নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমরা একদিন করবো জয়............।

অাজমাল েহােসন মামুন

আমি একজন উন্নয়নকর্মী, শিক্ষক এবং ফ্রিল্যান্স লেখক। আমার উভয় চোখ ক্ষীণ দৃষ্টি সম্পন্ন। তাই ছোট কাল থেকেই অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে। তাই পিছিয়ে পড়া সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে দেশের ১২ টি প্রথম শ্রেণীর জাতীয় দৈনিকে লেখালিখি করি। আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যের উপর অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছি। বর্তমানে হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত আছি। ইতোপূর্বে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম। দেশের ১৩টি দৈনিকে প্রতিবন্ধিতা, নারী ও শিশু এবং বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রায় ৩০০ প্রবন্ধ, ফিচার এবং মতামত প্রকাশিত হয়েছে।যোগাযোগের ঠিকানা:আজমাল হোসেন মামুনসহকারী শিক্ষক, হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চাপাইনবাবগঞ্জ। মোবাইল নং-০১৭০৪২৪৪০৮৯

অাজমাল েহােসন মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সমাজ থেকে বিধবা নারীদের প্রতি বৈষম্য আজও দুর হয় নি: হিন্দু ধর্মাম্বলী বিধবা নারী সেফালী দেবরকে বিয়ে করে কি বড় ধরনের অপরাধ করেছিল, যে তাকে আত্মবিসর্জন দিতে হলো...............?

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:৫১

আজ সকালে দৈনিক সমকাল পত্রিকায় একটি সংবাদ দেখে ধমকে গেলাম। সংবাদটি শিরোনাম হচ্ছে, অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করল শেফালী। সংবাদ থেকে জানলাম যে, প্রেম করে বিয়ে করার অপরাধে মুখে চুনকালি দিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে পুরো গ্রাম ঘোরানো হয় শেফালী রানীকে। এ অপমান সইতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। শুক্রবার রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড় হজরতপুর ইউনিয়নের হাসানের পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সংবাদ থেকে জানা গেছে, হাসান পাড়া গ্রামের কুশল চন্দ্র বর্মণের

সঙ্গে ১৩ বছর আগে পীরগঞ্জ উপজেলার একবারপুর গ্রামের শেফালী রানীর (২৭) বিয়ে হয়। বিয়ের ৩ বছর পর এক সন্তান রেখে তার স্বামী মারা যায়।

২০০৫ সালে শেফালী রানী ভালোবেসে তার দেবর মৃণাল চন্দ্রকে গোপনে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে করেন। বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার জানাজানি হয়ে যায়। এতে পুত্রবধূর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন শ্বশুর বিনোদ চন্দ্র বর্মণ ও তার পরিবারের লোকজন। ওইদিনই পারিবারিকভাবে সালিশ বসে। সালিশে সিদ্ধান্ত হয় শেফালী ধর্মবিরোধী কাজ করেছে। তাই শক্রবার তার মুখে চুনকালি মাখিয়ে এবং গলায় জুতার মালা পরিয়ে পুরো গ্রাম ঘোরানো হয়। এ সময় গ্রামের কেউ এ ঘটনার প্রতিবাদও করেনি। পরে বাড়িতে এনে বেধড়ক মারধর করা হয় তাকে। শেফালী এ ঘটনা রাতে স্বামী মৃণাল চন্দ্রকে জানালে সেও স্ত্রীর ওপর চড়াও হয় এবং গালমন্দ করে। আত্মহত্যার আগে শেফালী সবাইকে বলে যায়, বিয়ে করে সে কোনো অন্যায় করেনি। সালিশে তাকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে।

আমরা জানি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের পক্ষে আন্দোলন করে হিন্দু ধর্মাম্বলী বিধবাদের বিয়ের পথকে উন্মুক্ত করেছিল। তিনি নিজে বিধবা বিয়ে না করলেও নিজের পকেটের টাকা খরচ করে বিধবা নারীদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছে। ফলে হিন্দু ধর্মে বিধবা বিবাহ নিষেধ নয়। বিধবারাও মানুষ। আমরা সাধারণত জানি, নারীদের ৪৫ বছর পর্যন্ত ঋতুস্রাব বা হায়েজ হয়। ফলে অল্প বয়সে বিধবা নারীদের বিয়ে করাটা যুক্তিযুক্ত। বিধবা নারী ঘরে বসে থাকলে এক শ্রেণীর বাটপাররা কুপ্রস্তাব দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। সে হিন্দু হোক আর অন্য ধর্মের হোক। সেফালী নিজের ইজ্জত রক্ষার্থে বিয়ে করে। এটাকে হিন্দু ধর্মীয় আইন লঙ্ঘন করা বুঝায় না। কিন্তু সেফালিকে কেন আত্মহত্যা করতে হলো? আত্মহত্যা করে সেফালী প্রমাণ করেছে, সমাজে বিধবাদের মর্যাদা বলতে কিছুই নেই। সমাজ আজও সচেতন নয় বিধবা বিয়ের পক্ষে। বিধবারাও মানুষ। ওদের রয়েছে নারী হিসেবে স্বাধীনভাবে মতামত গ্রহণের। কিন্তু কেন এরকম হলো। নিশ্চয়, সেফালীর জন্ম দরিদ্র পরিবারে হওয়ায় বিধবা নারী হিসেবে প্রেম বা বিয়ে স্বীকৃতি ঘটলো না সমাজে। হায়রে দেশের মানুষ।

বঙ্কিমচন্দ চট্টপাধ্যায় এর কৃষ্ণকান্তের উইল উপন্যাসে আমরা রোহিনীকে বিধবা বিয়ের কারণে বলির শিকার হতে দেখেছি। কারণ, সে সময় বিধবা বিয়ে স্বীকৃতি ছিল না। যদিও রূপ লাবণ্যে ভরা একজন বিধবা নারী ছিল রোহিনী।

যদি সেফালী ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হতো তবে সমাজ কিছুই করতে পারতো না। কারণ, দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়াটা তার অপরাধ। আমরা ফেরদৌসী মজুমদার, সুলতানা কামাল, নৃত্য শিল্পী চাঁদনী, তানিয়াসহ কত না নারীকে দেখেছি যারা ভিন্নধর্মাম্বলী মানুষকে বিয়ে করেছে তারপরেও সমাজ কিছুই করতে পারে নি। আর নিজ ধর্মেরই মানুষকে বিয়ে করার পর সেফালীর সে বিয়েকে স্বীকৃতি দিতে চায় নি সমাজ। সেতো বিয়ে করে কোন অপরাধ করে নি। সে নিজের সম্ভ্রম বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। জানি না সেফালীর এ আত্মহত্যার বিচার হবে কি না। তবে সেফালী একজন সতী নারী। সতী নারী হিসেবে সমাজের কাছে মাথা নত করে নি। সে মরার আগে সবাইকে বলে গিয়েছে যে, সে বিয়ে করে কোন অন্যায় করে নি। যারা তাকে শাস্তি দিয়েছে তারাই অপরাধী। কিন্তু এ অপরাধীদের বিচার হবে কি?

দেশের একজন তরুণ হিসেবে সেফালীর প্রতি যারা অবিচার এবং অমানবিক কাজ করেছে তাদের প্রতি যেমন ধিক্কার জানাই ঠিক এ সুষ্ঠু বিচার দাবী করছি। সেফালীর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের হিন্দু সমাজের বিধবাদের বিয়ের পথ উন্মুক্ত হোক। সেফালীর বিদেহী আত্মার প্রতি রইল শ্রদ্ধা। সেফালী তুমি যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকো। তোমার আত্মত্যাগ বাংলার বিধবা নারীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করি।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:০২

রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন: :(

২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:০৩

রাহিক বলেছেন: এখনও এ দেশের সমাজ অনেক বিষয়ের জন্য প্রস্তুত নয় ।এ ঘটনা তারই প্রমাণ দেয় ।

এক্ষেত্রে সরকারকে হিন্দু বিধবা বিবাহ আইন চালু করতে হবে ।

৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:০৮

সমাধানদাতা বলেছেন: ঐ শশুর হালায় কত ধর্মপরায়ণ হেডাও দেখবার বিষয়,আর ঐ স্বামীটাও কি কাপুরুষ!!!

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:২৮

অাজমাল েহােসন মামুন বলেছেন: তা ঠিকই বলেছেন। কাপুরুষ না হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো না । ভাল থাকবেন।

৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:০৮

মৃন্ময়ী বলেছেন: মেরুদন্ডহীন সমাজ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.