নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

মিজানুর রহমান মিলন

জয় হোক মানবতার ও মুক্তিকামী মানষের যারা নব্য উপনিবেশবাদের বলির পাঠা হতে চায় না ।

মিজানুর রহমান মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনন্দময়ীর আগমনে

২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৫২

আবারও এসেছে শারদীয় দুর্গা পূজা । সবাইকে শারদীয় দুর্গা পূজার প্রীতি ও শুভেচ্ছা । বাঙ্গালি হিন্দুদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব এটি। হিন্দু পুরান মতে সমাজের অসুর ও অপশক্তি বিনাশ করতে প্রতিবছরই মাতৃরুপে মর্তে দেবি দুর্গার আগমন ঘটে কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের জন্য মর্তে দেবি দুর্গার আগমন ঘটলেও সমাজ ও দেশের অপশক্তি ও অসুর বিনাশ হয়নি এখনও। দেবী অসুর বিনাশ করতে মর্তে আসলেও তিনি ঘুম পাড়ানি শিশুর মত ঘুমিয়ে থাকেন। দেবী এক মহিষাসুরকে হত্যা করেই মনে করেছেন সকল অসুরের বিনাশ করেছেন । মর্তে এখন দেবী আসছেন ভক্তের আরাধনা গ্রহন করতে কিন্তু অসুরকে কে বিনাশ করবে ? দেবী নিশ্চিন্তে মনে ভক্তের আরাধনা গ্রহন করেন কিন্তু বিনিময়ে ভক্তের প্রত্যাশা শূন্যই থাকে। অসুর ও অপশক্তিরা চারদিকে দুর্দান্ত প্রতাপে রাজত্ব করেই যাচ্ছে । ধর্মের নাশে চলছে জঙ্গীপনা, বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা ! এইসব অপশক্তি ও অসুরেরা ক্ষণে ক্ষণে রুপ বদলায় মাত্র । পুরাতন বোতলে নতুন মদ ঢালা হয় যেমন । তাই দেবী দুর্গার এরকম এক আগমন সময়ে গোটা ভারতবর্ষ যখন অপশক্তি ও অসুরেরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল ঠিক তখনই ঘুমন্ত দেবি দুর্গাকে জাগ্রত করতে কবি কাজি নজরুল লিখেন ’আনন্দময়ীর আগমনে’ নামক শীর্ষক বিখ্যাত কবিতাটি! বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলামের 'আনন্দময়ীর আগমনে' শীর্ষক কবিতাটি ১৯২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘ধূমকেতু'র পূজাসংখ্যায় প্রকাশিত হয়।কবিতার মূল ভাব ছিল ব্রিটিশ-বিরোধিতা, তবে তিনি গ্রহণ করেছিলেন রূপকের আশ্রয়। ভারতীয় পুরাণের দেবী দুর্গা চরিত্রকে অবলম্বন করে লেখা ওই কবিতার কয়েকটি চরণ:

আর কতকাল থাকবি বেটী মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল?
স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল।
দেব –শিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবকদের দিচ্ছে ফাঁসি,
ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবি কখন সর্বনাশী ?


দীর্ঘ এই কবিতায় কবি সমাজ ও দেশের অসুর তথা অপশক্তি বিনাশে দেবী দুর্গাকে কল্পনায় আশ্রয় করে তাকে ডাকছেন। তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশরা ছিল অসুর তথা অপশক্তি যারা দেশের দেব শিশু ও বীর যুবকদের ধরে ধরে ফাঁসি দিচ্ছিল ! তাই কবি ঘুমন্ত দেবি দুর্গাকে ডাকছেন যাতে তিনি জাগ্রত হয়ে স্বর্গ তথা ভারতবর্ষ থেকে অপশক্তি ও অসুরদের বিনাশ করেন। 'আনন্দময়ীর আগমনে' কবিতা প্রকাশ হলে ব্রিটিশ সরকারের ভিত নড়ে ওঠে, ক্ষিপ্ত হয়ে যায় ব্রিটিশ সরকার! ’আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতাটি নিষিদ্ধ করে ইংরেজ সরকার !ব্রিটিশ সরকার কবিকে রাজদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করে ১৯২২ সালের ২৩ নভেম্বর কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে কবিকে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪-এ ধারাবলে কলকাতার তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহো ১৯২৩ সালের ১৭ জানুয়ারি বিদ্রোহী কবিকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

কবি সুইনহোন আদালতে নিজের জবানবন্দি প্রদান করেন যা বাংলার ইতিহাসে ও বাংলা সাহিত্যে এক অমূল্য রতন। কবি আদালতে নিজের জবানবন্দিতে বলেন, 'আমার উপর অভিযোগ, আমি রাজবিদ্রোহী। তাই আমি রাজ কারাগারে বন্দি ও রাজদরবারে অভিযুক্ত। একধারে রাজার মুকুট, আরেএক ধারে 'ধূমকেতুর শিখা, একজন রাজা, হাতে রাজদণ্ড, আর একজন সত্য, হাতে ন্যায়দণ্ড। আমার ভয় নাই, দুঃখ নাই, কেননা ভগবান আমার সাথে আছেন। তাহার অসমাপ্ত কর্তব্য অন্যের দ্বারা সমাপ্ত হবে। সত্যের প্রকাশ পীড়া নিরুদ্ধ হবে না। আমার ধূমকেতু এবার ভগবানের হাতে অগ্নিমশাল হয়ে অন্যায়-অত্যাচারকে দগ্ধ করবে। আমার বহ্নি-এরোপ্লেনের সারথি হবেন স্বয়ং রুদ্র ভগবান।


যাইহোক, ঘটনার পরিক্রমায় বিদ্রোহী কবি জেলের ভিতরেও বিদ্রোহ করেন । জেলে বন্দিদের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি, অত্যাচার ও নীপিড়নের প্রতিবাদে অনশন আরম্ভ করেন।তিনি জেলের ভেতরে বসে অসুর ও অপশক্তিদের অত্যাচারের প্রতিবাদে লিখেন রক্ত আগুন করা একের পর এক কবিতা । জেলে বসেই কবি লিখেন ’দোলনচাপা’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি। জেল কর্তৃপক্ষের অগোচরে পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় ওয়ার্ডারদের সাহায্যে তাঁর সব কবিতাই বাইরে নিয়ে আসেন। এসময় বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ’বসন্ত’ নাটকটি কবি নজরুলকে উৎসর্গ করেন।

বিদ্রোহী স্বভাব কবি অনশনের কারণে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়েন। তা দেখে স্থির থাকেনি বঙ্গীয় সাহিত্য সমাজ, সিভিল সোসাইটি ও জনগণ। তাঁরা কবিকে অনশন ভাঙ্গার অনুরোধের পাশাপাশি কবির মুক্তির জন্য দেশ ব্যাপি প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যহত রাখে। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবি নজরুলের নামে নাটক উসর্গ করেই ক্ষান্ত থাকেননি তিনি অনশন ভাঙ্গার জন্য কবি নজরুলের কাছে তার বার্তা পাঠান- ’গিভ আপ হাঙ্গার স্ট্রাইক, আওয়ার লিটারেচার ক্লেমস ইউ।' কবিকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে কলকাতার গোলদিঘীতে সমাবেশ করেন দেশ বন্ধু চিত্ত রন্জন দাশ। সেখানে তিনি বলেন, 'নজরুলকে বাঁচানো বাংলাদেশ ও সাহিত্যের জন্য প্রয়োজন, কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করতে হবে নজরুল যাতে অনশন ভঙ্গ করেন।' এক টানা ৩৯ দিন অনশনের পার শেষ পর্যন্ত ১৯২৩ সালের ২২ মে কবি নজরুল মাতৃসমা বিরজা সুন্দরীর অনুরোধে অনশন ভাঙ্গেন।অবশেষে ১৯২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর কবি নজরুল মুক্তি লাভ করেন।

আবারও মর্তে এসেছে দেবি দুর্গা ! ভক্তরা দিন রাত করছে আরাধনা কিন্তু কতকাল দেবি ঘুমিয়ে থাকবেন? এদিকে অসুরেরা তো সর্বনাশ ও বিনাশ করেই যাচ্ছে ! কবি নজরুল বেঁচে থাকলে আজও ঘুমন্ত দেবি দুর্গার উদ্দেশ্য কি লিখতেন ?



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.