নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

মিজানুর রহমান মিলন

জয় হোক মানবতার ও মুক্তিকামী মানষের যারা নব্য উপনিবেশবাদের বলির পাঠা হতে চায় না ।

মিজানুর রহমান মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেবতা বা ঈশ্বরের অসন্তুষ্টির কারণ সংক্রামক রোগ নয়

২৬ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৪

করোনা ভাইরাসই একমাত্র এবং নতুন কোন মহামারী নয়। হাজার হাজার বছর আগে থেকেও পৃথিবীতে বিভিন্ন মহামারী এসেছিল, সেসব মহামারীতে কোটি কোটি মানুষ মারা গেছে। কিন্তু পার্থক্য হল আধুনিক যুগের আগে মানুষ জানত না সেসব মহামারীর কারণ। প্রাচীন এবং মধ্যযুগে মানুষ মনে করত এসব মহামারী হওয়ার মূল কারণ কোন ডাইনি প্রেতাত্মার অভিশাপ বা দেবতা বা ঈশ্বর কোন কারণে আমাদের উপর রেগে গেছেন। তাকে সন্তুষ্ট করতে হবে। তিনি সন্তুষ্ট হলেই আমরা এই মহামারী থেকে মুক্ত হব।

তাই তারা সমবেত হয়ে দেবতা বা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করত এবং এর ফলাফল উল্টো হত। সমবেত হওয়ার ফলে মহামারী আরও ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ত। এভাবেই ধ্বংস হয়েছে জনপদের পর জনপদ। পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে অনেক অনেক জনগোষ্ঠী এবং জাতীগোষ্ঠী। ধ্বংস হয়ে গেছে অনেক সভ্যতা। প্রাণ হারিয়েছে কোটি কোটি মানুষ। আজকে করোনার মহামারীতে যখন কোন মোল্লা, পুরোহিত বলেন সংক্রামক রোগ বলে কিছু নেই, যা হচ্ছে ঈশ্বরের অসন্তুষ্টির ফল এবং গজব তাকে আমার এই আধুনিক যুগের মানুষ বলে মনে হয় না। মনে হয় এই মানুষটি হয় প্রাচীন অথবা মধ্যযুগে চলে গেছেন। অবশ্য বিশ্বাস বলে কথা আর বিশ্বাসের নৌকা তালগাছের উপর দিয়ে উড়ে।

দেবতা বা ঈশ্বরের অভিশাপ বা অসন্তুষ্টির কারণে নয় সেসময় মানুষ জানতই না এক ফোটা জলে কি পরিমাণ ভয়ংকর দানব থাকতে পারে! মানুষ জানতই না যেখানে তারা সমবেত হয়ে দেবতা বা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছে সংক্রামক রোগ থেকে মুক্তির জন্য আর সেখানে তাদের কারও কারও মাঝেই আছে সেই ভয়ংকর দেবতার দল! যা হাঁচি, কাঁশি, সংস্পর্শে এবং বাতাসের সংস্পর্শে তৎক্ষণাৎ তাদের মাঝেই ছড়িয়ে পড়ছে এবং তারা আক্রান্ত হচ্ছে।

একসময় গুটি বসন্তেই পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ১৫২০ সালের মার্চে গুটি বসন্তের একজন বাহক ফ্রানসিসকো দ্যা এগুয়া পা রাখেন মেক্সিকোতে আর ডিসেম্বরের মধ্যেই গুটি বসন্তে পুরো মধ্য আমেরিকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় এবং মধ্য আমেরিকার এক তৃতীয়াংশ লোক মারা যায়। ১৭৯০ সালে গুটি বসন্তের টিকা আবিষ্কার হয়েছিল, কিন্তু ১৯৬৭ সালেই পৃথিবীর ১৫ মিলিয়ন মানুষ গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়েছিল এবং দুই মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল। ১৯৭৪ সালেও গুটি বসন্ত ভারতে মহামারী আকার ধারণ করেছিল এবং হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল! গুটি বসন্তের টিকার কল্যাণে ভারত এবং পুরো বিশ্ব এই মহামারী থেকে রক্ষা পেয়েছিল। জাতিসংঘ ১৯৭৯ সালে পৃথিবীকে গুটি বসন্ত মুক্ত ঘোষণা করে। এখন কোন দেবতা বা ঈশ্বরের অসন্তুষ্টে আর কেউ গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয় না। একইভাবে বলা যায় যক্ষা, কুষ্ঠ, ম্যালিরিয়া, কলেরা ইত্যাদি সংক্রামক রোগের কথা। বিজ্ঞান প্রতিষেধক আবিষ্কার করে এসব রোগ থেকে মানুষকে বাঁচিয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে কোন কোন মহামারীকে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় দিয়েছে।

বিজ্ঞানই মানুষকে প্রথম জানিয়েছে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং কিছু আণুবীক্ষণিক জীবের কথা যাদের কারণে এই সংক্রামক রোগগুলো হয় এবং মহামারীরুপে ছড়িয়ে পড়ে। কোন ধর্মগ্রন্থ, ঈশ্বর বা দেবতার কোন দুত মানবজাতিকে এই তথ্য জানায়নি এবং জানাতে পারেনি। তারা এটাও আমাদের জানাতে পারেনি কিভাবে এই রোগগুলো থেকে মানুষ মুক্তি পাবে। বিজ্ঞানই আমাদের জানিয়েছে এসব রোগের প্রতিরোধ, দিয়েছে প্রতিষেধক এবং প্রতিকার। টিকা, অ্যান্টিবায়োটিক, জীবাণু নাশক ব্যবহার করে উন্নত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার নিয়মকানুন, রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ দেখে উন্নত হাসপাতাল তৈরি এসব হয়েছে বিজ্ঞানের কল্যাণে। কোন কোন মোল্লা, পুরোহিত, পাদ্রী, ফাদার, মাদার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে যতই ব্যাঙ্গ করুক বা ঈশ্বরের গজব হিসাবে অভিহিত করুক আক্রান্ত হলে তারাও গ্রহন করবে আধুনিক চিকিৎসা। কোন রোগে আক্রান্ত হলে তারা তাদের প্রার্থনার উপর ভরসা না করে ছুটে, ছুটবে হাসপাতালে!

এর আগে বিভিন্ন সংক্রামক রোগে যত মানুষের প্রাণ গেছে এখন করোনা ভাইরাস বা অন্য কোন ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর কারণে তত মানুষের প্রাণহানী হবে না। কারণ মানুষ বুঝে গেছে সংক্রামক রোগের মূল রহস্য। করোনা ভাইরাস মানুষকে আক্রমণ করার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে বিজ্ঞানীগণ চিহ্নিত করে এই ভাইরাসটিকে, নাম দিয়েছে কোভিড-১৯। করোনা ভাইরাসের জীনোম কোডও আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞানীগণ। তার গতিবিধি সবসময় পর্যবেক্ষণ করছেন গবেষকগণ। করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধকও শীঘ্রই আবিষ্কার করবে বিজ্ঞান। শীঘ্রই নির্মূল হবে পৃথিবী থেকে। বিবর্তনের নিয়মে হয়তো আবার মহামারী রুপ নিবে নতুন কোন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস যদিও সেই মহামারী আর প্রাচীন বা মধ্যযুগের মত কোটি কোটি মানুষের প্রাণ হরণ করতে পারবে না। অতি অল্প সময়ে মানুষ তাকেও নির্মূল করবে। এভাবে এগিয়ে চলবে মানব সভ্যতা।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:০৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: নিখুঁত ব্যাখ্যা। কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীতেও গাল গল্প আর মিথ বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাদের কথাবার্তা শুনলে জুতা মারতে ইচ্ছা করে।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:১৮

মিজানুর রহমান মিলন বলেছেন: সমাজ অগ্রগতির জন্য এটাই প্রধান অন্তরায়।

২| ২৬ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:৩৪

কবীর হুমায়ূন বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। বিজ্ঞানই আমাদেরকে সঠিক তথ্য দিয়েছে।ভালো থাকুন মিজানুর রহমান মিলন। শুভ কামনা।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:১৯

মিজানুর রহমান মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ কবীর হুমায়ূন। শুভ কামনা রইলো।

৩| ২৬ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: সহমত।

৪| ২৬ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:১২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: Right

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.