নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমরা একদিন করবো জয়............।

অাজমাল েহােসন মামুন

আমি একজন উন্নয়নকর্মী, শিক্ষক এবং ফ্রিল্যান্স লেখক। আমার উভয় চোখ ক্ষীণ দৃষ্টি সম্পন্ন। তাই ছোট কাল থেকেই অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে। তাই পিছিয়ে পড়া সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে দেশের ১২ টি প্রথম শ্রেণীর জাতীয় দৈনিকে লেখালিখি করি। আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যের উপর অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছি। বর্তমানে হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত আছি। ইতোপূর্বে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম। দেশের ১৩টি দৈনিকে প্রতিবন্ধিতা, নারী ও শিশু এবং বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রায় ৩০০ প্রবন্ধ, ফিচার এবং মতামত প্রকাশিত হয়েছে।যোগাযোগের ঠিকানা:আজমাল হোসেন মামুনসহকারী শিক্ষক, হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চাপাইনবাবগঞ্জ। মোবাইল নং-০১৭০৪২৪৪০৮৯

অাজমাল েহােসন মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিয়ে হয় শোনা যায় না বিয়ের গীত!

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:২৫

যদিও দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে এখনও মেয়েলী গীত চলে বিয়ের আসরে কিন্তু শহর এলাকায় বিলুপ্তির পথে। সাধারণত: সামাজিক এবং পারিবারিক অনুষ্ঠানে মেয়েলী গীত দলবেধে মহিলারা গায়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমাদের সে ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা ১৫ থেকে ২০ বছর আগে দেখেছি, কোন বাড়িতে বিয়ে হলে মহিলারা দলবেধে সারা রাত গীত গাইতো। শুনতেও খুব মজা লাগতো। মাঝে-মধ্যে সেখানে আমরা যেতাম। দেখতাম তাদের আনন্দ। এখনও যে, মেয়েলী গীত নেই তা নয়। তবে তা চোখে পড়ার মত নয়। কারণ, আধুনিক যুগের মেয়েরা সেসব গীত পছন্দ করে না বললেই চলে। তারা পছন্দ করে নাচতে। ব্যন্ড সংগীতের তালে তালে নাচকে খুবই ভালবাসে।
বিয়ের আসরেই বর-যাত্রী বা ডুলিবিবিরা আসলেই কনের পক্ষের মেয়েরা দলবেধে গাইতো,
“ডুলিবিবি আইসাছে পান খাইবার লালচে।“
যখন কনে বা বরকে কিছু খাওয়ানো হতো তখন বলতো,
“বসবো না, বসবো না, ছিঁড়া ছোপে আমরা বসবো নারে,
আরশের বাবা কি জানে নারে।“
শালিকারা গাইতো, “দুলা ভাই গিয়েছে শহরে, আনবে নাকের নথরে, সেই নথ নাকে দিয়ে নাক ঘুরিয়ে নাচবো রে।“
মাঝে মধ্যে গীত গাইতে গাইতে নাচতো মহিলারা। আর কয়েক বছর পর হয়ত মেয়েলী গীত হারিয়ে যেতে পারে বাংলার ঘর থেকে। কারণ, এখনকার মেয়েরা পশ্চিমা কালচারের বিশ্বাসী। পশ্চিমা ঢঙে সাজতে পেলে তরুণদের নাকি বেশি আকৃষ্ট করা যায়। সে জন্য এখন অতীতকে আর কেউ আঁকড়ে ধরে রাখতে চাচ্ছে না। গীতের পরিবর্তে আধুনিক বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান পরিবেশন করে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।
অথচ মেয়েলী গীতের সুর এত করুণ ও আবেগধর্মী যে, কেউ শুনলে সে গীতের কথা ভূলতে পারে না। জেলা শহরে বিয়ে হলেই ব্যন্ড দলকে ভাড়া করে নেওয়া হয়। এতে ব্যয়ও বেশি। কিন্তু গ্রামের সহজ-সরল মেয়েদেরকে ভাড়া করা হয় না। তাদের চাওয়া পাওয়াও খুব বেশি নয়। তাদের দু’ চার টাকা দিলেই তারা খুশি থাকে।
বিয়ের ৪ থেকে ৫ দিন আগেই চলতো বিয়ের গীত। সারা রাত গীত শুনেই ভালই মজা পাওয়া যেত। ঢেঁকিতে ধান ভাঙার সময় জুড়ে দিতো বিভিন্ন ধরনের গীত। ধান ভাঙার পর বর বা কনের জন্য তৈরী করতো ঐতিহ্যবাহী খাবার যাকে বলা হতো ‘থুবড়া’ । ধুবড়া’র তালিকায় রাখতো রসগোল্লা,অন্ধাসা, ক্ষীর, ফিরনী এবং ভাপা পিঠা। আদর করে কনে এবং বরকে খাওয়ানোর সময় জুড়ে দিতো গীত। পাশ্ববর্তী গ্রাম থেকে শোনা যেত বিয়ের গীত। ওই গীত এতো মধুর ছিল যার কথা ভুলা যায় না। বরের আগমন,কনেকে গোসল করা, কনেকে বিদোয়ের বেলা যেসব গীত গাওয়া হতো তা এখনও মানুষের মন-প্রাণকে আকুল করে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের শ্রদ্ধা কমে গেছে ঐতিহ্যের প্রতি। তবে একটা কথা না বলে পারছি না যে, ব্যন্ড তারকাদের সাথে সুন্দরীরা তালে তালে নাচলেও তেমন মজা লাগে না। কিন্তু তারপরেও কেন সেটা গ্রাম ও শহরের মানুষ বেশি উপভোগ করছে? আমার মনে হচ্ছে,ব্যাণ্ড সংগীতের তালে তালে নাচ দেখে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তারচেয়ে শত গুণে বেশি আনন্দ পাওয়া যেত মেয়েদের কণ্ঠে বিয়ের গীত শুনে। ধীরে-ধীরে সে ঐতিহ্য ধব্বংস হচ্ছে সে দিকে কারো খেয়াল নেই।
নারীদের হৃদয়ের আবেগ-উৎকন্ঠা, দুৰখ-কষ্ট, হাসি–কান্না, আনন্দ-বিরহের প্রকাশ ঘটে বিয়ের গীতে । সাধারণত কয়েকজন বিভিন্ন বয়েসের নারী গোল হয়ে এক সাথে বসে খালি গলায় বিয়ের গীত পরিবেশন করত। গ্রামের বিয়েতে বিশেষ করে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য ‘গীত গাওয়ানি’ মধ্যবয়সী মহিলাদের ডাক পড়ত। অথচ তাদের অধিকাংশ ছিল নিরক্ষর । সুরও তারাই দিতো । বিয়ের গীত সমূহ গীত গাওয়ানি’রা বংশক্রমে নিজেরা সহজে আয়ত্ত্ব করতো। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, “কন্যা ডাক দেও তোর জননী না মাইরে/মাও দিয়া যাওক সোনা মুখে হলদিরে/হলুদা, ডাক দেও তোর জনমদাতা বাপেরে/বাবা দিয়ে যাউক তোর সোনা মুখে হলদিরে।“ বোনেরা গাইত, “হামার ভাইয়ের হলদি মাখিবার, মনে নাহি ছিলরে/জোর বেজোর হলদি মাখলে, জোনাকু শালার বহিনরে।“
বর বা কনেকে থুবড়া হিসেবে ক্ষীর খাওয়ার সময় দল বেঁধে মহিলারা গাইত, “আলুয়ার চালে কাঞ্চন দুধে ক্ষীরোয়া পাকালাম, সেই না ক্ষীরোয়া খেতে গরমি লেগেছে। কোথায় আছ বড়ভাবি পাক্কা হিলোয়রে।“
বিয়ে শেষে নিজ বাড়িতে ফিরে আসার সময় বরের প্রতি লক্ষ্য করে গীত গাইত, “কী গহনা আনিছেন দুলা মিয়া দেখানতো হামাকে / সবই জিনিসি আনিছি গুলজান বিবি নথুয়া ছারিছি দেশে।“
বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় কনেকে হাজার স্মৃতি, বেদনা ভুলে যেতে হচ্ছে । যেতে হচ্ছে নতুন বাড়িতে । গুছিয়ে নিতে হবে সংসার । তখন গীতের মাধ্যমে বলত, “মন বিন্দাইলাম বনে বনে, আরো কান্দন কান্দে গো মায়-ও বনে বনে/ আরো কান্দন কান্দে গো মায়-ও নিরলে বসিয়া।“ এ ধরনের অসংখ্য বিয়ের গীত মা-বোনেরা মুখস্ত করে রাখতো । বর্তমান সময়ের মহিলারা এ ধরনের বিয়ের গীত আর চর্চা করে না। অনেকের জানা বিয়ের গীত সমূহ ভুলে গেছে। ফলে ‘গীত গাওয়ানি’দের কদর কমে গেছে সমাজে। আধুনিকতার যান্ত্রিক যুগে ধনাঢ়্য পরিবারে বিয়ের আয়োজন করা হলে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা দিয়ে ভাড়া করা ব্যণ্ড দল। তারা বিভিন্ন মিউজিক বাজিয়ে আধুনিক গান পরিবেশন করে। আর যারা গরিব মানুষ তারাও বিয়ের আসরে বিয়ের গীতের আয়োজন করে না। তারা সাউণ্ডবক্স ভাড়া করে গান জুড়ে দেয়। সে গানের তালে তালে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা নাচে।
আমাদের লোকজ ঐতিহ্য আমাদের রক্ষা করা উচিত। আমরা বাঙালি। আমরা যতই পশ্চিমা বিশ্বের ঐতিহ্যকে লালন করি না কেন আমরা বাঙালি। আমাদের ঐতিহ্যকে আমরা সহজেই হারাতে পারি না।


লেখক-
আজমাল হোসেন মামুন
সহকারী শিক্ষক, হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৩৬

হাসিবুল ইসলাম বাপ্পী বলেছেন: ঠিকই লিখেছেন। এটা এখন আর নাই বললেই চলে। :(

১৫ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:২৭

অাজমাল েহােসন মামুন বলেছেন: ধন্যবাদ । বাপ্পী ভাই, আপনি ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছেন।

২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:২৭

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: অবাক ব্যাপার!! মাত্র আজ মানে দেশের গতকালের সকালেই কয়েকজনের সাথে আলাপ প্রসঙ্গে বলেছিলাম,আজকালকার বিয়ের আনন্দ সীমিত হয়ে পড়ছে।।
ছোট বেলায় দেখেছি উৎসবের ধুম পরে যেত ১০/১৫ দিন আগে থেকেই।। মা,খালা,মামী,চাচীরা মিলে হলুদ,মেন্দি বাটতেন আর গান করতেন।। তারপর কি হুটোপুটি(সম্পর্কের সীমার ভিতরে)।।আর আজ বিয়ের দিন মেয়ে-ছেলেকে নিয়ে যাও পার্লারে।। ওরাই সব করে দেবে।।
বিয়ের আচার-আচরন একদম বিয়ে পড়ানো.(ক্ষেত্রবিশেষে গেট ধরা,যার পরিমানও আগে থেকেই নির্দিষ্ট করা) আর খেয়ে বসায় ফেরার মাঝেই শেষ।।
আর ব্লগে এসেই পেলাম,আপনার এই লেখা।। তাই অবতাড়না একটু বড়ই হয়ে গেলো।।

১৫ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:২৮

অাজমাল েহােসন মামুন বলেছেন: সচেতনহ্যাপী ব্লগার আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ রইল।

৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:০৭

নাহিদ রুদ্রনীল বলেছেন: যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবকিছু পরিবর্তন হয়। আগে যেখানে "বিয়ের গীত" ছিল, আজ সে স্থানে ডিজে পার্টি, ব্যান্ড শো জায়গা করে নিয়েছে। আমাদের ঐতিহ্যকে আমরা ভুলতে চলেছি। আমার মনে হয়, এখনকার যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পুরনো সংষ্কৃতি, ঐতিহ্যকে তুলে আনতে হবে। না হলে এগুলো শুধু সুন্দর ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়েই থাকবে। আর কিছু না।

১৫ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:২৯

অাজমাল েহােসন মামুন বলেছেন: ধন্যবাদ নাহিদ ভাই। আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি।

৪| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:৩২

মাসুম সোহাগ বলেছেন: ব্যাপারটা যথেষ্ট বেদনাদায়ক। যত্ন না করলে যেমন টবের টগবগে গোলাপটাও একদিন শুকিয়ে যায়। তেমনি অযত্নে অবহেলায় আমাদের সংস্কৃতির এই মধুর ব্যাপারটাও হারিয়ে যাচ্ছে। শহরে বেড়ে উঠলেও বছরে কয়েকটি দিনের জন্য গ্রামে বেড়াতে যেতাম। তখন বিভিন্ন বিয়েতে এই গান গুলো হ'ত। আমার কাছে তখন অদ্ভুত লাগলেও এখন এ জিনিসগুলোর অভাব অনুভব করছি।

১৫ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৩০

অাজমাল েহােসন মামুন বলেছেন: মাসুম ভাই, ঠিকই আপনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.