![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্কর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। (আল ময়েদা:২) তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সত্কর্ম করে এবং বলে, আমি একজন আজ্ঞাবহ (মুসলিম)। (আল কুরআন ৪১:৩৩) কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা (সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪)
ইসলামে সমস্ত খেলাধুলা হারাম জায়িয বলা কুফরী, তবে
১. তীর ধনুক চালনা করা, ২. অশ্বকে প্রশিক্ষণ দান করা, ৩. নিজ আহলিয়ার সাথে শরীয়ত সম্মত হাসি-খুশী করা, ৪. সাতার কাটা, ৫. নারীর শ্রেষ্ঠ কাজ সূতা কাটা ব্যাতিত এবং
যারা বলে শারীরিক ব্যায়ামের জন্য খেলাধুলা জায়িয তাদের যুক্তি খন্ডন:
হাদীছ শরীফে বর্ণিত, ‘লায়িব’ শব্দটি যদিও আম বা সাধারণ অর্থে খেলাহিসেবে ব্যবহৃত হয় কিন্তু হাক্বীক্বী বা প্রকৃত অর্থে তা দু’ধরনের অর্থ প্রদান করে |
১. খুশী করা, স্বাদ গ্রহণ করা তথা এমন আনন্দ করা যা শরীয়তে অনুমোদিত | ২. ক্রীড়াকরা, তামাশা করা, কৌতুক ইত্যাদি করা যা শরীয়তে অনুমোদিত নয় |
আরবী ‘লায়িব’ ও বাংলায় ‘খেলা’ শব্দটি যখন শরীয়তসম্মত বা শরীয়ত অনুমোদিত বিষয় সম্পর্কে ব্যবহৃত হবে তখন তার অর্থ খুশী করা, স্বাদ গ্রহণ করা, নির্দোষ আনন্দ করা ইত্যাদি অর্থে আসবে | আর উক্ত শব্দদ্বয় যখন শরীয়তের খিলাফ কোন বিষয় সম্পর্কে ব্যবহৃত হবে তখন তা ক্রীড়া করা, তামাশা করা, কৌতুক করা, হাসি-ঠাট্টা করা ইত্যাদি অর্থে আসবে |
‘মুসতাদরেকে হাকিম’ এর মধ্যে হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাকছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘সর্বপ্রকার খেলাধুলা হারাম | তিনটি বিষয় খেলাধুলার অন্তর্ভুক্ত নয় | যেমন, ১. তীর ধনুক চালনা করা, ২. অশ্বকে প্রশিক্ষণদান করা, ৩. নিজ আহলিয়ার সাথে শরীয়তসম্মত হাসি-খুশী করা |’
এছাড়া হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, ‘আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মু’মিনের শ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণ হচ্ছে সাতার কাটা, আর নারীর শ্রেষ্ঠ কাজ হচ্ছে সূতা কাটা |’
যত প্রকার খেলা রয়েছে তার প্রত্যেকটির মধ্যেই না কোন দ্বীনি ফায়দা রয়েছে এবং না কোন দুনিয়াবী ফায়দা রয়েছে | বরং প্রতিটি খেলা তিনটি অবস্থার কোন এক অবস্থা থেকে খালি নয় | হয় তা কুফরী হবে অথবা হারাম হবে, আর না হয় তা মাকরূহ হবে |
যে খেলা বিধর্মীদের সাথে তাশাব্বুহ বা সাদৃশ্য রাখে অথবা দ্বীন ইসলাম থেকে সরিয়ে দেয়, তা সম্পূর্ণ কুফরী |’ আবু দাউদ শরীফের হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত |’
আর যে খেলা ইসলামী আক্বীদা থেকে সরিয়ে নেয় না কিন্তু হারাম ও গুনাহের কাজে লিপ্ত করে দেয়, তা কুফরী নয়; তবে কবীরাহ গুনাহর কারণ | আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘তোমরা পরস্পর পরস্পরকে নেক কাজ ও পরহিযগারীর মধ্যে সাহায্য কর, পাপ ও শত্রুতার মধ্যে সাহায্য করো না | (সূরা মায়িদা/২)
আর যে সমস্ত খেলা প্রকাশ্য কুফরী হারাম, ও পাপ বলে মনে হয় না, মানুষ সাধারণভাবে সেসমস্ত খেলাকে জায়িযমনে করে থাকে, প্রকৃতপক্ষে তাও পাপের অন্তর্ভুক্ত | এতে যেমন ইবাদত-বন্দিগীর ব্যাঘাত ঘটে এবং স্বাস্থ্য, সময় ও টাকা-পয়সার অপচয় হয়, তদ্রুপ পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষও পয়দা হয় | এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই (সর্বপ্রকার) অপচয়কারী শয়তানের ভাই |’ (সূরা বণী ইসরাঈল/২৭)
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “কোন ব্যক্তির জন্য দ্বীনের সৌন্দর্য হলো,অহেতুক বা অপ্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকা |’ (তিরমিযী, ইবনে মাযাহ,মুয়াত্তা)
শরীয়তের ফতওয়া হচ্ছে, যে কাজ হারাম ও কুফরী তাকে হালাল মনে করা কুফরী | অর্থাৎ যে হালাল মনে করবে সে কাফির হয়ে যাবে | আর যে কাজ হারাম ও কুফরী নয় কিন্তু পাপের কারণ, আর সে পাপকে হালকা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য মনে করে অর্থাৎ এধরনের পাপ করলে কিছু হয় না ইত্যাদি মনে করাটাও কুফরী |
হাদীছ শরীফ বা শরীয়তে যে সমস্ত বিষয়গুলোকে জায়িয বলা হয়েছে বা অনুমোদন করা হয়েছে, সে সমস্ত বিষয়গুলোতে যেমন দ্বীনি ফায়দা রয়েছে, তেমনি দুনিয়াবী ফায়দাও নিহিত রয়েছে | যেমন, তীর চালনা করা, অশ্বকে প্রশিক্ষণ দেয়া, সাতার কাটা, দৌড়অনুশীলন ইত্যাদি জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত এবং স্বাস্থ্যকে সুঠাম ও বলিষ্ঠ রাখার কারণ | হাদীছ শরীফে উল্লেখ রয়েছে, ইলম হচ্ছে দুই প্রকার | একটি হচ্ছে দ্বীনসংক্রান্ত আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত | অর্থাৎ দ্বীনি ইলম জরুরত আন্দাজ অর্জন করা যেরূপ ফরযের অন্তর্ভুক্ত তদ্রুপ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ইলম জরুরত আন্দাজ শিক্ষা করাওফরয |
প্রচলিত খেলাধুলাকে জায়িয করতে গিয়ে অনেকে বলে থাকে, খেলাধুলাকে নিছক জীবনের উদ্দেশ্য না বানানো | বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য থাকতে হবে যৎসামান্য বিনোদন বা শারীরিক ব্যায়াম করা |
এর জবাবে বলতে হয় যে, শুধুমাত্র ব্যায়ামের জন্য, বিধর্মী, বিজাতি ও বেদ্বীনদের দ্বারা প্রবর্তিত ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা জায়িয হতে পারে না | কারণ,ব্যায়ামের জন্য হাদীছ শরীফে বর্ণিত বিষয়গুলো যেমন তীর চালনা করা, অশ্বকে প্রশিক্ষণ দেয়া, সাতার কাটা, দৌড় অনুশীলন করা ইত্যাদিই যথেষ্ট | আর বিনোদন,সেটা যদি নাজায়িয পদ্ধতিতে হয় তাহলে যত সামান্যই হোক তাও সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম |
এ সম্পর্কে হাফিযে হাদীছ, বাহরুল উলূম, মুফতীয়ে আ’যম, মুবাহিছে আ’যম হযরত মাওলানা মুহম্মদ রুহুল আমীন বশিরহাটি রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘ফতওয়ায়ে আমিনিয়া’কিতাবে বলেছেন, ‘জায়িয কাজ দ্বারা যখন ব্যায়াম করার উপায় আছে, তখন নাজায়িয কাজের দ্বারা কিরূপে জায়িয হবে? খেলায় প্রতিযোগিতা করলে কি ফল হবে? কিন্তু লাঠি, তীর ছোড়ো, তরবারী ভাঁজা, ঘোড়-দৌড় ইত্যাদিতে শত্রুদের হস্ত হতে কতকটা নিষ্কৃতি লাভের উপায় হতে পারে | পক্ষান্তরে খেলাতে এই প্রকার কোনলাভ হতে পারে না | বরং ওটা খাঁটি খেলবাজি ভিন্ন আর কিছুই নয় | কাজেই ওটা কিছুতেই জায়িয হতে পারে না | কেবল দুনিয়াদার স্বার্থপর দু’একজন আলিম ওটা জায়িয হওয়ার ফতওয়া দিয়েছেন | তাদের ফতওয়া কিছুতেই গ্রহণীয় হতে পারে না |
হাদীছ শরীফে এ সমস্ত খেলাধুলাকে সরাসরি হারাম বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে | তবে অবশ্যই যাঁরা ফক্বীহ তাঁরা এ সমস্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে খেলাধুলা কেন হারাম বলা হয়েছে তার কিছু কারণ প্রত্যেকেই তাঁর আক্বল অনুযায়ী উল্লেখ করেছেন | সেজন্য এর অর্থ এটা নয় যে, এ সমস্ত কারণগুলো দূরীভূত হলেই উক্ত খেলাধুলা জায়িয হয়ে যাবে। তা কস্মিন কালেও নয় | কারণ ইসলামে বা শরীয়তে সর্বপ্রকার খেলাধুলাই সর্বকালের জন্য হারাম
©somewhere in net ltd.