নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

মিজানুর রহমান মিলন

জয় হোক মানবতার ও মুক্তিকামী মানষের যারা নব্য উপনিবেশবাদের বলির পাঠা হতে চায় না ।

মিজানুর রহমান মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আফগানিস্থানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংকট, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক শক্তির ক্ষমতার লড়াই !

০১ লা জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:১৯



ভোট কারচুপির অভিযোগে বিক্ষোভরত আফগান জনগণ।



আফগানিস্থানের ১ম দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষ্যে গত এপ্রিলে ’আফগানিস্থানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও তালেবান, আল কায়েদাসহ বিভিন্ন জঙ্গীদের ইতিকথা ‘ শিরোনামে একটি ব্লগ লিখেছিলাম। সেই লেখায় আফগানিস্থানে তালেবানসহ বিভিন্ন জঙ্গী উত্থানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরে আফগানিস্থানের নবীন গণতন্ত্রের প্রশংসা করেছিলাম। ১ম দফা ৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল প্রতিযোগিতা হয় সাবেক পররাস্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ও বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা আশরাফ ঘানি আহমাদজাইয়ের মধ্যে। আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ পেয়েছিলেন ৪৫% ভোট ও আশরাফ ঘানি পেয়েছিলেন ৩১% ভোট। কোনো প্রার্থী ৫০%+ ভোট না পাওয়ায় নির্বাচন গত ১৪ জুনে দ্বিতীয় দফা গড়ায়। তালেবানদের হুমকি ধামকি, বোমা হামলাসহ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ন হয়েছে। কথা এখানেই শেষ নয়-আগামী ২ জুলাই বেসরকারীভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার কথা, কিন্তু প্রাথমিক ফলাফলে জানা গেছে এগিয়ে আছেন আশরাফ ঘানি আহমদজাই ! ৪৫% ভোট পেয়েও দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের আগেই আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ভোট কারচুপির আশংকা করেছিলেন, এরমাঝে তাকে একবার হত্যারও চেষ্টা করা হয়েছিল বলে পাকিস্থানের দিকে আঙ্গুল তুলেছিল আফগান সরকার ।ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ বিক্ষোভ কর্মসুচির ডাক দিয়েছেন ও তার সমর্থকগণ এখন কাবুলসহ সারা দেশে বিক্ষোভ করতেছেন ! নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সাথে আশরাফ ঘানির লোকজনের কথোপকথনের একটি অডিও ফাস করেছেন আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ! যে অডিওতে আশরাফ ঘানিকে নির্বাচনে জিতিয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কোনো প্রদেশে ভোটারের চেয়ে ভোট কাস্টিং এর হার বেশি বলে দাবি করেছেন আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ । অডিও ফাসের পরপরই আফগানিস্থানের স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রধান জিয়াউল হক আমারখাইল পদত্যাগ করেছেন ।



আশরাফ ঘানি আহমাদজাই।



আফগানিস্থানের অন্যতম প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আশরাফ ঘানি একজন পেশায় অর্থনীতিবিদ। অর্থনীতিবিদ থেকে রাজনীতিবিদে পরিণত হওয়া আশরাফ ঘানির জন্ম ১৯৪৯ সালে। লেখাপড়ার জন্য ১৯৭৭ সালে দেশ ছাড়ার পর দীর্ঘদিন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন, চাকরি করেছেন বিশ্বব্যাংকে৷ ২৪ বছর বিদেশে কাটিয়ে দেশ পুনর্গঠনের স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফেরার পর তিনি যোগ দেন রাজনীতিতে।তালেবান শাসনের অবসানের পর আফগানিস্তানের প্রথম অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন আশরাফ ঘানি। ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি হামিদ কারজাই সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।ওই সময়ে নতুন মুদ্রা চালু করে, কর ব্যবস্থার সংস্কার করে এবং দাতাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে তিনি আলোচনায় আসেন৷ কিন্তু বদমেজাজ, ঔদ্ধত্য এবং কাউকে কাছে ঘেঁষতে না দেয়ার মনোভাবের কারণে যথেষ্ট বদনামও তাকে কুড়াতে হয়েছে।২০০৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আশরাফ ঘানিও অংশ নিয়েছিলেন৷ কিন্তু সেবার তিনি ভোট পান মাত্র ৩ শতাংশ৷প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের মত তিনি পশতুন ভাষী হওয়াতে তার প্রাপ্ত ভোটের সিংহভাগই এসেছে পশতুন জাতিগোষ্ঠী থেকে। আশরাফ ঘানি পশ্চিমাপন্থী হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যুক্তরাস্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সম্পর্ক অত্যন্ত উন্নত করবেন।





আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ।



অন্যদিকে ১৯৬০ সালে জন্ম নেয়া আবদুল্লাহকে আফগানিস্তানের মানুষ চেনে ডাক্তার আবদুল্লাহ নামে৷অনর্গল ইংরেজীতে কথা বলা ও মার্জিত ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত তিনি। আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহর নাম বললেই সামনে চলে আসে আহমাদ শাহ মাসুদের নাম। আহমাদ শাহ মাসুদ ছাড়া বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী অব্দুল্লাহ যেন এক অসম্পূর্ণ ব্যক্তি। ১৯৯৬-২০০১ সময়ে তালেবান বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধের কমান্ডার আহমাদ শাহ মাসুদের ডান হাত ছিলেন তিনি।আহমাদ শাহ মাসুদ যেখানেই যেতেন সাথে নিয়ে যেতেন আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহকে। আহমাদ শাহ মাসুদকে বলা হয় পানসিরের সিংহ ! আফগানিস্থানে তালেবান বর্বর শাসনের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তিটি অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি আহমাদ শাহ মাসুদ । সে এক অন্য রহস্যময় কাহিনী! এই আহমাদ শাহ মাসুদ বলেছিলেন, যদি পাকিস্থান, সৌদি আরব ও যুক্তরাস্ট্র তালেবানদের প্রতি সমর্থন বন্ধ করে তাহলে অল্প কয়েক মাসের মধ্যে তালেবানদের উৎখাত করব ।আহমাদ শাহ মাসুদের স্বপ্ন ছিল একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক আফগানিস্থান। তালেবান শাসনের সময় আহমাদ শাহ মাসুদ নিয়ন্ত্রণ করতেন আফগানিস্থানের বিশাল ভূ-খন্ড। সেখানে তিনি নারীদের স্বাধীনতা,সমঅধিকার দিয়েছিলেন ও গণতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। ২০০১ সালের দিকে মার্কিন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা আহমাদ শাহ মাসুদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে তালেবানদের কাছে আত্মসমপর্ণের প্রস্তাব দেন, আহমাদ শাহ মাসুদ রাগান্বিত হয়ে ঐতিহ্যবাহী আফগান পাগড়ি মাথা থেকে খুলে ফেলেছিলেন ! তালেবানদের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাবও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন । ৯/১১ এর কিছুদিন আগে ইউরোপিয় পার্লামেন্টে তালেবানদের ধর্মান্ধতা,পশ্চিমা বিশ্বের তালেবানদের প্রতি সমর্থনের কারণে যুক্তরাস্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন । সেই সফরে আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ছিলেন আহমাদ শাহ মাসুদের প্রধান সফরসঙ্গী। বিষ্ময়কর ঘটনা যে, ইউরোপ সফর থেকে ফিরে আসার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার দুদিন আগে মানে ৯ সেপ্টেম্বর এক আত্মঘাতি বোমা হামলায় শহীদ হন এই পানসিরের সিংহ আহমাদ শাহ মাসুদ ! কারজাই সরকার গত ২০০৩ সালে আহমাদ শাহ মাসুদকে জাতীয় বীরের মর্যাদা দেন ও মাসুদের হত্যাকান্ডের দিনকে মাসুদ দিবস হিসাবে ঘোষণা করেণ এবং জাতীয় ছুটি ঘোষণা করেণ। অনেক বিশ্লেষকই স্বাধীন চেতা ও পানসিরের সিংহ আহমাদ শাহ মাসুদের হত্যাকান্ডকে যুক্তরাস্ট্রের আফগান আক্রমনের পুর্ব প্রস্তুতি বা তালেবান, আল কায়েদার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার পূর্ব প্রস্তুতি বলে অখ্যায়িত করেছেন । সেই আহমাদ শাহ মাসুদের ডান হাত ছিলেন বর্তমান সময়ের আলোচিত অন্যতম প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ।





পানসিরের সিংহ আহমাদ শাহ মাসুদ।





ইউরোপিয় পার্লামেন্টে বক্তব্য দেওয়ার সময় পানসিরের সিংহ আহমাদ শাহ মাসুদ ও আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ।





আব্দুল্লাহ চিকিৎসক হলেও তিনি সোভিয়েত বিরোধী লড়াইয়ে যেমন অস্ত্র হাতে অংশগ্রহন করেছিলেন তেমনি জঙ্গী তালেবানদের বিরুদ্ধেও তিনি অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। বাবা পশতুন ও মা তাজিক হওয়াতে আফগানিস্থানের প্রভাবশালী এই দুই গোত্রেরই সমর্থন তার পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু প্রথম দফা নির্বাচনে তিনি যে হারে তাজিকদের সমর্থন পেয়েছেন সে হারে পশতুনদের পাননি ! তবে পরবর্তি ধাপে তিনি পশতুনদের সমর্থন পেয়েছেন কি না তা এখনো অজানা ।আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ২০০১-২০০৫ কারজাই সরকারের পররাস্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। গত ২০০৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও তিনি অংশগ্রহন করেছিলেন।কিন্তু প্রথম পর্বের ভোট শেষে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে তিনি দ্বিতীয় দফার নির্বাচন বর্জন করলে আবারো সরকারের দায়িত্ব নেন হামিদ কারজাই। এবারও একই অভিযোগের পুনরাবৃত্তি !



আফগানিস্থানের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে কে হতে যাচ্ছেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট-আফগান জনগণের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক, প্রতিবেশী ও পশ্চিমা বিশ্বের কাছেও । যুক্তরাস্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থনের দিক দিয়ে আশরাফ ঘানি এগিয়ে আছেন তাই কারচুপি করে হোক আর বৈধভাবেই হোক হয়তো তিনিই হতে যাচ্ছেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট অন্যদিকে পাকিস্থান বাদ দিয়ে আফগানিস্থানের প্রতিবেশি ও অঞ্চলিক রাস্ট্রের সমর্থন আছে আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহর উপর। সমস্যাটা জটিল হয়ে গেছে সেখানেই! এটাই আফগান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমান সংকটের মূল কারণ।















মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.