নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমার ছায়া। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাঁচি, হাতের মধ্যে আকাশ; তবু ছুঁতে পারিনা।

মোহাম্মদ বাসার

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী। ফিচার এডিটর- বাংলাপোস্ট, যুক্তরাজ্য।

মোহাম্মদ বাসার › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবিতা

০২ রা জুন, ২০২০ সকাল ৭:০৮

সামাজিক অবক্ষয়ের কবিতাঃ

একজন রাজ্জাকের গল্প

আমরা যখন ছোট ছিলাম
আমাদের প্রত্যাশারা আমাদের চেয়েও ছোট ছিল।
পুলিশ এসে যখন আমাদের গ্রামের ভাল মানুষ, খারাপ মানুষ
সবাইকে বেধড়ক পেটাতো
আমরা তখন পুলিশের বাহাদুরী দেখে পুলিশ হতে চাইতাম।

আমি যখন স্কুলে যাই
আমাদের কালা স্যার যাঁর প্রকৃত নাম আমরা কখনোই জানতে পারিনি
ক্লাসে ঢুকেই আমাদের পড়া দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমাতেন।
কখনো কখনো তার মাথাটা টেবিলে এমন ভাবে হাতের তালুতে রাখতেন
যেন মনে হত তিনি যেন দীর্ঘ সময়ব্যাপী সেজদারত।
আমাদের এক মামা স্কুলের শিক্ষক ছিলেন,
তিনি শিক্ষকদের কমন রুমের এক কোণে রাখা
প্রধান শিক্ষকের বিছানাপত্র তল্পিতল্পা
স্কুল সংলগ্ন খালে ফেলে দিয়ে লোকাল হিরো বনে গিয়েছিলেন।

মাধ্যমিকে পড়াকালীন দেখতাম স্কুলের শিক্ষকরা
তাদের কাছে প্রাইভেট পড়া ছাত্রদের পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর বলে দিতেন,
কিন্ত যেদিন পাড়ার কলেজের হট্টগোলে কলেজের প্রিন্সিপাল রমেশ কান্তি স্যার
দারোগা সাহেবকে 'স্যার' সম্বোধন করে সমস্যার সমাধান চাইলেন
সেদিনের পর থেকে আমার কখনোই শিক্ষক হতে মন চাইতো না।

তারপর অনেকদিন ব্যয়িত হয়েছে
আমার কিছুই হতে মন চায়নি।
চারদিকে এতবেশী হতে চাওয়াচাওয়ির প্রতিযোগিতায়
আমি হয়ত কোন কিছুর সংগেই মানিয়ে নিতে পারিনি কিংবা কিছুই হতে পারিনি।

বাড়ির পাশের ফালু শেখের বেটা আমার সহপাঠী ছিল,
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মাথায় লাল রুমাল বেঁধে
সে তখন মোটরসাইকেল চড়ে সারা মহল্লা দাবড়িয়ে বেড়াত।
বেশ কিছুদিন আগে সে যখন এমপি নির্বাচিত হয়ে শেষমেশ এমনকি মন্ত্রীও হয়ে গেল
সারাদেশে মেধাবী নেতা হিসেবে তার নামধাম দ্রুতই ছড়িয়ে পড়লো।
স্বাস্থ্যখাতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃৃক
কয়েকবার ভূয়সী প্রশংসার স্বীকৃতিও পেয়েছেন।
কেননা তিনি ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ায় চল্লিশ হাজার টাকা দামের কম্পিউটার
মাত্র চারলাখ টাকায় ক্রয় করেছেন;
যা ছিল পূর্ববর্তী সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর চেয়ে দুই লক্ষ টাকা কম।

আজ এই বৈশ্বিক মহামারীর ক্রান্তিলগ্নে স্বাস্থ্যখাত বিশেষ উল্লেখযোগ্য,
মিলিয়ন ডলারের হিসেবনিকেশে তিনি বড় বেশী যত্নবান;
অফিসে তাকে যেতেই হয় সরকারী পাজেরোতে নির্ধারিত ড্রাইভার দ্বারা।
এই মহান নেতা আজ করোনা আক্রান্ত!
ঘুবচি-বস্তির কাছাকাছি স্বল্প ভাড়ায় ভাড়া থাকা তার গাড়ির ড্রাইভার রহমতুল্লাহর
পুরো পরিবারের করোনা পজিটিভের রেজাল্ট এসেছে দুইদিন আগেই।
জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা
এই মহান নেতার সম্ভাব্য অন্তর্ধানে আমাদের মাননীয় সরকার প্রধান ঠিক করেছেন
রাজধানী থেকে অদূরে 'অপ্রয়োজনীয় বনাঞ্চল' সাফ করে
তার নামেই হবে ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব 'শেখ সাইখ বিন রাজ্জাক কম্পিউটার ল্যাব'।
আমি কল্পনায় দেখছি অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে নিয়ন বাতিতে জ্বলে উঠছে রাজ্জাকের নাম।
ফিসফিসিয়ে নিজের অজান্তেই বলে উঠলাম
'যে হওয়ার সে এমনিতেই হয়,
পচে যেয়েও পাথরে খোদাই হয়ে বেঁচে থাকে মহাকাল।'

০২রা জুন ২০২০
যুক্তরাজ্য।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০২০ সকাল ১০:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর।

২| ০২ রা জুন, ২০২০ দুপুর ১:৫৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: মন ছুঁয়ে গেল লেখা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.