![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিছু প্রশ্নের যুক্তিযুক্ত জবাব শেয়ার করা উচিত বলে মনে হল।
★ ২৬ মার্চ কি বঙ্গবন্ধু আত্নসমর্পণ করেছিলেন। তাহলে কি তিনি স্বাধীনতা চান নি?
* বঙ্গবন্ধু ছিলেন একটি রাজনৈতিক দলের নেতা, একটি জাতির রাজনৈতিক অধিকার আন্দোলনের প্রধান নেতা, কয়েক দশকের আন্দোলনকে চুড়ান্ত পর্যায়ে কার্যকর করার চুড়ান্ত অধিনায়ক। তিনি হঠাৎ করে আত্নপ্রকাশ করা আত্নগোপনকারী কোন চরমপন্থী সংগঠনের নেতা ছিলেন না। সে সময়ে আত্নসমর্পন করাটাই ছিল চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ। পালিয়ে যায় গেরিলা সংগঠনের নেতা; রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতা নয়। সব রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতা পালিয়ে গিয়ে নিজেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দেবেন তা অত্যাবশ্যকীয় নয়। নিশ্চয়ই জর্জ ওয়াশিংটন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। জীবনের অধিকাংশ সময় কারাবরণকারী নেতাই যুদ্ধক্ষেত্রে নেতৃত্বদানকারী নেতার চেয়ে বেশি শক্তিশালী। নেলসন ম্যান্ডেলা যার একটি বড় প্রমাণ। তথাপি বঙ্গবন্ধুর নামেই যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। যুদ্ধ হয়েছে জয় বাংলা স্লোগানেই। সারাজীবন কারাবরণ করে তিল তিল করে যিনি একটা আন্দোলনকে চুড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসলেন তিনি কেন হঠাৎ করে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবেন? তিনি কাপুরুষ নন, ছিলেন বাঘের বাচ্চা। পাকিস্তানের কারাগারে অনিশ্চিত জীবনকে তিনি অসীম সাহসিকতায় বরণ করে নিয়েছিলেন।
★ স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়ে তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন কেন?
* এটাও অবান্তর প্রশ্ন। তিনি যে পালিয়ে যাননি তা প্রমাণিত। স্বাধীনতার ঘোষকও অবিসংবাদিতভাবে তিনিই। ৭ মার্চের ঘোষণাকে নাহয় তর্কের খাতিরে বাদ দিলাম। রেকর্ডে যে জিয়াউর রহমান 'on behalf of our great leader Bangabandhu' বলেছেন তা তো আমরা সবাই শুনেছি। কোন একটা অডিও রেকর্ড থেকে একটা clause কে কেটে ফেলে দেওয়া যায় কিন্তু তাতে নতুন কিছু যোগ করা যায় কি? আবার অনেকে নাকি জিয়াউর রহমানকে ওই ঘোষণার আগে একটা নিজস্ব ঘোষণাও বলতে শুনেছেন (?!)। কিন্তু ব্যাপারটা আক্ষরিক অর্থেই হয়ে যায় 'ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার' এর মত। তখনকার প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমানকে কে চিনত? কেউ না। হঠাৎ করে ময়মনসিংহের কেউ যদি ঘোষণা দিয়ে দেয় যে আজ হতে ময়মনসিংহ স্বাধীন- তাহলে তার কথা যে কেউ মানবে না তাই নয় তাকে কেউ কেউ উন্মাদও বলতে পারে। তার ঘোষণাকে অর্থবহ করতে হলে তার দাবির পক্ষে তীব্র যৌক্তিক প্রচারণা, ওই অঞ্চলের মানুষের তীব্র সমর্থন, বিশ্ব জনমত সমর্থন ইত্যাদি নানা বিষয় জড়িত হয়ে পড়বে। এসবের জন্য প্রয়োজন অনেক সময়, অনেক আত্নত্যাগ, জাতিগত এবং জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ও যথার্থ বিকাশের। হঠাৎ করে মঞ্চে উপস্থিত হয়ে একটা ঘোষনা দিয়ে দিলেই তাকে প্রধান ব্যক্তি বলা যায় না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ১৯৫৪ সালে যে জাতীয়তাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তার পরিচর্যা, পরিস্ফুটন, এবং চুড়ান্ত রূপ লাভ করে বঙ্গবন্ধুর হাতেই। তাই হঠাৎ করে কেউ যদি ঘোষণা করেও, তাহলে তাও তাঁরই নাম যুক্ত হওয়ার সাথেই অর্থবহতা লাভ করবে; নচেৎ নয়। কাজেই জিয়া ( নিশ্চয়ই বীর বীরোত্তোম মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, ছিলেন যেড ফোর্স চিফ and I salute him) যদি আগের দিন ঘোষণা দিয়েও থাকেন তাহলেও তার পরের দিনের বঙ্গবন্ধুর নামে দেওয়া ঘোষণাটাই যৌক্তিকভাবে অর্থবহ এবং গ্রহনযোগ্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষকও তাই কেবল এবং কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধুই। কাজেই এ বিষয়ে এবং এ দুটো বিষয়ে বিতর্কের কোনও অবকাশ নেই।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা পরবর্তী শাসন (বাকশাল কায়েম, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ, অতিরিক্ত বামঘেষা রাজনীতি) ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিতর্ক করাই যায়। (তাহলে পরবর্তীদের নিয়ে আরও অনেক বেশী করা যায়।) কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের আন্দোলনে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত প্রবাদ পুরুষ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নোংরা বিতর্ক দয়া করে বন্ধ করুন। এমনিতেই তো আমরা বিশ্ববাসীর কাছে হাসির পাত্র। এটা আমাদের এখন ক্রমশ লজ্জার পাত্রে পরিণত করছে। স্বাধীন বাংলাদেশে তাই আইন করেই (স্বাধীনতা আন্দোলনে) বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টিকারী বক্তব্য দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
©somewhere in net ltd.