নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

মিজানুর রহমান মিলন

জয় হোক মানবতার ও মুক্তিকামী মানষের যারা নব্য উপনিবেশবাদের বলির পাঠা হতে চায় না ।

মিজানুর রহমান মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিরিয়ায় পাইপলাইন যুদ্ধ ও প্রেসিডেন্ট আসাদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ?

২১ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫১

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকে গণতন্ত্রের নামে ক্ষমতায় রাখা ও না রাখা নিয়ে পরাশক্তিবর্গ ও আঞ্চলিক পরাশক্তিবর্গের মধ্যে যে স্নায়ু যুদ্ধ ও যুদ্ধ শুরু হয় তার উৎস ও পটভূমি কি ? এটা নিয়ে সন্দেহ নেই যে আসাদ একজন স্বৈরশাসক কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য ও আরবদেশগুলিতে এর চেয়েও বড় স্বৈরশাসক ও নিরুঙ্কুশ রাজতন্ত্র বিদ্যমান। সিরিয়াতে গণতন্ত্রের যতটুকু মাত্রা কার্যকরী আছে তার কিয়দংশও নেই অন্যান্য আরব রাজতান্ত্রিত দেশগুলিতে। তাহলে সেই আরব রাজতান্ত্রিক দেশগুলিই আবার সিরিয়ায় গণতন্ত্র কায়েমের জন্য আদাজল খেয়ে লাগল কেন ? আমেরিকা ও পশ্চিমারা কোন স্বার্থে গণতন্ত্রের নামে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকে উৎখাত করে সিরিয়ায় গণতন্ত্র কায়েম করতে চায় ? যেখানে তাদের মিত্র আরবদেশগুলিতে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই ! শুধু তাই নয় আরব দেশগুলির মধ্যে একমাত্র সিরিয়ায় ছিল ( আসাদের নেতৃত্বে এখনও তাই আছে) অসাম্প্রদায়িক শাসন ব্যবস্থা , আরব দেশগুলির মধ্যে শিক্ষা দীক্ষায় ও জ্ঞান গরিমায় সিরিয়াই ছিল অগ্রগামী। তারপরেও শকুনদের চোখ পড়েছে সিরিয়ার উপর কারণ আর কিছুই নয়; সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট সেক্যুলার ও আধুনিক মনস্ক হওয়ার পরেও পশ্চিমাদের অনুগত নয়। মূল সমস্যা এখানেই!


সিরিয়ায় ‘পাইপলাইন যুদ্ধ’ শুরু হয় ২০১১ সালে আরব বসন্ত শুরু হওয়ার পর। সিরিয়ার যুদ্ধকে গৃহযুদ্ধ না বলে ‘পাইপলাইন যুদ্ধ’ বলাই অধিক যুক্তিযুক্ত।তাছাড়া এই যুদ্ধে সিরিয়ার জনগণের চেয়ে বাইরে থেকে আমদানি করা জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের ভূমিকাই সর্বাধিক! যদিও এই যুদ্ধ ২০১১ সালে আরব বসন্তের শান্তিপুর্ণ বিক্ষোভের মাধ্যমে শুরু হয় কিন্তু মূলত এটা শুরু হয়েছিল ২০০০ সালেই ! হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি। ২০০০ সালে কাতার ১০ বিলিযন ডলার ব্যয়ে ১,৫০০ কি.মি. দৈর্ঘ্যের একটি গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণের প্রস্তাব করে যা কাতার থেকে শুরু হয়ে সৌদি আরব, জর্ডান, সিরিয়া ও তুরস্ক হয়ে ইউরোপ পর্যন্ত যাওয়ার পথ উন্মুক্ত করবে । কাতার ছোট্ট একটি দেশ হলেও গ্যাস সম্পদে বেশ সমৃদ্ধ। কাতার ও ইরান দুই দেশ মধ্যপ্রাচ্যের বিশাল ‘সাউথ পার্স’ গ্যাস ক্ষেত্রের মালিক এবং কাতার তার বৃহত্তম অংশিদার। সেই ‘সাউথ পার্স’ গ্যাস ক্ষেত্র থেকে কাতার গ্যাস উত্তোলন করে সেই গ্যাস ইউরোপে রপ্তানির পরিকল্পনা করেছিল যা ইউরোপেরও জন্য ছিল অধিকতর সুবিধাজনক, বিশেষ করে ইউরোপ স্বল্প মূল্যে কাতার থেকে গ্যাস কিনে রাশিয়ার উপর তার গ্যাস নির্ভরতা বহুলাংশে হ্রাস করতে পারত এবং আন্তর্জাতিকসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অধিকতর কঠোর অবস্থান নিতে ইউরোপের জন্য সহায়ক হত। অন্যদিকে এ গ্যাস পাইপ লাইন তুরস্ককে ইরান ও রাশিয়ার উপর গ্যাস নির্ভরতা কমাতে সহায়তা করত তেমনি ট্রানজিট হিসাবে তুরস্ক এই গ্যাস পাইপলাইন থেকে বিশাল অংকের অর্থ আয় করত এবং রাজতন্ত্র শাসিত আমেরিকার অন্যতম মিত্র কাতারকে সারা বিশ্বে প্রাকৃতিক গ্যাস মার্কেটে আধিপত্য এনে দিত অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইরানকে এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ থেকে রাশিয়াকে মাইনাস করতে এই পাইপলাইন হত অন্যতম একটি কার্যকরী অস্ত্র যার কোনো বিকল্প নেই!




এখানে বলে রাখা ভাল যে কাতার হল মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার অন্যতম প্রধান মিত্র। কাতারে আমেরিকার দুটি বিশাল আয়তনের সামরিক ঘাটি আছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সকল সামরিক ঘাটির হেড কোয়ার্টারও কাতারে অবস্থিত। এছাড়া অতি সম্প্রতি আমেরিকার আর এক অন্যতম মিত্র তুরস্কও কাতারে সামরিক ঘাটি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে যা স্বাগত জানিয়েছে সৌদি আরব।
কাতারের প্রস্তাবিত এই পাইপ লাইন সৌদি আরবের জন্য ছিল মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পাওয়ার মত অবস্থা! সৌদি আরবের পররাস্ট্রনীতি নির্ধারিত হয় তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানকে শায়েস্তা করার জন্যই। এই পাইপ লাইনের মাধ্যমে ইরান প্রভাবিত সিরিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি তেলের ন্যায় বিশ্ব গ্যাস মার্কেটেও চালকের আসনে বসত সৌদি আরব। সৌদি রাজতন্ত্রের দৃষ্টিতে ইরাককে ইরানের হাতে তুলে দিয়ে এবং পরমানু চুক্তি করে ইরানের উপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহারের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ও মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরবের প্রভাব তথা দাদাগিরি কমিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। তাই নিজেদের হারানো প্রভাব উদ্ধার করতেই ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের সাথে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে সৌদি আরব।তেমনি ইরানের মিত্র ইরাক ও সিরিয়ায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে সৌদি আরবের ভুমিকা অনস্বীকার্য।


অন্যদিকে রাশিয়ার তার রপ্তানিকৃত গ্যাসের ৭০% ইউরোপে বিক্রি করে।তাই রাশিয়ার দৃষ্টিতে কাতার-তুরস্ক গ্যাস পাইপলাইন রাশিয়ার অস্তিত্বের জন্য হুমকি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন মনে করেন, এই গ্যাস পাইপ লাইন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটোর ( NATO) একটি ষড়যন্ত্র। রাশিয়ার অর্থনীতিতে মন্দা সৃষ্টি , মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ থেকে রাশিয়াকে বাদ দিতেই এই পাইপলাইনের ষড়যন্ত্র সামনে আনা হয়েছে।


যাই হোক সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আমেরিকা, ইউরোপ, তুরস্ক, সৌদি আরব ও কাতারসহ সকলের চাপ উপেক্ষা করে ২০০৯ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষা করতেই কাতার-তুরস্ক প্রস্তাবিত গ্যাস পাইপ লাইন চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন।রাশিয়ার স্বার্থের কারণেই যে তিনি কাতার-তুরস্ক প্রস্তাবি পাইপলাইন প্রকল্পে সম্মতি দেননি সেটাও পশ্চিমা ও আরবদের জানিয়ে দেন। শুধু তাই নয় প্রেসিডেন্ট আসাদ রাশিয়া অনুমোদিত ইরানী পাইপলাইনে যুক্ত হতে সম্মত হন যা ইরাক, সিরিয়া, লেবানন হয়ে পরবর্তীতে ইউরোপ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। ইরানি এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ইরানের প্রভাব হ্রাসের পরিবর্তে উল্টো বৃদ্ধিই পাবে ! তাই প্রেসিডেন্ট আসাদের উপর আরো ভীষন ক্ষেপে যায় তুরস্ক ও সৌদি আরবসহ মার্কিন আরব মিত্ররা।এদের সাথে যোগ দেয় ইসরায়েলও। আসাদের পতনে মধ্যপ্রাচ্যের যে রাস্ট্রটি সবচেয়ে লাভবান হত তা হল ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েলের প্রধান শত্রু ইরান। ইসরায়েল বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রামী হামাস ও হিজবুল্লাহর সাথে ইরানের সংযোগ সাধনের সমন্বয় করেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। এছাড়াও প্রেসিডেন্ট আসাদের সিরিয়া আরব দেশগুলির মধ্যে একমাত্র ইসরায়েল বিরোধী রাস্ট্র।


আমেরিকা, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের গোপন নথিপত্র ফাঁস থেকে জানা যায়, যে মুহুর্তে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ কাতার-তুরস্ক গ্যাস পাইপলাইনে যুক্ত হতে অস্বীকার করে সেই মুহুর্তেই আমেরিকা, সৌদি আরব, তুরস্ক একমত হয় আসাদকে উৎখাতে এবং সিদ্ধান্ত হয় সিরিয়াতে জঙ্গী প্রেরণের। এই তো কিছুদিন আগেও সৌদি আরবের পররাস্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের প্রধান দাবি আসাদকে সরে যেতে হবে। সেটা আজ হোক , কাল হোক বা তিন বছর পরেও হলে আমরা এই দাবি থেকে এক চুলও নড়ব না । অন্যদিকে ইরান ও রাশিয়ার যুক্তি হল আসাদ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট থাকবেন কিনা এটা নির্ধারণ করবে সিরিয়ার জনগণ। বাইরের কোনো দেশের সেখানে নাক গলানোর সুযোগ নেই। যাইহোক, উইক্লিক্স তথ্য ফাঁস করে দেয় যে ২০০৯ সালে যে মুহুর্তে আসাদ কাতারি পাইপলাইন প্রস্তাব প্রত্যাখান করে সেই মুহুর্তেই সিআইএ সিরিয়ার আসাদ বিরোধী গ্রুপগুলোকে অর্থ সরবরাহ শুরু করে এবং আসাদকে উৎখাতের জন্য সিরিয়ায় জঙ্গী প্রেরণের কার্যক্রম শুরু হয় !




মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:২৫

বিজন রয় বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
+++

২১ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:১৯

মিজানুর রহমান মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.