![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্কর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। (আল ময়েদা:২) তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সত্কর্ম করে এবং বলে, আমি একজন আজ্ঞাবহ (মুসলিম)। (আল কুরআন ৪১:৩৩) কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা (সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪)
সাবের এবার এস এসসি পরীক্ষার্থী। জেলার শ্রেষ্ঠ স্কুল থেকে। ১৮৩ জন ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে মেধা তালিকায় সাবের প্রথম। ওর থেকে শোনা একটি স্মরণীয় ঘটনা।
ওদের স্কুলে শিক্ষার্থীদের নিকট সব চেয়ে খারাব শিক্ষক হচ্ছে সুবাস স্যার।
ইংলিশ পড়াতেন। মেজাজ খুব কড়া। পড়ায় বা লেখায় কোন ভুল হলেই বেত্রাঘাত। তার কাছে ক্ষমা বলতে কোন কথা নাই। কোন শিক্ষার্থী তাকে ভাল বলত না। খুব খারাপ জানত। অগোচরে তাকে ছাত্ররা বলত নমো, টাউক্কা, গুবাস ইত্যাদি।
সকলেই তাকে ভয় পেত। তার বিরুদ্ধ সরাসরি অভিযোগ দেওয়ার মত সাহস কারো নেই। শাসনের ব্যাপারে হেড স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ারও কারো সাহস হয় না। মৌখিক দিলেও হেড স্যারে কোন একশন নেন না। কারন, তিনিও সুবাস স্যারের ছাত্র।কোনদিন অসুখ হয়না। বেড়াতে যেতেন না। ছুটি নেওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। এর মানে তার ঘন্টায় রেষ্ট পাওয়ার সুযোগ নাই।
তিনি যেহেতু পড়া আদায়ে কঠোর, তাকে একটা সহজ
সাবজেক্ট দিলেইতো ছাত্ররা নিস্তার পায়। হেড মাষ্টার তাও করেন না। একদিন ছাত্রদেরআনন্দের মহেন্দ্রক্ষন এসে গেল। মুহূর্তের মধ্যে সংবাদ ছড়িয়ে পরল, স্যারের চাকরী মেয়াদ শেষ। সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে সুখের সুবাতাস বইতে লাগল। সবার মুখে হাসি। একদিন ক্লাশে নোটিশ পড়ে শোনান হলো,২৫ ডিসেম্বর ইংরেজী স্যার সুবাস বাবুর বিদায় অনুষ্ঠান।
হেড স্যার প্রত্যেক
ক্লাশে গিয়ে ইংরেজী স্যারকে উপহার প্রদানের জন্য সবাই যেন ধার্যকৃত চাঁদা আদায় করে, এ জন্য বলে গেলেন। শিক্ষার্থীরাও স্যারের বিদায়ের খুশীতে দ্রুত চাঁদা পরিশোধ করল। বিদায়ী দিবসের তিন দিন আগ থেকেই সুবাস স্যার চোখে কালো চশমা পরে স্কুলে আসতেন ক্লাশে পড়াতেন আর চশমার নীচ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ত। ছাত্ররা এ অশ্রুর মর্ম বুঝতে পারেনি। তবে কোন কোন ছাত্র স্যারের চোখে পানি দেখে তারাও কাঁদত। নির্ধারিত দিবসের আগের দিন স্যার প্রত্যেক ক্লাশেই গেলেন। কিন্তু কোন ক্লাশেই কিছু পড়ালেন না। শুধু কাঁদলেন আর কাঁদলেন। সাবেরদের দশম শ্রেণীতেও পুরো এক প্রিয়ডের সময় পরিমান স্যার কাঁদলেন। এতদিন পর সকল শিক্ষার্থী আজ যেন বুঝতে পারল, তাদের এক কঠোর দায়িত্ববান অবিভাবক বিদায় নিচ্ছে। পিতৃসম শ্রদ্ধেয় ইংরেজী শিক্ষক সুবাস স্যার আর ক্লাশে আসবেন না।
কোন দিন পড়া শিক্ষা দিতে বেত্রাঘাত করবেন না। পুরো ক্লাশের শতাধিক সন্তান যেন পিতার মৃত্যুর যন্ত্রনার মত আঘাত অনুভব করল। কেউ কেউ আবেগে আপ্লুত হয়ে শিক্ষাগুরুর পদযুগলে লুটিয়ে পরল। শ্রেণী কক্ষে শুধু
কান্নার ধনি। কিসের আওয়াজ তা দেখতে এলেন এসিষ্ট্যান্ট হেড স্যার। তিনিও কেঁদে ফেললেন।
নির্ধারিত দিন এসে গেল। অনুষ্ঠান শুরু হলো। সচিব,ডি সি, এ ডি সি, এম পি, টি এন ও, মেজিষ্ট্রেট, চেয়ারম্যান, প্রিন্সিপাল, প্রফেসর, ডাক্তার, ডক্টর, শিক্ষক এ রকম উচ্চ- নিম্ন নানান শ্রেণীর ব্যক্তিদের গাড়ীতে স্কুল মাঠ প্রায় অর্ধেক পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এরা অনেকেই সুবাস স্যারের ছাত্র। অতিথীবৃন্দ
স্যারের গুনের
প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার
এবং কৃতিত্ব মূলক
বক্তব্য দিলেন। তবে,
না কেঁদে কেউ বক্তব্য
দিতে পারেননি।
সকল শিক্ষার্থি বৃন্দ এসব
দৃশ্য দেখে, আর
শুনে স্যারের
প্রতি আকৃষ্ট হতে লাগল।
তাদের
দুষ্ট মস্তক তাঁর সাধনার
সম্মুখে অবনত হলো। এ
শিক্ষক এত বড় কিছু
তা হাড়ে হাড়ে টের
পেল।
স্যারের
মুখে বিদায়ী কিছু
কথা শোনার জন্য
সবাই উদগ্রীব।
সর্বশেষে বক্তৃতা দিতে দাড়ালেন
আমাদের সর্বাধিক
প্রিয় ইংলিশ স্যার।
স্যার কেবল ঐ
দিন ই
কাঁধে একটি গামছা আনলেন।
চোখে কালো রংএর
চশমা, কাঁধে গামছা।
বীরেত ন্যায়
দাড়ালেন।
কেননা তিনি অনেক
বড়র শিক্ষা গুরু।
একি স্যার
যে কথা বলছেন
না। কেন? কালো চশমার
নীচ দিয়ে শুধু অশ্রু ঝড়ছে।
কথা বলতে চান।
পারছেন না। কিছু
বলতে শুরু
করতে নাকরতেই
কান্নারা এসে থামিয়ে দেয়।
শেষ পর্যন্ত
কান্নারাই জয় লাভ করল।
স্যারকে চেয়ারে বসান
হলো। এতক্ষন
গামছা দিয়ে চোখ আর
নাক মুছতেন। এবার
সে গামছা দ্বারা চেহারা ঢেকে শিশুদের
মত
কাঁদতে লাগলেন।
অনুষ্ঠানের হলরুমে শুধু
কান্না।
বন্ধুরা!
চোখ মুছে ফেল। আসল
কথা শোন।
একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
একজন অবিভাবক
বিদায়ে যদি এমন
হৃদয়স্পর্সী দৃশ্যের
অবতারনা হয়। হবেইতো,
হওয়াটাই
স্বাভাবিক।
বরং না হওয়াটা অস্বাভাবিক।
তাই না?
তাহলে একটা রাষ্ট্রের
অবিভাবকের
বিদায়ে নাগরিকগণ
অবশ্যই ব্যথাতুর হওয়ার
কথা। যেমন সাউথ
আফ্রিকার প্রয়াত
রাষ্ট্রপতি নেলসন
ম্যানডেলার মৃত্যু। কিন্তু,
আমাদের দেশের
অবিভাবকদের
অবস্থা যেন
ভিন্ন। দেশ স্বাধীন
হওয়ার পর এপর্যন্ত
রাষ্ট্রের একাধিক
প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী,
এমপি মারা গেছেন ।
তাদের
মৃত্যুতে জাতি শোকে মুহ্যমান
হয়নি। আপামর
জনসাধারণ শোকাতুর
হয়নি।
এইতো সেদিন
মারা গেলেন যুবরাজ
আরাফাতুর
রহমান কোকো। কই
পাবলিকতো কাঁদলনা!
যুবরাজ তারেকুর রহমান
ক্যাকোও মহান
মহিয়ানের অমোঘ
বিধি অনুযায়ী একদিন
মারা যাবেন। দেশের
নাগরিকদের মন
মানসিকতায় বুঝা যায়
ব্যথিত হবে না। অপর
রাজপুত্র সজিব ওয়াজেদ
জয়। তিনিও একদিন এ
ধরায় থাকবেন না।
জাতি তাঁর জন্য কতদূর কষ্ট
পাবে তাও যেন একটু একটু
বুঝা যায়।
ভেবেছিলাম, কোকোর
মৃত্যুতে হরতালতো বন্ধ
হবেই। অবরোধও অন্তত:
দু'দিনের জন্য হলেও বন্ধ
রাখার
ঘোষনা দিবে তাঁর
মাতা। অন্তত
জাতি স্মরণ রাখত। নাহ,
ভাবনা ঠিক হয়নি।
অতএব,
আমাকে সহ সকল মুসলিম
ভাই-বোনদেরকে বলব,
এমন জীবন গঠন
করি যাতে মৃত্যুর
পরে হাসব,
জীবিতরা আমার জন্য
কাঁদবে। এমন জীবন যেন
না হয় যে, আমার মৃত্যুর পর
কেউ ইন্না লিল্লাহ
বলেনি।
বরং কতেকে বলেছে আলহামদু
লিল্লাহ।
"এমন জীবন তুমি কররে গঠন,
©somewhere in net ltd.