নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ নাসের

মোহাম্মদ নাসের › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুর্জোয়াদের অবস্থান দিয়ে নয়, নিজস্ব আদর্শের কষ্টি পাথরে যাচাই করে বামদেরকে পথ চিনে নিতে হবে

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫১

সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকার পাতায়, ব্লগে, ফেসবুকে কতিপয় বুদ্ধিজীবীকে বামপন্থী-কমিউনিস্ট দলগুলোকে, বিশেষ করে সিপিবি-বাসদকে উপদেশ দিতে দেখা যাচ্ছে,নানান ধরনের যুক্তি দিয়ে বুঝান হচ্ছে-যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর করার জন্য, জঙ্গীদের উত্থান রোধ করার লক্ষ্যে মহাজোট-জোটের দ্বন্দ্বে মহাজোটের পক্ষ নেওয়া উচিত; তাদের প্রশ্ন ও মন্তব্য দেখুন-

“১) যতটুকু শক্তি আছে, নির্বাচন হলে বিএনপি জামাত ক্ষমতায় যাবে, সেটা তারা চায় কি-না?

২) যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে জামাত বিএনপি ভয়ঙ্কর কতগুলো কাজ করে। মাথা থেতলিয়ে নির্মমভাবে ডজন খানেক পুলিশ হত্যা করে, এমনিতে হত্যা, জ্বালাও পোড়াও, ককটেল ও দা-কুড়াল কারখানা, হেফাজতের তান্ডব, রগকাটা – এসব মিলিয়ে ওরা অতি রকম সক্রিয় হয়ে উঠেছে, তার পরিণতিতে সিপিবি অফিসে ভয়ানক আগুন দিয়েছে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেদ ক্ষিণাঞ্চলে যত লোমহর্ষক কান্ড ছিল সব করেছে। এবার ক্ষমতা পেলে সে পরিস্থিতি কি কমবে? সিপিবি কি নিরাপদ থাকবে?যুদ্ধাপরাধের বিচারের বাকী কাজ কি শেষ হবে?বরং সকলকে কি ছেড়ে দিবেনা?সেক্ষেত্রে গণজাগরণমঞ্চের মত বিচারটা শেষকরা একটি আন্দোলন না?বর্তমান নির্বাচন কি সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ এক আন্দোলন না?



৩) মিশর গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা পেয়েও ১বছরের মাথায় কি ভয়ানক পরিস্থিতিতে চলেগেল।বিএনপি জামাত ক্ষমতায় আসলে সেরকম হবেনা তার নিশ্চয়তা কি?গণতন্ত্র কি সব কিছুর সমাধান দেয়?



৪) বরং বিএনপি জামাত আগামী ৫ বছর ক্ষমতায় না থাকলে যুদ্ধাপরাধের বিষয়টির একটিস্থায়ী সমাধান হয়ে যাচ্ছে নিশ্চিত। সে বিষয়ক যন্ত্রণা জাতিকে আর ভোগাবে না। বরং সামনের ৫ বছরে এ সুত্রে স্বাধীনতার শত্রু জামাত শিবির সন্ত্রাস করার ক্ষমতা পুরো হারিয়ে ফেলবে। এরকম একটা হিসেব সাধারণ মানুষ থেকে পথে ঘাটে ও শুনা যায়। এ হিসেবটা সিপিবি ভুল বলে কিভাবে?

সব কিছু থেকে এটা তাদের কাছে সবচাইতে গুরুত্ব মনে হচ্ছেনা কেন?

---------- সুতরাং কোন সন্দেহ নেই, সিপিবি নেতার ঘোষিত নীতি একেবারেই বেঠিক। এটা হবে আরেকটি বিশাল ঐতিহাসিক ভুল, কোন সন্দেহ নেই”।

তাদের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের জনগণের একমাত্র শত্রু জামাত-বিএনপি’র জোট। মার্কসবাদীরা তা মনে করে না। শত্রু আরও বিস্তৃত, আরও ভয়ঙ্কর। রাজনীতির চাইতে অর্থনীতির ভিত্তিতে শত্রু-মিত্র নির্ধারণ করার উপর বেশী গুরুত্ব দেয় মার্কসবাদীরা।

জনগণের তিন শত্রু-লুটেরা ধনিক শ্রেণী, সাম্প্রদায়িক শক্তি ও সাম্রাজ্যবাদ

জনগণের তিন শত্রু-লুটেরা ধনিক শ্রেণী, সাম্প্রদায়িক শক্তি ও সাম্রাজ্যবাদ; এর মধ্যে আবার প্রধান অভিনেতা, লুটেরা ধনিক শ্রেণী, সহযোগী চরিত্র, সাম্রাজ্যবাদ এবং এদের চামচা-সাম্প্রদায়িক শক্তি।বাংলাদেশে পুঁজিপতি শ্রেণী বাংলাদেশের মানুষের আত্মউন্নয়ন ঘটাতে পারছে না। এখানকার পুঁজিপতি শ্রেণীর উৎপাদন বিচ্ছিন্নতা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্ঠনের উপর তার নির্ভরতা এবং সাম্রজ্যবাদী রাষ্ট্রের পুঁজির কমিশন ভোগসর্বস্বতা তাকে জাতীয় চরিত্র বর্জন করতে বাধ্য করেছে, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। এই বিচ্ছিন্নতা কাটাতে তাকে একদিকে যেমন সাম্প্রদায়িক-ধর্মান্ধ শক্তির সাহায্য নিয়ে জনগণের সংগ্রামী চেতনা ভোতা করে তার প্রতিরোধকে নির্বীয করে ফেলতে হচ্ছে (বিএনপি-আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি-প্রথম আলোর হেফাজতী তোষণ দে্খুন ) ঠিক তেমনি তাকে বেশী করে বিদেশী সম্রাজ্যবাদী-আধিপত্যবাদী শক্তির দাবার ঘুঁটিতে পরিণত হতে হচ্ছে (টিকফা স্বাক্ষর ও রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এই সত্য তুলে ধরছে)। সেকারণেই পঁজিপতি শ্রেণী নিশ্চয় বাংলাদেশের বিকাশে নেতৃত্বের ভূমিকা রাখতে পারেনা।আমাদেরকে বুঝতে হবে – লুটেরা ধনিক শ্রেণীর সবার্থ আর আপামর জনসাধারণের সবার্থ পারস্পরিক বিপরীত। এক ঘাটে জল খাওয়া যায় না। বি এন পি দ্বিধাহীনভাবে লুটেরা ধনিক শ্রেণীর ঘাটে জল খায় তাই তার কাজে দোদুল্যমানতা কম দেখা যায়। আর আওয়ামী লীগ দুই ঘাটে জল খেতে গিয়ে সবকিছু গুলিয়ে ফেলে। আমারা সবাই মিলে কী আপামর জনসাধারণের ঘাটে জল খেতে পারি না?



ইতিহাস কি বলে?

জামাত-শিবিরের এই উত্থানের পিছনে কে দায়ী? মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত জামাত-শিবিরের এই উত্থানের পিছনে আভ্যন্তরীণ কোন রাজনৈতিক শক্তি বেশী দায়ী? বিএনপি? না। সাপের কামড়ে অসাবধানী অলস বাগান মালিক নিহত হলে সাপকে দোষ দেওয়া না।সাপের স্বভাব কামড়ান, সে কামড়াবে। পরাজিত মুসলিম লীগ অনুকূলে নূতনভাবে আবির্ভূত হবেই। বাগান মালিক অলস, নিয়মিতভাবে জঙ্গল সাফ করেনি; সে অসাবধানী, সাথে লাঠি রাখেনি। সে নিজেই তার মৃত্যুর জন্য দায়ী। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গনঅভ্যুথানের সিড়ি বেয়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ মুক্তির সম্ভাবনা সৃষ্টি করলেও সে সম্ভাবনা মাত্র সাড়ে তিনবছরে সাম্প্রদায়িক সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাতে নষ্ট হল।দু’শ বছরের উপনিকেশিক ব্রিটিশ শক্তির হাতে গড়া রাষ্ট্রযন্ত্র,১৯৭১-এর পরাজয়ের মধ্যদিয়ে তার মূলভিত্তি, পশ্চিম পাকিস্তনের আমলা-সামন্তশ্রেণীর প্রত্যক্ষ সমর্থন হারিয়ে দুর্বল হলেও কেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী শাক্তি তাকে নিজের স্বার্থে পরিবর্তিত করতে ব্যর্থ হল? বর্তমানে সেই গণবিরোধী রাষ্ট্র আরও ভয়াঙ্কর হয়ে জনগণকে গ্রাস করতে বসেছে, তার শত শূর বিস্তৃত করে এজনপদের হাজার বছরের মানবিক ধারাকে বিধ্বস্ত করে ফেলেছে। এই ব্যর্থতা কী আওয়ামী লীগের না?১৬ ডিসেম্বার থেকে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত জামাত-শিবিরের আশ্রয় দাতা হয়নি? ব-কমিউনিস্ট শক্তি কি লজ্জাজনক ব্যর্থতার পরিচয় দেয়নি? তারা কেন ল্যাটিন আমেরিকার বা ইন্দোচীনের কমিউনিস্টদের মত জাতীয়তাবাদীদের দুর্বলতা পূরণ করতে পারে নি। স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সিপিবি তো প্রত্যেকটি রাজনৈতিক বাঁকে আওয়ামী লীগের সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছিল তাতে লাভ হয়েছে কি? এমনকি আশির দশকে গ্রাম বাংলায় যখন সিপিবি ক্ষেতমজুর আন্দোলনের মাধ্যমে বিস্তৃতি লাভ করছিল প্রায় সর্বত্র জামাত তার মূল বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল, আর ব্যতিক্রমহীনভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ জামতের পক্ষ নিচ্ছিল তখনও গাঁটছড়া রক্ষার সবার্থে ক্ষেতমজুর আন্দোলনের রাশ টেনে ধরেছে সিপিবি’র তৎকালীন নেতৃত্ব ।তাতে সিপিবি দুর্বল হয়েছে, সুবিধাবাদী নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে।জনগণের শক্তি দুর্বল হয়েছে। জামাতসহ ধর্মান্ধ দলসমুহ শক্তিশালী হয়েছে। বিএনপি জনপ্রিয় হয়েছে।আওয়ামী লীগ বিএনপিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ক্ষতি, অপরিমেয়। সুবিধাবাদী রাজনীতি বিপ্লবী দলকে অবিপ্লবী করে-এটাই মার্কসবাদের শিক্ষা।

পুঁজিবাদী বিশ্ব যতই সমস্ত ত্রুটিসহ ( বেকারত্ব, বৈষম্য, আগ্রাসী ভোগবাদ) ) শক্তিশালী হচ্ছিল ততই দেশে দেশে নানান ধরনের সাম্প্রদায়িকতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছিল। এই প্রক্রিয়া ক্রমশ অগ্রসরমান হয়ে ভয়ংকর হয়ে দেখা দিয়েছে।যে দেশে রাজনৈতিক সচেতন মেহনতি মানুষ যত অসংগঠিত এবং শিক্ষিত মধ্যবিত্ত যত মেরুদণ্ডহীন সে দেশে নানান ধরনের সাম্প্রদায়িকতা তত বেশী প্রকট। বাংলাদেশ তার জাজ্বল্যমান উদাহরণ।১৯৭৩ সালে সৌদি রাজপরিবারের হাতে পেট্রো ডলারের সঞ্চয় এবং সৌদি রাজ পরিবারের সাথে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আঁতাত মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে, ধর্মান্ধতাকে প্রভূত শক্তি যুগিয়েছে, এখনও যোগাচ্ছে। ১৯৫৩ সালে মোসাদ্দেকের ইরানে, ১৯৬৫ সালে সুকর্ণের ইন্দোনেশিয়ায় এবং ১৯৭১ এ পাকিস্তানে সাম্রাজ্যবাদ-মুসলিম মৌলবাদের একত্রে প্রগতিশীদের রক্তে হোলি খেলা আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়।সামগ্রিকভাবে বলা যায়-বহিস্থ ও অভ্যন্তরীণ উভয় উপাদানই ধর্মের উদারনৈতিকতার বিপরীতে সংকীর্ণতা-জঙ্গীপনা বিকাশে ভূমিকা রাখে। তাই মনে রাখতে হবে, কোন উপাদানকে অবহেলা করে কোন ধর্মতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা যাবে না। অথচ আমরা, অতীতে তাই করেছি, এখনও সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারি নি। ইসলামী ধর্মতন্ত্র সমর্থকরা, সমগ্র জনগোষ্ঠীর কত অংশ? বিভিন্ন নির্বাচনের ফলাফল, মাদ্রাসার বিপুল বৃদ্ধি এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সাক্ষ্য দেয়, ১২ থেকে ১৫শতাংশ মানুষ তাদের সমর্থক। জনসমর্থনের চাইতে এর সাংগঠনিক ও আর্থিক শক্তি আরও বেশি। ক্রমবর্ধমান মাদ্রাসাগুলোর অধিকাংশ এবং জনগণবিরোধী বৃটিশ-পাকিস্তান আমলের রাষ্ট্র সামগ্রিকভাবে মৌলবাদের সহায়ক; এই কারণে রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে তারা আসীন। তারা প্রচণ্ড রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড করেও পার পেয়ে যায়। লুটেরা ধনিক শ্রেণী তাদের শোষণের স্বার্থে মৌলবাদী ধর্মান্ধশক্তিকে জনগণের আন্দোলনকে স্তিমিত করার লক্ষ্যে টিকিয়ে রাখতে চায়, তাই আমরা দেখি জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরাট অংশ গোড়া থেকে মৌলবাদী শক্তিকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছে। এখন যখন মৌলবাদ তাদের গিলে খেতে উদ্যত তখন তারা আত্মসমর্পণমূলক মনোভাব পোষণ করছে। সামগ্রিক বাঙালী সংস্কৃতিবিরোধী সাম্প্রদায়িকতা নির্ভর মুসলিম জাতীয়তাবোধ মৌলবাদের সমর্থন ভূমি হিসেবে কাজ করছে। এক হিসেবে দেখা যায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রায় ষাট শতাংশ মানুষ এই ভাবাদর্শের পরিমণ্ডলে আবদ্ধ রয়েছে। সমাজের উঁচু স্তরের কিছু মানুষ ধর্মতন্ত্রীদের সমর্থন করলেও ধর্মতন্ত্রীদের সামাজিক শক্তি হিসেবে কাজ করে মাদ্রাসাগুলোর ছাত্রসমাজের বিরাট অংশ, ইমামদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ, গ্রাম ও শহরের বিত্তহীন জনসাধারণের একটা অংশ। ধর্মতন্ত্রীদের তার সামাজিক শক্তি এবং রাষ্ট্র থেকে উৎখাত করা ছাড়া তাদেরকে দুর্বল করা সম্ভব কি? নিশ্চয় না। তবে সেটা কি করে সম্ভব?

উত্তরণের কোন কোন সহজ পথ নেই, বন্ধুরা

মার্কসবাদের অন্যতম শিক্ষা: কোন শক্তিশালী সামাজিক অর্থনৈতিক শ্রেণীর সক্রিয় সমর্থন ছাড়া কোন সামাজিক আদর্শ বা সংস্কৃতি সমাজে প্রাধ্যান্য বিস্তার করতে পারে না। আমাদের অবশ্যই বের করতে হবে কোন শ্রেণী যে তার নিজের স্বার্থের প্রতিফলন দেখবে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র মাঝে। এরসাথে চিনতে হবে সেই সামাজিক শ্রেণী-গোষ্ঠীকে যার অর্থনৈতিক স্বার্থ নিহিত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চেনতায়।” আমাদের অনুধাবন করা প্রয়োজন-যে মুসলিম মধ্যবিত্তের অনুপস্থিতির কারণে গত শতাব্দীর ত্রিশ দশকের মুক্তবুদ্ধির আন্দোলন ঢাকার নওয়াব পরিবারের কাছে পরাজিত হয়েছিল, সেই মুসলিম মধ্যবিত্তের বিকাশ ও অনুকূল পরিস্থিতির কারণেই ৭১’এ নওয়াব পরিবারের উত্তরসূরীদেরকে মুক্তবুদ্ধি পরাজিত করেছিল। আবার মধ্যবিত্তের বিশেষ ও সাধারণ সীমাবদ্ধতাই সেই জয়কে ধরে রাখতে দেয় নি।

যারা বাঙালীত্বের সামগ্রিক বিকাশ চায় যা ছাড়া বাংলাদেশের বিকাশ সম্ভব নয় তাদেরকে সমাজের অন্য শক্তি-মেহনতি শ্রমিক ক্ষেতমজুর-কৃষকের উপর ভর করতে হবে। তাদেরকে বুঝতে হবে চীন-ভিয়েতনামের মত জাতীয় বিকাশের দায়িত্ব এসে পড়েছে মেহনতি শ্রেণীসমূহ এবং তাদের প্রতিনিধিত্বকারী রাজানৈতিক শক্তির উপর। আজ দেশে চেপে বসা সাম্প্রদায়িক-সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে নতজানু মহাজোট-জোটের জগদ্দল পাথরকে সরাতে হলে মেহনতি জনগণের অভ্যুত্থান ছাড়া ভিন্ন কোন পথ খোলা নেই । কেবল মাত্র নির্বাচন বা যেনতেনভাবে ক্ষমতায় গিয়ে সাম্প্রদায়িক-সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর জগদ্দল পাথরের শক্তির হানি সম্ভব নয়। পাঠকবৃন্দ নিশ্চিয় ভুলে যান নি-এরশাদোত্তর বিএনপি সরকারের চরম ব্যর্থতা সত্ত্বেও’ ৯৬ এর নির্বাচনে ৯১’ এর তুলনায় বিএনপির চার শতাংশ ভোট কমেছিল, ১২ জন কৃষক পুলিশর গুলিতে নিহত হওয়া সত্ত্বেও উত্তরবঙ্গের কৃষককুল বিএনপিকে জিতিয়েছিল। আওয়ামী লীগের পাঁচ বছরের শাসন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তো শক্তিশালী করতে পারে নি, বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি আজ আরও সংহত হয়ে অবশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাৎ করতে উদ্যত হয়েছে। বর্তমান জনগণবিরোধী রাষ্ট্র ও তার প্রতিষ্ঠানসমূহকে আমূল বদলিয়ে, চেপে-বসা ধর্মান্ধ-লুম্পেন শাক্তি ও আর্ন্তজাতিক বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকে পরাভূত করে বাংলাদেশের বিকাশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনতে পারে কেবল মেহনতি জনগণের সংগঠিত অভ্যুত্থান, তার সচেতন নেতৃত্ব এবং মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তের সচেতন সৎ মেধাবী ও সৃজনশীল অংশ।যে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চিন্তা করলে বাক্যটির সত্যতা অনুধাবন করা হবে এ পথ কঠিন ও শ্রমসাধ্য এবং একমাত্র সম্ভাব্য পথ। এ পথ সহজ সরল নয়, আঁকাবাকা-বন্ধুর। এ পথ অতিক্রম করার ক্ষেত্রে সাধারণ মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত এবং তার প্রভাবিত রাজনৈতিক শক্তি বারবার হোচট খাবে, ভুল দিকে হাটবে। আজ পর্যন্ত ‘‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’’র দাবীদার রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনগুলোর করা ভুলগুলোও একইভাবে একই কারণে ঘটছে। তাদের শ্রেণীগত সীমাবদ্ধতা এই ধরণের প্রবণতার মূল হেতু।

প্রকৃত বামশক্তিকে শ্রেণীগত সীমাবদ্ধতার সৃষ্ট ফাঁদ এড়িয়ে পথ প্রদর্শকের ভুমিকা নিতে হবে। বুর্জোয়াদের অবস্থান দিয়ে নয়, নিজস্ব আদর্শের কষ্টিপাথরে যাচাই করে তাকে পথ চিনে নিতে হবে। বাঙালীত্বকে ধারণ করে তাকে আর্ন্তজাতিক হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। এই জনপদের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে ‘বাঙালীত্ব’ যতখানি বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক তার চাইতে বেশী সমাজতান্ত্রিক-গনতান্ত্রিক। দুঃজনক হলেও সত্য- এখনও বাম-কমিউনিস্ট শক্তির মাঝে এই চেতনার ক্ষেত্রে ভয়ানক ঘটতি দেখা যায়। এই দুর্বলতা যত তাড়াতাড়ি কাটে ততই দেশের জন্য মঙ্গলজনক। মনে রাখতে হবে ‘বাঙালীত্ব’ রক্ষার নামে বুর্জোয়াদের উপর নির্ভরতা যেমন ডান সুবিধাবাদ তেমনি শ্রেণীসংগ্রামের নামে, আন্তর্জাতিকতাবাদের অজুহাতে ‘বাঙালীত্ব’কে অস্বীকার করা পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে সব সময় বুর্জোয়া শ্রেণীর উভায়াংশ থেকে সমদূরত্বের নীতিগ্রহণ নৈরাজ্যবাদ-বাম হঠকারিতা-চরম নির্বুদ্ধিতা যা শেষ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িকতায় বা তার মিত্রতায় পযবসিত হতে বাধ্য। আমাদেরকে বুঝতে হবে-বিশ্বপুঁজিবাদের বর্তমান ব্যবস্থায় ফ্রান্স-জার্মানী-যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি পুঁজিবাদী কেন্দ্রে নিপীড়িক জাতীয়তাবাদ নয়, বাম-কমিউনিন্টেদের মূল আদর্শ হিসাবে আন্তর্জাতিকতাবাদ বাস্তবসম্মত ও অপরিহার্য এবং এই আন্তর্জাতিকতাবাদ জাতীয়তাবাদকে অস্বীকার করে গড়ে ওঠবে; বাংলাদেশের মত প্রান্তিস্থ দেশগুলোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকতাবাদের মূর্ত রুপে জাতীয় আশা-আকাঙ্খা ধারণ ও নিপীড়িত জাতীয়তাবাদেও সাথে মৈত্রী স্থাপন।





উত্তরণের কোন কোন সহজ পথ নেই, বন্ধুরা।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.