![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্তূপীকৃত হয়ে আছে সাড়ে ৫ হাজার নকশা
তবে ঘুষ দিলেই মিলে অনুমোদন
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (রাজউক) চলছে চরম নকশাজট। বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার নকশা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সময়মতো নকশা না পাওয়ায় গ্রাহকরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তবে কিছু অসৎ কর্মকর্তাকে উপঢৌকন দিলে দ্রুতই নকশা অনুমোদন হয়ে যায়। নয়তো বছরের পর বছর এ টেবিল থেকে ও টেবিল ঘুরতে হয় গ্রাহককে। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন বিল্ডিং নকশা অনুমোদন কমিটির সদস্য শেখ আব্দুল মান্নান। তিনি বলেছেন, এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। রাজউকে কমবেশি দুর্নীতির অভিযোগ আমরাও শুনেছি।
জানা গেছে, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজউকে নকশাজট চরম আকার ধারণ করেছে। গত সাড়ে চার বছরে প্রায় পাঁচ হাজার নকশা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অথচ নকশা অনুমোদন কমিটির (বিসি কমিটি) বৈঠকও সময়মতো হচ্ছে না। আবার রাজউকের নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়াটিও অত্যন্ত জটিল, দীর্ঘমেয়াদি ও ঝামেলাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র পেতে একজন আবেদনকারীকে কমপক্ষে ১৫টি টেবিলে স্বাক্ষরের জন্য ঘুরতে হয়।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহক নকশা জমা দেওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে অনুমোদনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। আর কোনো আপত্তি থাকলে রাজউক এক মাসের মধ্যে তা গ্রাহককে জানিয়ে দেবে। অথচ এ নিয়ম রাজউক নিজেই মানছে না। আবেদনকারীকে পদে পদে ঘুষ দিতে হয়। যে কারণে ঝামেলা এড়াতে গ্রাহকরা সরাসরি কিংবা দালালের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়াকেই বৈধ মনে করে থাকেন। আর বহুতল ভবন বা সরকার চিহ্নিত বিশেষ ভবনের পাশে ভবন নির্মাণের জন্য নকশা অনুমোদনের জন্য অপেক্ষার পালা আরো অনেক বেশি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রাজউক চেয়ারম্যানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাজধানীর দেড় কোটিরও অধিক মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে রাজউকে নগর পরিকল্পনাবিদ মাত্র ১৩ জন। এ ছাড়া রাজউকের প্রত্যেক বিভাগে জনবল সংকট রয়েছে, যা নকশাজটের অন্যতম একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়।
জানা গেছে, রাজউকে প্রতিবছর গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার নকশা জমা পড়ে। যার মধ্যে অর্ধেকেরও কম অনুমোদন পায়। গ্রাহকদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের অন্যায় আবদার মেটাতে না পারার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নকশা পাসে বিলম্ব হয় এবং বছরের পর বছর লেগে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তার টেবিলে আসার পর সামান্য ত্রুটি ধরে ফাইল আটকে রাখেন। পার্টির সঙ্গে বনিবনা না হওয়া পর্যন্ত ফাইলে স্বাক্ষর করেন না। এ কারণে গ্রাহকরা দালালনির্ভর হতে বাধ্য হন। গ্রাহকদের অভিযোগ, রাজউকের বিল্ডিং নকশা অনুমোদন কমিটির সদস্যরা নিজেদেরই দালালচক্র নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন।
তবে রাজউক কর্মকর্তাদের দাবি, আবেদনপত্রে নানা অসংগতি থাকর কারণেই নকশা অনুমোদন পায় না। আর এর সাথে যোগ হয়েছে নকশা কমিটির বৈঠক সময়মতো না হওয়া। তবে কর্মকর্তাদের ঘুষ-বাণিজ্যের কারণে নকশা আটকে থাকে, এ বিষয়টি সঠিক নয় বলেও দাবি করেছেন কয়েকজন কর্মকর্তা।
ঘুষ না দেওয়ার কারণে নকশাজটের বিষয়টি স্বীকার করে বিল্ডিং নকশা অনুমোদন কমিটির সদস্য শেখ আব্দুল মান্নান বলেন, এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। রাজউকে কমবেশি দুর্নীতির অভিযোগ আমরাও শুনেছি। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে রাজউকে অনিয়ম-দুর্নীতি অনেকাংশে কমে গেছে। তবে রাজউককে পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত করতে সময় লাগবে।
রাজউকের নকশা অনুমোদনসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) একটি জরিপ করেছিল। টিআইবির ওই জরিপে বলা হয়েছিল, বিভিন্ন কারণে মানুষ দালালনির্ভর হতে বাধ্য হয়। অহেতুক বিলম্ব এড়াতে ৫৩ শতাংশ, অযথা হয়রানি এড়াতে ২২ শতাংশ, ঘোরাঘুরির হাত থেকে মুক্তি পেতে ৭ শতাংশ, নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়ার জটিলতা থেকে রক্ষা পেতে ১৩ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে ৫ শতাংশ গ্রাহক দালালের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হন। জরিপে বলা হয়, বছরে শুধু প্ল¬্যান পাস বাবদ রাজউককে গ্রাহকরা ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা ঘুষ দেয়।
©somewhere in net ltd.