নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

মিজানুর রহমান মিলন

জয় হোক মানবতার ও মুক্তিকামী মানষের যারা নব্য উপনিবেশবাদের বলির পাঠা হতে চায় না ।

মিজানুর রহমান মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভয়ংকর কোন মহামারী মোকাবেলায় উন্নত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রয়োজন

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৩

গুটি বসন্ত, কলেরা, যক্ষা, কুষ্ঠ ইত্যাদি মহামারীর চেয়ে করোনা মহামারী তো তেমন কিছুই না। আক্রান্ত হলে ৮০ শতাংশ সাধারণ চিকিৎসায় এমনিতেই ভাল হয়ে যায়। প্রাচীন ও মধ্যযুগে গুটি বসন্ত, কলেরা, যক্ষা, কুষ্ঠ এর চেয়ে অনেক বেশি ভয়ংকর মহামারী ছিল। বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ প্রতিষেধক আবিষ্কার করে সেসব মহামারী থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে- করোনার চেয়েও ভয়ংকর মহামারী যদি আমাদের গ্রাস করে আমরা পারব আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে? করোনা কি আমাদের কিছু শিক্ষা দিচ্ছে? যেভাবে জলবায়ু পরিবর্তনসহ পরিবেশ দুষণের জন্য মানুষ নানারূপ বিষাক্ত বর্জ্য উৎপাদন করছে তাতে নিকট বা দূর ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের চেয়ে ভয়ংকর কোনো সংক্রামক ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তি হবে না এর নিশ্চয়তা নেই। গবেষকগণ আমাদের সেইদিকে ইঙ্গিত করছেন। করোনা বা করোনার চেয়েও ভয়ংকর কোন মহামারী এলে তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর প্রস্তুতি কেমন আছে? এই বিষয়ে আমাদের আশু উপলব্ধি প্রয়োজন।

করোনা মহামারীতে স্বল্প মেয়াদি চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহন করে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছে চীন এবং ইউরোপ, আমেরিকাও পারবে। কারণ তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং গবেষণা খাতকে উন্নতির শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বলা বাহুল্য, তাদের স্বাস্থ্যখাত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর চেয়ে উন্নত। এই জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নকে প্রধান অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর মধ্যে তালিকার শীর্ষে হওয়া উচিৎ স্বাস্থ্য খাত। তৃতীয় বিশ্বের দুই একটি দেশ যে এইদিকে নজর দেয় নি তা নয়।

তৃতীয় বিশ্বের দেশ ইরান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নকে প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দেশটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে চোখ ধাঁধাঁনো সাফল্যের পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতেও যথেষ্ট উন্নতি করেছে। বিশ্বে ইরানই একমাত্র দেশ যে কিনা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে বহিঃবিশ্ব থেকে প্রায় কোনো প্রকার ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানি করতে পারে না। স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নতি করায় আমেরিকার কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশটি প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম নিজেরাই উৎপাদন করে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় টেস্ট কিট, ভেন্টিলেটর এবং প্রয়োনীয় ওষুধপত্র নিজেরাই উৎপাদন করছে। ব্যাপক টেস্ট, প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল এবং ভাসমান হাসপাতাল, ওষুধপত্র ও টেস্ট কিট নিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তারের উপস্থিতি করোনা বা এরকম মহামারী মোকাবেলায় দেশটির চিকিৎসা সক্ষমতার পরিচয় বহন করে।

তৃতীয় বিশ্বের আর একটি দেশ কিউবার কথা না বললেই নয়। অর্ধ শতকেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ঈর্ষণীয় উন্নতির জন্য দেশটি সারা বিশ্বের কাছে রোল মডেল। কিউবাতে প্রতি এক হাজার লোকের জন্য ৭৪ জন ডাক্তার ও ১০ জন ডেন্টিস্ট। সারা বিশ্বে প্রায় ২৫,০০০ কিউবান ডাক্তার বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার প্রচুর রোগী কিউবায় যায় চিকিৎসা নিতে। কিউবার জাতীয় আয়ের ৬% আসে চিকিৎসা খাত থেকে। কতিপয় বিরল রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে কিউবা। করোনাভাইরাস কিউবাতে তেমন ছোবল না দিতে পারলেও করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কিউবা বিভিন্ন দেশকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে।

উল্লেখ করা প্রয়োজন ভয়ংকর মহামারী গুটি বসন্তের ভ্যাকসিন ১৭৯৬ সালে আবিষ্কার করে ব্রিটেন। অথচ ১৯৭৪ সালেও মহামারী গুটি বসন্তের কারণে ভারতে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ যায়! এবার ভাবুন ওরা করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করবে আর আমরা সেটা কবে পাব? গবেষকগণই বলছেন, করোনার কার্যকরী ভ্যাকসিন পেতে এখনো এক বছরের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। করোনার কথা না হয় বাদই দিলাম। এরপর করোনার চেয়ে অতি ভয়ংকর কোনো মহামারী আসবে না তার নিশ্চয়তা কী? তখন আমরা কি করব? লাখে লাখে মরব আর অপেক্ষা করব ওরা কবে ভ্যাকসিন বা কার্যকরী মেডিসিন আবিষ্কার করে আমাদেরকে দেয়? তীর্থের কাকের মতো বসে বছরের পর বছর অপেক্ষা করা আর মরা ছাড়া আমাদের উপায় কী? এই জন্য আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাত উন্নত করা প্রয়োজন। প্রয়োজন গবেষণা খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া। এই জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন।

‘আই হেট পলিটিক্স’ বলে দেশ গোল্লায় যাক, আপনি আরাম আয়েশে জীবন কাটিয়ে দিতে চান, কিন্তু তা তো পারবেন না! যে বিল্ডিং এ বসে অফিস করবেন সে বিল্ডিংটাই যদি আপনার মাথায় ধ্বসে পড়ে! যে রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করেন সে রাস্তায় যদি ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজের দল আপনার পথ আটকায়? আপনার বাচ্চাকে কিডন্যাপ করে? টাকা আছে, ভাবছেন দেশ গোল্লায় যাক বিদেশে চিকিৎসা নেব, কিন্তু করোনা বা এরকম মহামারীতে তো ফ্লাইটই বন্ধ হয়ে যাবে। দেশে দেশে লকডাউন! কোথায় যাবেন? তাই যে পলিটিক্স আমাদের জীবনযাত্রা, আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, গবেষণা, আমাদের নিরাপত্তা, শিক্ষা, কৃষিসহ জীবনের সব ক্ষেত্রই নিয়ন্ত্রণ করে সেই পলিটিক্সকে হেট করা মানে আত্মহত্যার শামিল।

আমাদের দেশে ওয়ায়েজিন হুজুর যারা কিনা অপবিজ্ঞান ও ধর্ম মিশিয়ে ওয়াজ করে আমাদের দেশের একটা বড় অংশকে বুঁদ করে রাখে, করোনা দুর্যোগকালে তাদের ভূমিকা সবচেয়ে আমাকে ব্যথিত করেছে। যখন করোনা প্রথম ছড়িয়ে পড়ে তারা এই সম্পর্কে কোনো জ্ঞান না রেখেই করোনাকে আল্লাহর সৈনিক হিসাবে অভিহিত করেছে এবং করোনা মোকাবেলায় হাস্যকর তত্ত্ব ও উদ্ভট কথাবার্তা বলেছে। মানুষকে সচেতন করার পরিবর্তে তারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই সংকট ও দুর্যোগকালে নেতিবাচক ভূমিকা ছাড়া তাদের বেশিরভাগেরই কোনো ইতিবাচক ভূমিকা নেই।

আমরা জীবনে এমন কিছুকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেই যেগুলো আমাদের জীবনযাপনে খুব বেশি প্রয়োজনীয় নয়। আজকে সবাই ডাক্তারের খোঁজ করছে, খোঁজ করছে ভ্যাকসিন কবে আবিষ্কার হবে। আমাদের নিত্য খাদ্যপণ্য, আমাদের চিকিৎসা, আমাদের বস্ত্র, আমাদের শিক্ষার চেয়ে অতি প্রয়োজনীয় আর কি কিছু আছে? সারাটা বছর মেতে থাকি ক্রিকেট, ফুটবল, সিনেমা ও নাটক/সিরিয়াল নিয়ে হিরো/হিরোইনদের নিয়ে। এইগুলো নিয়ে মেতে থাকা দোষের কিছু নেই। শুধু বলছি অধিক গুরুত্বের কথা। আমরা এই খাতগুলো যেভাবে দেখতে চাই, যেভাবে এদের নিয়ে মেতে থাকি একইভাবে যদি আমরা আমাদের ভাল থাকার উপকরণগুলো চাইতাম তাহলে তার চেয়ে ভাল আর কি হতে পারত?

আমরা যেগুলো নিয়ে মেতে থাকি, বুঁদ হয়ে থাকি তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের জীবনে আছে। খেলাধুলা আমাদের শরীর ও মনের জন্য অবশ্যই প্রয়োজন, তেমনি বিনোদনও আমাদের প্রয়োজন। কিন্তু তার আগে আমাদের জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলোর ক্ষেত্রসমূহ উন্নত করা দরকার। আমরা বিনোদনের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করি, কিন্তু শিক্ষার উন্নতি, গবেষণা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য কতটুকু ব্যয় করি? অথচ আজকে ভ্যাকসিনের জন্য আমরা পাগল হয়ে গেছি। আমাদের সুস্থতা, আমাদের নিরাপত্তা এবং মর্যাদা ও সম্মানের সাথে বাঁচার জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, গবেষণা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রের হিরো আমাদের অতীব প্রয়োজন। একজন উইকেট ফেলানো ক্রিকেটার বা গোল দেওয়া একজন ফুটবলার কারো জীবন বাঁচাতে পারে না, কিন্তুএকজন ভাল মানের ডাক্তার হাজারো মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে, একজন গবেষক কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে, পারে মঙ্গলগ্রহসহ গ্রহান্তরে অভিযান চালাতে এবং দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারে। একজন রাজনীতির হিরো দেশকে বদলে দিতে পারে। নাগরিকদের জীবন যাত্রার মান উন্নত করতে পারে। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশকে উন্নত দেশ বানাতে পারে।

করোনা দুর্যোগ চলে যাক, আমাদের দুর্যোগ ও সংকটকালে এবং জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে যে বীরদের আমাদের প্রয়োজন নেই সেইসব বীরেরাই হবে আমাদের মাতামাতির একমাত্র উৎস! এতক্ষণে যা লিখলাম তা অরণ্যে রোদন মাত্র।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: করোনাভাইরাসের সূত্রপাত না হলে অনেক মানুষ জানতোই না যে, বিশ্বাস কতটা ভয়ংকর ও বিষাক্ত হতে পারে! ধর্মীয় বিশ্বাস- চিন্তাধারা শুধুমাত্র নিজেকে ক্ষতি করে না বরং আশেপাশে, সঙ্গেসাথে, দূরেকাছে থাকা- সকল মানুষকেই বিষাক্ত করে তোলে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.