নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিলগিরি

খুবই খুশী এটার সদস্য হলে ।

মনিবেস্ট

আমি এই সাইটের সদস্য হতে চাই । আমি খুবই আগ্রহী । আমি লিখতে চাই।

মনিবেস্ট › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাকালুকি হাওড়

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৩০

হাকালুকি হাওড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম বৃহৎ মিঠা পানির জলাভূমি। পশ্চিমে ভাটেরা পাহাড় ও পূর্বে পাথারিয়া মাধব পাহাড় বেষ্টিত হাকালুকি হাওড় সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার ৫ টি উপজেলায় বিস্তৃত। ছোট বড় প্রায় ২৩৮টির ও বেশী বিল ও ছোট বড় ১০টি নদী নিয়ে গঠিত হাকালুকি হাওর বর্ষাকালে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর এলাকায় পরিণত হয়। এই হাওড়ে বাংলাদেশের মোট জলজ উদ্ভিদের অর্ধেকর ও বেশী এবং দেশের গুরুত্বর্পূন ও সংকটাপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতী পাওয়া যায়।

হাকালুকি হাওড় পরিবেশ বান্ধব পর্যটন উন্নয়নের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। এই হাওড় প্রাকৃতিক সৌদর্র্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি। হাকালুকি হাওড় বছরের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে।

শীত মৌসুমে হাওড়ের দিগন্ত বিস্তৃত প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই দৃষ্টিনন্দন। বিলের জলের মাঝে ও চারিধারে জেগে থাকা সবুজ ঘাসের গালিচায় মোড়া কিঞ্চিত উচুভূমি বিলের জলে প্রতিচ্ছবি ফেলে সৃষ্টি করে অপরূপ দৃশ্য। সূর্যদয় ও সূর্যাস্তের সময় হাওড়ের জলরাশির মাঝে সূর্যের প্রতিচ্ছবি সত্যই দৃষ্টিনন্দন ও মনঃমুগ্ধকর। শীত কালে হাওড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দের্যকে সমৃৃদ্ধ করে বিভিন্ন ধরণের অতিথি পাখির আগমন ও কলরব। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অতিথি পাখিরা আসে এই হাকালুকি হাওরে খাদ্য ও আবাসস্থলের সন্ধানে এবং বেছে নেয় বিভিন্ন বিল, নদী, খাল, কৃষিভূমি ও বিস্তৃত প্রান্তর তাদের শীতকালীন নিরাপদ আবাসস্থল রুপে। হাকালুকি হাওড় পরিণত হয় দেশীয় ও অতিথি পাখির মিলন কেন্দ্রে।

বর্ষাকালে হাকালুকি হাওড়ের ২৩৮টি বিল ও ১০টি নদী একীভূত হয়ে রুপ ধারণ করে সাগরের ন্যায় এক বিশাল জলাশয়ের। এ সময় হাকালুকি হাওড়ের বিলের পাড় ও কান্দায় বিদ্যমান জলাভূমিবন পানির নিচে ডুবে গিয়ে সৃষ্টি করে ডুবন্ত বন যা ব্যবহৃত হয় মাছের আশ্রয়স্থল হিসাবে। বর্ষাকালে হাকালুকি হাওড় পাড়ে বসবাসরত মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয় এক অন্যরকম উন্মাদনা, যোগাযোগ ব্যবস্থা হয সহজ, যোগাযোগের বাহন হিসাবে স্থান করে নেয় দেশীয় দাঁড়বাহী ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা। জেলেরা মেতে ওঠে মাছ ধরার উৎসবে, বিভিন্ন প্রকার সামাজিক আচার অনুষ্ঠান এই সময অনুষ্ঠিত হয় । হাকালুকি হাওড়ের জীববৈচিত্র্যের ভাণ্ডারও অত্যন্ত সমৃদ্ধ।



পরিচ্ছেদসমূহ

• ১ নামকরণ

• ২ উদ্ভিদবৈচিত্র্য

• ৩ বাথান পদ্ধতি

• ৪ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

• ৫ আরো দেখুন

• ৬ তথ্যসূত্র

নামকরণ

"সাগর" শব্দটি থেকে "হাওর" শব্দের উৎপত্তি[৪] বলে ধরে নেয়া হয়।[৩] তবে "হাকালুকি" নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন লোককাহিনী রয়েছে:

জনশ্রুতিমতে, বহু বছর আগে ত্রিপুরার মহারাজা ওমর মানিক্যের সেনাবাহিনীর ভয়ে বড়লেখার কুকি দলপতি হাঙ্গর সিং জঙ্গলপূর্ণ ও কর্দমাক্ত এক বিস্তীর্ণ এলাকায় এমনভাবে লুকি দেয় বা লুকিয়ে যায় যে, কালক্রমে ঐ এলাকার নাম হয় "হাঙ্গর লুকি", ধীরে ধীরে তা "হাকালুকি"-তে পর্যবসিত হয়। আরেকটি জনশ্রুতি অনুযায়ী প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রচন্ড এক ভূমিকম্পে "আকা" নামে এক রাজা ও তাঁর রাজত্ব মাটির নিচে সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়। কালক্রমে এই তলিয়ে যাওয়া নিম্নভূমির নাম হয় "আকালুকি" বা হাকালুকি। আরো প্রচলিত যে, এক সময় বড়লেখা থানার পশ্চিমাংশে "হেংকেল" নামে একটি উপজাতি বাস করতো। পরবর্তিতে এই "হেংকেলুকি" হাকালুকি নাম ধারণ করে। এও প্রচলিত যে, হাকালুকি হাওরের কাছাকাছি একসময় বাস করতো কুকি, নাগা উপজাতিরা। তাঁদের নিজস্ব উপজাতীয় ভাষায় এই হাওরের নামকরণ করা হয় "হাকালুকি", যার অর্থ 'লুকানো সম্পদ'।[২]

উদ্ভিদবৈচিত্র্য

হাকালুকি হাওরের স্থায়ী জলাশয়গুলোতে বিভিন্ন জাতের উদ্ভিদ জন্মে। এক সময়ের অন্যতম আকর্ষণীয়, ভাসমান বড় বড় গাছপালা (swamp forest) এখন আর নেই। চাতলা বিল-এ ছোট আকারের এরকম একটি বন আছে (২০০০ খ্রিস্টাব্দ)।

বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী পাওয়া যায় এই হাওড়ে। নিম্নে হাওড়ের জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে আংশিক তথ্য দেয়া হল: উদ্ভিদ : ৫২৬ প্রজাতি ,মোট পাখী : ৪১৭ প্রজাতি, তন্মন্ধে ১১২ প্রজাতির অতিথি পাখী ও ৩০৫ প্রজাতির দেশীয় পাখী,অনান্য বন্যপ্রাণী :১৪১ প্রজাতি, মাছ : ১০৭ প্রজাতি, তন্মদ্ধে ৩২ প্রজাতি বিভিন্ন পর্যায়ে বিপদগ্রস্থ । এছাড়াও রয়েছে নানান ধরনের কীটপতঙ্গ, জলজ ও স্থলজ ক্ষুদ্র অনুজীব। গুল্ম, জলজ উদ্ভিদ ও কৃষিঃ- বিষ্ময়কর বেশ কিছু গুল্ম দেখা যায় হাকালুকি হাওড়ে। বিলুপ্ত প্রায় অনেক জলজ উদ্ভিদ দিব্যি কালের সাক্ষী হয়ে এখনো বেঁচে আছে এই হাওড়ে। হিজল, করচ, নলখাগড়া সহ কয়েক প্রজাতির গুল্ম বছরের পাঁচ মাস জীবন বাঁজী রেখে পানির নিচে থেকেও অলৌকিকতার আদলে বেঁচে থাকে। এগুলো বিভিন্ন বিলের কান্দায় ৮০০-১০০ হেক্টর ডিগ্রেডেড জলাভুমিতে দেখা যায়। এগুলোর সাথে প্রচুর বনতুলশী, আরাং, ছিটকি ফার্নে গুল্ম আকারে এবং বনলত ও শতমূল গাছ লতার আকারে একটা আরেকটার সাথে জড়াজড়ি করে অবস্থান করে। এছাড়া প্রচুর জারুল হাওড়ের বিভিন্ন এলাকায় জন্মে। জলজ উদ্ভিদের মধ্যে পানিফল/সিঙ্গারা, মাখনা, ফুটকি, ছোট কুট, পানচুলি/চাঁদমালা, ঘেচ, মালঞ্চ, শাপলা, কম্বল/রক্ত কম্বল, নিল পদ্ম/রক্ত কম্বল, সুন্দি, কচুরী পানা, টোপা পানা উল্লেখযোগ্য। গভীর পানিতে ফলে এরকম কিছু আদি ধানের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায় হাকালুকি হাওড় এলাকায়। এগুলো বেশীরভাগ ধানের জাত ভারতের। গভীর জলের ধান হিসাবে গভীর জলি আমন ধান, কালা পুরা, বাগদার, হাসবাদাল,পরিচক, আইনা, কার্তিকা উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য ধানের মধ্যে বোরো ধান, রাতা বোরো, খইয়া বোরো, কন্যা শাইল, পশু শাইল অধিক হারে ফলে। কিছুটা উচু এলাকায় সিলেট এলাকার ঐতিহ্যবাহী বিরুন ধানের কিছু আবাদ হয়। শীতের সময় মৌসুমী ফসল হিসাবে ঐতিহ্যবাহী ফরাস সিমের প্রচুর আবাদ হয় হাওড় পাড়ের জমিতে। এছাড়া গম,শরিষা, চিনা বাদাম, আলু, টমেটো, মরিচ, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, শশা, গাজর, লাল শাক, পাতা কফি, বাঁধা কফি, ওল কফি, মূলা ও তিষি চাষ হয়ে থাকে। মূলতঃ সবজী চাষ ইদানিং কালে কিছু অন্য এলাকার (আঞ্চলিক ভাষায় আবাদী) লোকজন গিয়ে অধিক হারে চাষ করা শুরু করেছে। সরকারী সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহ এ ব্যপারে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করছে হাওড়ের অনাবাদী জমি সমূহে ফসল ফলানোর জন্য। কুলাউড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর সাহেবের তদারকী ও সরাসরি দিক নির্দেশনায় বর্তমানে সবজী চাষে বিপ্লব ঘটাতে চলছে হাওড় অঞ্চলের কৃষকরা। হাকালুকি হাওড়ে শুকনা মৌসুমে গরু ও মহিষের পালন চলে অদ্ভুদ সুন্দর নিয়মে। এক একজন রাখাল ১০০-২০০ গরু পালন করে এই হাওড়ে। গরু বা মহিষের মালিকেরা মাস চুক্তি পশু প্রতি ১০০ টাকা করে রাখালকে বুঝিয়ে দেয়। রাখাল শুকনার সময় ঐ পশু সমূহকে পালন করে নিজের মত করে। বর্ষাকাল এলে মালিকেরা তাদের পশু গুলো ফেরৎ নিয়ে যায়। গরু মহিষ গুলো দিনে রাতে হাওড়েই থাকে রাখালের সংগে। নিয়ে যায়। গরু মহিষ গুলো দিনে রাতে হাওড়েই থাকে রাখালের সংগে। সত্যিকারের কাউ বয় দেখতে হলে হাকালুকি হাওড়ে যেতে হবে। সেখানে রাখালের হাতে এখনো বাশেঁর বাঁশি থাকে। দুপরের রোদে হিজল গাছের তলে বসে আপন মনে রাখাল তার বাঁশিতে প্রাণের সুর তুলে গান গায় হাকালুকি হাওড়ে। রাতে গরু-মহিষগুলো এক যায়গায় গুচ্ছ হয়ে শুয়ে রাখালের বাঁশির সুরে গান শুনে ঘুমিয়ে পড়ে।

-

ইকো-ট্যুরিজমের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় আমাদের হাকালুকি হাওড়সহ ৭টি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা। উপরোক্ত প্রাকৃতিক উপাদান ছাড়াও রয়েছে স্থানীয় পেশাজীবি মানুষের ইতিহাস, সামাজিক আচার, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ।

বাথান পদ্ধতি

হাকালুকি হাওরের বিশাল প্রান্তরে শুষ্ক মৌসুমে অবাধে বিচরণ করে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা গরু-মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি। হাওর উপকূলবর্তি এলাকার লোকজন, ফসল উঠে গেলে বছরের শুষ্ক মৌসুমের নির্দিষ্ট কয়েক মাস তাদের গৃহপালিত গবাদি পশু পাঠিয়ে দেন হাওরে বসবাসরত একশ্রেণীর মানুষের কাছে, যারা এগুলোর তত্ত্বাবধান করে। এই কাজের বিনিময়ে এরা দুধ পায়। মেয়াদ শেষে প্রকৃত মালিক এসে গরু-বাছুর ফেরত নেয়। এই পুরো ব্যবস্থাকে হাওর এলাকায় "বাথান" বলা হয়। বাথানের মালিকেরা এসকল গবাদি পশুর দুধ বিক্রী করে প্রচুর উপার্জন করে থাকেন। একারণে হাকালুকি হাওর এলাকা স্থানীয়ভাবে দুধ ও দৈ-এর জন্য বিখ্যাত।[২]

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব





বাংলাদেশের মৎস সম্পদের একটা বড় অংশ রয়েছে হাওরাঞ্চলে, তন্মধ্যে হাকালুকি হাওর এলাকায় অধিকাংশ বিল ভরাট হয়ে গেছে। দুটি জরিপ থেকে জানা যায় (পরিপ্রেক্ষিত ২০০৯): ২৮১টি বিলের মধ্যে সম্পূর্ণ ও আংশিক ভরাট হয়ে গেছে ২৩৩টি বিল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় কমে যাচ্ছে হাওরাঞ্চলের বিলগুলোতে পানির পরিমাণ। ফলে যে বিলগুলো এখনও টিকে আছে, সেগুলোতে পানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়ায় হুমকির মুখে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রাপ্তিযোগ্যতা। এছাড়া সময়মতো বৃষ্টি হয় না, বা যখন হয়, তখন একসাথে অতিবৃষ্টি হওয়ার ফলে হাওর পানিতে ভরে গেলেও তা স্থায়ী হয় না, ফলে মাছ আসে না। এতে মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। অভিজ্ঞদের বক্তব্য থেকে এর বিস্তারিত কারণ যা জানা যায় তা হলো, সময়মতো পানি না হলে মাছ ডিম ছাড়তে পারে না। বৃষ্টি হলে পানির তাপ কমে, এসময় মাছ ডিম ছাড়ে। বদ্ধ পানিতে উত্তাপ বেশি থাকে, তাই সময়মতো বৃষ্টির খুব বেশি দরকার।[৫]

হাকালুকি হাওরে সাধারণত দুধরণের গাছ জন্মে: শেকড়ধারী (rooted) আর ভাসমান। হাওরে পানি কম হলে শেকড়ধারী উদ্ভিদের পরিমাণ বেড়ে যায়। এভাবে একপ্রকারের গাছ বেশি হলে অন্যপ্রকারের গাছ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আবার একপ্রকারের গাছ থেকে পশু-পাখি-মাছ পর্যাপ্ত সকল খাদ্য উপাদান পায়ও না। হাওরাঞ্চলে আগে যেখানে গভীর জঙ্গল ছিলো, এখন (২০০৯) সেখানে ধুধু করছে উদম হাওর। স্থানীয়দের অভিমত থেকে জানা যায় বদলে গেছে চেনা হাওরাঞ্চলের রূপ। এখন আর সময়মতো বৃষ্টি হয় না, যখন হয়, তখন একসাথে অতিবৃষ্টি হয়। এতে হাওর পানিতে ভরে গেলেও তা স্থায়ী হয় না, ফলে জলজ উদ্ভিদ আর প্রাণীবৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখিন। এতে হাকালুকির চিরচেনা হিজল, করস, জারুল, বরুণসহ বৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত জলজ উদ্ভিদের অবস্থা বিপন্ন। এছাড়া পানির অভাবে পানিবাহিত প্রজননের অভাবে অনেক গাছের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে; যেমন: কিছু গাছের ফল গাছে থাকতেই সেগুলোতে শিকড় গজাতে শুরু করে, ফলে সেগুলো বোঁটা ছিঁড়ে নিচে পড়তেই চারা গজানো শুরু করে। নিচে পানি থাকলে ফলগুলো ভাসিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গাছ জন্মাতে পারে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পানির অভাব হলে এক জায়গায় সব ফল পড়ে তেমন কোনো উপকারই হয় না।[৫]

ইকোট্যুরিজম



ইকোট্যুরিজম হচ্ছে কোন এলাকার স্থানীয় জনগনের অংশগ্রহণ ও ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি না করে প্রকৃতিকে উপভোগ করার এমন একটি দায়িত্বপূর্ন ভ্রমণ যা ঐ এলাকার জনগনের ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতির উপর তেমন কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না এবং স্থানীয় জনগনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। ইকোট্যুরিজমে স্থানীয় জনগনের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকায় তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয় এবং ইকোট্যুরিজম হতে অর্জিত আয়ের একটি অংশ ঐ এলাকার পরিবেশের উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব পর্যটনের বিকাশে ব্যবহার হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে পর্যটন একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় শিল্প। দিন দিন এই শিল্পে বিনিয়োগ বেড়েই চলেছে। এতে সর্ববৃৎ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড জড়িত বলে ধারনা করা হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পর্যটন শিল্প তাদের জিডিপির এক বৃহৎ অংশ দখল করে আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, কেনিয়া তার জিডিপির ১০% আয় করে পর্যটন শিল্প থেকে যার আর্থিক মূল্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার। আর, অপরদিকে আফ্রিকার কোষ্টারিকা ৩৩৬ মিলিয়ন ডলার আয় করে থাকে যা জিডিপির ২৫%। পর্যটন শিল্পের আয় ষ্টিল, গাড়ী, ইলেকট্রনিকস কিংবা কৃষিখাত থেকে বৃহৎ। এক হিসাবে দেখা যায় যে, প্রতিবছর সারা পৃথিবীতে ৪০০০ মিলিয়ন মানুষ ভ্রমন করে থাকে যা থেকে সারা বিশ্বে আয় হয় ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এই আয় সারা পৃথিবীর জিডিপির শতকরা ৬%। অতএব ট্যুরিজম/পর্যটন শিল্পকে অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ আমাদের নেই। ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম ইকো-ট্যুরিজম

ইকো-ট্যুরিজম হচ্ছে প্রকৃতি ভ্রমন যেখানে উদ্ভিদ, প্রাণী, জনগণের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য মূল আর্কষন হিসেবে পরিগণিত হয়। ইকো-ট্যুরিজম ভ্রমনকৃত এলাকার জনগণের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদের উপর কম প্রভার বিস্তার করে এবং স্থানীয় প্রকৃতিক সম্পদ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে সহায়তা করে ।হাওড়ে পর্যটন বিকাশে উদ্যোগ

যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এ হাওড়ে সরকারী ও বেসরকারি ভাবে যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনার অভাবে এ পর্যন্ত পর্যটন বিকাশে কোন ধরনের অগ্রগতি হয়নি।

সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা গেলে আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা হিসাবে পরিচিত সিলেট অঞ্চলের এ হাওড়টি দেশের অন্যতম পর্যটন ক্ষেত্রে

পরিণত হতে পারে- যা দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকার পাশাপাশি হাওড়বাসীর জন্য বিকল্প আয় সৃষ্টি, হাওড়ের পরিবেশ উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে। পরিবেশ অধিদপ্তর ‘উপকূলীয় ও জলাভূমি জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে হাকালুকি হাওড়ে পরিবেশ বান্ধব পর্যটন বিকাশে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে

হাকালুকি হাওরে ইলিশ

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন স্বাদু পানির মৎস্য ভাণ্ডার বলে খ্যাত সিলেটের হাকালুকি হাওরে এ বছর (জুন) প্রচুর পরিমাণে ইলিশের সমাগম দেখা যাচ্ছে। অতীতে হাকালুকি হাওরে মাঝে মধ্যে দু’ একটা ইলিশ মাছ নজরে পড়লেও এ বছর এর পরিমান বেশ চোখে পড়ার মত। জানা যায়, আগাম বন্যা ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে এ বছর বেশ আগে ভাগেই হাকালুকি হাওর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে বিভিন্ন জাতের ছোট-বড় স্বাদু পানির মাছ ইতোমধ্যেই ডিম ছেড়েছে। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই জেলেদের জালে হাওরের অন্যান্য মাছের সাথে বেশ কিছু ঝাটকা ইলিশও ধরা পড়ছে। এ বারের আগাম বন্যায় হাওর প্লাবিত হওয়ার সাথে ইলিশের প্রজনন মৌসুম মিলে যাওয়াতে বেশী পরিমাণে ঝাটকা ইলিশ হাওরে ঢুকে পড়ছে বলে মনে করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের উপকূলীয় ও জলাভূমি জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (সিডবিস্নউবিএমপি) কুলাউড়া অফিসের মৎস্য জীববৈচিত্র্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিকী।

প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ পূর্নিমার ৫ দিন আগে এবং ৫ দিন পরে ডিম ছেড়ে থাকে। এসময় দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদী এবং নদীর সাথে সংযোগ আছে এমন কিছু বিল ও হাওড় অঞ্চলে এদের দেখা মেলে। এছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জের কুশিয়ারা নদীতে এ সময়ে অন্যান্য বছরের তুলনায় কম পরিমাণে বর্জ্য পানিতে নিষ্কাশনের কারনে অধিক পরিমাণে ইলিশ মাইগ্রেট করার সুযোগ পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া সরকারের ঝাটকা নিধন বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলেও ইলিশের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করা হয়। ইলিশ মাছ নদীর প্রায় ১২০০-১৩০০ কিঃমিঃ উর্দ্ধে পাওয়া যায় এবং এরা দিনে প্রায় ৭১ কিঃমিঃ পর্যন্ত পরিভ্রমণ করতে পারে। হাওরে প্রাপ্ত এ সকল ইলিশ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফ্রেশ ইলিশের স্বাদ একটু ভাল হলেও তা নদীতে প্রাপ্ত অন্যান্য ইলিশের মত অতটা সুস্বাদু নয় বলে জানা যায়। স্রোতের বিপরীতে চলে আসা এসব ঝাটকা অকালে জেলেদের জালে ধরা না পড়লে হাকালুকিতে এ বছর বেশ ভালই ইলিশ পাওয়া যেত বলে ধারণা করা হয়। পরিপক্ক এক একটা ইলিশ মাছ ওজন ভেদে প্রায় ১.০ -২০.০ লক্ষ পর্যন্ত ডিম দিতে পারে।

প্রশাসনের সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তর ইতোমধ্যেই হাওরের ছোট মাছ নিধন রোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু বিশাল আয়তনের হাওরের তুলনায় তা একেবারেই অপ্রতুল। সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনসহ কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, ফেঞ্চুগঞ্জ এবং গোলাপগঞ্জের উপজেলা প্রশাসন একযোগে কাজ করলে হাওরের মৎস্য সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব বলে স্থানীয়দের ধারণা। এ ক্ষেত্রে জন প্রতিনিধিদের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ অতীব জরুরী। হাকালুকির ছোট মাছ রক্ষায় আশু পদক্ষেপ নেয়া না হলে হাওর পাড়ের মুনাফালোভী মহাজন চক্রের কারণে মৎস্য ভাণ্ডার বলে খ্যাত ‘হাকালুকি’ অচিরেই মৎস্য শূন্য হয়ে পড়বে বলে সকলের ধারণা করা হচ্ছে। আর ইলিশ, সেতো অতিথি পাখির মতই এসেছে আবার সুযোগ পেলে চলেও যাবে হয়ত। তবে তাদের বিচরন ও ফিডিং ক্ষেত্র রক্ষা করা গেলে আমরা বারবারই এদের ফিরে পেতে পারি বলে বিশেষজ্ঞগণ ধারণা পোষণ করেন।



পাখি তথ্যঃ- হাকালুকি হাওড়ে অতিথি পাখি সহ প্রায় ৪১৭ প্রজাতির পাখির সন্ধান পাওয়া গিয়াছে। তম্মধ্যে দেশী প্রজাতি পাখির সংখ্যা ৩০৫ এবং পরিযায়ী(মাইগ্রেটরী) পাখির প্রজাতি ১১২। পাখী শুমারীর তথ্য অনুযায়ী ফেব্রুয়ারী ২০০৭-এ ৪২ প্রজাতির ৫১,৫২৮টি জলচর পাখি গণণা করিয়া পাওয়া গিয়াছিল, ডিসেম্বর ২০০৭-এ ৪০ প্রজাতির ১,২৬,৮৫১টি জলচর পাখি গণণা করিয়া পাওয়া গিয়াছিল, ফেব্রুয়ারী ২০০৮-এ ৪০ প্রজাতির ১,১৪,৪১৭টি জলচর পাখি গণণা করিয়া পাওয়া গিয়াছিল, ফেব্রুয়ারী ২০০৯-এ ৫৩ প্রজাতির ৮৫,৩৩৫টি জলচর পাখি গণণা করিয়া পাওয়া গিয়াছিল। ফেব্রুয়ারী ২০১০-এর শুমারীর তথ্য এখনো প্রকাশিত হয় নাই, তবে ধারণা করা হইতেছে ৫৪ প্রজাতির ৪৮,০০০ এর চেয়ে বেশী সংখ্যক জলচর পাখি গণণা করিয়া পাওয়া গিয়াছে। অতিথি পাখীর মধ্যে বালিহাঁস, লেঞ্জাহাঁস, খোপাডুবুরী, জলকবুতর, চখাচখি, কমন্টিল, নর্দান সোভেলার, ম্যালার্ড, গার্জেনী, গেডওয়াল, বিয়ার্স পচার্ড, কমন পচার্ড, ফেরুজিনিয়াস পচার্ড, রেড ক্রিস্টেড পচার্ড, টাস্টেড ডাক, লিটিল রিংড্ পচার্ড, লেজার সেন্ড প্লোভার, প্যাসিফিক গোল্ডেন প্লোভার, ব্রাউড হেডেড গাল এবং দেশী পাখীর মধ্যে কালেম, সরালী, বউ কথা কও, মাছরাঙ্গা, চিল, ঈগল, পানকৌড়ি, ডাহুক, শালিক, সাঁদা-বঁক, গো-বক, নিশি-বক, দোয়েল, প্যাঁচা উল্লেখযোগ্য। কিছু লোভী পাখী শিকারীদের নিত্য নতুন কৌশল ব্যবহার করিয়া অতিথি পাখি সহ দেশীয় পাখি নির্বিচারে হত্যা করার কারণে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষন আইন, ১৯৯৫ এর আওতায় ১৯৯৯ সালে হাকালুকি হাওড়কে প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। তারপরও কিছু অসাধু পাখী শিকারীরা পাখী বিচরণের অভয়ারণ্য খ্যাত হাকালুকি হাওড়ে অতিথি পাখি নিধন করছেই। ২০০৪ সালে প্রথম মুড়ি ও ধানের সংগে বিষ মিশাইয়া অতিথি পাখিকে কৌশলে খাওয়াইয়া হত্যা করা শুরু হয়। ঐ বৎসর বিষয়টি লোক চক্ষুর গোচর হয়। শুরু হয় পাখী হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে প্রচারণা। দুই পাখি শিকারীকে ভুকশিমইল এলাকা থেকে ৮৩টি মৃত পাখি সহ স্থানীয় জনগন আটক করে কুলাউড়া থানায় সোপর্দ করে। এ বিষয়ে থানায় নিয়মিত মামলা রুজু হয় যাহা বর্তমানে বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন। আটক দুই পাখী শিকারীর নিকট থেকে পাওয়া যায় লোম হর্ষক কাহিনী। জানা যায় তাহারা বাজার থেকে বিষ সংগ্রহ করিয়া মুড়ি, খৈ, ধানের সংগে মিশাইয়া বিষ টোপ তৈরী করে। রাত অনুমান ৩টার দিকে যেখানে অতিথি পাখি থাকে সেখানে ধানের মধ্যে(শুকনা স্থানে) বিষটোপ ছড়িয়ে রাখে। ভোর বেলা পাখি সমূহ ধান ক্ষেতের মধ্যে আসিয়া ঐ বিষটোপ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিছু অসুস্থ পাখি ধান ক্ষেতের মধ্যেই মারা যায়। আবার কিছু অসুস্থ পাখি পানিতে গিয়ে পরে মারা যায়। পাখি শিকারীরা শুধু মাত্র যে পাখি গুলো ধান ক্ষেতের মধ্যে মারা যায় সেগুলো সংগ্রহ করে জবাই করে বিক্রি করে। ঐ পাখি খেয়ে অনেকে অসুস্থও হয়। আর যে পাখি গুলো পানিতে মারা যায় সেগুলো পঁচে পানিতে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।





ঘুড়ে আসুন হাকালুকি হvওড়



ঘিলাছড়া যুধিষ্ঠিপুর। হাকালুকি হাওরের কোলঘেঁষা গ্রাম এটি। স্টেশন থেকে ঘিলাছড়া মাত্র তিন কিলোমিটার। সবুজে ঘেরা ছোট ছোট পাহাড় ও টিলা, সেই সঙ্গে সবুজ ধানখেত এবং টিলার ফাঁকে আঁকাবাঁকা সুন্দর সব পথঘাট যেন ক্ষণিকের মধ্যেই হারিয়ে গেল অবিরাম বাদলধারায়। এমন বৈচিত্র্যময় খেলা না দেখে বিশ্বাসের উপায় কী! এখানে পাখির কিচিরমিচির ক্রমেই বেড়ে চলেছে। লিচুর ডালে কয়েকটা কাক ভিজে জবুথবু বসে ঝিমুচছে। শালিকের হাঁকডাকও শোনা যাচ্ছে বেশ। সিলেটের ভূমধ্যসাগর

সিলেটের ভূমধ্যসাগর



এ যেন সত্যি এক সাগর। চারদিকে ভূবেষ্টিত বিশাল এক জলরাশি। টিলার ওপর থেকে যেদিকে চোখ যায়, শুধু পানি আর পানি। পূর্ব-দক্ষিণ দিকে অনেক দূরে বড়লেখা ও জুড়ীর পাহাড়গুলো মনে হয় পানির মধ্যে মাথা জাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পূর্ব দিকে আরও দূরে আসামের পাহাড় চোখে পড়ে। মৌসুমি বৃষ্টিপাত ও আসামের পাহাড় থেকে আসা ঢলে এই অঞ্চলের সব খালবিল ও হাওর রূপ নেয় যেন এক সাগরের। বৃহত্তর সিলেটের পূর্বাঞ্চলে এর অবস্থান। পাশে ভারতের আসাম সীমান্ত। সিলেটের গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা এবং জুড়ী উপজেলার প্রায় অধিকাংশ এলাকাজুড়ে এর বিস্তৃতি। সাগরের মতো ঢেউ ও গর্জন হয়তো হাওরে নেই; তবে যা আছে, তা-ই বা কম কিসের! কত টিলাই না হাওরগর্ভে হারিয়ে গেছে এর ঢেউয়ের তোড়ে। ফেঞ্চুগঞ্জের যুধিষ্ঠিপুরে টিলার ওপর পর্যটনকেন্দ্র গোছের কিছু একটা করার তাঁর ইচ্ছা থাকলেও সে আশা ভেস্তে গেছে। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা এই মৌসুমের আবাদ করতে পারেননি। তার পরও এখানে বৃষ্টির মৌসুম আসে অনেকের কাছে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে। বিশেষত, জেলেপাড়াগুলো জেগে ওঠে নতুন প্রাণের উদ্দীপনায়। তাদের ঘরে ঘরে শুরু হয় যেন জীবনের নতুন আয়োজন। এভাবে প্রতিদিন তাঁদের ধরা মাছ স্থানীয় বাজার হয়ে চলে যায় সিলেটে। তারপর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।



কীভাবে যাবেন কোথায় থাকবেন



সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে গ্রিনলাইন ও সোহাগ পরিবহনের ভলভোসহ সিলেটগামী যেকোনো বাস ধরতে পারেন। সময় লাগে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। এ ছাড়া কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন তিনটি ট্রেন পারাবত, জয়ন্তিকা ও উপবন সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সময় লাগে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা। থাকবেন সিলেট শহরের যেকোনো হোটেল বা গেস্টহাউসে। কেননা, ফেঞ্চুগঞ্জে তেমন ভালো মানের হোটেল নেই। সিলেট থেকে সরাসরি বাস অথবা সিএনজি অটোরিকশাযোগে ফেঞ্চুগঞ্জে যাওয়া যায়। সেখান থেকে ঘিলাছড়া যেতে হবে শুধু সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। তবে সিলেট থেকে রিজার্ভ অটোরিকশায় সরাসরি ঘিলাছড়া যাওয়াই ভালো। দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। সময় লvগে ৪০ থেকে ৬০ মিনিট। যেতে হবে দুপুরের পর যেকোনো সময়। সকালবেলায় নৌকা ভাড়া পাওয়া কঠিন। প্রয়োজনে যোগাযোগ করে যাওয়া ভালো। নৌকাভাড়া পড়বে ঘণ্টাপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।



প্রয়োজনীয় তথ্য



সঙ্গে নিতে পারেন পানিরোধী ব্যাকপ্যাক, ছাতা, রেইনকোট, টর্চ, ক্যামেরা

ইত্যাদি। সঙ্গে একজন সিলেটি বন্ধু বা সহযোগী থাকলে ভালো। এই সময়ে কিনতে পারবেন হাওরের তাজা মাছ। তা ছাড়া খেতে পারবেন কাঁঠাল, আনারস, লটকন, পেয়ারাসহ নানা জাতের ফল।

জীব বৈচিত্রের সমাহার আর মিষ্টি পানির মৎস্য প্রাপ্তির এক অভূতপূর্ব স্থান হাকালুকি হাওড়। অতিথি পাখির কলরবে হাওড় এলাকায় নৈশব্দের সৃষ্টি করে। এটি বাংলাদেশে অবস্থিত হলেও এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম হাওড়। দু’টি পাতা একটি কুড়ির এলাকা সিলেট বিভাগে এটির অবস্থান। অনেকে হাওড়টির নাম শুনলেও বিস্তারিত জানে না। এমনকি অনেকে এই হাওড়ের নাম শুনলেই মনে করে এটা অন্য কোন দেশের হাওড়ের নাম। চাকুরীর খোজে ইন্টারভিউ নামক বিড়ম্বনার সম্মূখীন হতে হয় অনেকেরই। ইন্টারভিউ বোর্ডের এক সদস্য প্রশ্ন করে বসলেন, আচ্ছা বলোতো এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওড়ের নাম কি? বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যদি এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওড়ের নাম না বলতে পারি এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে। উত্তরটি হয়তো অনেকেরই জানা। সহজ উত্তর “হাকালুকি হাওড়”। আসুন জেনে নেই হাকালুকি হাওড় সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।



তথ্যসূত্র

1. ↑ হাকালুকি হাওর, নিক্সন তালুকদার, বাংলাপিডিয়া, সিডি ভার্ষণ (2.0), বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত। পরিদর্শনের তারিখ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ খ্রিস্টাব্দ।

2. ↑ ২.০ ২.১ ২.২ ২.৩ কাজী রোজানা আখতার (২০০০). "হাকালুকি হাওর". In কালী প্রসন্ন দাস, মোস্তফা সেলিম (in বাংলা) (প্রিন্ট). বড়লেখা: অতীত ও বর্তমান (ফেব্রুয়ারি ২১, ২০০০ খ্রিস্টাব্দ ed.). ঢাকা: বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ড. p. ১৭৯-১৯২.

3. ↑ ৩.০ ৩.১ ফওজুল করিম (তারা) (২০০০). "বড়লেখা সম্পর্কে একটি প্রামাণ্যচিত্র". In কালী প্রসন্ন দাস, মোস্তফা সেলিম (in বাংলা) (প্রিন্ট). বড়লেখা: অতীত ও বর্তমান (ফেব্রুয়ারি ২১, ২০০০ খ্রিস্টাব্দ ed.). ঢাকা: বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ড. p. ৩৮-৩৯.

4. ↑ ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক, শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, স্বরোচিষ সরকার, ed. "হ" (in বাংলা) (প্রিন্ট). বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (জানুয়ারি ২০০২ খ্রিস্টাব্দ ed.). ঢাকা: বাংলা একাডেমী.. ১২২৪. আইএসবিএন 984-07-4222-1.







মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.