছিল এরকম যে মিস্টার বিন ছেলেটাকে ধরে পানিতে চুবাবে এবং শেষে কোলে তুলে পানিতে ছুড়ে মারবে। নিরীহ বাচ্চা ছেলের উপর এইরকম পৈশাচিক কাজ করে আনন্দ লাভের কোন মানে না বুঝতে পেরে যখন আমি প্রতিবাদ জানালাম তখন মিঃ বিন বলল,"চুপ কর শালা! বেশি কথা কইলে কিন্তু তোরেই এখন চুবামু!"

ছোটকাল থেকেই আমি একটু শান্তশিষ্ট স্বভাবের ছিলাম। কারো সাথে মারামারি করতাম না। অবশ্য করতাম না বলে করতে পারতাম না বলাই ভালো হবে। কেউ আঘাত করলে বেশিরভাগ সময়ই পাল্টা আঘাত করার সুযোগ পেতাম না, তার আগেই প্রতিপক্ষ আরো তিন চারটা কিল ঘুষি লাগিয়ে দিত! আর যখন আমি মারতাম তখন হয়তো আমার সাথে আরও কিছু ছেলেপেলে থাকতো, না হয় মেরে দৌড়ে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতাম। কিন্তু এখন আমার অবস্থা বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মতো। তিনপাশে ভারতের বদলে হাঁটু সমান পানি আর এক পাশে পানির বদলে মিস্টার বিন! এখন যদি মিঃ বিন ধাক্কা দিয়ে প্লটের ময়লা পানিতে ফেলে দেয় তাহলে বাসায় গিয়ে আব্বুর হাতেও মার খেতে হতে পারে। আব্বু বিশ্বাস করবে না যে কেউ আমাকে ধাক্কা মেরে প্লটের ময়লা পানিতে ফেলে দিয়েছে, কারো তেমন সাহস হবে না। আব্বু মনে করবে যে আমি নিজে থেকেই প্লটের ময়লা পানিতে নেমে লাফালাফি করে গোসল করে এসেছি। কারণ প্লটের ময়লা পানি থেকেও জঘন্য শীতলক্ষ্যার নর্দমার মতো পানিতে আমি নিয়মিতই বন্ধুবান্ধবসহ গোসল করি। তাই মিস্টার বিনের এই সতর্কবাণী শুনে আমি চুপসে গিয়ে আসন্ন তামাশা দেখার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলাম।

আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ায় রাস্তায় কোন মানুষ ছিল না। আর আশপাশের বিল্ডিংগুলোর বারান্দাগুলোতেও কোন মানুষ না দেখে মিঃ বিন ৬ ইঞ্চি প্রস্থের ইটের দেয়াল ধরে এগিয়ে যেতে লাগল গলির রাস্তার দিকে। আমিও আসন্ন তামাশা ভালো করে দেখতে এবং বিপদের কথা চিন্তা করে তার পিছনে পিছনে যেতে লাগলাম। কারণ ছোট ছেলেটাকে চুবানোর সময় এখানে বসে থাকা আর এক মুহূর্তও নিরাপদ হবে না। তাছাড়া সেই সময় রাস্তা দিয়ে কোন লোক আসলেও দৌড়ে পালানো যাবে। রাস্তায় উঠেই মিঃ বিন বাচ্চা ছেলেটা যেখান দিয়ে মাছের পোনা ধরছিল সেখানে গেল এবং আমি একটু নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়ালাম। বাচ্চা ছেলেটা মিঃ বিনকে আগে থেকেই চিনত। কারণ ও যে বিল্ডিংয়ে থাকে মিঃ বিনের মামাও সেই একই বিল্ডিংয়ে থাকে। তাই ঐ বিল্ডিংয়ে মিঃ বিনের যাতায়াত আছে। মিঃ বিনকে দেখেই বাচ্চাটা একটু দূরে সরে সতর্ক হয়ে দাঁড়ালো। কারণ মিঃ বিনের অপকর্ম সম্পর্কে শুধু ও না, এলাকার সব কাকপক্ষীও অবগত। একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছেলেটা যখন হাত দিয়ে মাছ ধরার জন্য কোমর বেঁকিয়ে কুঁজো লোকের মতো হলো, অমনি মিঃ বিন দৌড়ে গিয়ে দুই হাত দিয়ে চাপ দিয়ে ছেলেটার মাথা পানিতে চুবিয়ে ফেলল। ধরে রাখলো কয়েক সেকেন্ড। তারপর টেনে তুলল আবার দুই হাত দিয়ে চাপ দিয়ে ধরল পানির ভেতর। এভাবে চারপাঁচবার করার পর যখন ছেলেটার অবস্থা আধামরা, তখনই দেখলাম শাহিন মামার দোকানের দিক থেকে দুইতিনজন লোক আসছে এইদিকে। ঠিক তখনই আমি রাস্তার অপর দিকে দৌড় দিলাম। পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মিঃ বিন এবার ছেলেটাকে কোলে তুলে পানিতে ছুঁড়ে ফেলে আমার দিকেই ছুটে আসছে।

দৌড়াতে দৌড়াতে বন্দর বাজারের মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছি। গলির রাস্তা থেকে মেইন রোডে এসে মিঃ বিন ছুটে গিয়েছে বন্দর ঘাটের দিকের রাস্তাটায়। তাই ওকে আমি আমার সাথে দেখলাম না। এইজন্য মনে মনে একটু স্বস্তিও হলো। এইরকম জঘন্য ছেলের সাথে আর মেলামেশা ঠিক হবে না ভাবলাম মনে মনে। বাজারের মোড়ে দাঁড়িয়ে ঠিক কি করা যায় ভাবতে ভাবতেই ঢুকে পড়লাম মুরাদ ভাইয়ের গেমসের দোকানে। আমার সারাদিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটে মুরাদ ভাইয়ের গেমসের দোকানে। স্কুলে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোন কাজ নেই। আর হোম টিউটর তো বাসাতেই পড়াতে আসেন। বাকি সময়ের পুরোটাই আমি এখানে গেমস খেলে কাটাই। মাঝে মাঝে অবশ্য স্কুল ফাঁকি দিয়েও এখানে আসি। দোকানে ঢুকে দেখি মোস্তফা গেমসটা খালি, কেউ খেলছে না। তাই আমি এক টাকার একটা কয়েন মেশিনের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে মোস্তফা খেলা শুরু করে দিলাম। গেমসের দোকানে আমি মোস্তফা আর ভাইস সিটি, এই গেমস দুটোই খেলি। তাছাড়া আর অন্য কোন গেমস খেলতে পারি না। Neo Geo এর 97 কিংবা 2002 মোটামুটি খেলতে পারি কিন্তু কোন অভিজ্ঞ খেলোয়ার এসে যদি আমার প্রতিপক্ষ হিসাবে খেলা শুরু করে তাহলে আর আমার রক্ষা নেই। মোস্তফা খেলতে খেলতে ডাইনোসরের স্টেজটাতে এসে ডাইনোসরের কামড় খেয়ে মরার সাথে সাথে গেম ওভার হয়ে গেলো। ঠিক তখনই দোকান থেকে বের হয়ে এলাম। অপকর্মের সাক্ষী হয়ে এসেছি প্রায় এক ঘন্টার মতো হয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা হতে আরো আধা ঘন্টার মত সময় বাকি আছে। কিন্তু আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ায় মনে হচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মনে একটু ভয় নিয়ে ইটালি বিল্ডিংয়ের গলিটা দিয়ে আমাদের বিল্ডিং এর দিকে যেতে লাগলাম।

বাসার দরজায় কড়া নাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার বড় বোন দরজা খুললো। আপু মুচকি মুচকি হাসছে। তার হাসির কোন মানে না বুঝে বোকার মত ঘরে ঢুকে গেলাম। শহরাঞ্চলের সব বাসাতেই দু-তিনটা অলিখিত নিয়ম বিদ্যমান। যেমন মাগরিবের আজানের সাথে সাথে বাসায় আসতে হবে, দেরি করা যাবে না এবং বাসায় এসেই বাথরুম থেকে ঠিকমত হাত-পা ধুয়ে আসতে হবে ইত্যাদি। যেহেতু আজকে আমি মাগরিবের আজানের অনেক আগেই বাসায় এসেছি তাই এই কারণে আব্বুর বাহবা পাব চিন্তা করতে করতে হাত-পা ধোয়ার জন্য বাথরুমের দিকে এগোতে লাগলাম। কিন্তু বাহবার বদলে যে অন্য কিছু ধারা আপ্যায়িত হতে চলেছি, তা আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারলাম। দেখি বাথরুমের দরজার সামনে আব্বু একটা মোটা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাকে আপ্যায়ন করার জন্য। ঠিক তখনই আমি আমার বড় বোনের মুখের মুচকি হাসির কারণ বুঝতে পারলাম।

মারের এক পর্যায়ে আব্বুর হাত ফসকে বাথরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছি। এখন বাথরুমের মেঝেতে বসে চিৎকার করে কাঁদছি। আব্বু মেরে সারা শরীর লাল করে দিয়েছে। এখন সেসব জায়গায় হাত দিলেই আগুনের মতো দাউদাউ করে জ্বলে উঠছে ব্যথায়! এভাবে এক ঘন্টা কেটে গেল বাথরুমের মেঝেতে বসে কাঁদতে কাঁদতে। মাগরিবের নামাজ পড়ে দোকানে যাওয়ার আগে বাথরুমের সামনে এসে আব্বু বলে গেল গোসল করে বের হয়ে এসে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে। আমাকে যদি সজাগ দেখে তাহলে আবার পিটাবে।

ভাত খেয়ে বিছানায় এসে শুয়েছি। আমি সাধারণত রাত বারোটার আগে ঘুমাই না। ঘুমাই না বললে ভুল হবে। আসলে ঘুম আসে না। বারোটা পর্যন্ত জেগে টিভি দেখতে দেখতে এখন বারোটার আগে ঘুম আসে না। অথচ ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখি এখন মাত্র রাত নয়টা বাজে। আব্বু দোকান থেকে আসে রাত এগারোটায়। তাই যেভাবেই হোক এগারোটার আগে ঘুমাতে হবে। না হলে আব্বু সত্যি সত্যিই আবার পিটাতে পারে। আম্মুও আব্বুর হাতের মার থেকে বাঁচাতে পারবে না, আব্বুর অনেক রাগ! শুয়ে শুয়ে মার খাওয়ার সময়কার কথা চিন্তা করছি আর ভাবছি কেন মিঃ বিন এমন করল!
লোকজন আসতে দেখে আমি দৌড়ে বাজারের দিকে আসলেও মিঃ বিন গিয়েছিল আমার উল্টোদিকে। মসজিদ গলিটা পুরো ঘুরে লেজার্স দিয়ে আবার আমাদের গলিতে এসেছিল সে। আগেই বলেছিলাম ওর মামা এবং বাচ্চা ছেলেটা একই বিল্ডিংয়ে থাকে। সেই বিল্ডিংয়ে বাচ্চা ছেলেটার বাসায় নিজে থেকেই গিয়েছিল মিঃ বিন। ওর বাবা-মাকে বলেছিল যে সে আমাকে দেখেছে ছেলেটাকে পানিতে চুবিয়ে মারতে। আর বাচ্চা ছেলেটা এতই চুবানি খেয়েছিল যে সে ভুলেই গিয়েছিলে কে তাকে পানিতে চুবিয়েছে। মিস্টার বিন যেহেতু আমাদের বাসা চিনে তাই সে নিজেই ছেলেটার বাবা মাকে আমাদের বাসায় নিয়ে এসেছিল বিচার দেওয়ার জন্য। আর আমার বাবাও নির্বোধের মতো পুরোটা বিশ্বাস করে অপমানিত হয়ে ক্ষোভ প্রশমিত করেছেন আমাকে মেরে। মার খেয়ে শরীর অবশ হয়ে গিয়েছে। তাই এসব কথা ভেবে মিঃ বিনকে শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম টেরই পেলাম না!

এখন বিকাল চারটা বাজে। বর্ষাকাল হওয়ায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। দুপুর থেকে বৃষ্টি নেই তবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে দশ-বারো বছর আগের সেই বর্ষার বিকেলের মতো। বারান্দায় বসে বাহিরের দিকে চেয়ে সেই বিকেলের কথা মনে পড়তে নিজের অজান্তেই হেসে দিলাম। এই গলি তো দূরের কথা গোটা এলাকাতেই আর কোন খালি প্লট নেই। তাছাড়া সিটি কর্পোরেশনের কল্যাণে এলাকার আর কোথাও পানি জমে না। মিস্টার বিনকেও দেখিনা প্রায় সাত-আট বছর হয়ে গেছে। আজকের বিকেলটা সেই বিকেলের মত হলেও আজকের বিকেলের ঘটনাগুলো সেই বিকেলের মত হবে না ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:০৪

কল্পদ্রুম বলেছেন: শিরোনাম পড়ে কমিক্যাল কিছু হবে ভেবেছিলাম।মূল লেখাটা অন্যরকম।

২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:০৪

মেহেদী হাসান শাহাদ বলেছেন: একটু কমিক ধাঁচের করে লিখতে চেষ্টা করেছিলাম। আশাহত করে থাকলে দুঃখিত! আসলে প্রথম লেখা তো...

২| ২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:২৯

শেরজা তপন বলেছেন: মিঃ বিনের কোন বিহিত করেছিলেন? বাবার পিটুনি'টা বেশী হয়ে গিয়েছিল।
ভাল লাগল

২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:০৫

মেহেদী হাসান শাহাদ বলেছেন: মিঃ বিনকে পরে আমি নিজেই ছেলেপেলে নিয়ে একইভাবে পানিতে চুবিয়েছিলাম!

৩| ২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:১৬

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: প্রথম লেখা হিসেবে কিছুটা দীর্ঘ বৈকি।
যাক, শুভ কামনা রইল।

২৩ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৪৯

মেহেদী হাসান শাহাদ বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: শিরোনাম আমাকে বিভ্রান্ত করেছে।

২৩ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৫০

মেহেদী হাসান শাহাদ বলেছেন: দুঃখিত এই জন্য। বুঝতে পারিনি এই শিরোনাম এতোটা বিভ্রান্তিকর হবে।

৫| ২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১১:৩১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
চমৎকার স্মতিচারণ!!

২৩ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৫১

মেহেদী হাসান শাহাদ বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ২৩ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১:০৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: স্মৃতি আসলে রসগোল্লো । মজাদার খুব।

২৩ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৫১

মেহেদী হাসান শাহাদ বলেছেন: আসলেই তাই!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.