![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছিলেন রফিক-জব্বার-সালাম-বরকতসহ অসংখ্য মানুষ।
আর এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে ৪৬ বছর পর অসামান্য অবদান রেখেছিলেন আরেক রফিকুল ইসলাম, আবদুস সালাম!
নব্বই দশকের শেষদিকের কথা। কানাডা নিবাসী মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম উপলব্ধি করলেন, মায়ের মুখের বুলির অধিকার আদায়ে অকাতরে রফিক-সালাম-জব্বারের আত্মত্যাগ পৃথিবীবাসীর সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। ১৯৫২ সালে যে বীর রফিক মায়ের ভাষার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন, তার ঠিক ৪৬ বছর পর আরেক রফিক সেই অভাবিত আত্মত্যাগকে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে নামলেন এক অসম্ভব যুদ্ধে। ১৯৯৮ সালের ৯ই জানুয়ারী রফিক জাতিসংঘের তৎকালীন জেনারেল সেক্রেটারী কফি আনানকে চিঠি দিলেন। চিঠিতে ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য বাঙ্গালীর আত্মত্যাগকে তুলে ধরে তিনি মহাসচিবের কাছে প্রস্তাব রাখেন, যেন একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তৎকালীন জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা হাসান ফেরদৌস এর নজরে আসে ব্যাপারটি। ১৯৯৮ সালের ২০শে জানুয়ারী তিনি রফিককে পরামর্শ দেন জাতিসংঘের অন্য আরেকটি সদস্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে একই প্রস্তাব আনতে। ফলে আরেক সহযোদ্ধা আবদুস সালামের সাথে মিলে রফিকুল গঠন করেন ‘Mother Language Lovers of the World’ নামের একটি সংগঠন। মাতৃভাষা-প্রেমিকগোষ্ঠীর এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন সাত জাতি ও সাত ভাষার ১০ জন সদস্য। তাঁরা হলেন অ্যালবার্ট ভিনজন ও কারমেন ক্রিস্টোবাল (ফিলিপিনো), জ্যাসন মোরিন ও সুসান হজিন্স (ইংরেজি), ড. কেলভিন চাও (ক্যান্টনিজ), নাজনীন ইসলাম (কোচি), রেনাটে মার্টিনস (জার্মান), করুণা জোসি (হিন্দি) এবং রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম (বাংলা)। এবার তারা এই সংগঠনের পক্ষ থেকে আবার মহাসচিবের কাছে প্রস্তাব পাঠান এবং ইউএনওর কানাডিয়ান অ্যাম্বাসেডর ডেভিড ফাওলারের কাছে এই চিঠির একটা কপি প্রেরণ করেন। কিন্তু এরপর সেরকম সাড়া না পেয়ে কিছুটা থমকে যায় কার্যক্রম।
কিন্তু হাল ছাড়েননি রফিক-সালাম। তাঁরা এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এম এ সাদেক এবং শিক্ষা সচিব কাজী রকিবুদ্দিন, অধ্যাপক কফিলউদ্দিন আহমেদ, মশিউর রহমান (প্রধানমন্ত্রীর সেক্রেটারিয়েটের তৎকালীন ডিরেক্টর), সৈয়দ মোজাম্মেল আলি (ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত), ইকতিয়ার চৌধুরী (কাউন্সিলর), তোজাম্মেল হক (ইউনেস্কোর সেক্রেটারি জেনারেলের শীর্ষ উপদেষ্টা) প্রমুখ সবাইকে এই ব্যাপারটার গুরুত্ব অনুধাবন করাতে সক্ষম হন এবং তাঁরা সবাই প্রায় ২৯টি দেশের সমর্থন আদায়ে দিনরাত পরিশ্রম করতে থাকেন।
১৯৯৯ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর, ইউনেস্কোতে প্রস্তাব উত্থাপনের শেষ দিন। বিনিদ্র রজনী আর অকল্পনীয় অনিশ্চিত উত্তেজনায় টেলিফোনে আর ইমেইলে সময় পার করছেন রফিক-সালামেরা। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার থেকে আনুষ্ঠানিকভাব প্রস্তাবটি তখনও এসে পৌঁছায়নি। জানা গেল, প্রস্তাবটি আসতে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর একটা সই দরকার। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তখন পার্লামেন্টে, সংসদ অধিবেশন শেষ হবার পরে সই নিতে নিতে অনেক দেরি হয়ে যাবে, ততক্ষণে প্রস্তাব উত্থাপনের সময়সীমা যাবে পার হয়ে। শেষ পর্যন্ত উপায়ন্তর না দেখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করা হল কানাডার ভ্যানকুভার থেকে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের জটিলতা উপেক্ষা করে নথি অনুমোদনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া ছাড়াই নিজের সইখানা ফ্যাক্স করে পাঠিয়ে দিলেন ইউনেস্কোর সদরদপ্তরে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক সহযোগিতায় ইউনেস্কোর অফিসটাইম শেষ হবার মাত্র এক ঘণ্টা আগে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব দিল।
১৬ই নভেম্বর, ১৯৯৯ তারিখে ইউনেস্কো সভায় বাংলাদেশের প্রস্তাবটি উত্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু বিধিবাম! সেদিন কোন এক অজানা কারণে বাংলাদেশের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবটি উত্থাপন হয়নি। অনিশ্চয়তার দোলাচলে দুলতে দুলতে আসে ১৭ই নভেম্বর। অবশেষে শত প্রতীক্ষার সেই প্রস্তাবের ব্যাপারে সম্মতি জানালো উপস্থিত ১৮৮টা দেশের প্রতিনিধিরা। এভাবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হওয়ার পর ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর দিনটিতে ‘২১শে ফেব্রুয়ারি’ লাভ করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা। ইউনেসকোর ঐতিহাসিক সেই অধিবেশনে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের মূল প্রস্তাবক ছিল বাংলাদেশ এবং সৌদি আরব। আর সমর্থন করেছিল আইভরি কোস্ট, ইতালি, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কমোরোস, ডোমিনিকান রিপাবলিক, পাকিস্তান, ওমান, পাপুয়া নিউগিনি, ফিলিপিন, বাহামাস, বেনিন, বেলারুশ, গাম্বিয়া, ভারত, ভানুয়াতু, মাইক্রোনেসিয়া, রুশ ফেডারেশন, লিথুয়ানিয়া, মিসর, শ্রীলংকা, সিরিয়া ও হন্ডুরাস।
লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২০১৩ সালের ২০ই নভেম্বর কানাডার ভ্যানকুভারে পরলোকগমন করলেও, রফিকুল ইসলাম এবং তার সহযোদ্ধা আবদুস সালাম এর অসামান্য কীর্তি ও অবদানের জন্য তাঁরা হয়ে রইবেন চিরস্মরণীয়। এই জাতি শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে তাঁদের!
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৫৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
বাংলার জন্য যারা আন্দোলন করেছিলেন, তারা সবাই পরে বড় বড় পদে ছিলেন; বাংগালীদের পড়ানোর ব্যাপারে কেহই কিছুই করেনি; আমরা ভাষা সৈনিক নাম দিয়ে খুশীতে গদগদ