![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনের ভিতরে বড় হবার প্রচন্ড আকাঙ্খা ।। স্বপ্ন দেখতে খুউউউব ভালোবাসি।। ভালোবাসি বই পড়তে, ছবি আঁকতে আর বিখ্যাত মানুষদের জীবনী পড়তে .....
আমার কথা : আমি মাহবুব, ভালবাসি বই পড়তে, জানতে। বিশেষ করে ভালবাসি, বিজ্ঞান বিষেয়ে পড়তে এবং স্বভাবতই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী পড়তে। লেখালেখিতে আমি একেবারেই কাঁচা এবং বাংলা ব্লগিংযে আমি একেবারেই নতুন। কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই ইচ্ছা হল, একটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লিখার। তাই লিখে ফেললাম এটা। জানি, এটা একেবারেই ছাইপাশ হয়েছে। তারপরেও নিজের এই লেখাটা দিয়েই আমি আমার বাংলা ব্লগিং জীবন শুরু করতে চাই। দয়া করে, সবাই একটু বলবেন পড়ার পর কেমন লাগলো। জানি ভালো লাগবেনা, তারপরেও.... আমার এই লেখার ভুল-ত্রুটি গুলো ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব ।।।
ধন্যবাদ।। ভালো থাকবেন সবাই।।।।
(১)
আব্দুল কাদির সাহেব অত্যন্ত কৌতুহলী হয়ে তাঁর সামনে রাখা যন্ত্রটির দিকে তাকালেন। একটু ঝুঁকে এসে ভাল করে দেখলেন যন্ত্র সংলগ্ন মনিটরটির দিকে। হ্যাঁ, সেখানে এখনও বিপ বিপ শব্দ করে আলো জ্বলছে।
বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির। অনেক দিন ধরে গবেষণা করছেন পৃথিবীর প্রায় নিকটতম গ্রহ ট্রনেটোকে নিয়ে। তাঁর মাধ্যমেই পৃথিবীর মানুষ জানতে পেরেছে যে, পৃথিবীর নিকটে সিরাস নক্ষত্রপুঞ্জের ট্রনেটো নামক গ্রহে অনেক দিন আগে প্রাণের বিকাশ হয়েছে। তাই আব্দুল কাদির দূর গ্রহের ওই প্রাণীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য অনেক সময় এবং অনেক শ্রম দিয়ে তৈরী করলেন একটি কমিউনিকেশন মডিউল। যাতে করে কখনও যদি ওই গ্রহের কোন প্রাণী পৃথিবীতে আসার চেষ্টা করে বা আসে তাহলে যন্ত্রটি তৎক্ষণাৎ জানান দেবে প্রাণীটির উপস্থিতি এবং অবস্থান সম্পর্কে এবং বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির এখনও অত্যন্ত আশ্চর্যিত হয়ে লক্ষ্য করছেন তাঁর নির্মিত মডিউলটির দিকে। কারণ, ওটা এখন বিপ বিপ করে জানান দিচ্ছে পৃথিবীর কোন এক স্থানে ট্রনেটো গ্রহের প্রাণীর আগমণ ঘটেছে। যাই হোক্, কাদির মডিউলটির নির্দিষ্ট স্থানে চাপ দিতেই এটি প্রাণীটির অবস্থান সম্পর্কে বলে দিল। তিনি প্রাণীটির মহাকাশযানটিকে ট্র্যাক করে অত্যন্ত প্রাচীন কিন্তু কার্যকর একটি পদ্ধতিতে প্রাণীটিকে তাঁর ল্যাবরটরীতে আনতে শেষ পর্যন্ত সক্ষম হলেন।
(২)
”আপনি কি সত্যিই কথা বলছেন?”
দ্বিতীয়বারের মত প্রশ্নটা করলেন আব্দুল কাদির ট্রনেটো গ্রহের প্রাণীটাকে।
”বল্লাম তো জনাব, আমি কথা বলছি। কিন্তু, আমারও তো একই প্রশ্ন, আপনিও কি কথা বলছেন ? নাকি সরাসরি আমার মস্তিষ্ককে ব্যবহার করে ওটার মাধ্যমে কথা বলছেন ?”
”জ্বি না, আমিও সত্যিই কথা বলছি। কিন্তু, আমি অত্যন্ত আশ্চর্যিত হচ্ছি আপনার কথা শুনে এবং আকার দেখে।”
”হ্যাঁ আমিও চরম আশ্চর্যিত হয়েছি। কিন্তু, বিষয়টা সত্য যে, আপনার কথা আমি, এমনকি আমার কথাও আপনি বুঝতে পারছেন এবং আমিও পুরোপুরি বিস্মিত আপনার আকার দেখে। কারণ, পৃথিবী নামক এই গ্রহে আসার আগে আমি অনেক পড়াশুনা করে এসেছি এবং জেনেছি আপনারাও আমাদের মত মানুষ। কিন্তু কোথাও আপনাদের এই অতিকায় আকার সম্পর্কে বলা হয়নি।”
”আমরাও আপনাদের গ্রহ নিয়ে অনেক গবেষণা করে জেনেছি যে, ওইখানে কোন একপ্রকার প্রাণের বিকাশ হয়েছে। কিন্তু, ওটা যে আমাদের মত মানুষ তা আমরা ঘূণাক্ষরেও বূঝি নি। আর হ্যাঁ, আপনাদের আকার সম্পর্কে আমাদের পূর্ব ধারণা ছিল। কিন্তু, ওই গ্রহের প্রাণী যে মানুষই হবে আর তার আকার যে এত ছোট হবে তা আমরা বুঝতে পারি নি।”
”এখন আমরা দেখতেই পাচ্ছি আমরা দু’টি গ্রহের বাসিন্দাই হচ্ছি মানুষ। যদিও আকারের মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু জনাব, আমার কাছে মনে হচ্ছে আপনাদের দৈহিক আকারটা আসলেই বিরাট যা একেবারেই অর্থহীন।”
”আর, আমি যদি আপনার কথার উল্টোটা বলি তাহলেও কিন্তু হবে। তবে, আমি এখন বুঝতে পারছি আমাদের এই পৃথিবীর পরিবেশে মানুষদের টিকে থাকার জন্য এই বিরাট (যা কিনা আমাদের জন্য সঠিক মনে হয়) দেহটির প্রয়োজন অসামান্য। তবে আপনি আমাকে দেখে যে অতিকায়, বিশাল বলছেন আমার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে কিন্তু আমি ছোট, তারা আমাকে সাধারণত খাটো বলেই মনে করে।”
”হা.হা..হা... আপনার কথা ঠিক। পরিবেশের পার্থক্য অনুযায়ী আমাদের দেহটাকে প্রয়োজন মাফিক পাল্টে দেয়া হয়েছে। অথবা মূল মনূষ্য প্রাণের বিকাশ হয় ট্রনেট্রোতে অথবা পৃথিবীতে হয়েছে। আর ওই দু’জায়গার কোন একটা থেকে মানুষের কোন বংশধর কোন না কোন ভাবে বোধহয় আরেকটাতে গিয়ে পৌঁছেছে এবং দীর্ঘ-দিনের বিবর্তনের ফলে তার দৈহিক আকারেরও পরিবর্তন হয়েছে। হয়তোবা এই খাটো আকৃতিই মানুষের আদিরূপ অথবা এই দীর্ঘ আকৃতিই মানুষের আদিরূপ। যাই হোক, আমরা এক গ্রহের সাথে যখন অন্য গ্রহের মানুষেরা দেখা করতে পেরেছি তখন নিশ্চয়ই আমরা ভবিষ্যতে আরো অনেক তথ্য পাব এ বিষয়ে । তার আগে বলুন, আপনার কি কোন নাম আছে? থাকলে তা কি ?”
”ও হ্যাঁ, আমি আব্দুল কাদির। একজন বিজ্ঞানী। মূলত স্পেস্-টাইম এবং মহাজাগতিক প্রাণের বিকাশ নিয়েই আমি গবেষণা করি। আর আপনি ?”
” হ্যাঁ জনাব, আমি হাসনাত করিম। যদিও এই অভিযানে আমার কোড নেম -- ০০৪৬৭। আমিও আমার গ্রহের একজন বিজ্ঞানী। তবে আমি নভোচারীদের মত এক গ্রহ থেকে আরেক গ্রহে ছুটতে ভালবাসি।”
”আসলে আমরা দু’জনেই যে মানুষ এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে এ ব্যাপারটা আমাদের আরও আগে জানা উচিৎ ছিল। যাই হোক্, আপনার পেশাটা কিন্তু দারুণ, তা এর আগে আর কোন গ্রহে গিয়েছিলেন ? ওখানে কি কোন প্রাণের সন্ধান পেয়েছেন ?”
”জ্বি না, এর আগে যে গ্রহটাতে আমি গিয়েছিলাম সেখানে বিগত ৮৫ বছর একটানা বসবাস করেও আমি কোন প্রাণের অসি-ত্ব পাইনি। তবে ওই গ্রহটাতে যাকে আমরা GT-22 বলি, তাতে অতি মূল্যবান আকরিকের দেখা পেয়েছি। যা কিনা আমাদের গবেষণার জন্য অনেক দরকারী।”
”কি বলেন জনাব, আপনি ৮৫ বছর ছিলেন ওইখানে !!!
তা আপনার বয়সটা কি একটু বলবেন ?”
”নিশ্চয়ই, তা আমার বয়স তো প্রায় ৫৫০ বছর হবে। কারন, গত ২৫ বছর আগে আমি ৭ম বারের মত ’ওইলকির ধূমকেতু’-টা দেখেছি। যাকে কিনা আপনারা ’হ্যালির ধূমকেতু’ বলেন এবং যা আমাদের গ্রহের দিন ও রাতের হিসাবে প্রায় ৭৫ বছর পর পর দেখা দেয়।”
”ওহ্ খোদা !!! কি বলেন, ৫৫০ বছর !!! অসম্ভব, আপনি ’হ্যালির ধূমকেতু’ ৭ বার দেখে ফেলেছেন !!!
অবিশ্বাস্য !!!”
”কেন, অবিশ্বাস্য হবে কেন ? আমার তো মনে হয় আপনাদের জীবনীশক্তি আরও বেশী। তা আপনার বয়স কত ?”
”হা.হা..হা... আমি এই বছরে মাত্র ৬৫ তে পা দিলাম। বুঝলেন তো আমাদের জীবনীশক্তি কতটুকু। আমাদের এখানে গড় আয়ুই মাত্র ৬৫ বছর। এর মানে আমি এখন মৃত্যুর দুয়ারে। আচ্ছা আপনারা কি ঈশ্বরের আরাধনা করেন ? মানে সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করেন ?”
” ঈশ্বর ?? ও হ্যাঁ, আপনি বলতে চাইছেন, যে আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপাসনা করি কিনা, তাই না ??”
” হ্যাঁ, হ্যাঁ, সৃষ্টিকর্তার উপাসনা।”
”আসলে আমাদের গ্রহে, আমরা নিজেরাই আমাদের নিজেদের সৃষ্টিকর্তা। এখন যদি আপনি মনে করেন, তাহলে কি আমরা নিজেরাই নিজেদের আরাধনা করি ? তাহলে উত্তরটা অবশ্যই হবে, হ্যাঁ। কারণ, আমাদের গ্রহে জন্ম ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রিত। রোগ-শোক, জরা-ব্যাধি থেকে আমরা মুক্ত। তাই আমাদের মৃত্যু নেই। কেবল স্বেচ্ছা মৃত্যু ছাড়া। এজন্য আমাদের নিজেদের শরীরটাকে যত্ন করা অর্থাৎ আমাদের নিজেদের শরীরের আরাধনা করাই আমাদের জন্য বেশী প্রয়োজন। বছরের পর বছর এই দেহটাই বয়ে বেড়াচ্ছে আমাদেরকে। তাই আমরা নিজেদেরকেই নিজেদের ঈশ্বর ভাবি। তবে অতি প্রাচীন কালে নাকি কিছু মানুষ ছিল যারা ট্রনেটোতে ঈশ্বর নামক সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করত। কিন্তু, এখন আমাদের গ্রহের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এত উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে এবং আমরা সবাই এত কিছু জানি যে, আমরা বুঝতে পারি ঈশ্বর নামক অলৌকিক, অলীক বস্তুর আসলে কোন ভিত্তি নেই। যুক্তিতে ঈশ্বরের কোন স্থান নেই। সুতরাং, আপাতদৃষ্টিতে আমরা ঈশ্বর নামক অলীক কোন জিনিসের অনুগামী নই। কিন্তু আপনাদের ব্যাপারটা কি বলুন তো ?”
”আমরা কিন্তু জনাব ঈশ্বরের অনুগামী। যদিও এই পৃথিবীতেই কিছু মানুষ আছে যারা আপনাদের মত চিন্তা করে। তারপরেও আমি বলব, যুক্তি দিয়ে ঈশ্বরকে বিবেচনা করা যায় না। ঈশ্বরের স্থান কেবল মাত্র বিশ্বাসে। হয়তোবা আপনারা মৃত্যুকে জয় করেছেন অথবা নিজেরাই জেনেটিক কোডিং করে নিজেদের ইচ্ছামতো পাল্টে ফেলছেন এমনকি তৈরীও করতে পারছেন, তারপরেও আমি বলব ঈশ্বর আছেন। এ ধারণা যত অবাস্তব অথবা অযৌক্তিক মনে হোক না কেন, আমি বলব ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে। দেখুন জনাব, এই বিশ্ব ব্রক্ষ্রান্ডের দিকে তাকিয়ে- গ্রহের পর গ্রহ, নক্ষত্রের পর নক্ষত্র, কিভাবে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরছে। আপনার ট্রনেটো থেকে শুরু করে আমাদের পৃথিবী, নিয়মের কোন হের-ফের নেই। অমোঘ নিয়মে যেন সব বাঁধা। আহ্নিক-গতি, বার্ষিক-গতি, জোয়ার-ভাঁটা, সূর্য গ্রহণ, চন্দ্র গ্রহণ, দিন থেকে রাত এসব ঘটনা ঘটানো কি কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব, অথবা কারও পক্ষে কি সম্ভব ? নিশ্চয়ই এগুলোর নিয়ন্ত্রণের জন্য একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন এবং এই সৃষ্টিকর্তাই নিঃসন্দেহে পরমপিতা বা ঈশ্বর।”
”হ্যাঁ, আপনার কথা ঠিক আছে তবে, আমার কাছে ’ঈশ্বর’ জিনিসটা আপেক্ষিক। হয়তোবা ওটা আপনাদের জন্য আছে অথবা আমাদের জন্য নেই। তাই আমরা এই অযৌক্তিক জিনিস নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সরাসরি আপনার সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি নিয়ে গবেষণায় মেতে আছি এবং দেখতেই পাচ্ছেন আমরা আপনার সৃষ্টিকর্তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জীবনীশক্তি কত বাড়িয়েছে। আমরা মৃত্যুকে জয় করেছি। হা.হা..হা...”
”জ্বি জনাব, আমি আপনার একটি কথার সাথে একমত। ঈশ্বর সত্যিই আপেক্ষিক ব্যাপার এবং এটা অবশ্যই বিশ্বাসেরও ব্যাপার। যাই হোক্, এটা নিয়ে আলোচনা করলে আলোচনা শুধু দীর্ঘই হবে, তার চেয়ে চলুন আমরা কিভাবে দু’টি গ্রহেরই জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশে সহায়তা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করি। আশা করি, আপনাদের দিক থেকে কোন আপত্তি থাকবে না।”
”অবশ্যই না, চলুন আলোচনায় যাই। আর, আমার জ্বালানীটাও প্রায়, শেষ হয়ে আসছে। আন্তঃগ্যালাক্টিক রাডারকে ফাঁকি দিয়ে কম সময়ের ভিতরে একটি সুপার-ড্রাইভ দিয়ে আমি পৃথিবীতে এসেছি। তাই আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে হবে।”
এই বলে দু’গ্রহের দু’ই প্রাণী অনেক্ষণ আলোচনা করল তাদের দু’গ্রহের পরিবেশ, প্রকৃতি, মানুষ, রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান, বিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি নিয়ে এবং শেষে ট্রনেটো গ্রহের ক্ষুদ্র আগন্তুক তার ছোট্ট মহাকাশযানটাকে নিয়ে তার গ্রহে ফিরে গেল। সে পরবর্তীতে আবার আসবে, আবার পৃথিবীর মানুষের সাথে যোগাযোগ করবে এই বলে সে বিজ্ঞানী আব্দুল কাদিরের কাছ থেকে বিদায় নিল। কিন্তু, হাসনাত করিম বা আব্দুল কাদির কেউই জানত না যে, আর কয়েক বছরের মধ্যে হাসনাত করিম প্রচন্ড হতাশায় পতিত হয়ে স্বেচ্ছা মৃত্যুকে বেঁছে নিবে। আর এভাবেই ট্রনেটো গ্রহের কেউ কখনো জানবে না পৃথিবীর মানুষের কথা।।।
(৩)
অনেকদিন ধরে পৃথিবীর মিডিয়া এই আলোচনা নিয়ে মাতামাতি করল। কিন্তু, কয়েক বছর পার হওয়ার পরও যখন দূর গ্রহের আগন্তুকের কোন খোঁজ-খবর পাওয়া গেল না তখন, পৃথিবীর বিজ্ঞানীমহল এটাকে বিজ্ঞানী আব্দুল কাদিরের উত্তপ্ত মসি-ষ্কের কল্পনা হিসাবে বলাবলি করতে লাগল। আর এদিকে আব্দুল কাদির প্রাণপণ চেষ্টা করেও কাউকেই বোঝাতে পারলেন না দূর গ্রহের আগন্তুকের পৃথিবীতে আসার কথা। আর এরকম একটা চরম হতাশা এবং দুঃখবোধ নিয়েই তিনি শেষপর্যন্ত মৃত্যুবরণ করলেন।
আর এভাবে চলে গেল কয়েক শতাব্দী। পৃথিবীর মানুষ যারা কিনা নিয়তির উপর বিশ্বাসী ছিল, তারা স্বাচ্ছন্দে দিন কাটাতে লাগল। কারণ, তারা জানত না ভবিষ্যতে কি আছে। একটা দিনের চেয়ে আরেকটা দিন ছিল তাদের জন্য আরও রোমাঞ্চকর, আরও বেশী রহস্যময়। তাদের কাছে ভবিষ্যৎ থাকত অনিশ্চিত। তারা আগ্রহ ভরে অপেক্ষা করত সেই, অদূর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য। তারা অপেক্ষা করত পরবর্তী দিনে কি আছে তা দেখার জন্য। তাদের মধ্যে সৃষ্টি হত মারামারি, হানাহানি, বিশৃঙ্খলা আবার তা আপনা আপনিই ঠিক হয়ে যেত। তাদের মধ্যে কেউ নেতৃত্ত দেয় কেউবা শৃঙ্খলা তৈরী করে বন্ধ করত এসব মারামারি, হানাহানি। তাদের স্বল্পায়ু জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও তাদের মধ্যে থাকত তৃপ্তির আনন্দ। দিনের শেষে তারা থাকত সুখী মানুষ।
অপরদিকে, ট্রনেটো গ্রহের মানুষেরা নিশ্চিত ছিল তাদের ভবিষৎ নিয়ে। তারা সময় পরিভ্রমণ জানত, তাই তারা বলতে পারত তাদের ভবিষ্যতে কি আছে। এজন্য ভবিষৎ ছিল তাদের জানা। প্রথম প্রথম তারা তাদের এহেন ভবিষৎ নির্ণয় প্রক্রিয়া নিয়ে আনন্দেই ছিল কিন্তু, দিন যত গড়াতে লাগল তারা বুঝতে পারল যে, সবকিছুই তাদের জন্য একরকম, সবকিছুই একঘেয়ে। তাদের জীবনে কোন দুঃখ বা রোগ-শোক, মৃত্যু নেই। তাই প্রতিটা জীবন্ত দিনই পরবর্তীতে তাদের কাছে ধরা দিল প্রচন্ড আতঙ্ক রুপে। তারা প্রচন্ড বিতৃষ্ণা নিয়ে লক্ষ্য করত প্রতিটা দিনকে যা ছিল চরম একঘেয়ে। অবশেষে তাদের মধ্যে দেখা দিল চরম হতাশা, যার ফলশ্রুতিতে তারা একে একে বেঁছে নিতে থাকল স্বেচ্ছা মৃত্যুকে। আর যেহেতু, তাদের জন্ম ও মৃত্যু ছিল নিয়ন্ত্রিত, তাই তারা নতুন করে সন্তান উৎপাদন করত না এবং এতে করে একেকটা স্বেচ্ছা মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একে একে কমে যেতে শুরু করল তাদের নির্দিষ্ট জনসংখ্যা। আর এরকমভাবেই একদিন নিঃশেষ হয়ে গেল ট্রনেটো গ্রহের মনূষ্য বসতির শেষ মানুষটিও।।।
(৪)
আহসান, শুভ্র, স্টেফান ও ইউরি মহাকাশযানে ঢোকার আগে নিয়মমাফিক ভাবে সব কিছু পুনরায় পরীক্ষা করে নিল। মহাকাশযানের দলনেতা আহসান যখন দেখ্ল সব কিছু ঠিকঠাক আছে, তখন সে তার দলের অন্য সদস্যদের নিয়ে মহাকাশযানে ঢুকে পড়ল। মূল ইঞ্জিন চালু হতেই ভিতরে একটা চাঁপা গুঞ্জনের সৃষ্টি হল। সবাই বুঝতে পারল তাদের মহাকাশযান আর অল্পকিছুক্ষণের মধ্যেই ছুটে চলবে তাদের গন্তব্য ট্রনেটো গ্রহের উদ্দেশ্যে। বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির গত হওয়ার পর আরও প্রায় দু’শতাব্দী পার হয়ে গেছে। পৃথিবীতে এখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম উন্নতি হয়েছে। আগে যেই ট্রনেটো গ্রহে যেতে পৃথিবীর মানুষের প্রায় ৫০ বছর লেগে যেত এবং যার জন্য মানুষ কোন দিন ট্রনেটোতে যাওয়ার দুঃসাহস দেখাতো না, আর আজ সেই পৃথিবীর মানুষই সুপার-ড্রাইভ অথবা প্যারা-ড্রাইভ দিয়ে কয়েক লক্ষ্য কোটি আলোকবর্ষের পথ পাড়ি দিচ্ছে মাত্র কয়েক ঘন্টায়। পৃথিবীতে এই পদ্ধতি আবিষকৃত হওয়ার প্রায় কিছুদিন পরই মানুষ তার নিকটবর্তী প্রায় সমস্ত গ্রহই প্রাণের আশায় তন্য তন্য করে খুজেছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তারা কোথাও কোন রকম প্রাণীর দেখা পায়নি। তারপর বিজ্ঞানীরা কয়েক শতাব্দী আগের আব্দুল কাদিরের ঘটনাটি বিশ্লেষণ করে এর সত্যতা প্রমাণের জন্য ওই গ্রহে নভোচারীদের পাঠানোর জন্য পরিকল্পনা স্থির করলেন এবং এই মূহুর্তে সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের জন্যই চারজনের এই ছোট্ট দলটি রওয়ানা হয়েছে ট্রনেটোর উদ্দেশ্যে।
(৫)
হালকা একটা ঝাঁকুনি দিয়ে মহাকাশযানটির গতি কমতে লাগল এবং তাতে নভোচারী দলটি বুঝতে পারল, তারা ট্রনেটোর কক্ষপথে এসে গেছে। কিছুক্ষণ চেষ্টা করে তারা যানটিকে ট্রনেটোর একটি সমতল উপত্যকায় বিচরণ করাল। বিশেষ ধরনের জীবাণু নিরোধক পোশাক পরে চারজনই বের হল তাদের মহাকাশযান থেকে। নির্দিষ্ট কিছু একটা পাবার আশায় তারা চারদিক খুঁজতে লাগল। ইউরি তার হাতের বিশেষ স্ক্যানার দিয়ে মাটির অনেক নিচ পর্যন্ত খুজতে লাগল। শুভ্র দেখল, এই গ্রহের আকাশ গোলাপী এবং মাটি নীল, শুধু এগুলো ছাড়া আর সবই ঠিক। পানির ধারাও দেখা যাচ্ছে কোথাও। অতএব, বুঝা যাচ্ছে এখানকার পরিবেশ জীবন ধারণের জন্য অনুকূল। কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় এখানে কোন ধরনের জীবন্ত প্রাণীর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। আহসান জানে এখানে যদি প্রাণী থেকেও থাকে তবে বিজ্ঞানী আব্দুল কাদিরের ভাষ্য অনুযায়ী তা হবে ছোট। তাই তারা অত্যন্ত সূক্ষ্যভাবেই প্রতিটি এলাকা খুজল। স্টেফান হঠাৎ কিছু একটা দেখে চমকে উঠল। তাড়াতাড়ি সে তার দলের অন্যান্যদের ডাক দিল। অন্যরা এসে দেখল যে, ছোটখাট একটি জায়গা যেখানে, একটি পলিমারের তৈরী আবরণের ভিতর শত শত মরদেহ পড়ে আছে, যেগুলোর আকার অত্যন্ত ছোট কিন্তু, ওগুলো যে মানুষের মৃতদেহ তা নিয়ে তাদের মধ্যে কোন সন্দেহ রইল না। এই মৃত্যুস্তুপটা দেখে আহসান সহ তার দলের অন্যান্যরা চরম আশ্চর্যিত হল। আশেপাশের আরও কিছু মৃত্যুস্তুপ দেখে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌছল যে, হয়ত কোন দুর্যোগে বা কোন দূর্ঘটনায় এখানের সমস্ত প্রাণই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তারা কয়েকটি মৃতদেহ সংগ্রহ করে আবার তাদের মহাকাশযানে ফিরে গেল। আহসান ভাবতে লাগল কি এমন দুর্যোগ হল যে কারণে মানুষের মত প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেল ? কিন্তু যদি দুর্যোগই হত তাহলে, তাদের এভাবে সমাধিস্থ করলই বা কে ?? অনেক ভেবেও আহসান এর কোন সমাধান বের করতে পারল না।।।।
©somewhere in net ltd.