নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

মিজানুর রহমান মিলন

জয় হোক মানবতার ও মুক্তিকামী মানষের যারা নব্য উপনিবেশবাদের বলির পাঠা হতে চায় না ।

মিজানুর রহমান মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা ও সংকটে থাইল্যান্ডের গণতন্ত্র!

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২৭

থাইল্যান্ডে জান্তা সরকারের নিযুক্ত পার্লামেন্ট গত ২৩ জানুয়ারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে অভিশংসন করে পাঁচ বছরের জন্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করল! গণতন্ত্রের সুরক্ষা ও দেশকে বিভক্তির হাত থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই গত বছরের মে মাসে ক্ষমতা গ্রহন করেছিল সেনাবাহিনী। কিন্তু জান্তা সরকারের এ সিদ্ধান্তে স্পষ্টতই রক্ষণশীল ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষাবলম্বন করল তারা । এতে বিভক্তি রোধের পরিবর্তে বিভক্তি আগের চেয়ে তীব্র আকার ধারণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে কারণ ইংলাক সিনাওয়াত্রা দেশটির এলিট শ্রেণীর কাছে বিরাগভাজন হলেও দেশের গরীব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কাছে বিপুলভাবে জনপ্রিয় ! শুধু অভিশংসন করেই নিশ্চুপ থাকেনি জান্তা সরকার, ফৌজদারী মামলায় ইংলাক সিনাওয়াত্রার বিচার করারও হুমকি দিয়েছে জান্তা সরকার। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দশ বছরের জেল হতে পারে ইংলাক সিনাওয়াত্রার।এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে বড় ধরনের ঝুঁকি নিচ্ছে থাই জান্তা সরকার। থাইল্যান্ডের অস্থিতিশীল রাজনীতি আরও অস্থির হবে এতে। গত এক দশকে থাইল্যান্ডের রাস্তায় রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভ হয়েছে, দুটি সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। ক্ষমতার পুরনো দ্বন্দ্বও নতুন করে মাথাচাড়া দেবে। এই দ্বন্দ্বে দেশটির অর্থনীতি ইতিমধ্যেই ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে।


থাইল্যান্ডের ক্ষমতচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা।

এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে থাইল্যান্ড একটি উন্নত দেশ হলেও গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ে বারবার ! আমাদের দেশে গণতন্ত্র যেমন জিম্মি হয়ে আছে দুই প্রধান দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপির কাছে তেমনি থাইল্যান্ডেও গণতন্ত্র জিম্মি হয়ে আছে দেশের প্রধান দু’দল থাই রক থাই পার্টি ও ডেমোক্রেটিক পার্টির হাতে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা ও থাই রক পার্টির সমর্থকেরা রেড শার্টধারী হিসাবে পরিচিত ও অন্যদিকে থাকসিনের বিরোধীরা ও ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থকেরা ইয়েলো শার্ট পরে আন্দোলন করে বিধায় তারা ইয়েলো শার্টধারী হিসাবে পরিচিত। এই রেড আর ইয়েলো এই দুই শার্টের কালারের কাছেই জিম্মি হয়ে আছে থাইল্যান্ডের গণতন্ত্র ! অবশ্য থাইল্যান্ডেক ক্ষমতার পালাবদল ভোট ও জনগণের মাধ্যমে হলেও রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ যেন একটি নিত্ত নৈমত্তিক ব্যাপার। এখানে বলা ভাল যে, থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত অত্যন্ত ক্ষমতাশালী। এই সাংবিধানিক আদালত যখন তখন সরকার বিরোধী কোনো ইস্যু পেলেই প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করার অনেক দৃষ্টান্ত আছে।গত বছরের ৭ মে দেশটির সাংবিধানিক আদালত প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে বরখাস্ত করে।

থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার ব্যাপক প্রভাব । থাকসিন সিনাওয়াত্রা ক্ষমতায় থাকাকালীন গরীব ও গ্রাম অঞ্চলের মানুষের উন্নয়ের জন্য ব্যাপক কর্মসুচি হাতে নিয়েছিলেন। অন্যদিকে থাকসিন সিনাওয়াত্রা নিজেই থাইল্যান্ডের একজন ধনকুবের ও থাইল্যান্ডের অর্থনীতির একটা বিরাট অংশ তার পরিবার নিয়ন্ত্রণ করায় সুবিধাভোগী সেনাবাহীনির সাথে থাকসিনের বিরোধ চরমে ! এরফলে গত ২০০৬ সালে থাইল্যান্ডে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে থাকসিন সিনাওয়াত্রা ক্ষমতাচ্যুত ও নির্বাসিত হন এবং তার থাই রক থাই পার্টিকে নিষিদ্ধ করে সরকার ! সেনাপ্রধান জেনারেল সোনধি বুজিয়ারাতসিনন রাস্ট্রীয় ক্ষমতা সরাসরি হাতে না নিয়ে আমাদের দেশের মইন-উদ্দিন ফখরুদ্দিনের মত ২০০৭ সালের আগস্টে নির্বাচন আয়োজন করে বিদায় নেন। সেই নির্বাচনে থাকসিনেরই দল ’পিপলস পাওয়ার পার্টি’ (পিপিপি) নামে নতুন দল হিসাবে আত্ম প্রকাশ করে ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়। প্রধানমন্ত্রী হন সামাক সুন্দারাভেজ।তিনি থাকসিনের ঘনিষ্ট হওয়ায় বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে সাংবিধানিক আদালত তাকে বরখাস্ত করে ও নতুন প্রধানমন্ত্রী হন সোমচাই ওয়াংসোয়াত।পরবর্তীতে সেনাবাহীনির চাপে তিনিও পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।এরপর বিরোধী দল থেকে প্রধানমন্ত্রী করা হয় অভিজিত ভেজাজিভাকে।কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির স্বাভাবিক হয়নি-আন্দোলন, বিক্ষোভ চলতেই থাকে।

যাইহোক, গত ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ তে যে সাধারণ নির্বাচন হয় সেই নির্বাচনে পিপলস পার্টি নতুন করে সংগঠিত পুয়ে থাই পার্টি নামে ও অংশগ্রহন করে বিজয়ী হয়। সেই নির্বাচন প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি বর্জন করেছিল । এই পুয়ে থাই পার্টির নেতৃত্ব দেন থাকসিনের বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রা ! নতুন প্রধান মন্ত্রী হন ইংলাক সিনাওয়াত্রা ! আন্দোলন কিছুদিন স্থিমিত থাকলেও নতুন করে মাত্রা পায় যখন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক তার ভাই থাকসিনের দুর্নিীতির দায়মুক্তি বিল সংসদে উত্থাপন করে ! সংসদের নিম্নকক্ষ বিলটি অনুমোদন দিলে উচ্চ কক্ষ প্রত্যাখান করে।এই দায়মুক্তি বিলের প্রতিবাদে বিরোধী দল সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসুচির ডাক দেয়।আন্দোলন দমানোর কোনো উপায় দেখতে না পেয়ে প্রধানমন্ত্রী মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা দেন কিন্তু বিরোধী দল ইংলাকের মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে।



সামরিক আইন জারি করে জেনারেল প্রাইউথ ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছেন ও অনুমোদন করেছেন রাজা ভুমিবল । অবশ্য রাজা ভুমিবল এপর্যন্ত প্রতিটি সেনা অভ্যুত্থানই অনুমোদন করেছেন। যাইহোক, কথা হল এই যে গণতন্ত্রের বারবার হোঁচট খাওয়া, ক্ষমতা নিয়ে দুই প্রধান দলের রাজ পথে লড়াই, কিছু সময় অন্তর সেনা শাসন যেন থাইল্যান্ডের নিত্যসঙ্গী ! থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের দুই প্রধান দল চলছে একই রাস্তার দু কিনারা দিয়ে ! মাঝখানে মারা পড়ছে অসহায় জনগণ। কথা হলো-এই দুই দেশের প্রধান দুই দলের জনগণের শুভকামনায় বোধোদয় হবে কবে নাকি নিরন্তরভাবে চলতেই থাকবে তাদের ক্ষমতার লড়াই আর মাঝ পথে বানরের পিঠা ভাগের মত ক্ষমতার ভাগ বসাবে সেনাবাহিনী ?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.