নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

মিজানুর রহমান মিলন

জয় হোক মানবতার ও মুক্তিকামী মানষের যারা নব্য উপনিবেশবাদের বলির পাঠা হতে চায় না ।

মিজানুর রহমান মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সৌদি আরব ও আমেরিকার বিবাহ কি বিচ্ছেদের পথে ?

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৩৭

সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার একটি মক্কেল রাস্ট্র। আমেরিকা সৌদির নানা অকাম কুকামে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তা করে মোটা অংকের পেট্রো ডলার যেমন হাতিয়ে নেয় তেমনি সৌদি আরবও নিজ রাজতন্ত্র রক্ষার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার নানা অকাম কুকামে প্রধান সহযোগীর ভূমিকা পালন করে। এভাবেই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবনের মধুচন্দ্রিমা, কিন্তু হঠাৎ করেই কি থেকে কি যে হয়ে গেল অধিকাংশ বিশ্লেষকদের ধারণা সৌদি আরব ও আমেরিকার দাম্পত্য জীবনের মধুচন্দ্রিমা প্রায় শেষ, চলছে ঝগড়া ঝাটি, মান অভিমান আর বাঁজছে বিচ্ছেদের সুর। তাদের বিচ্ছেদ নাকি অতি নিকটবর্তী ! বিচ্ছেদ যেন এখনই না হয় অথবা বিচ্ছেদ ( Devoiced) ঠেকাতেই তথা সৌদি ও তার আরব মিত্রদের অভিমান ভাঙ্গতে দুইদিন আগে রিয়াদ ছুটে গিয়েছিলেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ওবামা। বিচ্ছেদের নানান সুর ! মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ইস্যুতে সৌদি আরব আমেরিকার যেমন ভূমিকা আশা করেছিল আমেরিকা মোটেই তেমন করেনি বরং সৌদি স্বার্থের বিরুদ্ধে আমেরিকা যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছে, অবশ্য এছাড়া আমেরিকার অন্য কোনো উপায় ছিল না। সৌদি আশা করেছিল পরমানু ইস্যুতে ইরানের উপর একের পর এক অবরোধ যেমন আরোপ করেছে জাতিসংঘ, ইউরোপিয় ইউনিয়ন ও আমেরিকা তেমনি সেইসব গলা ফাঁস অবরোধ প্রত্যাহার তো নয় উল্টো সৌদি চেয়েছিল আমেরিকা যেন ইরানের উপর হামলা করে ইরানকে ধুলার সাথে মিশিয়ে দেয়, তাহলে সৌদি কম করে হলেও মধ্যপ্রাচ্যে আরও ১০০ বছর একক আধিপত্য ধরে রাখতে পারবে আর গোলামি করতে পারবে আমেরিকার। ইরানকে ধ্বংস করার খায়েস সৌদির বহুদিনে পুরনো । প্রয়াত রাজা আব্দুল্লাহ তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশকে বলেছিলেন সাপের মাথা কেটে ফেলতে, কিন্তু হয়েছে উল্টো-আমেরিকা করেছে ইরানের সাথে পরমানু চুক্তি। সৌদি চেয়েছিল ইরাক হতে সাদ্দামকে অপসারণ করে আমেরিকা যেন ইরাককে সৌদির হাতে তুলে দেয়। সৌদিই ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করবে সাদ্দাম পরবর্তী ইরাকের, কিন্তু সাদ্দাম অপসারণের পর আমেরিকা ইরাককে ইরাকের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়াদের হাতে ছেড়ে দেয় যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইরান দ্বারা প্রভাবিত। সৌদি চেয়েছিল আমেরিকা সিরিয়ায় হামলা করে বাশার আল আসাদ সরকারকে উৎখাত করে সিরিয়াকে সৌদির হাতে ছেড়ে দিবে কিন্তু এখন পর্যন্ত আমেরিকা সিরিয়ায় হামলা করেনি। শেষ পর্যন্ত সৌদি চেয়েছিল তুরস্ককে সাথে করে ইসলামী জোট গঠন করে হলেও সিরিয়া আক্রমন করতে কিন্তু আমেরিকার অনিহার কারণে শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনাও সফলতার মুখ দেখেনি। আর আসাদ এখনও বহাল তবিয়তে ক্ষমতায়। অন্যদিকে আমেরিকার প্রত্যক্ষ সমর্থনে সৌদি আরব ইয়েমেনে ইরানকে ঠেকাতে হুতিদের দমনের নামে নির্বিচারে এক বছর ধরে বোমা হামলা চালিয়ে কোনো সফলতার মুখ দেখতে পারেনি। সৌদি চেয়েছিল আমেরিকো তাদের পক্ষ হয়ে নিজে মাঠে নামবে বা অন্তত পাকিস্তানকে সৌদির পক্ষে নামাতে লবিং করবে কিন্তু আমেরিকা শুধু সমর্থন দিয়ে চুপ থেকেছে আর সৌদির কাছে দেধারছে অস্ত্র বিক্রি করছে !

ইরান ও রাশিয়াকে ঠেকাতে সৌদি আরব বিশ্ব তেল বাজারে তেলের বন্যা বইয়ে দিয়ে তেলের দাম ন্যুনতম মূল্যে নিয়ে আসায় ক্ষতি শুধু ইরান ও রাশিয়ার হয়নি, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সৌদি আরবের। এ যেন নিজের একটা চোখ অন্ধ করে হলেও প্রতিবেশির দুইটা চোখ অন্ধ করে দেওয়ার মত মতলবে ছিল সৌদি আরব, কিন্তু বিধিবাম ! ইরানের উপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহার হওয়ায় বিশ্ব তেল বাজারে আগের আধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া ইরান। সৌদির তেল অস্ত্র সৌদির জন্য এখন বুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছে। এরফলে বিশাল বাজেট ঘাটতিতে পড়েছে সৌদি আরব। মোটা অংকের ঋণের জন্য হাত পাততে হচ্ছে দেশটিকে।মার্কিন সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেনথাল বলেছেন, তেলের মূল্য অনেক কম হওয়ায় সৌদির উপর নির্ভরশীলতা আমাদের আগের মত নেই। এর জবাবে সৌদি সাবে গোয়েন্দা প্রধান ও প্রিন্স তুর্কি আল ফয়সাল বলেছেন, আমেরিকার সাথে আমাদের সম্পর্ক আর আগের মত কখনই হবে না এবং আমরা এটাও প্রত্যাশা করি না আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট হলে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে।

মরার উপর খড়ার ঘা হিসাবে দেখা দিয়েছে একটা পুরনো ক্ষত। ৯/১১ তারিখে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে যে ১৯ জন ব্যক্তি হামলা চালিয়েছিল তাদের ১৫ জনই ছিল সৌদি নাগরিক। ৯/১১ এরজন্য সৌদিকে অভিযুক্ত করে মার্কিন কংগ্রেস বিল আনার ঘোষণা দিয়েছে তাতে চরম ক্ষেপেছে সৌদি আরব। ক্ষীপ্ত সৌদি আরব ঘোষণা দিয়েছে এই বিল পাশ হলে ৭৫০ বিলিয়ন পেট্রো ডলার বাজারে ছেড়ে দিয়ে মার্কিন ডলারের ধ্বস নামাবে! সৌদির কাছ থেকে এই হুমকি পেয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘোষণা দিয়েছেন তিনি এই বিল পাশ হতে দিবেন না, ভেটো দিবেন অথচ সকল মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা এই বিলে সমর্থন জানিয়েছেন। এ্রই বিলের পরের দৃশ্য দেখার জন্য আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

কিন্তু তার আগেই সৌদিকে নিজের বগলে ধরে রাখতে রিয়াদে ছুটে গেলেন ওবামা। প্রেসিডেন্ট হিসাবে ওবামা জানেন মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতি চলমান রাখতে সৌদির বিকল্প নেই। ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক মধুর হওয়া তো দূরে থাক স্বাভাবিক পর্যন্ত এখনও হয়নি। ওবামা চেষ্টা যে করছেন না তা নয়, গোপনে ইরানের প্রেসিডেন্ট রোহানি ও সর্বোচ্চ নেতা খামেনিকে প্রস্তাব দিয়েছেন রোহানির সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের।ফলাফল অনিশিচত। অবস্থা এখন এমন দাড়িয়েছে আমেরিকা ও সৌদি আরব কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না । মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামাকে সরাসরি স্বাগত জানায়নি সৌদি রাজা, সরকার ও রাজপরিবারের উর্ধ্বতন কেউই । ওবামাকে রিয়াদে স্বাগত জানিয়েছেন রাজধানী রিয়াদের গর্ভনর ! এমনকি প্রচলিত রীতি ভঙ্গ করে সৌদি রাজার সাথে ওবামার বৈঠকের সরাসরি ভিডিও সম্প্রচারও করেনি সৌদির রাস্ট্রীয় টেলিভিসন ! তারপরেও ওবামা দমে যাননি। সৌদি আরব ও তার আরব মিত্রদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন।অস্ত্র বিক্রির কথা বলেছেন। ইরানকে ঠেকানোর কথা বলেছেন। কিন্তু ওবামার এসব কথায় কতটুকু চিড়ে ভিজবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে।

চিড়ে ভিজুক আর না ভিজুক, সম্ভবত সৌদি আরব ও আমেরিকার বিচ্ছেদ সহসা হচ্ছে না। উভয়পক্ষের জন্য আরো সময় দরকার।সেটা বিলম্ব করতেই ওবামা ছুটে গেছেন রিয়াদে। এটা ঠিক মার্কিন সমর্থন ছাড়া সৌদি রাজতন্ত্র টিকে থাকা খুব মুশকিলই হবে। তাই আপাতত কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে সৌদির যেমন আমেরিকাকে দরকার তেমনি আমেরিকারও সৌদিকে দরকার। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে সৌদির বিকল্প আমেরিকার কাছে নেই।তাই এটা বলা যায় উভয়ের পতন একসঙ্গেই হবে, কিন্তু প্রশ্ন হল কে কাকে আগে কামড়াবে ? সেই কামড়া কামড়ির দৃশ্য দেখার জন্য আমাদের আর মাত্র কয়েক বছর অপেক্ষো করতে হবে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৪৩

মোঃ সাইফুল খাঁন বলেছেন: Its Awesome!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.