নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন ইউরোপ প্রবাসী, জীবনের ঝড়-ঝাপটায় পাক খেয়ে গড়ে ওঠা আজকের এই আমি। ব্লগে তুলে ধরি মনের গভীরে লুকানো আবেগের রং, যা সোশ্যাল মিডিয়ার চটকদার আলোয় মেলে না। আমি অনুভূতির এক ফেরিওয়ালা, শব্দে বুনে যাই জীবনের অলিখিত গল্প…

আমিই সাইফুল

চলতে চলতে হবে পরিচয়.....

আমিই সাইফুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিশপ্ত ছায়া

১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৯

চাঁদপুরের মেঘনার তীরে ছোট্ট গ্রাম কালীগঞ্জ। রাত নামলেই গ্রামটা যেন থমকে যায়। ঝিঁঝিঁর ডাক আর নদীর ঢেউয়ের শব্দ ছাড়া কিছু শোনা যায় না। ফাহাদ, গ্রামের স্কুলের মাস্টার, আজ তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনে পা রেখেছে। অর্পা, তার ছাত্রী থেকে জীবনসঙ্গিনী, আজ তার বউ। গ্রামের বাড়িতে পিঠা-পায়েসের গন্ধ, হাসি-আড্ডায় মুখর। কিন্তু ফাহাদের মনে কেন যেন একটা অস্বস্তি।

রাত গভীর হলে সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। ফাহাদ আর অর্পা তাদের নতুন ঘরে। হঠাৎ একটা শব্দে ফাহাদের ঘুম ভাঙল। যেন কেউ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে হাত বোলাচ্ছে। সে উঠে বসল। অর্পা গভীর ঘুমে। টর্চ জ্বেলে ঘরের কোণে তাকাল। একটা ছায়া দেখল—মানুষের নয়, যেন কোনো অদ্ভুত আকৃতি। হাত দুটো অস্বাভাবিক লম্বা, কালো। ফাহাদের বুক ধড়ফড় করছে। সে চিৎকার করতে গিয়েও থেমে গেল। অর্পা জেগে উঠল। “কী হয়েছে, ফাহাদ?” তার গলায় ভয়।
“কিছু না। তুমি ঘুমাও,” ফাহাদ বলল, কিন্তু তার গলা কাঁপছে। টর্চের আলো ছায়ার দিকে ফেরাল। কিছুই নেই। যেন সব মনের ভুল।

পরদিন সকালে হইচই। অর্পার মা রহিমা বেগমের সোনার হার হারিয়েছে। বিয়েতে পরেছিলেন, রাতে আলমারিতে রেখেছিলেন। কিন্তু আলমারি তালাবন্ধ, চাবি তাঁর কাছে। হারটা গেল কোথায়? ফাহাদের মনে পড়ল রাতের ছায়া। সে অর্পাকে কিছু না বলে গ্রামের মসজিদের মাওলানা আব্দুল্লাহর কাছে গেল। বুড়ো মাওলানা গ্রামের অলৌকিক রহস্য বোঝেন বলে মানুষের বিশ্বাস। ফাহাদ রাতের কথা খুলে বলল।

আব্দুল্লাহ চুপচাপ শুনলেন। তারপর বললেন, “ফাহাদ, এই গ্রামে একটা অভিশাপ আছে। বহু বছর আগে রশিদ নামে এক চোর ছিল। গ্রামের মানুষ তাকে ধরে হাত কেটে শাস্তি দেয়। রশিদ মারা যায়। কিন্তু তার হাত দুটো নাকি এখনো ঘুরে বেড়ায়। সোনার জিনিস দেখলে লোভে পড়ে।”
ফাহাদের গা শিউরে উঠল। “কী করব তাহলে?”
“মেঘনার পাড়ে একটা পুরনো বটগাছ আছে। তার নিচে মাটি খোঁড়। হারটা পেলে বুঝবে আমার কথা সত্যি।”

সন্ধ্যায় ফাহাদ আর অর্পা বটগাছের কাছে গেল। অর্পার চোখে ভয়। ফাহাদ বলল, “ভয় পেয়ো না, আমি আছি।” তারা মাটি খুঁড়ল। কিছুক্ষণ পর একটা কাপড়ের পুঁটলি পেল। খুলে দেখল, রহিমা বেগমের হার। অর্পা খুশিতে চিৎকার করল। কিন্তু ফাহাদের মুখে হাসি নেই। পুঁটলির পাশে একটা পুরনো ছবি। ছবিতে একজন, তার হাত অদ্ভুত লম্বা। ফাহাদের মনে হল, ছবির মানুষটা তাকে চেনে।

রাতে ফাহাদ ঘুমাতে পারল না। অর্পাকে জড়িয়ে বলল, “এই হার ফিরিয়ে আনা আমাদের ভুল হয়েছে।” অর্পা হাসল। “তুমি বড্ড ভয় পাও।”
কিন্তু পরদিন সকালে সর্বনাশ। রহিমা বেগম মারা গেছেন। রাতে বুকে ব্যথা। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই শেষ। অর্পা কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান। ফাহাদের মাথা ঘুরছে। তার মনে হচ্ছে, এই অভিশাপ তার জীবন শেষ করবে।

ফাহাদ আর অর্পা ঢাকায় চলে গেল। গ্রামের স্মৃতি ভুলতে। কিন্তু ছায়াটা পিছু ছাড়ল না। প্রতি রাতে ফাহাদ শুনতে পায়, কেউ বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে। একদিন অর্পা বলল, “আমার কানের দুল নেই।” ফাহাদ জানে, এটা সেই অভিশপ্ত হাত।

মাসখানেক পর অর্পার শরীর খারাপ। ডাক্তার বললেন, হৃদয়ে সমস্যা। ফাহাদ সব চেষ্টা করল। ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি। কিন্তু অর্পা দিন দিন ক্লান্ত। একদিন রাতে ফাহাদের হাত ধরে বলল, “ফাহাদ, আমার সময় ফুরিয়েছে। তুমি নিজেকে বাঁচাও।” ফাহাদ কাঁদতে কাঁদতে বলল, “তুমি ছাড়া আমি বাঁচব কী করে?”
সেই রাতে অর্পা চলে গেল। ফাহাদের জীবন থমকে গেল। সে গ্রামে ফিরল। কিন্তু রাতের ছায়া তাকে ছাড়েনি। প্রতি রাতে সে শুনতে পায়, কেউ তার ঘরে ঘোরে। তার টেবিল থেকে পুরনো কলম, অর্পার দেওয়া একটা রুমাল—সব হারায়। ফাহাদ বুঝল, এই হাত তাকে শান্তি দেবে না।

একদিন সন্ধ্যায় ফাহাদ মেঘনার পাড়ে গেল। বটগাছের নিচে বসে কাঁদতে লাগল। “অর্পা, আমি আর পারছি না।” সে মাটি খুঁড়ল। একটা পুঁটলি পেল। খুলে দেখল, অর্পার কানের দুল, তার কলম, রুমাল। আর একটা নতুন জিনিস—অর্পার ছবি। ছবিতে অর্পা হাসছে, কিন্তু তার হাত দুটো অদ্ভুত লম্বা। ফাহাদের মনে হল, অর্পা তাকে ডাকছে।

সেই রাতে ফাহাদ ঘরে ফিরল না। পরদিন সকালে গ্রামের মানুষ তাকে মেঘনার জলে ভাসতে দেখল। তার হাতে অর্পার ছবি। গ্রামের মানুষ কাঁদল, কিন্তু কেউ বুঝল না, ফাহাদ কেন নিজেকে শেষ করল। শুধু পুরনো বটগাছটা নীরবে দাঁড়িয়ে রইল, যেন সে জানে, অভিশপ্ত হাত দুটো এখনো ঘুরে বেড়ায়, নতুন শিকারের খোঁজে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্টে কোনো মন্তব্য নেই। অত্যন্ত দুঃখজনক।
এজন্য বলি মুরুব্বীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.