নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাহীন ভাবনাগুলো

মাহের ইসলাম

মাহের ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদূরদর্শিতা , সন্দেহ এবং দুর্ভাগ্য

১৯ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:২২

ছবি The Indian Express, অনলাইন থেকে নেয়া।

এক
কোন রকম লুকোছাপা না করেই ত্রিপুরায় বসবাসরত চাকমা সম্প্রদায়ের নেতারা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ’ বলে দাবি করেছেন। বিভিন্ন পত্রিকার এ সংক্রান্ত সচিত্র প্রতিবেদন ইন্টারনেটের বদৌলতে দ্রুতই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে, গত কয়েকদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়াতে বিষয়টি আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর ১৭ আগস্ট ২০১৯ তারিখের সংবাদে জানা যায়, চাকমা জাতীয় কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া, ত্রিপুরার রাজ্য সহ-সভাপতি অনিরুদ্ধ চাকমা বলেছেন,
“আমরা চাকমা জনগোষ্ঠীর মানুষের বিরুদ্ধে অস্থিতিশীলতা, জাতিগত নির্মূলকরণ এবং অবিচারের কারণে সৃষ্ট অত্যাচার ও বেদনার বিরুদ্ধে বিগত বছরের মতো এই কালো দিবস পালন করছি। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে বিবেচনা করি এবং এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আদালত ইন্টারন্যাশন্যাল কোর্ট অব জাস্টিসের কাছে ন্যায়বিচার এবং সহানুভূতি কামনা করছি।’

উল্লেখ্য যে, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামকে হস্তান্তরের প্রতিবাদে ২০১৬ প্রতিবাদে সাল থেকে ১৭ আগস্ট-এ কালো দিবস উদযাপন করা হয়।

আপাত দৃষ্টিতে বাংলাদেশে বসবাসরত কিছু চাকমা এমন সংবাদে উল্লসিত।
তবে অনেকেই ভ্রূকুঞ্চিত করছেন এই ভেবে যে, দেশ বিভাগের প্রায় ৭০ বছর পরে চাকমাদের এমন দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমাদের প্রতি সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে কি?
এমন দুশ্চিন্তার অবশ্য যথাযথ কারণ রয়েছে। ইতিহাসের পাতা ঘাটলে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ বিশেষত চাকমা নেতৃবৃন্দের কিছু কিছু ভুল পদক্ষেপ এবং অদূরদর্শিতার কারণে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল। যার পরিণতিতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল পাহাড়ের সাধারণ মানুষের।

১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময় পাহাড়ের নেতৃবৃন্দ সঙ্গত কারণেই পার্বত্য চট্রগ্রামকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে ছিলেন না।
বরং যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন ভারতে অন্তর্ভুক্তির জন্যে। এমনকি পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির ব্রিটিশ সিদ্ধান্তের পরেও, তৎকালীন জনসমিতির সাধারণ সম্পাদক স্নেহ কুমার চাকমার নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে প্রকাশ্যে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে, তিনি “ সমস্ত পাহাড়ী পুলিশগণকেও (সাধারণ কনস্টেবল শ্রেণীর) প্রয়োজন মতে সশস্ত্র –বিদ্রোহ করিতেও প্রস্তুত” করে রেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, “গ্রামস্থ বহু পাহাড়ীকেও বন্দুক প্রভৃতি আগ্নেয়াস্ত্র লইয়া উপস্থিত হইতে নির্দেশ প্রদান” করেছিলেন। (দেওয়ান, ২০১৮, পৃ. ২৫৬-২৫৭)।

উপজাতীয় নেতৃবৃন্দের বিভিন্নমুখী প্রচেষ্টার বিষয়ে জানতে পেরে গভর্নর জেনারেল বলেছিলেন,
“হিন্দুস্তান ভুক্তির চেষ্টা পরিহার করুন, অন্যথা শুধু শক্তির অপব্যয় করা হইবে এমন নহে, ইহাতে তোমরা বিশেষ কষ্টে পতিত হইবে।” (দেওয়ান, ২০১৮, পৃ. ২৬৯)।

পরবর্তীতে, পাহাড়ী নেতৃবৃন্দের সশস্ত্র প্রতিরোধ ব্যর্থ করে পাকিস্তানের বেলুচ রেজিমেন্ট ২১ আগস্ট ভারতের পতাকা নামিয়ে ফেলে। “এরপর পাকিস্তান সরকার ঢালাওভাবে উপজাতীয়দের প্রো-ইন্ডিয়ান বা ভারতপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করে। এবং সেই থেকে শুরু হয় তাদের ওপর বিমাতাসুলভ আচরণ প্রদর্শনের পালা।” (খীসা, ১৯৯৬, পৃ.৩৪)। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে এটা স্পষ্ট ছিল যে, “পাকিস্তানের প্রতি তাদের আনুগত্যের বিষয়ে সব সময় সন্দেহ করা হত।” (চাকমা, ১৯৯৩, পৃ. ৭)।

পতাকা নামালেও পাহাড়ি নেতারা দমে যাননি।
অপরপক্ষে ভারতীয় নেতারাও তাদের দেশবিভাগপূর্ব সেন্টিমেন্ট বজায় রাখেন।
যার প্রকাশ ঘটে দেশ বিভাগের প্রায় দুই বছর পরে ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সরদার প্যাটেল পূর্ব পাকিস্তানী সংখ্যালঘূদের খুশী করার জন্যে যখন বলেন যে, “শুধুমাত্র একটা দাগের অন্যপাশে আছে বলেই যারা আমাদের রক্ত এবং মাংস, যারা স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের পাশে থেকে লড়াই করেছে, হঠাৎ করে তারা আমাদের কাছে বিদেশী হতে পারে না।” (চৌধুরী, ২০০৬, পৃ. ৪০)।

তাই পাহাড়ি নেতাদের সাথে ভারতীয় নেতাদের যোগাযোগের বিষয়টি বুঝতে পেরে, পাকিস্তান সরকার স্বাভাবিকভাবেই তা বন্ধ করার চেষ্টা করেন।
পাকিস্তান সরকারের প্রচেষ্টার মধ্যে পার্বত্য চট্রগ্রামকে বাঙ্গালীদের প্রবেশের জন্যে খুলে দেয়া অন্যতম। যার ধারাবাহিকতায়, ১৯৬২ সালের সংবিধানে পার্বত্য চট্রগ্রামকে ‘এক্সক্লুডেড এলাকা’ হতে ‘ট্রাইবাল এলাকা’র মর্যাদা দেয়া হয়। এমনকি ১৯৬৪ সালে, ‘ট্রাইবাল এলাকা’র বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে এই অঞ্চলে বাইরের অধিবাসীদের প্রবেশ, বসবাস এবং জমি অধিগ্রহণ এর উপর হতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।

অপরপক্ষে, ১৯৬০ হতে ১৯৭০ সালে, এই অঞ্চল হতে বেশীরভাগ পাহাড়ী সরকারী কর্মচারীদের অন্যত্র বদলি করে দিয়ে শুধুমাত্র প্রধানত বাঙ্গালিদেরকেই এখানে সরকারী প্রশাসনের দায়িত্বে রাখা হয়। একই সময়, সোভিয়েত ব্লক ও ভারতের বিপক্ষে আমেরিকাকে সমর্থনের অংশ হিসেবে পাকিস্তান পার্বত্য অঞ্চলে ভারতের নাগা ন্যাশনাল আর্মি এবং মিজো গেরিলাদের সাহায্য করে।

এরই পাশাপাশি, এই এলাকার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্রগ্রামকে ‘ট্যাক্স ফ্রি জোন’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। একই লক্ষ্যে, ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা ও এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১৯৫৭ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

এই সমস্ত কিছু করা হয় প্রধানত পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতে অন্তর্ভুক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে। স্মরণযোগ্য যে, ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পরে জম্মু ও কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ, গোয়া, সিকিম, জুনাগর ইত্যাদির ভাগ্যের দিকে তাকালে পাকিস্তানের এহেন ভারতভীতি থাকা মোটেও অস্বাভাবিক মনে হয় না।

সহজ কথায় বলতে গেলে, পাকিস্তান সরকারের সন্দেহ সৃষ্টি করেছিল স্নেহ কুমার চাকমার মতো কিছু নেতা। যে সন্দেহের আগুনে ঘি ঢেলেছিল ভারতের কিছু কার্যকলাপ, আঞ্চলিক ও বিশ্ব-রাজনীতি। যার ফলাফল হিসেবে পুরো পাকিস্তান আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরীহ মানুষের লাভের পরিবর্তে ক্ষতিই হয়েছে। নিঃসন্দেহে তৎকালীন পাহাড়ী নেতৃবৃন্দের অদূরদর্শিতা দুর্ভোগ বয়ে এনেছিল নিরীহ জনসাধারণের উপর।

তথ্যসুত্রঃ
১। দেওয়ান, শ্রী কামিনী মোহন (২০১৮, প্রথম প্রকাশ ১৯৭০), পার্বত্য চট্রলের এক দীন সেবকের জীবন কাহিনী (২য় প্রকাশ), রাঙামাটি: রেগা প্রকাশনী।
২। খীসা, প্রদীপ্ত (১৯৯৬), পার্বত্য চট্রগ্রামের সমস্যা, ঢাকা : সাহিত্য প্রকাশ।
৩। চাকমা, জ্ঞানেন্দু বিকাশ (১৯৯৩), ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে পার্বত্য স্থানীয় সরকার পরিষদ, রাঙামাটি: স্থানীয় সরকার পরিষদ, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
৪। চৌধুরী মোঃ নাজমুল হাসান (২০০৬, অক্টোবর - ডিসেম্বর), The Resistance Movement in the Chittagong Hill Tracts: Global and Regional Connections, এশিয়ান এফেয়ারস, ২৮(৪), পৃ. ৩৬-৫১।

পরবর্তী পর্ব অদূরদর্শিতা, অবিশ্বাস এবং দুর্ভাগ্য - ২য় পর্ব

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:৩০

চাঁদগাজী বলেছেন:


পাহাড়ীদের কলকারখানায় কাজ দিয়ে ক্রমেই পাহাড় থেকে সমতলে নিয়ে আসলে, এটার সমাধান হবে।

১৯ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:৩৮

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনাকে দেখে ভালো লাগলো।
তার উপরে, প্রথম মন্তব্য। তাই বিশেষ ধনব্যাদ ও কৃতজ্ঞতা।

আপনি যে মতামত দিয়েছেন, তাঁর বাস্তবায়ন হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকায় আপনি এখন প্রচুর পাহাড়ী দেখবেন।
তাদের অনেকেই বেশ ভালো ভালো অবস্থানে পৌঁছেছে।
সরকার বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে, তাদেরকে মূল জনগোষ্ঠীর সাথে রাখার।
সেই কারণেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরী ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করেছে।
আমিও বিশ্বাস করি, তাদের শিক্ষার সুযোগ দিলে এবং জীবনযাত্রার মান বাড়লে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।

তবে, সমস্যার শুরুগুলো হয় মূলত নেতাদের ভুল এবং অবিবেচনাপ্রসূত কাজে। তাই নেতাদের ব্যক্তি স্বার্থ এবং রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ত্যাগ করাটাও জরুরী। না হলে, সরকারের একার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইল।

২| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:৫২

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: ১৯৪৭ এর আগে শুধু পার্বত্য অঞ্চল নয় সমগ্র বাংলাদেশ অখন্ড ভারত ছিলো। এগুলো নিয়ে মাথা ব্যাথার কোনো কারণ নেই, এগুলো মাথা গরম করার বিষয়ও নয়। ছেলেমানুষী। দেশে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করে আছে - তা কি জানেন?

২০ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৯:১৮

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনাকে দেখে ভালো লাগলো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আপনি ঠিকই বলেছেন, আমাদের জন্য ডেঙ্গু নিয়ে বেশি চিন্তিত হওয়া উচিৎ।
ডেঙ্গুই আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা বলা যাতে পারে, এই মুহূর্তে।

আর সে কারনেই ডেঙ্গু নিয়ে চমৎকার কিছু পোস্ট আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি।
আমার ডেঙ্গু বিষয়ে জ্ঞান কম থাকায়, স্বাভাবিকভাবেই অন্যের পোস্টে কমেন্ট করেই নিজ দায়িত্ব শেষ করার চেষ্টা করেছি।

তবে, আমি কিছুটা অবাক হয়েছি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর মতো প্রভাবশালী একটা পত্রিকায় এমন একটা নিউজ কাভারেজ পেলো। কিন্তু আমাদের দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত সোশ্যাল মিডিয়ার পেইজ ছাড়া অন্যত্র তেমন কিছু চোখে পড়েনি দেখে। অখন্ড ভারতের যে অংশ বাংলাদেশের অংশ ছিল, সেগুলো নিয়ে আমাদের কোন সম্প্রদায় কিছু বললে, কিংবা সেটা আবার বহুল প্রচলিত পত্রিকায় প্রকাশিত হলে, পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে বলে মনে হয়না আমার কাছে।

ব্যক্তিগত ভাবে আমি পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আগ্রহী।
তাই, এই সংক্রান্ত কিছু দৃষ্টি আকর্ষণ করলে, কিছুটা সময় ব্যয় করতে দ্বিধাবোধ করি না।

পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা অন্য ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের চেয়ে বেশি। শিক্ষা দীক্ষায় তারা এগিয়ে। তাই, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল আন্দোলন ও বিশেষ ঘটনাবলী তাদেরকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। অতীতের সকল বড় বড় ঘটনাগুলোর সাথে চাকমা নেতৃবৃন্দ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন। প্রায় সকল ক্ষেত্রেই তারা মূল ভূমিকাও পালন করেছেন।

ঐতিহাসিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিতর্কিত ঘটনায় চাকমা নেতৃবৃন্দের ভূমিকা, বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামে তাঁদের সংখ্যা, ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকায় এমন একটা বিষয়কে কাভারেজ দেয়া, পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান ঘটনাবলি বিশেষ করে এক পক্ষীয় অপপ্রচার এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলী (রোহিঙ্গা, কাশ্মীর, এন আর সি) ইত্যাদির আলোকে আমার কাছে মনে হয়েছে, এমন একটা বিষয় সামনে তুলে আনা যায়।

তাই যতটুকু পেরেছি তুলে ধরেছি।
আমরা সবাই যার যার আগ্রহের বিষয় নিয়েই লেখালেখি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমি নিজেও তাঁর ব্যতিক্রম নই। তাই, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আমার এমন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ইচ্ছে পোষণ করছি।

শুভ কামনা রইল।

৩| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:৫২

আখেনাটেন বলেছেন: আমিও লেখাটি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে পড়েছি আর হতাশ হয়েছি। পাহাড়ের সমস্যা স্থানীয়দের নিয়ে অচিরেই সমাধান করা উচিত। সাজেকে যাওয়ার পথে বাঘাইছড়ি নামে মনে হয় একটি জায়গায় গাড়ি অনেকক্ষণ থেমে থাকে, সেখানে এক স্থানীয় বাঙ্গালীর কথা শুনে মনে হয়েছে পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি ও বাঙালি কেউ সুখী নয়।

এগুলোর আশু সমাধান দরকার।

২০ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:২০

মাহের ইসলাম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
আপনার কথা শুনে ভালো লাগলো।

শুধু আপনি কেনো, আমার তো ধারনা, আমাদের অনেকেই কমবেশি হতাশ হয়েছে।

আমি আপনার সাথে একমত, স্থানীয়দের নিয়েই পাহাড়ের সমস্যা সমাধান করা উচিৎ।
সমস্যা হলো নেতৃবৃন্দের অদূরদর্শিতা এবং রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ।
পার্বত্য চুক্তির পরে এক বাঙালি লেখিকা পার্বত্য চট্টগ্রাম ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানিয়েছিলেন, তারা স্বায়ত্বশাসন কি জিনিস? বুঝে না। তারা শুধু বুঝে, চুক্তি হলে হানাহানি বন্ধ হবে।

চুক্তি হয়েছে।
কিন্তু পাহাড়ে হানাহানি বন্ধ হয়নি।
আগে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ হতো। এখন হয়, নিজেদের মধ্যে। কারণ, স্থানীয় আধিপত্য বজায় না থাকলে, চাঁদা কমে যাবে।

চুক্তির সাথে সাথেই এক দল আলাদা পার্টি গঠন করলো।
কারণ, তারা চুক্তি মানেনা। তাঁদের আন্দোলন পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত চলবে।
যারা চুক্তি করলো, তারা তখন হাতে কিছু অস্ত্র রেখে দিল। নিরাপত্তার নামে। চুক্তি বিরোধীদের হাতে থেকে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে হবে তো।

এর পরে এক এক করে, আরো দুইটা দল বের হল। সবার কাছেই অস্ত্র আছে। নিয়মিত চাঁদাবাজি, হানাহানি, অপহরণ চলছে।
অন্য দিকে, নেতৃবৃন্দ এবং দেশের সুশীল সমাজের একাংশ নিয়মিত সরকারের উপর দায় চাপাচ্ছে, চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই, নাকি সকল অশান্তি?
তাঁদের কেউই , কখনোই এইসব অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে একটা শব্দও উচ্চারণ করে না। যেন, অস্ত্র দিয়েই চুক্তি বাস্তবায়ন করে ফেলবে।

সরকারের একার পক্ষে চুক্তি বস্তাবায়ন সম্ভব?
সরকার কি একা চুক্তি করেছে? চুক্তি মানেই তো এখানে একাধিক পক্ষ আছে। তাহলে, অন্য পক্ষের কোন দায় নেই?
আমার দৃষ্টিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা শুরুই হয়েছে কিছু নেতার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ আর অদূরদর্শিতার কারণে। যে সমস্যা থেকে এখনো অনেক পাহাড়ি নেতাই বেরিয়ে আসতে পারেনি। অন্তত বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই তারা নিজেদের মতো করে সমস্যা দেখছে, দেশের সামগ্রিক দৃষ্টিতে নয়।

এই প্রসঙ্গে না উল্লেখ করে পারছি না,
“পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা এখন যে জটিল আকার ধারণ করেছে তাঁর জন্য লেখকের মতে, আংশিক দায়ী উপজাতি নেতৃত্বঃ নিজেদেরকে সব সময় আলাদাভাবে দেখেছেন উপজাতি নেতারা। সারা দেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনোইতিক পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে দেখার চেষ্টা উপজাতি নেতারা কোনদিন করেন নি।“ যদিও কথাগুলো বঙ্গাব্দ ১৩৯২ সালে প্রকাশিত সিদ্ধার্থ চাকমা রচিত প্রসঙ্গঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম বইয়ের ভূমিকাতে ১ লা নভেম্বর ১৯৮৫ সালে বলা হয়েছিল। তারপরেও সমস্যার উৎপত্তির কারণ বের করতে হলে তো পুরনো দিনেই খুঁজতে হবে।


শুভ কামনা রইল। ভালো থাকবেন।

৪| ২০ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১২:৫৪

আহমেদ জী এস বলেছেন: মাহের ইসলাম,





এমন করে ধরলে একসময় ভারতও তো মুসলমানদের পরে ইংরেজদের অধীনে ছিলো। তারও আগের সময়ের কথা না হয় বাদই দিলুম। এখন তুর্কি আর মোঘলরা কিম্বা চেঙ্গিস খানের বংশধরেরা যদি বলে ভারতকে তার্কি কিম্বা আজারবাইজানের বা সমরখন্দের সাথে সংযুক্ত করে দাও, তখন ভারতের জবাব কি হবে ? ধর্মের মদে মাতাল, ভারতের ক্ষমতায় থাকা বিজেপির লালিত আবোল তাবোল স্বপ্নগুলোর সমুচিত জবাব দেবার জন্যে এ ধরনের প্রচার চালানো এখন ফরজ হয়ে উঠেছে।


ঠিকই বলেছেন - আমাদের সংখ্যালঘুদের জন্যে, তাদেরকে মূল জনগোষ্ঠীর সাথে রাখার কোনও বিকল্প নেই।
সেই কারণেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরী ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করার পরিধি আরও বাড়াতে হবে। শিক্ষার সুযোগ দিলে এবং জীবনযাত্রার মান বাড়লে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।

২০ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:২৬

মাহের ইসলাম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
আপনার কথা শুনে ভালো লাগলো।

আপনার কথার সাথে আমি একমত।

আমি আরো মনে করি, এই ধরনের কথা বার্তার মধ্যে ভালো কিছু থাকতে পারে না।
বরং তিক্ততা বাড়বে। সৃষ্টি হবে অবিশ্বাস এবং সন্দেহ। যা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে ঝুঁকিতে ফেলবে।

ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে দেশের মানচিত্রে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
এখন উচিৎ, ভেদাভেদ না করে, নিজের দেশের সকল মানুষকে আপন করে নেয়া।

শুভ কামনা রইল। ভালো থাকবেন।

৫| ২০ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১:১০

রাকু হাসান বলেছেন:

এ বিষয়ে আপনার পোস্ট আশা করছিলাম । পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে লেখায় আমি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস রাখি আপনার কাছে । এমন কি পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া খবর থেকেও । সরকারের উচিত এসব নিয়ে কার্যকর করা । আহমেদ জীএস স্যার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।
বাংলাদেশ যদি দাবি করে আগে কলকাতা বাংলাদেশর সাথে ছিল ,এখন বাংলাদেশ যদি দাবি করে তা ?
এসব যুক্তিহীন যুক্তি । প্রভাবশীল পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হবার জন্য ভাবাচ্ছে বিষয়টি । সরকারের চোখ কান খোলা রাখা উচিত।

২০ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:৩২

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনার কথায় অনুপ্রানিতবোধ করছি।
অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।

আমি মনে করি, দেশ বিভাগের আগের বিষয় টেনে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টির কিছু নেই।
বরং উচিৎ, বর্তমানকে মেনে নিয়ে নিজের দেশের মানুষকে আপন করে নেয়া।
নিজের দেশের সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা এবং দেশকে ভালোবাসা।

আমি আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি যে, সন্দেহ জাগে।
প্রভাবশালী পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার বিষয়টি কি কাকতালীয় নাকি অন্য কিছু?
আরেকটা কথা, এই ধরনের অর্বাচীনদের কথায় কিছু বেকুব উস্কানি পেতে পারে। সেটা মাথায় রেখে সরকারের দৃষ্টি রাখা উচিৎ।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন শুভ কামনা রইল।

৬| ২০ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৭:৩১

ইসিয়াক বলেছেন: ভালো।

২০ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৩

মাহের ইসলাম বলেছেন: অনেক অনেক ধনব্যাদ।

ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা রইল।

৭| ২০ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৭:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: পাশাপাশি দেশ গুলোর এরকম সমস্যা থাকেই।

২০ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৪

মাহের ইসলাম বলেছেন: জ্বি, আপনি ঠিকই বলেছেন।
দুনিয়ার অনেক দেশেই এমন সমস্যা আছে।
হয়ত সেটা বিবেচনা করেই ঠাকুর ভাই ডেঙ্গুতে মনোযোগ দিতে বলেছেন।

ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা রইল।

৮| ২০ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১১:০৩

ching বলেছেন: নিচে একটা লিঙ্ক দিলাম। লেখাটি ইংলিশ থেকে বাংলা অনুবাদ করে পোস্ট আকারে দিলে উপকৃত হতাম।
A Confusing Empathy Ended with a Broken Dream- CHT Perspective, 1947 Partition

২০ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:৪১

মাহের ইসলাম বলেছেন: দাদা, অনেকদিন পরে আপনাকে দেখে ভালো লাগছে।
ভালো আছেন নিশ্চয়।

আপনার লিংকের লেখাটা পড়েছি।
একদিকে দেশবিভাগের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের নেতাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং অন্যদিকে কংগ্রেসের এই অঞ্চলের জনগণের প্রতি উদাসিনতা ফুটে উঠেছে। বাস্তবিক পক্ষেই, দেশ বিভাগের সুত্র অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের ভারতভুক্তি যুক্তিসঙ্গগত ছিল।

যেখানে এটা পাবলিশ করেছে, সেখানে বাংলা লেখাও প্রকাশ করে।
আমার তো মনে হয়, আপনি সেখানে মন্তব্য কলামে অনুরোধ করতে পারেন, বাংলায় অনুবাদের।
হয়ত তারা নিজেরাই করে ফেলবে। আপনার পক্ষে আমি নিজে অনুরোধ করেছি। আপনিও করলে ভালো হবে।

শুভ কামনা রইল।
ভালো থাকবেন।

৯| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১১

কর্ণফুলী এক্সপ্রেস বলেছেন: জিও পলিটিক্স খুব খারাপ জিনিস। কাউকে কাউকে লোভী করে তোলে ।
সবার আগে পাহাড়িদের সুশিক্ষা দেওয়া উচিত। তারা তখন ভাল মন্দ বুঝতে পারবে।

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৪:১৯

মাহের ইসলাম বলেছেন: পাকিস্তান সরকার পাহাড়িদের সুশিক্ষার অগ্রাধিকার দিয়েছিল। তাই, ১৯৫৮-৭০ সালের মধ্যে অনেক স্কুল স্থাপন করা হয়েছিল। এতে, তাদের শিক্ষার হার যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে রাজনৈতিক সচেতনতা। যা ফলে, আর কিছু না হলেও তারা ১৯৭০ সালে নিজেদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেছিল।

এই সব বিবেচনায়, আমি একমত, আপনার সাথে। ভালো মন্দ বুঝতে পারাটা বেশি জরুরী।

ভালো থাকবেন।

১০| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৩৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: জনসচেতনতার স্বার্থে বিষয়টিকে এ পোস্টের মাধ্যমে সামনে তুলে আনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। দুঃখজনকভাবে বিষয়টি নিয়ে আমাদের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া নীরব ভূমিকা পালন করেছিল এবং করছে।
প্রতিটি প্রতিমন্তব্য খুব সুন্দর করে দিয়েছেন, এজন্য সাধুবাদ। +
পোস্টে তৃতীয় ভাল লাগা + +।

০৫ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:১৯

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনার কথা শুনে অনুপ্রানিত বোধ করছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল।

ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.