নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

মিজানুর রহমান মিলন

জয় হোক মানবতার ও মুক্তিকামী মানষের যারা নব্য উপনিবেশবাদের বলির পাঠা হতে চায় না ।

মিজানুর রহমান মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম বিরোধী বক্তব্য ও জঙ্গীবাদের স্বরুপ

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৭

মার্কিন অন্যতম প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্ভবত খুবই দিলখুশ মানুষ; একজন রাজনীতিবিদের মধ্যে যে ভাড়ামি দেখতে পাওয়া যায় সেটা তাঁর মধ্যে নেই বললেই চলে। মুখে যা আসে অকপটেই বলে দেন; কোনো রাখঢাক নেই তাঁর। একবার তাঁর এক সমর্থক তাঁর সামনেই ওবামাকে মুসলমান বলাতে তিনি যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছিলেন। জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, ’ওবামা মুসলমান কিনা সেটার প্রতিবাদ আমি করব কেন ? এটার প্রতিবাদ তো ওবামাই করবেন।’ না! খুব লজিক্যাল কথা ! সৌদির ব্যপারে তিনি বলেছেন, ’সৌদির রাজতন্ত্র টিকে আছে আমাদের সমর্থনের কারনে। আমরা সমর্থন প্রত্যাহার করলে সৌদি আরব একদিনও টিকে থাকতে পারবে না। তাই সৌদি আরবের রাজস্ব থেকে আমাদেরকে ভাগ দিতে হবে।’ সিরিয়াতে আইএস এর উপর রাশিয়ার হামলা নিয়ে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ’রাশিয়াকে ধন্যবাদ যে রাশিয়া আমাদের কাজ সিরিয়ায় করছে।’ এরকম একটি দুটি নয় অনেক উদাহরণ আছে আর সর্বশেষ তিনি সমালোচিত হচ্ছেন, মুসলমানদের আমেরিকা প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা বলায়। ট্রাম্পকে অনেকেই বলছেন রেসিস্ট । এমনকি স্বযং হোয়াইট হাউজ থেকেও ট্রাম্পের এই উক্তির সমালোচনা করা হয়েছে। আমি ট্রাম্পের সমালোচনা করি তবে অবশ্যই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে।

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ শুধু মুসলমানদের মধ্যে নয় বিশ্বের সব ধর্মেই কম বেশি আছে তবে নি:সন্দেহে মুসলমানরা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে দার্শনিকরুপ দিয়েছে।অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ কিছু কিছু ক্ষেত্রে থাকলেও মুসলমানদের মত সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বৈশ্বিকরুপ তাদের মধ্যে নেই। এই যে অন্যদের মধ্যে এটা নেই কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে এই প্রবণতা আছে এর মূল কারণই হল দার্শনিক ভিত্তি এখানে প্রবল।পুরো বিশ্বটাকে একক খলিফার অধীনে নিয়ে আসার, শরীয়া আইনে শাসন করার ও পুরো বিশ্বকে দারুল ইসলাম ঘোষণা করার মত কোনো ফিলসফি অন্য ধর্মের মধ্যে নেই! তাই ইসলাম শুধু কিছু রিচ্যুয়াল পালনের নামে ধর্ম নয় তাই ইসলাম হয়ে উঠেছে একটা রাজনৈতিক ধর্ম।আর এ্ই রাজনীতি করতে গিয়ে যখন ভিন্নমত, ভিন্নমতের অনুসারীদের দলিত, মথিত ও নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতা, অর্থ , এবং নারী প্রধান্য পায় তখনই সেটা হয়ে ওঠে জঙ্গীবাদ। জঙ্গীবাদের দার্শনিক দিকটা এখানেই নিহিত। ঠিক এ্ই কারনেই কোনো হিন্দুকে বলতে হয় না I am a Hindu but I am not a terrorist, কোনো খ্রিস্টানকে বলতে হয় না I am a Christian but I am not a terrorist, কোনো বৌদ্ধকে বলতে হয় না I am a Buddhist but I am not a terrorist কিন্তু একজন মুসলমানকে এখন এটাই বলতে হচ্ছে I am a Muslim but I am not a terrorist ! কেন এটা মুসলমানদেরকে বলতে হবে ? এটা কি অবমাননাকর, লজ্বাজনক ও দু:খজনক নয় ? মুসলমানরা কি এটা উপলব্ধি করেন ? এজন্য কি মুসলিম আলেম, ওলেমা ও নেতাগণ এপর্যন্ত কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন ? নেননি ! কেন নেননি সেটা এক বড় প্রশ্ন ।জঙ্গীরা সফল হলে জঙ্গীদের সাথে আছি আর সফল না হলে সহিহ ইসলামের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই ! বিষ্ময়কর হলেও এটাই সত্য এই নীতিতে চলছে মুসলিম সমাজ !


হলফ করে বলতে পারি ৯০’র দশকে ও ২০০১ এবং তৎপরবর্তী কিছুকাল ব্যাপী জঙ্গী ওসামা বিন লাদেন ছিলেন মুসলিম বিশ্বের হিরো ! তখন বাংলাদেশেই ইসলামপন্থীরা প্রকাশ্যে মিছিল সমাবেশ করে স্লোগান দিয়েছিল ‘আমরা হলাম তালেবান বাংলা হবে আফগান’। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলাকে মুসলমান কলামিস্টরা এমনকি লেবাসে সেক্যুলার ও মডারেটরাও ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্থিনে গণহত্যায় মার্কিন সমর্থনের প্রতিশোধ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন ! তখন তো ছিল শুধু ফিলিস্থিন আর এখন ? এখন পুরো মুসলিম বিশ্বই পুড়ে ছাড়খার হচ্ছে ! তাই বলে কি পশ্চিমা দেশগুলিতে সন্ত্রাসী হামলা কখনও সমর্থন যোগ্য হতে পারে ? মানুষ মানুষই সেখানে ধর্ম , জাত পাত, গায়ের রং দ্বারা বিচার করা অমানবিকতার চরম পরাকাষ্ঠা ! প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার পরপরই আপনারা হয়তো খেয়াল করে থাকবেন ফ্রান্স কর্তৃক আলজেরিয়ায় গণহত্যার ছবি সেসময় দেধারসে শেয়ার করেছে আমাদের মডারেট, মুমিন মুসলমান ভাই ও বোনেরা ! প্যারিসে হামলার পরপরই সেটার প্রচার করা উদ্দেশ্য কী ছিল ? আইএসআইএল যখন মার্কিন, ইউরোপ, সৌদি আরব, তুরস্ক, কাতার ও জর্ডানের মদতে ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ন ভূমি দখল করে ইসলামি খেলাফত ঘোষণা করে তখন কম করে হলেও ৭০% মুসলিম আ্ইএসআইএলকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন করেছে ! ঠিক এই কারনেই সারা বিশ্ব থেকে মুসলিম তরুণ ও তরুণীদের মধ্যে আইএসআইএল এ যোগ দেওয়া হিড়িক পড়ে গিয়েছিল ! হাজার হাজার ডাক্তার, ইন্জিনিয়াররাও নিজের পেশা ও কর্তব্য ছেড়ে আইএসআইএলে যোগ দিয়েছে ! এই বাগদাদি যদি সফল হত তাহলে হাজার হাজার মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পরেও ইসলামের ইতিহাসে বাগদাদির স্থান কোথায় হত কল্পনা করতে পারেন কি ? নিশ্চয় ইসলামের ইতিহাসে লেখা হত আমরা হলাম সেই মুসলমান; বাগদাদির হুংকারে কেঁপেছে প্যারিস, কেঁপেছে ওয়াশিংটন ! আল মাহমুদের মত কোনো এক কবি লিখতেন ’বাগদাদির রাইফেল’ আর কাজী নজরুল ইসলামের মত কেউ লিখতেন মধ্যপ্রাচ্য করেছে দখল রাতারাতি, মরুভূমিতে বসি, যার অঙ্গুলি হেলনে কেঁপে উঠেছে ইউরোপবাসী!’

ট্রাম্পের কথায় ফিরে আসি। যেখানে সেখানে বীজ পড়ে থাকলে যে সেখান থেকে লকে লকে চারা গজিয়ে উঠবে এমনটা নয়। বীজ থেকে চারা গজানোর জন্য চাই উপযুক্ত পরিবেশ, জল, বায়ু ও আদ্র মাটি। ইসলামের ঐ দার্শনিক ভিত্তিটা হল বীজ। ভিন্নভাবে বললে বলা যায় পরজীবি প্রাণীর মত। পোষকদেহে আশ্রয় না পেলে সে ভয়ংকর হয়ে উঠে না। জঙ্গীবাদের এই পোষকদেহের বা বীজের অঙ্কুরোদগমের জন্য উপযুক্ত পরিবেশের কাজ করছে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, সৌদি আরব, তুর্কি, কাতার ও জর্ডান। এই নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। আমিও কম লিখিনি। তাই ট্রাম্পের কথার সূত্র ধরে বলতেছি, বিশ্ব থেকে জঙ্গীবাদ নির্মূল করতে হলে মুসলমানদের আমেরিকা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা নয় বরং ঐ পরজীবিদের সাথে সর্ব প্রথম আপনাদের সম্পর্ক বিযুক্ত করার কথা বলুন।তাহলে পরজীবিরা এমনিতে মারা পড়বে। জঙ্গীবাদের দার্শনিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ভূমিকায় অবর্তীর্ণ রাস্ট্রগুলির সাথে সম্পর্ক বিযুক্ত করার কথা বলুন। সেসব দেশের মুক্তিকামী জনগণদের সমর্থন করুন। ট্রাম্প সাহেব আপনিই তো বলেছিলেন, আপনাদের সমর্থন না থাকলে সৌদি আরব একদিনও টিকতে পারবে না। জঙ্গীবাদ নির্মূল করতে সৌদি আরবের ওহাবি শাসনযন্ত্রের পরিবর্তনের বিকল্প নেই। জার্মানরা দেরিতে হলেও এ্ই সত্যটা উপলব্ধি করেছেন ! জার্মান ভাইস চ্যান্সেলর সিগমার গ্যাব্রিয়েল জঙ্গীবাদের জন্য ইসলামের ওহাবি ভার্সনকে দায়ি করেছেন এবং সৌদি আরবকে সারা বিশ্বের জঙ্গীবাদের প্রধান অর্থ দাতা হিসাবে উল্লেখ করেছেন। আশা করি এই উপলব্ধি আপনাদেরও একদিন হবে। তবে শুধু উপলব্ধিই যথেস্ট নয় প্রয়োজন কার্যকরী পদক্ষেপ । সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের আতুর ঘরদের সাথে সম্পর্ক ও সহযোগিতা অক্ষুণ্ন রেখে পুরো একটি সম্প্রদায়কে আপনার দেশে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার কথা বলা নিশ্চয় বর্ণবাদ, নিশ্চয় আংকেল ট্রাম্প আপনি বর্ণবাদী!

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৩

হতভাগা রাজু বলেছেন: যথার্থ বলেছেন ।ইয়েমেনের উপর অন্যায়ভাবে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে সৌদি জোট ।

২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সব ব্যাপারেই একমত| কিন্তু এই মোল্লা সত্যিই রেসিস্ট

৩| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৫

যান্ত্রিক বলেছেন: প্রথম কথা হচ্ছে, "জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ" ইসলাম-স্বীকৃত। তবে এর নির্দিষ্ট কিছু শর্ত আছে। এবং এই জিহাদে অংশগ্রহণ ও পরিচালনার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন আছে। কেউ যদি এইসব নিয়ম-কানুন না মেনে অযথা ও অন্যায়ভাবে রক্তপাত ঘটায়, অবশ্যই তা ইসলাম ও মুসলিমদের ওপর বর্তায় না।
আপনি মুসলিমদের ও ইসলামের উপর অনেকগুলো বিশেষণ দিয়েছেন-
১। "ইসলাম শুধু কিছু রিচ্যুয়াল পালনের নামে ধর্ম নয় তাই ইসলাম হয়ে উঠেছে একটা রাজনৈতিক ধর্ম"
<<<<<< মুসলিমদের কাছে ইসলাম একটি পরিপূর্ণ ধর্ম বা জীবনবিধান যার মাঝে রাজনীতিও আছে। আপনি কি এটাকে অস্বীকার করছেন? ইসলামে রাজনীতি নিয়ে এম_আহমদ ভাইয়ের একটি সুন্দর লেখা আছে, দেখতে পারেন।

২। "নি:সন্দেহে মুসলমানরা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে দার্শনিকরুপ দিয়েছে"
<<<<<< আপনার এই কথার তীব্র প্রতিবাদ করছি। ইসলামে জিহাদ কোনভাবেই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে প্রতিফলিত করে না। বরং তা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে প্রতিহত করে।

৩। "জঙ্গীরা সফল হলে জঙ্গীদের সাথে আছি আর সফল না হলে সহিহ ইসলামের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই ! বিষ্ময়কর হলেও এটাই সত্য এই নীতিতে চলছে মুসলিম সমাজ !"
<<<<<<< আবারো প্রতিবাদ করছি। বরং আইএসাইএস-এর নামে যে সন্ত্রাস চলছে তাকে অধিকাংশ মুসলিম ও আলেম সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছেন। অতএব আপনার এই কথা ভিত্তিহীন।

টুইন টাওয়ার হামলা আর আইএসআইএস দুটোই যে যায়োনিস্ট প্ল্যান, তা এখন দিনের আলোর মত পরিষ্কার। কিন্তু আপনি ব্যস্ত আছেন এর দায় মুসলিমদের উপর চাপানোর জন্য। এই ধরণের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা আর কতদিন চলবে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.