নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে চাই না, তবু লিখে যাই..

মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন

লিখতে চাই না, তবু লিখে যাই..

মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘাড় ত্যাড়া

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১০

আশ-পাশ অঞ্চলের অনেক গ্রাম থেকে যোগাযোগ,শিক্ষা,অর্থ কিংবা রুচিবোধে আমাদের গ্রাম 'হরিপুর' বেশ এগিয়ে আছে এখনো।জানি না এভাবে এগিয়ে যেতে থাকলে এই সবুজ গ্রামটা কতোদিন গ্রাম থাকবে,পল্লীতে নগরায়নের ছোঁয়া যতো বাড়বে পল্লী ততো পবিত্রতা হারাতে শুরু করবে।গ্রামের মাঝ পাড়ায়,আমাদের বাড়ীর নাম 'মুন্সী বাড়ী'।পূর্বের ভিটায় আমাদের টিন-কাঠের ঘরটার পরেই দক্ষিনের পুকুর পাড়ে বিশাল একটা আমগাছ,এই গাছটার নিচেই শাম্পানদের (প্রতিবেশী খেলার সাথী,ভালো নাম সাদ্দাম বয়সে আমার চেয়ে একমাসের ছোট) ঘর।সেদিন বৃহস্পতিবার ছিলো(বৃষ্টির দিন),হাফ স্কুল শেষে দুপুর বেলা বৃষ্টি ভিজে বাড়ীতে এসে কয়েক লোকমা ভাত খেয়েই বাড়ির পিছনের দিকের (পূর্ব পাশে) মাঠে ফুটবল নিয়ে দৌড় দিলাম।কিছুক্ষণ পর শাম্পান,ফরিদ,রুবেল সহ আরও অনেকেই মাঠে ভীড় জমালো।কাঁদা-পানির নাতিদীর্ঘ মাঠে,৫-৫ দশজন দু'দলে ভাগ হয়ে,অল্প হাওয়ার ফুটবল নিয়ে পায়ের গিরু সমান পানিতে শুরু করে দিলাম এলোমেলো দৌড়ানো।ফুটবলটাকে তখন মনে হচ্ছিলো পাথর খণ্ড,মাটিতে রেখে লাথি দিলে সড়বে না (পানির কারনে বল সড়ানো যায় না),তবে মাটি থেকে পায়ের পাঁচ আঙুলের মাথা দিয়ে উপরের দিকে উঠিয়ে-উঠিয়ে সামনের দিকে যাওয়া যেতো।এভাবে অর্ধ-বিরতি (যখন দু দল তাদের গোলপোস্ট পরিবর্তন করে) পর্যন্ত শাম্পানের দলঃ৫ এবং আমাদের দলঃ৬,অর্থাৎ এক গোল এগিয়ে ছিল আমার দল।বিরতির পর পুনরায় খেলা শুরু করার আগে দলের সবাইকে নিয়ে প্ল্যান করে নিলাম,এখন আমরা সবাই শুধু ডিপেন্সে খেলবো,কেওই গোল করতে চেষ্টা করবো না,তবে খুব ভালো সুযোগ পেলে ছেঁড়েও দিবো না।আমি বেগী ছিলাম,যেই সামনে আসতে চাইতো,অনেক দূর থেকে তাক করতে করতে আর ঐ-ঐ বলে সামনে গিয়ে বল কেঁড়ে নিয়ে এলোপাথারি মারতাম।এরপরও কেও খুব বেশী ঝামেলা করলে,লেংরি দিতাম।কেহই কিছু বলতো না,সবাই জানতো আমার ঘাড়ের একটা রগ ত্যাড়া ছিলো।

খেলা যখন শেষের দিকে শাম্পান বিপদজনক একটা ড্রিবলিং দিয়ে লেফট উইঙ্গার হয়ে যখনই আমাদের গোলপোস্টে দিকে তেড়ে আসতে লাগলো,আমার তখন কেবল মাথা ঝিমাচ্ছিলো।আমার দলের সঙ্গি-সারথী সব বিপরীত দলের গোলপোষ্টের কাছে ছিলো তখন।শাম্পানকে দমানোর কোন প্রকার উপায়ন্তর না দেখে একপর্যায়ে ওকে লেংরি দিয়ে ফেলি।তারপর শাম্পান সহ তার দলের কয়েকজন টুকটাক প্রতিবাদ শুরু করলো।আমি ছোটবেলায় মেনে নিতেই পারতাম না যে,আমার মতের বিরুদ্ধে অন্তত আমার চারপাশের কেও যেতে পারে।ততক্ষণ পর্যন্ত দু'দলের ফলাফল আগের মতোই ছিলো,তৎক্ষণাৎ মুখে কিছু না বলেই সরাসরি ওকে(শাম্পানকে) ,ভাগীনা হারকিউলিসকে (ফারুককে) সাথে নিয়ে ইচ্ছমতন পিচ্ছিল কাঁদা-মাটিতে শুইয়ে দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে টেনেছিলাম,মাটিতে পুঁতে ফেলার ব্যার্থ চেষ্টাও করেছিলাম দু’জনে।মাঠের পাশের অনেক নিচু ফসলী জমি'র (তখন প্রচুর পানি আর কচুরিফেনায় নিচু জায়গাটা,গাছের ছায়ার নিচে নির্জনতায় এক ভয়ংকর পরিবেশে তৈরি করে রাখতো।এই নিচু জায়গাটি একসময়র বিল ছিলো,পানকৌড়ি আর দেশী মাছের ঝাঁক থাকতো এখানে,আজ বিলটি পরিত্যাক্ত নিচু জমি)একটা খাঁদের কাছে শাম্পানকে জোর করে ধরে নিয়ে গেলাম,রেগুলার হারকিউলিস দেখা ভাইগ্না'র সহায়তায় ওকে খাঁদে ফেলতে খুব একাটা কষ্ট হলো না।খাঁদটির উপর থেকে বুঝাই যায় না যে,নিচের জায়গাটা এতো নরম আর পা দিলেই একেবারে হাঁটু সমান নিচে পুঁতে যেতে হয়।শাম্পানকে সেই খাঁদে ফেলে দিয়ে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রেখেছি।চেপে ধরে রাখাতে নিমিষেই দেখলাম শাম্পান হাঁটু সমান গেঁড়ে গেছে,আমরা আরেকটু কষ্ট করে চেপে-চেপে কোমর সমান গেঁড়ে দিলাম।এবার ও কান্না-কাটি শুরু করলো,ছেঁড়ে দিলাম।অসহায় ছেলেটার আর্তনাদে রহিমা চাচী (সাদ্দামের মা)এসে শাম্পানকে টেনে উঠাতে লাগলেন আর গালি দিতে দিতে আমার গোষ্ঠী উদ্ধার করতে থাকলেন।এতেই শুধু ক্ষান্ত হননি,পরদিন রহিমা চাচী পাড়ায় রটিয়েছিলেন,আমাকে নাকি জীনে ধরেছে!আমি নাকি জীনের বলে (শক্তিতে) উনার মাসুম বাচ্চাকে গেঁড়ে দিয়ে প্রায় অদৃশ্য করে দিয়েছিলাম।উনি হাঁস খুঁজতে এইদিকে না আসলে টেরই পেতেন না,নাকি যে আমি এই কাজ করেছি!এই ঘটনা নিয়ে,সেদিন রাতে মা আমাকে কিছু জিজ্ঞেস না করেই,পড়ার টেবিল থেকে উঠিয়ে দিয়ে বললেন, যা বাদাইম্মা বের হ!পড়া-শুনা করা লাগবোনা।যে পাখী উড়াল পারে,বাসাতেই ধর-পর করে,তুমি চ্যানেল মিলাও গিয়া। আমি যেই মাকে কিছু বলতে সামনে এগিয়ে এসেছি অমনিই হাতের কাছের বইটা আমার দিকে ছুঁড়ে মারলেন।আমি বইটা কুঁড়িয়ে ঘরের দিকে রাখতে গেলাম,এবার মা আমার হাত দু'টা ধরে সোজা রান্না ঘরে নিয়ে গেলেন।কিছু বুঝে উঠলাম না,হুটহাট করে আমার চোখে মরিচের গুঁড়ি লাগিয়ে দিয়ে বিড়বিড় করে বলতে থাকলেন,এখন শিক্ষা না দিলে বড় হয়ে ক্যাটার হয়ে যাইবা শ্রীরামপুরের ফারুইক্কার মতো।দাদী এসে আমার মাকে নিষ্ঠুর,ডাইনী আরও বহু কিছু বলে গালি দিতে দিতে আমায় রক্ষা করে টিউবওয়েলের পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে দিলেন।তারপর থেকে অন্তত মায়ের কানে পৌঁছাবে এমন কোন ধরনের মাস্তানি করিনি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.