নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

মিজানুর রহমান মিলন

জয় হোক মানবতার ও মুক্তিকামী মানষের যারা নব্য উপনিবেশবাদের বলির পাঠা হতে চায় না ।

মিজানুর রহমান মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিলিস্তিনিদের নাকবার ৭২ বছর!

১৫ ই মে, ২০২০ রাত ৯:৩১

আন্তর্জাতিক বিষয়ে যাদের আগ্রহ আছে তাঁরা নিশ্চিৎভাবেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যা সম্পর্কে অবগত। প্রায় শত বছরেরও অধিক সময় ধরে থেমে থেমে এই সমস্যা সারা বিশ্বের মেইন স্ট্রিম মিডিয়ার প্রধান সংবাদ শিরোনাম হয়ে আসছে। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নিপীড়িত ও নির্যাতিত জাতি ফিলিস্তিনিদের জন্য গতকাল ১৪ মে ছিল ’নাকবা’ দিবস।আরবি শব্দ নাকবা মানে মহাবিপর্যয়। হ্যাঁ, গতকাল ১৪ মে ছিল বিশ্বের বুকে অবৈধ রাস্ট্র ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার দিন যা ছিল সত্যিকারভাবে ফিলিস্তিনিদের জন্য মহাবিপর্যয় ! ১৪ মে, ১৯৪৮ এই দিনে ফিলিস্তিন ভূমিতে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ফিলিস্তিনিদের জন্য এই দিন যেমন মহাবিপর্যয়ের এবং তেমনি অন্যদিকে ইসরায়েলিদের জন্য আনন্দের দিন।নৈতিক কারণেই ইসরায়েলের আনন্দের অংশীদ্বার আমরা হতে পারি না।

যেহেতু বলা হয়ে থাকে ইহুদি ধর্মগ্রন্থের আলোকেই এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেহেতু এই কারণেই বিশ্বের নানা প্রচার মাধ্যম একে ইহুদি রাষ্ট্র বলে। কিন্তু ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ইহুদি রাষ্ট্র বলাটা ভুল। কারণ ইসরায়েল রাষ্ট্র, ইহুদিবাদ এবং ইহুদি এই তিনটা শব্দকে আমাদের আলাদাভাবে বিবেচনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে ইহুদি ধর্ম আর ইহুদিবাদ এক নয়।
মুসলমানদের মধ্যে একটা প্রবণতা হল ইসরায়েল রাষ্ট্রটির বর্ণবাদী আচরণের তারা যতটা না নিন্দা করে তারচেয়ে বেশি নিন্দা করে ইহুদিদের। কিন্তু ইসরায়েল রাস্ট্রের সাথে ইহুদি নয় বরং ইহুদিবাদের সম্পর্ক জড়িত। ইহুদি আর ইহুদিবাদ দুটো এক নয়। ইহুদিবাদের ফল হল ইসরায়েল রাষ্ট্র।

ইহুদিবাদের ইউটোপিয়া হল বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা। ।সত্যিকারভাবেই ইহুদিবাদ বলতে এক বিশেষ রক্ষনশীল ইহুদি সম্প্রদায়কে বলা হয় যারা বৃহত্তর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যা আজকের মিশর, জর্ডান, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ও ফিলিস্তিন নিয়ে গঠিত হবে এবং এর বাস্তবায়ন করাকে ঈশ্বরের পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করেন।অনেক ইহুদি রাব্বী বিশেষ করে যারা অর্থো-ডক্স ইহুদি যাদেরকে জুডায়জমের অনুসারীও বলে তারা মনে করেন না এই তত্ব ইহুদি ধর্মের কোন অংশ বরং তারা ইসরায়েল রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধী ও ইসরায়েলের ধ্বংস কামনা করেন এবং সবসময় ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের বর্বরতার নিন্দা করেন।

ইহুদিবাদ তত্ত্বের প্রবর্তক এবং তাত্ত্বিক ও দার্শনিক হলেন থিওডোর হার্জেল ।১৮৯৬ সালে তিনি The Jewish state নামে একটা বই লেখেন এবং তিনি ঘোষনা দেন যে, The cure for anti-semitism was the establishment of a Jewish state. As he saw it, the best place to establish this state was in Palestine.এই তত্ত্বের মূল লক্ষ্য ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠা, আধ্যাত্মিক বা নিছক ধর্মীয় উপদেশ প্রদানের মাধ্যমে নয়, বরং সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে প্রথম পদক্ষেপ হল বিশ্বের ইহুদিসমূহকে একত্র করা যা শুরু হয়েছিল সেই বেলফোর ডিক্লারেশনের মাধ্যমে ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর।

বেলফোর ডিক্লারেশনের পর থেকে সারা বিশ্বের ইহুদিরা জড়ো হতে শুরু করে ফিলিস্তিনে! ১৯০৫ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক হাজার।১৯৪৮ সালে সেখানে ইহুদীদের সংখ্যা ৬ লাখে উন্নীত হয়। সেই যে শুরু ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি ভূমি দখল, অবৈধ বসতি স্থাপনের কাজ তা এখন পর্যন্ত জোর গতিতে এগিয়ে চলেছে। এক মুহুর্তের জন্য থেমে নেই ইসরায়েলের সম্প্রসারণবাদী নীতি। ইসরায়েলের প্রচুর জমি দরকার কারন ইসরায়েল বিশ্বের সমগ্র ইহুদীদের নিজ নাগরিক মনে করে। তারা মনে করে একদিন বিশ্বের সমগ্র ইহুদী সম্প্রদায় একত্রিত হবে আর প্রতিষ্ঠা করবে বৃহত্তর ইসরায়েল রাস্ট্র। বিশ্বের যে কোন ইহুদি যদি ইহুদিবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় তাহলে তিনি যে কোন সময় ইসরায়েলে চলে যেতে পারেন। তার সমস্ত খরচ ইসরায়েল রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করে ইসরায়েল রাষ্ট্রে নিয়ে যাবে এবং পাবে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করা কোন এক বাড়ি আর থাকা, খাওয়া ও জীবিকা অর্জনের সব ব্যবস্থা তো পাবেই! ৭২ বছর ধরে ফিলিস্তিনিরা নিজ বসতি ভিটা ছেড়ে শরণার্থী হয়ে আছে ও এখনও নিজ বসতভিটা এবং জায়গা জমি ছেড়ে দিতে হচ্ছে দূর দেশ থেকে চলে আসা কোন ইহুদি পরিবারকে! এরকম নজীর বিশ্বের আর দ্বিতীয়টি নেই! ফিলিস্তিনের গাজা ও পশ্চিম তীর নামে যে দুই মেরুর দুই অংশ অবশিষ্ট আছে এর মধ্যে পশ্চিম তীরকে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি তুলেছে ইসরায়েল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই অন্তর্ভুক্তির স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছে।

ইহুদিবাদীসহ পশ্চিমা মিডিয়া ইসরায়েল রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা হিসাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সংঘটিত হলোকস্টকে তুলে ধরেন । প্রশ্ন হল হলোকস্ট ঘটেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আর ফিলিস্তিনে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করা হয়েছে ১৯১৭ সালে যা ইতিহাসে বেলফোর ডিক্লারেশন নামে পরিচিত। আর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল হলোকাস্টের ঐ ঘটনা ঘটেছে ইউরোপে। তার জন্য প্রজন্ম ধরে বসবাস করা ফিলিস্তিনের জনগণকে কেন নিজ বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ হয়ে এবং জীবনের বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে? যদি প্রায়শ্চিত্ত করতেই হয় তাহলে এই প্রায়শ্চিত্ত করার দরকার ছিল ইউরোপিয়ানদের।

এখন কথা হল ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কোন ঐতিহাসিক তথ্যের আলোকে নয় বরং ধর্মীয় গ্রন্থের নিছক কল্পকাহিনীকে ভিত্তি ধরে। আবার সেই ধর্মের অনুসারীদের একটা বড় অংশ ধর্মের আলোকে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে অবৈধ ও অনৈতিক মনে করে যা উপরেই আলোচনা করেছি।এরপরেও কথা থেকে যায়।

আজকের যারা ফিলিস্তিনি নামে আমরা জানি তারা সেই চার হাজার বছরের আগে থেকেই সেখানকার অধিবাসী।গবেষণা করে এ কথা প্রমান করেছেন খোদ তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক শোলমো স্যান্ড।তিনি দেখিয়েছেন আজকের হিব্রু জাতির বর্তমান বংশধর যদি থেকে থাকেন তা হল ফিলিস্তিনের বর্তমান মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়। আর আজকের ইসরায়েলের ইহুদীরা তো এসেছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ কথা আগেই বলা হয়েছে।

তারপরেও এইসব অপব্যাখ্যা ও অপযুক্তি যদি তা মেনে নেই তাহলে বর্তমানের আমেরিকার উচিৎ রেড ইন্ডিয়ানদের আমেরিকা ছেড়ে দিয়ে তাদের পূর্বভুমি ইউরোপে চলে আসা ।অস্ট্রেলিয়ারও উচিৎ তাদের আদিবাসীদের কাছে তাদের ভূমি ফিরিয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে বিদায় নেওয়া।ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ড এরা বর্তমানে দখলকৃত সব ভূমি ফিরিয়ে দিক মাওরিদের কাছে।

প্রায় ৭০ লাখের মত ফিলিস্তিনি পার্শ্ববর্তী আরবদেশগুলিতে সেই ৭২ বছর ধরে শরণার্থী জীবন যাপন করছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ! ফিলিস্তিনিদের নিয়ে আগের মত উচ্ছ্বাস ও উচ্চবাচ্য রাষ্ট্র হিসাবে দুই একটি দেশ বাদে আর কেউ এখন করে না। বিশ্ব রাজনীতির সমীকরণ উলট-পালট হওয়াই এর মূল কারণ। যদিও এই সমস্যা মূলত আরবদের। সেই আরবরাই এখন ইসরায়েল রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এক পায়ে খাড়া। কেউ কেউ অতীত ভুলে সম্পর্ক অনেক আগেই তৈরি করে ফেলেছে। আর কেউ কেউ সম্পর্ক স্থাপনের পথে।আর ঐ দুই একটি রাষ্ট্র যারা উচ্চবাচ্য করছে তারা মূলত নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত কাজ করছে।

ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মূলত মধ্যপ্রাচ্যের অঢেল সম্পদ লুটেপুটে নেওয়ার জন্য। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও সৌদি আরব হল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দুই লাঠিয়াল। সৌদি রাজতন্ত্র এবং ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা একই সূত্রে গাঁথা। মধ্যপ্রাচ্যে যতদিন তেল সম্পদের আধিক্য থাকবে বোধকরি ততদিন ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সমস্যারও সমাধান হবে না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মে, ২০২০ রাত ১০:০১

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট পড়লাম। কিন্তু মন্তব্য করতে পারবো না। আন্তর্জাতিক বিষয়ে আমার জ্ঞান শূন্য।

২| ১৫ ই মে, ২০২০ রাত ১১:০৫

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: অল্প কথায় মূল বিষয়বস্তুটি সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন, কিছু কিছু নতুন তথ্য জানতে পারলাম।

৩| ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ১:৫০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আমার মনে হয় করোনার কারণে সৌদি একটা শক্ত ধরা খাইছে । তেলের দাম নাই । আধুনিক উপশহর নাওমী করা কঠিন হবে । ইয়েমেন যুদ্ধে কাহিল তারা । তিন হতে পাঁচ বছরে লক্ষ লক্ষ অভিবাসী তাড়িয়ে দিবে ।

৪| ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ২:৪৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


১৯১৭ সালে ফিলিস্তিন কাহাদের সাম্রাজ্য ছিল? ইহা কি ফিলিস্তিন দেশ ছিলো, ইহা কি স্বাধীন ছিলো, নাকি ইহা কলোনী ছিলো?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.