নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে চাই না, তবু লিখে যাই..

মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন

লিখতে চাই না, তবু লিখে যাই..

মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন-কষ্ট

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:০৯

আমার মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হসপিটালে ভর্তি গত অনেকদিন ধরে। ওখান থেকে শুধু ভাইয়্যাকে ফোন করে বলে, 'বাবা আমি কবে ভালো হবো?' মা,ভাইয়্যার কাছে একবারও আমার কথা জিজ্ঞেস করে না। অথচ আমি ইউনিভার্সিটি'র ছুটিতে যখন বাড়িতে থাকতাম মা আমায় ছেড়ে দুই মিনিটের জন্যও কোথাও যেত না।

মা অসুস্থ হলে খুব সহজে ঔষধ খেত না, টাকা খরচ হবে বলে। আমরা তিনটা ভাই পড়ছি, উনার তো আর বিলাসিতা করে সবার মতো ঔষধ খাওয়া চলে না। জীবনে কোন ব্যাপারেই সহজে হাল ছেড়ে দিতো না যে মানুষটা,তারই আজ সুস্থ হওয়ার জন্য কত অপেক্ষা।

উপরের ঘটনাটা ছিল আমার স্বপ্নের।অনেকদিন ধরেই বাবার কথাও ভাবছি যখন তখন, এই মানুষটা আর কত দিনই বা বাঁচবে? আমি যেভাবে রাত-দিন পার করছি জীবনে আর কতোবারই বা বাবার সাথে দেখা হবে!এসব ভেবে যেখানে-সেখানে বয়োজ্যৈষ্ঠ যে কাউকে দেখলেই বাবা, মা কিংবা ভাইয়্যার কথা মনে পড়ে যায়। বাবার সাথে কতো খারাপ ব্যাবহার করেছি, কতো। উহ..!
আশ-পাশের অন্য সব ছেলে-মেয়েদের বাবাদের মতো আমার বাবা তার বাবার দিনে ভিটে-মাটি ছাড়া কিছুই পায় নি বলে, তাকে কতো হাজারবার খোঁটা দিয়েছি।আমার মাকে যখন খুশি তখনই টাকা চেয়ে কত হাজার বার যে ভোগান্তিতে ফেলেছি,তারও হিসেব নেই।

তাদের পৃথিবী ছাড়ার সময় হয়ে গেছে, অথচ যে স্বপ্ন নিয়ে এই দু'টি মানুষ ধান ভানা,হাঁস-মুরগী পালন,বর্গায় ফসল আবাদ,গাভী পালন কিংবা চা-মিষ্টি'র দোকানের ব্যাবসা শুরু করেছিলেন সেই স্বপ্নের ধারে কাছেও আমি যেতে পারি নি এখনো।বাবা-মায়ের বসয় হয়েছে,তাদেরকে ভাইয়্যা শারীরিক পরিশ্রম থেকে মুক্তি দিয়েছে।অভাবের সংসারে একমাত্র বড় ভাই সেই কবে এস.এস.সি পাশ করে (বিজ্ঞান বিভাগ থেকে) বিদেশ চলে গেছে,মাসের পর মাস অর্ধ লাখ করে টাকা পাঠাতো (উপার্জনের সবটুকুই,শুধু নিজের থাকা-খাওয়ার খরচটা ছাড়া)। আমাকে কখনো বলতো না যে, ভাই তুই কিছু একটা কর। এসএসসি শেষ করে ডিপ্লোমা করলাম,বিএসসিও প্রায় শেষ পর্যায়ে, অথচ এখনো কিছু হলো না,ছোট একটা পোস্টে (সহকারী ওয়েব প্রোগ্রামার) চাকুরী করে কোনভাবে আমার রাত-দিন চলে।গতকাল রাতে স্বপ্ন দেখছি আর স্বপ্নে ভাবছিলাম আমার মায়ের চিকিৎসা হবে, ভাইয়্যাও দেশে এসে গেলো- পরিবারের কারো হাতেই তেমন টাকা-পয়সা নেই,আমিও পারছি না মায়ের জন্য কিছু করতে। ভাবতে ভাবতেই স্বপ্নেই কেঁদে উঠলাম,কাঁদতে কাঁদতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো ভোর পাঁচটায়।জেগেই মাকে ফোন দিলাম,কাঁদতে কাঁদতে বললাম- মা আমি দুঃস্বপ্ন দেখেছি।মা বললো কী দেখেছিস?আমি কুঁকড়ে-কুঁকড়ে বলে উঠলাম না মা, আমি মুখে নিতে পারবো না,না না না।

আমি জানি স্বপ্ন সুস্বপ্ন আর দুঃস্বপ্ন যাই হউক না কেন, সে বাস্তবতার আভাস দেয়। ঠিক আমার ছোট বেলার মতো করে তাদের শেষ বেলায় আমাকেও তাদের যত্ন নিতে হবে। আমার চেষ্টা চলছে,বাবা-মাকে আমার অর্জিত সব কিছুই বিসর্জন দেয়ার।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.