নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিলগিরি

খুবই খুশী এটার সদস্য হলে ।

মনিবেস্ট

আমি এই সাইটের সদস্য হতে চাই । আমি খুবই আগ্রহী । আমি লিখতে চাই।

মনিবেস্ট › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

০৩ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৩১





লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান



অবস্থান মৌলভীবাজার জেলা, সিলেট বিভাগ, বাংলাদেশ



নিকটবর্তী শহর শ্রীমঙ্গল



স্থানাঙ্ক 24°19′11″N 91°47′1″Eস্থানাঙ্ক: 24°19′11″N 91°47′1″E



আয়তন ১২৫০ হেক্টর

স্থাপিত ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ







লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশে অবশিষ্ট চিরহরিৎ বনের একটি উল্লেখযোগ্য নমুনা। এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে এটি অন্যতম। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ১২৫০ হেক্টর আয়তনের বন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর।[১] বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে এই বনকে 'জাতীয় উদ্যান' হিসেবে ঘোষণা করে।[২] বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। উল্লূক ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ এবং উদ্ভিদ।

নিরক্ষীয় অঞ্চলের চিরহরিৎ বর্ষাবন বা রেইন ফরেষ্টের মতো এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। সূর্যের আলোর জন্য প্রতিযোগিতা করে এ বনের গাছপালা খুব উঁচু হয়ে থাকে, এবং অনেক ওপরে ডালপালা ছড়িয়ে চাঁদোয়ার মত সৃষ্টি করে। এই বন এতই ঘন যে মাটিতে সূর্যের আলো পড়েনা বললেই চলে।

ইতিহাস

বাংলাদেশের বিখ্যাত বনগুলোর মধ্যে লাউয়াছড়ার বন অন্যতম। পরিচিতির দিক থেকে সুন্দরবনের পরেই লাউয়াছড়ার বনের অবস্থান। সিলেট বিভাগে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় এ বন অবস্থিত।[৩] ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তদানিন্তন ব্রিটিশ সরকার এখানে বৃক্ষায়ন করলে তা-ই বেড়ে আজকের এই বনে পরিণত হয়। শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার মৌলভীবাজার ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন ২,৭৪০ হেক্টর আয়তনের পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন ছিলো এলাকাটি, সেই সুবাদে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পূর্ববতী নাম পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন। বনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি প্রকৃতি ভ্রমণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পশ্চিম ভানুগাছ বনের ১,২৫০ হেক্টর এলাকাকে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধন) আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে 'জাতীয় উদ্যান' হিসাবে ঘোষণা করা হয়।[৪]

চিরহরিৎ এ বনে নিরক্ষীয় অঞ্চলের বর্ষাবন বা রেইনফরেষ্টের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। একসময় বৃহত্তর সিলেটের সর্বত্রই এ ধরণের বন ছিলো। তবে বাণিজ্যিকভিত্তিতে চা বাগান সৃষ্টি, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ এবং নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে ক্রমে সংকুচিত হতে হতে মাত্র কয়েকটি স্থানে চিরহরিৎ এ বর্ষাবনের অস্তিত্ব টিকে রয়েছে।

ভূপ্রকৃতি

ভূপ্রকৃত

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভূপ্রকৃতি পাহাড়ি মৃত্তিকা গঠিত। উঁচু-নিচু টিলা জুড়ে এ বন বিস্তৃত। বনের মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি এবং প্রচুর পাথর দেখা যায়। বনের মাটিতে পাতা জমে জমে পুরু স্পঞ্জের মতো হয়ে থাকে, জায়গায় জায়গার মাটিই দেখা যায় না। এসব স্থানে জোঁকের উপদ্রপ খুব বেশি। বনের ভেতর দিয়ে অনেকগুলো পাহাড়ী ছড়া বয়ে চলেছে। এসব ছড়ার কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলোতে শুধু বর্ষার সময়ই পানি থাকে। ছড়ার পানি পরিষ্কার টলটলে এবং ঠান্ডা। যেসব ছড়াতে শুষ্ক মৌসুমেও পানি থাকে সেসব ছড়ার কাছে বন্যপ্রাণীর আনাগোনা দেখা যায়।

জীববৈচিত্র্য

জীববৈচিত্র্য





লাউয়াছড়ার বনে বাঁশ ঝাড় ও বেতের ঝোঁপ

জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সমৃদ্ধতম বনগুলোর একটি। আয়তনে ছোট হলেও এ বন দুর্লভ উদ্ভিদ এবং প্রানীর এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। বনে প্রবেশের সাথে সাথেই নানা ধরনের বন্যপ্রাণী, পাখি এবং কীটপতঙ্গের শব্দ শোনা যায়। বনের মধ্যে প্রায় সারাক্ষণই সাইরেনের মত শব্দ হতে থাকে; প্রকৃতপক্ষে এটি এক ধরণের ঝিঁঝিঁ পোকা বা ক্রিকেটের শব্দ। লাউছড়ার জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রানী দেখা যায়।[৫]

বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। বনের মধ্যে কিছু সময় কাটালেই উল্লুকের ডাকাডাকি কানে আসবে। উল্লুক ছাড়াও এখানে রয়েছে মুখপোড়া হনুমান, বানর, শিয়াল, মেছোবাঘ, বন্য কুকুর, ভাল্লুক, মায়া হরিণ (বার্কিং ডিয়ার),অজগরসহ নানা প্রজাতির জীবজন্তু। মায়া হরিণ সাধারণত উচ্চতায় ২০‌-২২ ইঞ্চি। এদের বাদামী রঙের দেহ যা পিঠের দিকে ঘিয়ে গাঢ় রং ধারণ করে।

উদ্যানের বন্য পাখির মধ্যে সবুজ ঘুঘু, বনমোরগ, তুর্কি বাজ, সাদা ভ্রু সাতভায়লা, ঈগল, হরিয়াল, কালোমাথা টিয়া, কালো ফর্কটেইল. ধূসর সাত শৈলী, পেঁচা, ফিঙ্গে, লেজকাটা টিয়া, কালোবাজ, হীরামন, কালোমাথা বুলবুল, ধুমকল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সাধারণ দর্শনীয় পাখির মধ্যে টিয়া, ছোট হরিয়াল, সবুজ সুইচোরা, তোতা, ছোট ফিঙ্গে, সবুজ কোকিল, পাঙ্গা, কেশরাজ প্রভৃতির দেখা মিলে।

এছাড়া ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে সিতেশ রঞ্জন দেব তাঁর চিড়িয়াখানা থেকে দুটি লক্ষ্মীপেঁচা ও একটি বনবিড়ালও অবমুক্ত করেন এ বনে।[৬]

বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক



লাউয়াছড়ার বনেই রয়েছে বিপন্ন প্রজাতির উল্লুক (Hoolock Gibbon)। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে এ উল্লুক বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। লাউয়াছড়ার বনেও এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। দুই দশক আগে এই বনে কয়েক হাজার উল্লুক দেখা যেতো। কিন্তু বর্তমানে সে সংখ্যা কমতে কমতে একশোরও নিচে এসে ঠেকেছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে একসময় হয়তো এই বন থেকে উল্লুক চিরতরে হারিয়ে যাবে। নির্বিচারে বন ধ্বংসের ফলে উল্লুকের বাসস্থান ও খাদ্যসংকট সৃষ্টিই এদের সংখ্যা হ্রাসের প্রধানতম কারণ। লাউয়াছড়ার বনে বর্তমানে মাত্র ৪৯ টি উল্লুক অবশিষ্ট আছে। নিকটবতী ছাউতলি ও কালাছড়ার বন মিলিয়ে এ সংখ্যা ৬০-এর মত। লাউয়াছড়া ও এর আশপাশের বনে মোট ১৬ টি উল্লুক পরিবার রয়েছে।[৭]ভোরবেলা লাউয়াছড়ার বনে গেলে অনেক সময় উল্লুকের দেখা পাওয়া যায়।[৮] এই বনে উল্লুকের প্রিয় খাদ্য চামকাঁঠাল বা চাপালিশ ফল।

বিলুপ্তপ্রায় হনুমান

অতি সম্প্রতি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সংগ্রহ তালিকায় যুক্ত হয়েছে একটি হনুমানের বাচ্চা। বাচ্চা হনুমানটি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের বিশামনি গ্রামে মাছের খামারে ঘেরাজালে আটকা পড়া হনুমানটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ট্রাস্টের নির্বাহী প্রধান জনাব আনোয়ারুল ইসলাম সনাক্ত করেন যে, এটি অতিবিপন্ন প্রজাতির 'ফ্যায়র্স লাঙ্গুর' (Phayre's Langur)। হনুমানটি প্রথমে সিতেশ রঞ্জন দেবের চিড়িয়াখানায় রাখা হয়। পরে এটিকে সিলেট বন বিভাগের হেফাজতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জনকীছড়ায় রাখা হয়। ধরা পড়াকালীন সময় এর বয়স ছিলো মাত্র তিন মাস।[৬]

উদ্ভিদবৈচিত্র্য

লাউয়াছড়া বনাঞ্চলে রযেছে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ। আছে গর্জন, সেগুন, গামার, মেনজিয়াম, জামরুল, চাপালিশ, নাগেশ্বর, শিমুল, লোহাকাঠ, জাম, ডুমুর, তুন, কড়ই প্রভৃতি।[৪] নানা প্রকারের দেশীয় গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশে নানা ধরণের অর্কিড দেখতে হলেও এ বন এক অপূর্ব স্থান।

নিসর্গ প্রকল্প ও প্রকৃতি ভ্রমণ



লাউয়াছড়ায় নিসর্গ প্রকল্পের প্রবেশদ্বার



লাউয়াছড়ার ট্রেইলে

ভ্রমণরত পর্যটক

নিসর্গ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য স্থানীয় জনগণ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষগুলোর সাথে বন বিভাগের অংশীদারিত্বের সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সুষ্ঠ সংরক্ষণ ও ব্যবস্হাপনা। বর্তমানে ইউ এস এ আই ডি (USAID)-এর আর্থিক সহযোগীতায় দেশের ১৭টি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এই প্রকল্প চালু আছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানও এই প্রকল্পের অর্ন্তভুক্ত।

নিসর্গ প্রকল্পের অধীনে লাউয়াছড়া বনের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার কাজে স্থানীয় জনগনকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এর ফলে বনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং বনের সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রকৃতি ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট হারে প্রবেশ মূল্য দিয়ে এ বনের ভেতর প্রকৃতি ভ্রমণ করা যায়। প্রকৃতি ভ্রমণের জন্য বনে তিনটি ট্রেইল বা হাঁটা পথ রয়েছে। তিনটি পথের মধ্যে একটি ৩ ঘণ্টার পথ, একটি ১ ঘণ্টার পথ আর অপরটি ৩০ মিনিটের পথ। প্রশিক্ষিত গাইডের সহায়তায় বনের একেবারে ভেতর পর্যন্ত যাওয়া যায়। প্রকৃতিকে বিরক্ত না করে তৈরি করা এ তিনটি পথে চোখে পড়বে নানা প্রজাতির কীটপতঙ্গ, গাছপালা, পাখি ও অর্কিড। নৈসর্গ প্রকল্পের আওতায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রকৃতি ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট হারে প্রবেশ মূল্য দিয়ে এ বনের ভেতর প্রকৃতি ভ্রমণ করা যায়। প্রকৃতি ভ্রমণের জন্য বনে তিনটি ট্রেইল বা হাঁটা পথ রয়েছে। তিনটি পথের পর্যন্ত যাওয়া যায়। প্রকৃতিকে বিরক্ত না করে তৈরি করা এ তিনটি পথে চোখে পড়বে নানা প্রজাতির কীটপতঙ্গ, গাছপালা, পাখি ও অর্কিড। ভাগ্য ভালো হলে হনুমান, বানর এবং উল্লুকেরও দেখা মিলতে পারে। দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক প্রতিদিন লাউয়াছড়ায় প্রকৃতি ভ্রমণে আসেন। বছরজুড়েই এই বনে পর্যটকদের আনাগোনা থাকলেও শীতের সময় সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম হয়।গাঢ় রং ধারণ করে। উদ্যানের বন্য পাখির মধ্যে সবুজ ঘুঘু, বনমোরগ, তুর্কি বাজ, সাদা ভ্রু সাতভায়লা, ঈগল, হরিয়াল, কালোমাথা টিয়া, কালো ফর্কটেইল. ধূসর সাত শৈলী, পেঁচা, ফিঙ্গে, লেজকাটা টিয়া, কালোবাজ, হীরামন, কালোমাথা বুলবুল, ধুমকল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সাধারণ দর্শনীয় পাখির মধ্যে টিয়া, ছোট হরিয়াল, সবুজ সুইচোরা, তোতা, ছোট ফিঙ্গে, সবুজ কোকিল, পাঙ্গা, কেশরাজ প্রভৃতির দেখা মিলে।উদ্যান







ভাগ্য ভালো হলে হনুমান, বানর এবং উল্লুকেরও দেখা মিলতে পারে। দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক প্রতিদিন লাউয়াছড়ায় প্রকৃতি ভ্রমণে আসেন। বছরজুড়েই এই বনে পর্যটকদের আনাগোনা থাকলেও শীতের সময় সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম হয়।[৪] লাউয়াছড়ার পশ্চিম প্রান্তে একটি গ্রাম দেখতে পাওয়া যায়। গ্রামটি মূলত খাসিয়া পল্লী (পুঞ্জি) খাসিয়াদের ভাষায়। ছোট একটি ছড়া পার হয়েই নৈসর্গ প্রকল্পের আওতায় লাউয়াছড়া বনমোরগ, তুর্কি বাজ, সাদা ভ্রু সাতভায়লা, ঈগল, হরিয়াল, কালোমাথা টিয়া, কালো ফর্কটেইল. ধূসর সাত শৈলী, পেঁচা, ফিঙ্গে, লেজকাটা টিয়া, কালোবাজ, হীরামন, কালোমাথা বুলবুল, ধুমকল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সাধারণ দর্শনীয় পাখির মধ্যে টিয়া, ছোট হরিয়াল, সবুজ সুইচোরা, তোতা, ছোট ফিঙ্গে, সবুজ কোকিল, পাঙ্গা, কেশরাজ প্রভৃতির দেখা মিলে।উদ্যান







খাসিয়া পল্লীতে প্রবেশ করতে হয়। টিলার উপর দেখতে পাওয়া যাবে খাসিয়াদের মাচাং ঘর, আনারস বাগান ও তাদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস পান চাষের বরজ বা ক্ষেত। পান চাষ করতে খাসিয়া পুরুষরা চারা রোপন, গাছের উপর উঠে পান নামানো ইত্যাদি কাজ করে থাকে। মেয়েদের কাজ পানগুলো পানি দিয়ে ধুয়ে আটি বেঁধে পাইকারদের নিকট বিক্রি করা। খাসিয়াদের বর্ণাঢ্য জীবনধারা সত্যিই চমৎকার। লাউয়াছড়ার বৈচিত্রময় জগৎ দেখতে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন লাউয়াছড়ার গহীন অরণ্যে থেকে। তাহলে আর দেরী কেন? লাউয়াছড়া আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

কিভাবে যাবেনঃ



ঢাকা থেকে রেল ও সড়ক পথে শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস, টি আর টন্সাভেলস ইত্যাদি বাস যায় শ্রীমঙ্গল। ঢাকা থেকে ট্রেনেও যাওয়া যায় শ্রীমঙ্গল। ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছvড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬•৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আত্ম:নগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, দুপুর ২•০০ মিনিটে প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০•০০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শ্রীমঙ্গল থেকে ভানুগাছ-কমলগঞ্জের রাস্তায় ৭ কি•মি• এগzলেই লাউয়াছড়া পার্কের সীমানা। শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ রোড থেকে বাসে, প্রাইভেট কারে বা অটোরিক্সায় যেতে পারবেন।ছবিঃ সংগ্রহীত





আদিবাসী নৃগোষ্ঠী

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাশেই রয়েছে মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জি। খাসিয়ারা বন ও প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে গড়ে তুলেছে তাদের আবাস। তাদের আবাসভূমিগুলো একাধিক টিলা অতিক্রম করে উঠে গেছে ছোট ছোট টিলার উপরে। তাদের প্রধান পেশা পান চাষ।[৪]

সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড

১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে মাইকেল অ্যান্ডারসন নির্দেশিত হলিউডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র অ্যারাউন্ড দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ (Around the World in 80 Days)-এর কিছু দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিলো লাউয়াছড়ার এই জাতীয় উদ্যানে।[৯]

জীববৈচিত্র্য, উদ্ভিদবৈচিত্র্য ও পরিবেশ বিপর্যয়

গ্যাস অনুসন্ধান ও এর ফলে সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়

পরিবেশবাদী ও সচেতন মহলের ব্যাপক প্রতিবাদসত্ত্বেও ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানী শেভরন লাউয়াছড়া ও এর আশেপাশের বনভূমি এলাকায় ত্রিমাত্রিক অনুসন্ধান শুরু করে। ত্রিমাত্রিক অনুসন্ধানের জন্য বনের অভ্যন্তর ও আশপাশের এলাকায় নির্বিচারে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এসময় বন এলাকায় সৃষ্ট ভূকম্পনে বন্যপ্রাণী ও স্হানীয় লোকজন আতঙ্কিত হযে পড়ে, বনের কয়েক জায়গায় আগুন ধরে যায়, বনের আশপাশের বাড়িঘরে ফাটল দেখা দেয়। লাউয়াছড়া বনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অনুসন্ধানের অনুমতি প্রদানের জন্য তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকারও দেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।[১০] এর আগে ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে আরেক বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানী অক্সিডেন্টাল পরিচালিত এধরণের একটি অনুসন্ধানের সময় লাউয়াছড়া বনের পাশেই মাগুরছড়ায অনুসন্ধান কুপে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে এবং পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়।[১১] এ বিস্ফোরণের ফলে কয়েক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পুড়ে যায়। মাগুরছড়ার বন এখনও সেই ক্ষত বহন করছে। মাগুরছড়া বিস্ফোরণে বাংলাদেশ সরকার ওই কোম্পানীর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবী করলেও তা এখনো অমিমাংসীত পর্যায়ে রয়ে গেছে।

জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য ধ্বংস

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সরকারের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সরকারের পক্ষ থেকে তাই বনরক্ষী নিয়োগ দেয়া হয়, যারা বনের সার্বিক দেখভাল করে থাকেন। কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবল ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাবে তাদের অবস্থাও নাজুক। প্রায়ই বনদস্যুদের দাপটে তাদের নাজেহাল হবার খবর পাওয়া যায়।[১২] এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বনদস্যুরা ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আক্রমণ করে বন থেকে গাছ কেটে নিয়ে যায়। এছাড়া অধিক জনসংখ্যার জন্য সংরক্ষিত বনের গাছ কেটে আবাস গড়ার কারণেও অনেক গাছপালা হারিয়ে যাচ্ছে এই বনাঞ্চল থেকে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ঘোর প্রভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে অনেক গাছ-গাছালি ও জীববৈচিত্র্য।

খাবারের দোকান আছে। লাউয়াছড়া উদ্যানের ভেতরেও হালকা খাবার, চা, কোমল পানীয় পাওয়া যায়।

আপনি একদিনেই লাউয়াছড়া থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। তবে যদি কয়েকদিন থাকতে চান, তাহলে শ্রীমঙ্গল শহরেই মাঝারি মানের হোটেল পেয়ে যাবেন, ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে শুরু।

টুকিটাকি তথ্য

গরমকাল লাউয়াছড়া যাওয়ার জন্য আদর্শ নয়। গরমে আপনারও কষ্ট হবে, তাছাড়া বন্যপ্রাণীরা খুব বেশি বের হয় না। যদি বর্ষাকালে যান তাহলে বৃষ্টিবহুল এক অনন্য রূপ দেখতে পাবেন। তবে সব থেকে আদর্শ সময় হচ্ছে নভেম্বর থেকে ফেব্রzয়ারি মাস। এসময়ের পরিবেশ জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আদর্শ।

লাউয়াছড়া জঙ্গলে প্রবেশের আগে সঙ্গে করে পর্যাপ্ত পানি নিয়ে নেবেন। গাইড সঙ্গে না থাকলে নির্দিষ্ট ট্রেইল কিংবা কাঠুরেদের হাঁটা পথ ধরে এগুলেই ভালো, নয়তো পথ হারিয়ে শুধু শুধু হেনস্তা হবেন। আর ছিনতাইয়ের ঘটনv প্রায়ই ঘটে, ফলে দলছুট হবেন না, প্রয়োজনীয় মিঃ দূরে, ভানুগাছা রোডের পাশে রিজার্ভ ফরেস্ট লাউয়াছড়া সম্ভবত সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত বন। যদিও ঢোকার মুখের বোর্ড বলছে এ জঙ্গলের সবচেইয়ে উল্লেখযোগ্য প্রানী হলো উল্লুক, পঞ্চাশের দশকে এখানে নাকি ভালুক আর চিতাও দেখা যেতো। তিনটা ট্রেইল রুট আছে, আধা ঘন্টার, এক ঘন্টার আর তিন ঘন্টার। সৌখিন ট্যুরিস্টর সাধারনত আধা ঘন্টার ট্রেইলটাই বেশি প্রেফার করেন,

নৈসর্গ প্রকল্পের আওতায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রকৃতি ভ্রমণের ব্যবস্থা

তথ্যসূত্র

1. ↑ লাউয়াছড়া উদ্যানে বাংলাদেশ বন বিভাগ কর্তৃক স্থাপিত তথ্য বোর্ড।

2. ↑ Applied Research and Conservation of the Herpetofauna in Bangladesh

3. ↑ মৌলভীবাজার ডিসি অফিস

4. ↑ ৪.০ ৪.১ ৪.২ ৪.৩ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন (মে ৪, ২০১০). "চরাচর: লাউয়াছড়ায় অশুভ ছায়া" (বাংলা ভাষায়) (প্রিন্ট). দৈনিক কালের কন্ঠ (ঢাকা): p. ১৭.

5. ↑ ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ এ্যাডভেঞ্চার ওয়েবপেজ

6. ↑ ৬.০ ৬.১ শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি (মার্চ ১৫, ২০০৯). "শ্রীমঙ্গলে ধরা পড়া হনুমানটি ক্যাপড় লাঙ্গুর নয়, ফ্যায়র্স লাঙ্গুর" (বাংলা ভাষায়) (প্রিন্ট). দৈনিক প্রথম আলো (ঢাকা): p. ৪.

7. ↑ বাংলাদেশের বিপন্ন উল্লুক (The Endangered Hoolock Gibbon of Bangladesh)

8. ↑ Territoriality and monogamy in hoolock gibbons

9. ↑ ↑ রিদওয়ান আক্রাম (জানুয়ারি ২৫, ২০১০). "বনে জঙ্গলে: লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান" (বাংলা ভাষায়) (প্রিন্ট). দৈনিক কালের কণ্ঠ (ঢাকা): p. ৯.

10. ↑ Cancel seismic survey at Lawachhara' Environmentalists demand

11. ↑ Seismic survey violates the existing environmental laws



মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:১৯

এঞ্জেল বয় বলেছেন:
দারুণ হয়েছে। :) :) :) :)

২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:২৪

এঞ্জেল বয় বলেছেন: [img|http://ciu.somewherein.net/ciu/image/105983/small/?token_id=ddb7eccb87c45306d5266c161a751e91








৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৪৫

বোরহান উদদীন বলেছেন: Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.