নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহিত্য ভালোবাসি, সাহিত্য নিয়েই আছি, সাহিত্য নিয়েই থাকতে চাই।

মৌরি হক দোলা

আগুনপাখি

মৌরি হক দোলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রীতদাসের হাসি- শওকত ওসমান

০৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৬:১২



শওকত ওসমানের ক্রীতদাসের হাসি একটি সংলাপ নির্ভর রূপক উপন্যা্স। এ উপন্যাসের আখ্যান গড়ে উঠছেে দুটো পক্ষকে অবলম্বন করে। একটি পক্ষের প্রতিনিধি উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র হারুন-উর-রশীদ- যার মাধ্যমে ক্ষমতালোভী শ্রেণিকে উপস্থাপন করা হয়েছে। অপরপক্ষ তাতারীর মতোই সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরে। এরা ক্ষমতা কী জানে না; তবে কীভাবে সুখে থাকতে হয় তা বেশ ভালোভাবেই জানে। আদৌতে, 'ক্ষমতা'র ক্ষমতা যে কতটা সীমাবদ্ধ, তা-ই ফুটে উঠে এ উপন্যাসের মধ্য দিয়ে। চাইলেই ক্ষমতা দিয়ে সব পাওয়া যায় না। জোরপূর্বক সুখী হওয়া যায় না। এ জগতে এখনও এমন অনেক কিছুই আছে, যা ক্ষমতারও আয়ত্ত্বের বাইরে।

উপন্যাসের এ উপরি আলোচনার বাইরেও ক্রীতদাসের হাসির আরেকটি বিশেষ তাৎপর্য লক্ষণীয়, যা একে সাধারণ উপন্যাস হতে উত্তরণ করেছে "রূপক উপন্যাসে"। এ উপন্যাসটি ১৯৬১ সালে লেখা হয়। তখন অবিভক্ত পাকিস্তানে চলছে আইয়ূব খানের স্বৈরশাসন। সে সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতাকেই শাসক হারুন-উর-রশীদ ও ক্রীতদাস তাতারীর কাহিনির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। হারুন-উর-রশীদ তৎকালীন সামরিক শাসক ও তাতারী পূর্ব পাকিস্তানের শোষিত জনগণের প্রতীক।

তবে আকর্ষণীয় বিষয় এই যে, শওকত ওসমান যাদের বিরুদ্ধে কলম ধরে এ ক্রীতদাসের হাসি রচনা করেন, সেই মূর্খ শাসকগোষ্ঠীর নেতা আইয়ূব খান স্বহস্তে-ই লেখককে এ বইয়ের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার তুলে দেন ১৯৬৬ সালে। তবু খটকা থেকে যায়, লেখক পুরস্কারটি পেয়েছিলেন কি কতৃপক্ষের অজ্ঞতার জন্যই, নাকি এর পিছনে তাদেরই বিজ্ঞতর কোনো অভিসন্ধি ছিল?

*
ক্রীতদাসের হাসিকে ঘিরে একটা প্রশ্ন মোটামুটি সব পাঠকেরই মনে আসে। এটি আসলে কী- উপন্যাস নাকি নাটক? সর্বত্র একে উপন্যাস বলে উল্লেখ করলেও এর গঠন যে প্রায় নাটকেরই মতো? এ প্রশ্নের একটি উত্তর খোদ লেখকের থেকেই পেয়েছিলেন বর্তমান সময়ের একজন লেখক ও গবেষক কাজী সামিও শীশ। উপন্যাসের লেখককে তিনি এর ধরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে শওকত ওসমান বেশ জোরের সঙ্গেই উত্তর দেন- "ক্রীতদাসের হাসি is itself a form."

তা ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাস/নাটক যা-ই হোক না কেন, এটি যে কথাসাহিত্যক শওকত ওসমানের এক অনন্য সৃষ্টি ও সুখপাঠ্য এক রচনা- তাতে কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই। কেননা, এ বই পাঠশেষে আর কিছু মনে থাকুক বা না থাকুক একটি কথা পাঠকের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়েই যায়- 'আমিরুল মুমেনীন, হাসি মানুষের আত্মারই প্রতিধ্বনি!"

ছবি: গুগল

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০২৪ সকাল ৭:৫৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: অল্প কথায় চমৎকার আলোচনা করেছেন। ভালো লেগেছে। + +
অনেকদিন পর বোধকরি ব্লগে এলেন। আপনি এখন আর ছোটগল্প লিখছেন না?

০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

মৌরি হক দোলা বলেছেন: শুভকামনা। আশা করি ভালো আছেন।

জি, প্রায় দুই বছর পরে কোনো লেখা পোস্ট করলাম। বর্তমানে পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত আছি। ক্লাস, পরীক্ষা, টিউশন ইত্যাদি ব্যস্ততার পরে আর লেখালেখি করা হয়ে উঠে না। আর অল্প কিছু বছর বাকি আছে একাডেমিক পড়াশোনা শেষ করতে। তারপরে হয়তো আবার লেখার সুযোগ পেতেও পারি। অন্তত, চেষ্টা করবো নিজের মতো করে। আমার মতো মানুষের সাথে দিনশেষে এই লেখালেখির সম্পর্কটাই ভালো যায় দেখেছি। :) ফাইনাল পরীক্ষার মধ্যে টুপ করে ঈদের ছুটি পেয়ে গেলাম একটা লম্বা সময়ের জন্য। তাই ভাবলাম ব্লগে একটু টোকা দিয়ে যাই।

আমার লেখা পাঠ ও পাঠশেষে মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ০৬ ই জুন, ২০২৪ সকাল ৮:১১

কামাল১৮ বলেছেন: অনেক আগে পড়া।প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম তার নাম।তার জননি ইপন্যাসটি মনে দাগ কেটেছিলো।স্বাধীনতার পটভূমিতে লেখা নেকড়ে অরণ্য পড়ার মতো একটি বই।

০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০৬

মৌরি হক দোলা বলেছেন: জননী বইটির নাম শুনেছি। তবে নেকড়ে অরণ্য-এর কথা জানা ছিল। পড়ার ইচ্ছে রইল। ধন্যবাদ।

৩| ০৬ ই জুন, ২০২৪ সকাল ৮:৪৪

শ্রাবণধারা বলেছেন: আমারো কিন্তু ধারণা ছিলো যে ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাস নয় নাটক। আপনার লেখা পড়ে বুঝলাম এতদিন ভুল জেনেছি। তবে যতদূর মনে পড়ে ক্রীতদাসের হাসি থিয়েটারের পরিবেশনা বা নাটক হিসবেও বোধহয় বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলো।

শওকত ওসমানের ক্রীতদাসের হাসি এবং জননী এই দুটি বই বিখ্যাত ছিলো।

বহুকাল আগে স্কুলের কোন একটা প্রতিযোগীতায় এই জননী বইখানা পুরষ্কার পেয়েছিলাম। তখনো শওকত ওসমান বেঁচে ছিলেন। শক্ত-সামর্থ তীক্ষ্ণধী একজন মানুষ। অনেকদিন পরে তার কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য এবং তার বই নিয়ে লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০৬

মৌরি হক দোলা বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

৪| ০৬ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

কালো যাদুকর বলেছেন: এটির কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। অনেকদিন পরে আপনার বুক রিভিয়ে এই উপন্যাসের কথা মনে চলে আসল। আমার কাছে এটি উপন্যাস মনে হয়েছে।
চমৎকার ব্রিফ রিভিউ। ধন্যবাদ।

০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০৭

মৌরি হক দোলা বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

৫| ০৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: অনেকদিন ব্লগে দোলা !!
স্কুলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচীতে পড়েছিলাম।
লেখায় ভালোলাগা।

০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:১১

মৌরি হক দোলা বলেছেন: জি, আপু। অনেকদিন পরে ব্লগে এলাম। আশা করি, ভালো আছেন।

আমারও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বদৌলতেই এই বইটি পড়া। কলেজে থাকতে একবার পড়েছিলাম। তখন স্বাভাবিকভাবেই বইটির রূপকীয় তাৎপর্য বুঝতে পারিনি। কয়েকমাস আগে দ্বিতীয়বার পড়ায় এবং আরো পাঠকসহ বিজ্ঞজনদের আলোচনার মাধ্যমে বইটি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানার সুযোগ হয়েছিল। ভালো বই আসলেও বারবার পড়া যায়।

ধন্যবাদ।

৬| ০৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

প্রামানিক বলেছেন: অভিনন্দন অভিনন্দন দোলা। অল্প কথায় চমৎকার আলোচনা। খুব ভালো লাগল।

০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:১২

মৌরি হক দোলা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আশা করি, কুশলে আছেন। শুভকামনা।

৭| ০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:৪২

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: রিভিউটি যথেষ্টই ভালো হয়েছে। এটা সম্ভবত বাংলায় অনার্স পড়তে গেলে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। আর অনার্স না পড়তে গেলে যে কোন সময় মিলে। ক্রীতদাসদের হাসি উপন্যাসের রিভিউ দেস্খে আমার নিজের শিক্ষা জীবনের স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। আসলে স্মৃতির পাতার যে আলোকিত অংশ এখনো স্মরণ করি অবসরে ও অসময়ে, তার মধ্যে ভার্সিটি লাইফও বিশেষ। আমার লেখা ক্রীতদাসের হাসির রিভিও খোঁজলে আজ আর পাবো না কোথাও। তবে এই রিভিউটি ভালো হয়েছে। যদিও মনে হচ্ছে আরেকটু লম্বা করলে ভালো হতো অনেক।
অনেক লম্বা সময় পর ব্লগে আসার কারণটা জানা গেলো প্রথম মন্তব্যের প্রতিমন্তব্যে। ব্যস্ততার ফাঁকে ব্লগে এসে নিজেকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি পাঠকদের কিছু লেখা উপহার দিলে বড্ড ভালোই কাটতো ব্যস্ততা। শুভকামনা থাকলো।

১০ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০৫

মৌরি হক দোলা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ, তাজুল ভাই। আপনাকেও শুভকামনা জানাই।

৮| ০৭ ই জুন, ২০২৪ রাত ৯:১৪

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: 'আমিরুল মুমেনীন, হাসি মানুষের আত্মারই প্রতিধ্বনি!"
.................................................................................
এতদিন জানতাম হাসি মানুষকে আনন্দ দেয়,
মনকে প্রশমিত করে ।
কিন্ত জামানা বদলে গেছে ,
এখন দেখি মানুষ হাসতে হাসতে খুন করে ।
...........................................................................
অনে কদিন পর আবার আপনাকে দেখলাম ।
যতই ব্যস্ততা থাক মাসে অন্তত একটা লেখা দেয়া কোন ব্যাপারই না।
মনের সদিচ্ছাই সব ।
আপনার রিভিউ খুব ভালো হয়েছে ।

১০ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:১২

মৌরি হক দোলা বলেছেন: এতদিন জানতাম হাসি মানুষকে আনন্দ দেয়,
মনকে প্রশমিত করে ।
কিন্ত জামানা বদলে গেছে ,
এখন দেখি মানুষ হাসতে হাসতে খুন করে ।


শুধু কি তাই? মানুষ এখন মানুষের মৃত্যুতেও অকারণে হাসে। আমাদের এ অধঃপতন খুবই দুঃখজনক।

যতই ব্যস্ততা থাক মাসে অন্তত একটা লেখা দেয়া কোন ব্যাপারই না।
মনের সদিচ্ছাই সব ।


এটা অবশ্য ঠিক বলেছেন। আসলে ওই ইচ্ছেটাই হয়নি অনেকদিন। আর আমি অবশ্য জোর করে লেখার জন্য লিখব- এমন মানুষ নই। ভেতর থেকে তাগিদ না এলে লিখতে পারি না। আর এই তাগিদটাই পাইনি অনেকদিন। আবার যে পেয়েছি (যদিও জানি না কতদিনের জন্য), এটাই শুকরিয়া।

আশা করি, আপনি ভালো আছেন। আপনার কমেন্টের ফরম্যাট সেই আগের মতোই আছে এখনও। :)

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.