নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেঘনা

মেঘনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

নববর্ষ

১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৪

ডাকসু ঘোষণা দিয়েছে তারা এখন থেকে পহেলা অগ্রহায়ণে নববর্ষ করবে। এর কারণ হিসেবে তারা দুটি যুক্তি উত্থাপন করেছে।

(১) প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই নববর্ষ অগ্রহায়ণ মাসের ১ তারিখে উদযাপন করা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামক এক পাজী ছেলে অগ্রহায়ণ বাদ দিয়ে শান্তিনিকেতনে পহেলা বৈশাখে নববর্ষের উদযাপন শুরু করে।

(২) বাংলা ১২ মাসের নামের ১১টিই ১১টি নক্ষত্রের নাম থেকে এসেছে। যেমন বৈশাখ এসেছে বিশাখা নক্ষত্র থেকে, চৈত্র এসেছে চিত্রা নক্ষত্র থেকে। শুধু অগ্রহায়ণ নামটা কোন নক্ষত্র থেকে আসেনি। তাই অগ্রহায়ণের ১ তারিখে করাটা যুক্তিযুক্ত।

দ্বিতীয় যুক্তিটা আমি কিছু বুঝিনি। কেউ বুঝে থাকলে বুঝিয়ে দিবেন। তবে আমার মনে হচ্ছে 'নক্ষত্র' শব্দটাতে 'খিও' (ক্ষ) আছে আর 'ত এ র ফলা' (ত্র) আছে। এই দুটো সংস্কৃত ভাষায় অনেক ব্যবহার করা হয়। জামাতের ধারণা সংস্কৃত হিন্দুয়ানি ভাষা। তাই নক্ষত্রের ধর্ম হিন্দু। তাই নক্ষত্রের নামে শুরু হওয়া মাসগুলোও হিন্দুয়ানি। ১১টি মাস হিন্দু, ১টি মাস মো. অগ্রহায়ণ শেখ। তাই সেই মাসে নববর্ষ পালন কিছুটা শরীয়তসম্মত।

আমি জানিনা যে তারা জানে কিনা। তবে নক্ষত্র হিন্দু হলে গ্রহও হিন্দু। গ্রহ শব্দটিও সংস্কৃত। আর আমাদের সপ্তাহের ৭দিন গ্রহের নামে হয়েছে। ইংরেজি বারের নাম তো আরও এক কাঠি সরেস। সেখানে ৭টির মধ্যে ২টি এসেছে গ্রহের নাম থেকে। ৫টি এসেছে দেবতাদের নাম থেকে। এখন কি ডাকসুর নেতারা শুক্রবারের বদলে মওদূদী-বার নামক নতুন বার চালু করে জুম্মা পড়বে?

প্রথম যুক্তিতে ফিরে আসার আগে নিচের এই মানচিত্রটা দেখেন। বাঙলা নববর্ষ কোন এক্সক্লুসিভ বাঙালি কালচার না। আপনি নিশ্চয়ই এতোদিনে খেয়াল করেছেন এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি একই দিনে বাঙালিরা নববর্ষ, চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাই আর ত্রিপুরারা বিসু পালন করে।

আপনার নিশ্চয়ই কৌতুহল জেগেছে - কী এমন প্রাচীন সম্পর্ক এই চার জাতির? তাদের সবচেয়ে বড় Ethnic উৎসব তারা একই দিনে পালন করে!

ঘটনাটা আপনার কল্পনার চেয়েও বড়। পহেলা বৈশাখ বাঙালির এক্সক্লুসিভ কোন ফেনোমেনা নয়। এর ব্যাপ্তি ফ্রান্সের রটারড্যাম থেকে ইন্দোনেশিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। চৌদ্দ এপ্রিল শুধু বাংলাদেশ নয়, ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ক্যাম্বোডিয়া, লাওস, উত্তর ভিয়েতনামেরও নববর্ষ।

বাংলাদেশি কূটনীতিকদের দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে চালিয়ে যাওয়া অসততার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোন নিউজ আপনাদের জানতে দেওয়া হয় না। দেওয়া হলে দেখতেন বাংলাদেশের নববর্ষ নস্যি। নববর্ষ কীভাবে, কতভাবে আর কত মজা করে পালন করা যায় সেটা জানে থাইল্যান্ড, লাওস।

ইরান ইরাক আফগানিস্তান তাদের নববর্ষকে ডাকে নওরোজ। নওরোজ অবশ্য ঐতিহাসিক কারণে নববর্ষের ২০ দিন আগে হয়। ইউরোপেও নওরোজের দিন নববর্ষ হতো। জুলিয়াস সিজার এটা জোর করে ধর্মের দোহাই দিয়ে জানুস দেবের পূজা উপলক্ষে জানুয়ারিতে নিয়ে এসেছিলেন।

তখন ফেসবুকে ইভেন্ট শেয়ার করা যেতো না। প্রযুক্তি ছিল না। তা সত্ত্ব্বেও কীভাবে ফ্রান্স থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত লোকে জানলো একদম মার্চ-এপ্রিল মাসেই নববর্ষ পালন করতে হবে? কেন তারা হাজার হাজার হাজার হাজার বছর ধরে এই নববর্ষ উদযাপন করে?

কারণ প্রকৃতিই তাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছে - ঠিক কবে নববর্ষ পালন করতে হবে। শীত ও শুষ্কতার শেষে যখন থেকে আপনি কৃষি কাজ আবারও শুরু করতে পারবেন তখন থেকেই নতুন বছর - এটাই ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের কমন সেন্স। ইউরোপ আর মধ্য এশিয়ার জলবায়ুতে এটি ছিল মার্চের শেষের দিকে, পাঞ্জাব থেকে শুরু করে থাইল্যান্ড পর্যন্ত এটি এপ্রিলের মাঝামাঝি।
তাই রবীন্দ্রনাথ নামক ওই পাজী লোকটা নয়, আমাদের পূর্বপুরুষরাই এই আন্তর্জাতিক উৎসবটা পহেলা বৈশাখে পালন করতেন।

ডাকসুর আদি নববর্ষ উদযাপনের পেছনে একটা কারণ হলো অগ্রহায়ণ মাসের নাম। অগ্র মানে 'সম্মুখ' আর হায়ন শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো 'সমষ্টি'। ধানের আঁটিকে বা ধানের সমষ্টিকে সংস্কৃত ভাষায় বলতো হায়ন। তাই অগ্রহায়ণ মানে 'ধানের আঁটির উপরের অংশের মাস'। আরও ভালো করে বললে, "ধানের শীষের মাস"।
পরে মাসের সমষ্টি হিসেবেও হায়ন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, সে হিসেবে হায়ন শব্দের অর্থ বছর। ১৯১৬ সালে জ্ঞানেন্দ্রমোহনের বাঙ্গালা ভাষার অভিধানে হায়ন শব্দের অর্থ ধান এবং হায়ন শব্দের অর্থ বছর - দুটোই বলা হয়েছে।
কিন্তু কমন সেন্স দিয়েই বোঝা যায় অগ্রহায়ণের হায়ণ বলতে ধানকে বোঝানো হয়েছে। এটা ধানের মাস। বছরের নয়।

ইতিহাসে একটা সিঙ্গেল রেফারেন্স বা নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না যে বাঙালি অগ্রহায়ণ মাসে বছরের শুরু করতো। এটা নৃবৈজ্ঞানিক দৃষ্টি থেকে ইম্পসিবল, সারা পৃথিবীর কোন জনপদে এমনতর ঘটনা ঘটেনি। আর ঐতিহাসিক দৃষ্টি থেকে বাঙলা দেশেও এটি নজিরবিহীন। নাহলে সাংগ্রাই, বিজু আর নববর্ষ একদিনে হবার কথা না। পাকিস্তানের উর্বর ফসলের দেশ পাঞ্জাবে শত শত বছর ধরে বৈশাখী মেলা ১৪ই এপ্রিল হবার হবার কথা না। জামায়াত জাস্ট একটা শব্দের ভুল ব্যাখ্যা করে ইতিহাস পাল্টাতে যাচ্ছে।

ওদের কি কমন সেন্স নেই? ওরা কি জানেনা এসব বললে মানুষ হাসবে?
তাও ওরা বলছে কারণ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির মতো মেধা বাংলাদেশের দ্বিতীয় কোন দলের নেই। তারা জানে পেশি শক্তি এই যুগে চলে না। এই যুগ হলো মিডিয়ার যুগ, বয়ানের যুগ, ন্যারেটিভের যুগ। আপনি মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে মিথ্যাকে সত্য আর সত্যকে মিথ্যা বানাতে পারেন। যুদ্ধটা পেশির না। যুদ্ধটা কালচারের।

জামায়াতে ইসলামির শিবির অংশটা এই কালচারাল যুদ্ধটা করতে জানে। যেটা বিএনপি বা অন্য দলের বুঝতেও ১০ বছর লাগবে।

পহেলা বৈশাখ এমন গভীর শেকড় ওয়ালা এক উৎসব, প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে বাদশাহ আকবরের খাজনা আদায়, ব্রিটিশ আমলের পূণ্যাহ হয়ে এমনভাবে এদেশের কালচারে শেকড় গেড়েছে যে - বাংলাদেশ থেকে একে বাতিল করা, বন্ধ করা বাস্তবিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে সম্ভব না। এমনকি জামায়াত ক্ষমতায় আসলেও না। আন্তর্জাতিক চাপ তো আলাদা করে আছেই। তাই তারা নববর্ষকে distort করতে, নববর্ষকে পঙ্গু করতে নতুন নতুন পরিকল্পনা করছে।

ঈদ উৎসব থেকে আপনি নতুন জামা, সেলামি, সেমাই আর মেহমান বাদ দিন। ঈদ বলে কিছু থাকে? থাকে না। তাই বলে কি ঈদ কবুল হবে না?
হবে। কিন্তু এটা কালচারাল পঙ্গু ঈদ।

রমজান মাস থেকে আপনি ভাজা পোড়া খাবার বাদ দেন। বিজ্ঞাপন, অফার, ইফতার বাজার বাদ দেন। সারা দেশে সন্ধ্যাবেলা ভাত খাওয়া চালু করেন। তাতে কি রোজা কবুল হবে না? হবে। জাস্ট রোজাটা সাংস্কৃতিকভাবে মারা যাবে।

সংস্কৃতি বোঝাটা খুব জরুরি। বাংলাদেশের সালাফিরা শবে বরাতকে মেরে ফেলেছে। এখন তাদের টার্গেট ঈদ এ মিলাদুন্নবী আর বাংলা নববর্ষ।
মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী আর জামায়াতে ইসলাম নববর্ষ পালন করবে ঠিকই, আপনি তাদের জঙ্গি বা বাঙালি সংস্কৃতি বিরোধী বলতেও পারবেন না। কিন্তু তারা বাঙালি সংস্কৃতিকে পঙ্গু করে দিবে। নববর্ষকে মেরে ফেলবে। নববর্ষ হবে ঠিকই। কিন্তু সেই নববর্ষের কোন শেকড় থাকবে না, ইতিহাসের সম্পর্ক থাকবে না। হবে এক মস্তকবিহীন নববর্ষ।

সাবধান!
ওরা আসছে।
ওদের কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।

- ইরফান শেখ

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পড়লাম ।

২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ২:২৩

রৌশন বলেছেন: অগ্রহায়ণ অর্থ কী?

দেখুন তো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.