নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাহীন ভাবনাগুলো

মাহের ইসলাম

মাহের ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাছ ধরা

০১ লা জুন, ২০১৮ রাত ১:০৮



অফিসে ঢুকেই, নিজের টেবিলে না গিয়ে আগে গেলাম সিদ্দিক ভাইয়ের কাছে।
সপ্তাহের শেষে মাছ ধরতে যাওয়ার বিষয়গুলো সকাল সকাল ফাইনাল করে ফেলতে হবে।
পরে, অফিসের কাজে একবার ব্যস্ত হয়ে পড়লে, আর সময় পাওয়া যাবে না।

মোটামুটি সবই ঠিক করে ফেললাম।
বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করেই রওয়ানা দিব।
ঐ রাত কাটিয়ে পরের দিন মাছ ধরা শেষ করে, ফিরে আসব।
আমার গাড়ি নিয়ে যাব, মাছ ধরার সরঞ্জামের পাশাপাশি কিছু অন্যান্য জিনিস নিতে হবে, কে কোনটা নিব – তাও সিদ্ধান্ত হয়ে গেল।

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই আকাশ মেঘলা।
আসলে, ঠিক মেঘলা না –বরং বলা যেতে পারে রোদ আর মেঘের লুকোচুরির খেলা চলছিল।
দেখেই আমার উত্তেজনা বেড়ে গেল। একেবারে পারফেক্ট ওয়েদার, মাছ ধরার জন্যে।

শত চেষ্টা সত্ত্বেও অফিস থেকে যথাসময়ে বের হতে পারলাম না।
এ অবশ্য নতুন কিছু নয় – কিভাবে কিভাবে যেন বৃহস্পতিবারে শেষ মুহূর্তে কিছু জরুরী কাজ এসে উপস্থিত হয়।
এছাড়া, সপ্তাহের শেষে হাতের সব কাজ ঠিকমত গুছিয়ে করতেই করতেই কিভাবে কিভাবে যেন সময় চলে যায়।

অফিস থেকে বাসায় ফিরে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবকিছু গাড়িতে তুলে ফেল্লাম।
আগেই গোছানো ছিল বলে রক্ষে, নাহলে আরো দেরী হয়ে যেত। হালকা বৃস্টির মধ্যেই বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম। কিছুদুর আসার পরেই মনে পড়ল, তাড়াহুড়োয় ভুলে ছাতা রেখে এসেছি। এমনিতেই নির্ধারিত সময়ের থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছি, ফিরে যাবো কি যাবো না – ভাবতে ভাবতেই মনে হল, ছাতা ছাড়া পুকুর পাড়ে সারাদিন বসে থাকা যাবে না। এছাড়া, ছাতা নেয়ার দায়িত্ব আমার ঘাড়েই দেয়া হয়েছে, তাই ছাতা ফেলে যাওয়া উচিৎ হবে না মোটেও। বাসায় ফিরে গিয়ে ছাতা নিয়ে ছুটলাম সিদ্দিক ভাইয়ের বাসায়। ভাইজান ইতোমধ্যেই আমার দেরী দেখে একবার ফোন করেছিলেন।

গন্তব্য লোহাগড়া।
চট্রগ্রাম থেকে প্রায় ৪ ঘন্টা লাগবে, যদি রাস্তায় বেশী জ্যাম না থাকে।
দোয়া দরুদ পড়ে যাত্রা শুরু হল। বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার পর্যন্ত মোটামুটি ভালোভাবেই এগুচ্ছিলাম।
বিপত্তির শুরু হল, ফ্লাইওভার থেকে নামার পরপরই। ফ্লাইওভারের গাড়ির সাথে নিচের রাস্তার গাড়ি গিয়ে যোগ হচ্ছে - কক্সবাজারের দিকে যাওয়ার রাস্তায়। সেই রাস্তায় আবার উন্নয়নের কাজ চলছে। জায়গায় জায়গায় বৃষ্টির পানি জমেছে ইতোমধ্যেই। দেখে বোঝার উপায় নেই, পানির নিচে কি কোন বড় গর্ত আছে, নাকি এমনি সামান্য বৃষ্টির পানি।

সামনের গাড়ির চাকা দেখে দেখে আমার গাড়ি ধীরে ধীরে চালাচ্ছি।
যতক্ষণ গাড়ি চলে, তার চেয়ে বেশী সময় দাঁড়িয়ে থাকে। এমনি এক দাঁড়ানোর মুহূর্তে আমার সামনে ডানে এক সিএনজি এসে থামল। সিএনজির গ্রিলের ফাঁক দিয়ে একটা ফর্সা হাতে চোখ পড়াতে, দৃষ্টি ফেরাতে পারলাম না। মনোযোগ দিয়ে তাকালাম, মেহেদী দিয়ে সুন্দর আলপনা আঁকা – বেশী বয়স্কা কারো হাত বলে মনে হচ্ছে না। হাতের আংটি দেখে মনে হল – এই হাতের মালকিন একজন বিবাহিতা হতে পারে।

সামনের গাড়ি চলতে শুরু করায়, আমিও সামনে এগুতে শুরু করলাম।
বেশিক্ষন যাওয়ার আগেই, আবার দাঁড়িয়ে পড়তে হল। এবার আমার ডানের লেনের গাড়ি সামনে এগুচ্ছে, সিএনজি টা আমাদের গাড়ি অতিক্রম করার সময় তাকালাম, মালকিনের চেহারা দেখার আশায়। তবে, বোরখার আড়ালে কিছুই দেখতে না পারলেও, একটা বছর দেড়েকের ফুটফুটে ছেলের চেহারা দেখলাম। ছোট আঙ্গুল দিয়ে সিএনজির গ্রিল ধরার চেষ্টা করছে, আর সেই ফর্সা হাত শিশুটিকে আগলে রেখেছে।

পটিয়ার পরে মোবাইল ধরতে গিয়ে আমার প্রাইভেট কার প্রায় একটা ট্রাকের পেটের ভিতরে ঢুকে যাচ্ছিল। আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেছি। পথিমধ্যে, ভাবী ফোন করে সিদ্দিক ভাইকে তার লজ্জা আর দুঃখের কথা জানালেন যে, আমি উনার বাবার বাড়িতে যাচ্ছি, অথচ উনি ঢাকায় থাকায় আমার সমাদের করতে পারবেন না। সিদ্দিক ভাইয়ের আম্মা ফোন করেও প্রায় একই রকম উৎকণ্ঠা ব্যক্ত করলেন। আমি শুনে, মনে মনে চাঁটগাইয়া আতিথেয়তা আর অতিথিবৎসল মনোভাবের তারিফ না করে পারলাম না।

কয়েকটা জায়গায় হালকা জ্যাম ছাড়া বাকী রাস্তায় যা আশা করে ছিলাম তার চেয়ে কমই গাড়ী ছিল।
এরপরে আমিরাবাদ এসে এক হোটেলে চায়ে চুবিয়ে গরম পরোটা খেয়ে আবার রাস্তায়।
পরে, আর উল্লেখ করার মত কিছু হয় নি।
রাত প্রায় দশটা নাগাদ, আমরা পৌঁছে, প্রথমে খেয়ে নিলাম।
এরপরে পুকুরে কিছু চার ফেলে ঘুমিয়ে পড়লাম।

খুব ভোরে উঠেই বারান্দায় গিয়ে, পুকুরে মাছের নড়াচড়া দেখার জন্যে দাঁড়িয়ে যখন দেখলাম যে, চারের উপর মাছ বড় বড় ঘাই মারছে, আমার আর তর সইছিল না। দ্রুত সব কিছু নিয়ে পুকুর ঘাটে গিয়ে দেখি স্থানীয় এক এক্সপার্ট মাছ শিকারি টোপ আর পিপড়ার ডিম নিয়ে এই আধো অন্ধকারেই চলে এসেছে। পরে জানতে পেরেছি, তাকে আসার জন্যে সিদ্দিক ভাই আগেই বলে রেখেছিল।

যত কম সময়ে সম্ভব বড়শি ফেলে, তারপর গল্প শুরু করলাম।
ইউনুস মিয়ার বয়স প্রায় পঞ্চাশের কোঠায়। তিনি বছরের প্রায় সাত মাস দেশের বিভিন্ন স্থানে মাছ ধরতে যান, বড়শি দিয়ে। সাধারণত, টাকা দিয়ে টিকেট কেটে যে সব জায়গায় মাছ ধরার প্রতিযোগিতা হয়, সেখানেই লোকজন তাকে ভাড়া করে নিয়ে যায়। অনেকটা টাকার বিনিময়ে কিছু খেলোয়াড় যেমন খ্যাপ মারে, ব্যাপারটা তেমনি; পার্থক্য হল ফুটবল খেলার পরিবর্তে মাছ ধরা।

কথার মধ্যেই আমার ফাতনায় মাছের টান লক্ষ্য করলাম।
উত্তেজনায় হার্টবিট বেড়ে গেছে ততক্ষনে।
বেশিক্ষন লাগলো না, ছিপে টান পড়তে।
প্রস্তুত ছিলাম বলে, আমিও টান দিতে দেরি করলাম না।

আছে! মাছ আছে!
সুতায় টান আর ছিপের বাকানো এঙ্গেল দেখে বাকীরা বুঝে গেছে, মাছ যেটা আটকিয়েছি, সেটা একেবারে ছোট না।
কিছুক্ষনের মধ্যেই আমিও চিৎকার করে বললাম, মাছ তোলার নেটটা কাছে নিয়ে আসতে।

মাছ একবার পুকুরের ডানে যায় একবার বায়ে – আমিও মাছের টানের সাথে তাল মিলিয়ে একবার সুতা কিছুটা ঢিল দেই, আবার টান দেই। এক পর্যায়ে, সুতা ঢিল দেয়া বন্ধ করে শুধু হুইল পেচানো শুরু করলাম, তবে মাছ টানলে সুতা পেচানো বন্ধ করি। আরো কিছু সময় পরে, মাছের টান কমতে শুরু করে; এক পর্যায়ে মাছের পেট ভেসে উঠে দু’একবার। ততক্ষণে, মাছকে প্রায় ঘাটের কাছে নিয়ে এসেছি। আরো দু’একবার মাছটা দুর্বল ভাবে চেষ্টা করলো মুখ থেকে গেথে যাওয়া বড়শিটা খুলে ফেলার, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে নেট দিয়ে তুলে ফেলেই পুকুরের পাড়ে নিয়ে এলাম। রুই মাছ, প্রায় তিন কেজির কাছাকাছি। তবে যে ভাবে টানাটানি করছিল, মনে হচ্ছিল পাঁচ কেজির উপরে হবে। যাকগে, দিনের প্রথম মাছ, একেবারে ছোট না; আলহামদুলিল্লাহ্‌। মনে হচ্ছে, দিন ভালোই যাবে।

দিনের সূর্য তখনো তাপ ছড়াতে শুরু করেনি।
এত তাড়াতাড়ি মাছ পেয়ে, বুঝে গেলাম সিদ্দিক ভাই যে বলেছিল পুকুর ভর্তি মাছ আর সবই বড় বড় – তার কোনটাই বাড়িয়ে বলেননি। উত্তেজনায় আর কথা বাড়ালাম না, ইউনুস মিয়ার সাথে। কিছুক্ষনের মধ্যেই ভিন্ন বড়শির ফাতনার উঠানামা টের পেলাম। ফাতনার উঠানামার ধরণ দেখে মনে হচ্ছিল, বড় মাছই হবে। বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হল না, ফাতনা ডুবিয়ে নেয়া মাত্রই টান দিয়ে বুঝলাম- মাছ আছে। কিছুক্ষন কসরত করে তুলে দেখি, বাচ্চা রুই, এক কেজিও হবে না।

কি আর করা, যেখানে পুকুর ভর্তি বড় বড় মাছ আছে, সেখানে এত ছোট মাছ দিয়ে কি হবে।
বরং এটা বড় হোক, অন্য কেউ কোন একদিন ধরবে না হয়।
মুখ থেকে বড়শি খুলে মাছটিকে ছুড়ে ফেললাম পুকুরের পানিতে।

ততক্ষনে রোদ উঠে গেছে।
কিন্তু পুকুর ঘাটে এমন ভাবে একটা কাঠ বাদাম গাছ আর গাব গাছ লাগানো যে, আমাদের গায়ে রোদ পড়ছে না।
লাগবেই বা কিভাবে, আমরা বসেছি উত্তর দিকে মুখ করে, আর কাঠ বাদাম গাছ আমাদের ডানে, ঠিক পুরো ঘাটটা ছায়ায় ভরে দিয়েছে।

আমাদের নাস্তা পুকুর ঘাটেই চলে এল।
কারণ, যেখানে রাতে চার ফেলেছিলাম, সেই চারের কাছে কিছুক্ষন পরপরই বুদ বুদ উঠছে, ফাতনায়ও টান খাচ্ছে মাঝে মাঝে।
তাই, এখান থেকে আর উঠতে মন চাইছিল না।

ইতোমধ্যে গ্রামের কিছু দর্শক জুটে গেছে, আমাদের পুকুর ঘাটে।
তারা গল্প করছিল যে, কবে কে কে এই পুকুর থেকে কত বড় বড় মাছ ধরেছে। সর্বশেষ নাকি এক কর্নেল সাব এসেছিল, সে একটা ৮ কেজি কাতলা ধরেছিল। আর এই পুকুরে নাকি অনেকগুলো এমন বড় বড় কাতলা আছে। শুনে আমার উত্তেজনা আরো বেড়ে গেল। ভাবতে শুরু করেছি, আজকে ঐ কর্নেল সাবের চেয়ে বড় একটা মাছ না ধরে উঠবো না, এই ঘাট ছেড়ে।

চা খেতে খেতে ইউনুস ভাইকে আমার ঝুমকা বড়শি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সে ছাতু মারতে পারে কিনা। তার ঠোঁটের কোনে হালকা তাচ্ছিল্যের হাঁসির আভা দেখেই বুঝলাম, ভুল করে ফেলেছি। যাকগে, সে তার মাচিউরিটির কারণেই হোক আর জামাই বাবুর মেহমানের প্রতি শ্রদ্ধাবশতই হোক, কোন কথা না বলে তার ব্যাগ থেকে ছাতু বের করল। আমিও আমার বক্স থেকে মধু, ছাতু, ঘি আর নাড়িকেল তেল বের করে একটা আট বড়শির ঝুমকা সেট দিয়ে বললাম আমার টোপটা যেন রেডি করে দেয়। কারণ, আমি ছাতুর টোপ তেমন একটা ভালো বানাতে পারি না।

খুব সাবলীলভাবে অতি দ্রুততায় আমার জন্যে একটা ছাতুর টোপ তৈরি করে ফেলল।
ঘ্রান এমনই প্রলুদ্ধকর ছিল যে, মাছের টোপ না হলে হয়ত খেয়ে ফেলতে দ্বিধা করতাম না।
আমি ফেলতে গিয়ে চারের একটু ডানে ফেললাম।
আফসোস হচ্ছিল, এত সুন্দর একটা টোপ জায়গামত না ফেলতে পারার কারণে।

অনেকক্ষণ হয়ে গেল।
মাছের কোন সাড়া শব্দ নেই।
আমি দুইটা বড়শি ফেলে বসে আছি, একটাতে টোপ দিয়েছি পাউরুটির সাথে পিপড়ার ডিম আর অন্যটায় ছাতু।
আরো কিছুটা সময় পার হয়ে গেল। ধীরে ধীরে হতাশায় হালকা আচ্ছন্ন হতে শুরু করেছি।

শুক্রবার, জুম্মার নামাজের আজান দিয়ে দিবে ঘন্টাখানেক পরে।
সকালে মাছের যে দাপাদাপি, টানাটানি আর লক্ষণ দেখা গিয়েছিল, এখন তার কিছুই অবশিষ্ট নেই।
এ যেন এক মৎসবিহীন পুকুরে পরিনত হয়েছে, হঠাৎ করেই।
চরম বিরক্তি এখন আমার চোখে মুখে, একটা মাত্র রুই ধরে সারাদিন পার করে দিব নাকি?
ভেবেছিলাম, নামাজের পরপরই ফিরতি যাত্রা শুরু করবো– কিন্তু মাছের তো কোন খবর নাই।

আজান দিয়ে দিল। আরো কিছুটা সময় পার করে, উঠে পড়লাম।
জুম্মার নামাজে যেতে হবে। নামাজের পরে একবারে ভাত খেয়ে তারপরে আবার মাছ ধরতে বসব কি না এটা নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় ছিলাম। অন্যরা আমার মত এত মাছ পাগল না, তাই তারা আগে ভাত খেতে বসে গেল।
অগ্যতা আমিও তাদের সাথে বসে পড়লাম।
ভাত খাওয়ার মধ্যেই দেখি ইউনুস মিয়া প্রায় ৪ কেজি ওজনের এক কাতলা নেটে করে নিয়ে এল। মুখে বিজয়ীর হাঁসি।

আমি আর দেরী করলাম না, কোন মতে, খাওয়া শেষ করেই, পুকুর ঘাটে বসে পড়লাম।
আরও কয়েকটা মাছ না ধরতে পারলে, বাসায় যাওয়া চরম লজ্জার বিষয় হয়ে পড়বে। তাছাড়া একদম সকালে মাছের নড়াচড়া আর ফাতনা টানাটানি দেখে বুঝেছিলাম যে এই পুকুরে অনেক মাছ আছে। আর ইউনুস মিয়া যেহেতু ধরতে পেরেছে, তার মানে মাছ এখন টোপ খাবে। তাই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেলাম, এই বিকেলে আরো মাছ উঠবে।

বিকেল পার হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু আর কোন খবর নেই।
অনেকক্ষণ পরে, একবার হঠাৎ করেই ফাতনা পুরো তলিয়ে গেল, একটু দেরী হলেও দিলাম ঝটকা টান।
কিন্তু, কিছু পেলাম না। মনে হল, বিশাল বড় কোন রুই হতে পারে, অনেক সময় রুই মাছ এভাবে হঠাৎ টান মারে, এমনকি ছিপ পর্যন্ত নিয়ে চলে যায়। যেভাবে ফাতনা ডুবিয়ে ছিল, শিওর এটা অনেক বড় একটা মাছ ছিল – অথচ ধরতে পারলাম না। এত বড় একটা মাছ মিস করাতে একটু মন খারাপ হয়ে গেল।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে প্রায়।
হঠাৎ করেই ফাতনা পুরো টেনে নিল, আমিও ঝটকা টান মারলাম।
মাছ পেলাম – কিন্তু ফলি মাছ!
যদিও এটা বেশ বড়, কিন্তু ফলি মাছ আর কত বড় হবে - সর্বোচ্চ আধা কেজি!
আমার কাতল মাছের ছাতুর টোপে যে ফলি মাছ ধরতে পারে, আগে শুনিনি কখনো।
ইউনুস মিয়া পর্যন্ত মন্তব্য করে ফেলল - “ছাতুর টোপ এই মাছ ক্যামনে খায়!”

উঠি উঠি করে আরো কিছুটা সময় পার করে, আমি আমার বড়শি তুলে ফেললাম।
আর দেরী করা যাবে না। অনেক লম্বা রাস্তা ড্রাইভ করে যেতে হবে। এখন শুধু ইউনুস মিয়ার একটা বড়শি পুকুরে। গাড়িতে আমাদের ব্যাগ তুলতে শুরু করলাম। এরই মধ্যে, বাসার গাছের কিছু ফল-ফলাদি একরকম জোর করেই দেয়া হল, আমার পরিবারের জন্যে। চাঁটগাইয়া আন্তরিকতার আরেক দফা প্রমান পেলাম – অবশ্য সারাদিনে দফায় দফায় যে আন্তরিকতা দেখেছি, তাতে কোন কিছু না দিলেও চলত।

কানে আসল, ঘাটের পাশেই দাঁড়ানো এক বাচ্চা ছেলের উত্তেজনা মিশ্রিত চিৎকার – ধরছে।
সবাই দৌড়ে গেলাম, নিশ্চয় বড় কোন কাতলা হবে।
এর আগে অনেকবার এইরকম ঠিক সন্ধ্যার পূর্বমুহূর্তে বড় মাছ অনেকেই ধরেছে।
আমি নিজেই ভাটিয়ারী লেকে এক সন্ধ্যায় এক কাতলা তুলতে দেখেছিলাম।

অনেকগুলো কৌতুহলী চোখের সামনে, মাছ তুলতে ইউনুস মিয়ার বেশিক্ষন লাগলো না।
তবে, ছোট্ট একটা ফলি মাছকে টেনে তুলতে দেখে আমরা একটু মন খারাপ করেই জিনিসপত্র গাড়িতে তোলায় মনোযোগ দিলাম।

এতটা রাস্তা ড্রাইভ করে গিয়ে, এত লম্বা সময় ব্যয় করে, এত আয়োজনের পরে যখন এত কম মাছ নিয়ে ফিরতে হয় – কেমন লাগে ! দিনের শেষ মাছ ছিল যেটা – ধরলোই যখন, একটা বড় মাছ ধরলেও তো পারত।

অন্তত এই তৃপ্তি নিয়ে ফিরতে পারতাম যে, সব ভালো যার শেষ ভাল।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০১৮ রাত ১:৩২

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: মাছ ধরার জন্য এতো আয়োজন। ওয়াও!
আমার কাছে মনে হল হঠাৎ ছোট বেলায় ফিরে গেলাম। মাছ ধরার একটা শখ ছিল। তবে শখের তুলনায় চেষ্টা তেমন ছিলনা, আর এমন আয়োজন! কখনোই না। অনেক ভালো লেগেছে লেখাটা পরে। তবে শেষে একটু দুঃখ লাগলো দিনের শেষ মাছটা কেন যে বড় হলনা।

দাদা ব্লগে আমি নতুন। সময় করে আমার ব্লগে একটু ঘুরে আসার দাওয়াত গ্রহণ করবেন।

০১ লা জুন, ২০১৮ সকাল ১১:১৪

মাহের ইসলাম বলেছেন:
আমার দুঃখ আরো বেশী ছিল।

সময় নিয়ে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

২| ০১ লা জুন, ২০১৮ রাত ২:০৬

মাআইপা বলেছেন:
মাছ ধরা এখন শিল্পের পর্যায়ে গেছে, অনেক ধর্য্যের ব্যাপার।
ভাল লাগলো আপনার মাছ ধরা।

০১ লা জুন, ২০১৮ সকাল ১১:১৬

মাহের ইসলাম বলেছেন:
সত্যিই তাই।
ধৈর্যের প্রয়োজন আগেও ছিল।
তবে, এখন আয়োজন অনেক বেশী দরকার হয়, অনেক সময়।

৩| ০১ লা জুন, ২০১৮ সকাল ৯:০৫

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: একবার এক মাছের ফার্ম থেকে আমি ইয়া বড় একটা তেলাপিয়া ধরেছিলাম B-)

০১ লা জুন, ২০১৮ সকাল ১১:১৯

মাহের ইসলাম বলেছেন:
হয়, অনেক সময়।
মাছের ফার্ম বা চাষ করা পুকুরে মাছ ধরা সহজ।
মাছও পাওয়া যায় সহজে।
তবে ধরার আনন্দ বেশী পাওয়া যায় যদি এটা চাষের পুকুর না হয়।

অনেক বড় তেলাপিয়া ধরতে পারার জন্যে অভিনন্দন।

৪| ০১ লা জুন, ২০১৮ সকাল ১০:২৯

প্রামানিক বলেছেন: ভালো অভিজ্ঞতা।

০১ লা জুন, ২০১৮ সকাল ১১:২০

মাহের ইসলাম বলেছেন:
সহমত।
তবে, মাছ বেশী পেলে আরো বেশি ভালো লাগত।

সময় নিয়ে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

৫| ০১ লা জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৬

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: আমার নতুন গল্প...।
সময়ের প্রয়োজন পর্ব ১
দয়া করে একবার ঘুরে আসবেন ।
লিংক...
http://www.somewhereinblog.net/blog/rkrokon143/30242516

০১ লা জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:০১

মাহের ইসলাম বলেছেন:

সময় নিয়ে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।
অবশ্যই ঘুরে আসব, আপনার ব্লগে।

৬| ০১ লা জুন, ২০১৮ দুপুর ১:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: এর পর মাছ ধরতে গেলে আমাকে নিয়ে যাবেন।

০১ লা জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৯

মাহের ইসলাম বলেছেন:
রাজীব ভাই,

আপনার মাছ ভাগ্য ভালো হলে, আপনাকে নিলে ভালোই হবে - অনেক মাছ পাব।
আর, আপনার মাছ ভাবগ্য খারাপ হলে, আরো ভালো – অনেক গল্প হবে, আপনার সাথে।

তবে আমি যা বুঝেছি, মাছ ধরার নেশা কিন্তু চরম নেশা।

৭| ০২ রা জুন, ২০১৮ ভোর ৬:৫২

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ওরে বাবা !!
ছিপ ফেলে মাছ ধরায় এত্ত কাহিনি ??
আমি তো ভাবি কেচোঁ আর ময়দামাখা দিলেই মাছ উঠে।

চমৎকার লিখেছেন :)

০২ রা জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৭

মাহের ইসলাম বলেছেন:
আপনার ধারনা ঠিক আছে।
তবে কেচো আর ময়দা মাখা দিয়ে বড় মাছ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
তাই, বড় মাছ বিশেষ করে রুই বা কাতলা ধরতে হলে, একটু স্পেশাল আয়োজন করতে হয়।

আমাকে উৎসাহিত করার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.