নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেতনার বিকাশ

মহি আহমেদ

No two men ever judged alike of the same thing, and it is impossible to find two opinions exactly similar, not only in different men but in the same men at different time, ~Michel Montaigne

মহি আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে শশিুটি নাড়া দিল বিশ্বের অগণতি মানুষরে হৃদয়কে।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:১৫



কোমরের দু’পাশে দুটি হাত রেখে ছোট শরীরটা ভেজা বালিতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকার ছবিটি ছিল মাত্র ৩ বছরের সিরিয়ার ছোট্ট ছেলে আয়লানের মৃতদেহের। গত সপ্তাহে এ ছবিটি যখন মিডিয়াতে আসল তা দেখে বিশ্বের অগণিত মানুষের হৃদয়কে মুচড়ে দিয়েছিল মর্মাহত করেছে বিশ্বের মানুষকে। ইন্টারনেট, ফেইস বুক, টুইটার, টিভি, পত্রিকা ইত্যাদি সকল মিডিয়ার হেডলাইন ছিল সিরিয়ার ছোট্ট ছেলে আয়লানের পানিতে ডুবে মৃত্যুর খবর। আয়লানের বড়ভাই বছর পাঁচেকের গালিপের দেহ পড়ে ছিল ভাইয়ের থেকে ১০০ মিটার দূরে। গালিপের শরীরে কোনো লাইফ জ্যাকেট ছিল না যা সমুদ্রে তাকে ভাসিয়ে রাখতে পারে, ছিল না এমন কোনো কিছুই। দুই ছেলে ও স্ত্রীকে হারিয়ে শোকে পাথর আবদুল্লা কুর্দি সে দিনের কথা ভেবে এখনো কেঁপে কেঁপে উঠছেন। যে দালাল তাদের মোটরবোটে করে গ্রিসে পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সে তা রক্ষা না করে মোটরবোটের বদলে পনেরো ফুটের রাবারের ডিঙি নিয়ে হাজির হয়েছিল সেটা এতটাই পলকা যে ঢেউয়ের ধাক্কায় তা উল্টে যেতে এক মুহূর্তও সময় নেয়নি। আবদুল্লার আক্ষেপ, ‘‘আগেও বহু বার দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কোনো বারই সফল হইনি। এ বার একজন পালতোলা নৌকায় করে গ্রিসে পৌঁছে দেবে বলেন। সেই আশ্বাসেই বুক বেঁধে যাত্রা শুরু করেছিলাম। কিন্তু কি থেকে কী হয়ে গেল!’’

প্রশ্ন হচ্ছে সিরিয়ার ছোট্ট ছেলে আয়লানের মৃতদেহের ছবি তুরস্কের সাংবাদিক নিলুফার দেমির ক্যামেরায় ধরা পড়ায় ও প্রকাশিত হওয়ায় বিশ্বের মানুষের হৃদয়কে মুচড়ে দিয়েছে ও ব্যথিত করেছে ঠিকই কিন্তু যে কারণে আজ ছোট্ট ছেলে আয়লানের মত হাজারো শিশু মারা যাচ্ছে সিরিয়ার যুদ্ধে তা বন্ধ করতে কি সত্যি পশ্চিমা বিশ্ব বা বিশ্বের মুসলিম দেশের ক্ষমতাসীন শাসকেরা এগিয়ে আসছে? তাই আজ পৃথিবীর মানুষকে প্রশ্ন করতে হবে আর কত প্রাণ কাড়ার পর বন্ধ হবে মধ্যপ্রাচ্যর এই সব যুদ্ধ? কোথায় বিশ্ব বিবেক?

কানাডার দৈনিক পত্রিকা গত কালকের "টরন্টো ষ্টারে" পড়লাম "সিরিয়ান নেটওয়ার্ক অফ হিউম্যান রাইটসের" সাম্প্রতিক জরিপে প্রকাশ গত ১লা জানুয়ারি থেকে ৩১ অগাস্টে পর্যন্ত কেবল শিশুর মৃত্যু ঘটেছে ২,২৩৬ জনের যার শতকরা ৮২% মৃত্যুর জন্য দায়ী হচ্ছে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আসাদের সামরিক হামলা। হেলিকপ্টার থেকে তথাকথিত "ব্যরেল বোমা" নিক্ষেপের ফলে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে নারী পুরুষ ও শিশু সহ অসংখ্য অসহায় আদম সন্তান। অন্যদিকে আইসিস জঙ্গি হত্যার জন্য পশ্চিমাদের বোমা হামলায়ও মারা যাচ্ছে অনেক বেসামরিক মানুষ।

২য় বিশ্ব যুদ্ধের পর সম্ভবত দলে দলে এত অধিক সংখ্যক মানুষের ঘরছাড়া হতে হয়নি যেমনটি শুরু হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ করে সিরিয়া, ইরাক ও লিবিয়ার চলমান যুদ্ধের কারণে । এই হতভাগা নর নারী ও শিশুদের প্রায় সবাই মুসলিম পরিবারের মানুষ এবং তাদের আশপাশের দেশও মুসলিম দেশ কিন্তু আজ লক্ষ লক্ষ মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচার আশায় ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার অন্বেষণে পাশের মুসলিম দেশগুলাতে থাকতে না পেরে পালাতে হচ্ছে ইউরোপ আমেরিকার দিকে। গত ৪ বছর ধরে যুদ্ধে বিধ্বস্ত এক মাত্র সিরিয়ার ভেতরে ৮০ লাখ লোক গৃহহীন। চল্লিশ লাখেরও বেশি লোক দেশ ছেড়ে বিদেশে আশ্রয় খুঁজছে অর্থাৎ চার মিলিয়নের অধিক মানুষ রিফিউজি হয়ে অত্যন্ত কষ্টের জীবন যাপন করছে রিফিউজি ক্যাম্পে। কল্পনা করা যায় না কি করুণ অবস্থা! জাতিসংঘ উদ্বাস্তু হাই কমিশনার সূত্রে (পরিসংখ্যান ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আশ্রয় দিয়েছে তুরস্ক (১৯,৩৮,০০০ জন)। এরপর লেবানন ১১,১৩,৯৪১ জন। জর্ডান দিয়েছে ৬২৫,২৪৫ জন। ইরাক ২,৪৯,৪৬৩ জন, মিশর ১,৩২,৩৫৭ জন, উত্তর আফ্রিকা ২৪,০৫৫ জনকে আশ্রয় দিয়েছে।

মুসলিম বিশ্বের নেতারা এমনকি পশ্চিমা বিশ্বের নেতারাও বর্তমান বিশ্বের এই চরম হিউম্যান ট্রেজিডির প্রতি উদাসীন থাকতে দেখা যায়! আর যখন দুএকটি চরম দু:খ জনক ঘটনার খবর মিডিয়ায় এসে যায় তখন সবার নজর পড়লেও এ জন্য স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। গত শুক্রবার মসজিদে শুনলাম জার্মানিতে চার্চে আশ্রয় প্রাপ্ত অনেক মুসলিম রিফিউজি ক্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে! তাদেরকে কি দুষ দেয়া যায়? পশ্চিমা দেশের সাধারণ মানুষের মহানুভবতা দেখে এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া মানুষের পক্ষে স্বাভাবিকই হতে পারে। ধিক আমাদের মুসলিম সমাজ ও মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্র নায়কদেরকে।

আমি মনে করি আমাদের মত সাধারণ মানুষ শুধু দু:খ না করে যুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ার উদ্বাস্তু মানুষদেরকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি সে প্রচেষ্টা করাই এখন সবচেয়ে জরুরি। ইসলামিক রিলিফ এ ব্যপারে প্রশংসনীয় কাজ করছে তাদের মারফত আপনার সাহায্য পাঠাতে পারেন।
লাইফ লাইন সিরিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান টরন্টোতে সিরিয়ান উদ্বাস্তুদেরকে নিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছে। কেউ চাইলে তাদের মারফৎও সাহায্য করতে পারেন যাতে কানাডা আসার সুযোগ পায় কিছু মানুষ। তাছাড়া এভাবে আরো বিভিন্ন সংস্থা আছে যাদের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করে সাহায্য পাঠানো যাবে।

সত্যি বলতে কি মুসলিম বিশ্বের অবস্থা নিয়ে ভাবতে গেলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। লিখতে চাইলে আর লিখা যায়না। আল্লাহ কবে যে আমাদেরকে এ দুরাবস্থা হতে উদ্ধার করবেন আল্লাহ ভাল জানেন বলা ছাড়া কোন আশা দেখছিনা।

এ বিষয়ে আমার পুরানো দুটা লিখার লিংক দিলাম।

সিরিয়ার বিপ্লব বদলে দিতে পারে মুসলিম বিশ্ব
এ কি সেই আখেরী জামানার আলামত? »

বাস্তবে কতজন সিরিয়ান রিফুইজি যেতে পারবে পশ্চিমা দেশে নিচের ভিডিওটা দেখলে বুঝা যাবে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২০

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: ভাই, আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে থেকে আল্লাহ তার সকল নবী-রাসূল-পয়গম্বর-আসমানী কিতাব সবকিছুই নাজিল করেছিলেন এই বর্বর আরবদের পথে আনতে...লাভের লাভ তো কিছুই হয় নাই, বরং ইসলাম ধর্মই হয়ে গিয়েছে সন্ত্রাসীদের হাতিয়ার!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.