![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাইয়িদুনা মুসা ()-এর ওফাতের পর ইউশা ইবনে নুন বনি ইসরাইলকে তিহ ময়দান থেকে বের করে জর্দান নদীর তীরে আরিহা নামক স্থানে নিয়ে যান। এ শহরটি বড়ই মজবুত স্থানের মধ্যে বিদ্যমান ছিল এবং কয়েকটি দূর্গ সমৃদ্ধ ছিল। মানুষের আবাদি অনেক ছিল। ইউশা ইবন নুন ছয় মাস পর্যন্ত উক্ত শহরটি অবরোধ করে রাখেন। অতঃপর একদিন ঘেরাও করে অনেক তুরি বাজাল এবং এমন তাকবির ধ্বনি দিতে লাগল; যার কারণে দুর্গের এক দেওয়াল পড়ে গেল। তারা দুর্গে প্রবেশ করল এবং ভেতরে যা কিছু পেল সব গনিমতের মাল বানিয়ে নিল, বার হাজার নারী-পুরুষকে হত্যা করল, বেশ কয়েকজন বাদশার সাথে তারা মোকাবেলা করল এবং শামের এগার জন বাদশার উপর তারা বিজয়ী হয়ে গেল। এমনকি জুমার দিন আসরের পর পর্যন্ত এই অবরোধ জারি রইল।
সূর্য যখন অস্তমিত হওয়ার নিকটবর্তী হল, যেহেতু পরের দিন সপ্তাহ শেষ ছিল অর্থাৎ শনিবার ছিল, তাই সেই দিনটির সম্মান করা আবশ্যক। ইউশা ইবন নুন সূর্যকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘তুমিও নিজের স্থান অতিক্রম করার ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুমের অনুসারী আর আমিও জিহাদ করার জন্য আদিষ্ট।’ তারপর বলতে লাগল, ‘হে আল্লাহ! বিজয় হওয়ার আগ পর্যন্ত সুর্যকে এভাবেই রেখে দাও।’ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সূর্যকে থামিয়ে দিলেন, তারপর এক পর্যায়ে তারা শহর বিজয় করে নিলেন।
সাইয়িদুনা আবু হুরায়রা () থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল () এরশাদ করেছেন:
إِنَّ الشَّمْسَ لَمْ تُحْبَسْ لِبَشَرٍ إِلَّا لِيُوشَعَ لَيَالِيَ سَارَ إِلَى بَيْتِ الْمَقْدِسِ
নিশ্চয় সূর্য কখনো থেমে যায়নি ইউশা ইবনে নুন ব্যতীত অন্য কোনো মানুষের জন্য। যখন তিনি রাতে বায়তুল মাকদিসকে বিজয় করেছেন তখন সুর্যকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সাইয়িদুনা আবু হুরায়রা () থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ () বলেছেন:
" غَزَا نَبِيٌّ مِنَ الأَنْبِيَاءِ فَقَالَ لِقَوْمِهِ لاَ يَتْبَعْنِي رَجُلٌ قَدْ مَلَكَ بُضْعَ امْرَأَةٍ وَهُوَ يُرِيدُ أَنْ يَبْنِيَ بِهَا وَلَمَّا يَبْنِ وَلاَ آخَرُ قَدْ بَنَى بُنْيَانًا وَلَمَّا يَرْفَعْ سُقُفَهَا وَلاَ آخَرُ قَدِ اشْتَرَى غَنَمًا أَوْ خَلِفَاتٍ وَهُوَ مُنْتَظِرٌ وِلاَدَهَا . قَالَ فَغَزَا فَأَدْنَى لِلْقَرْيَةِ حِينَ صَلاَةِ الْعَصْرِ أَوْ قَرِيبًا مِنْ ذَلِكَ فَقَالَ لِلشَّمْسِ أَنْتِ مَأْمُورَةٌ وَأَنَا مَأْمُورٌ اللَّهُمَّ احْبِسْهَا عَلَىَّ شَيْئًا . فَحُبِسَتْ عَلَيْهِ حَتَّى فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ - قَالَ - فَجَمَعُوا مَا غَنِمُوا فَأَقْبَلَتِ النَّارُ لِتَأْكُلَهُ فَأَبَتْ أَنْ تَطْعَمَهُ فَقَالَ فِيكُمْ غُلُولٌ فَلْيُبَايِعْنِي مِنْ كُلِّ قَبِيلَةٍ رَجُلٌ . فَبَايَعُوهُ فَلَصِقَتْ يَدُ رَجُلٍ بِيَدِهِ فَقَالَ فِيكُمُ الْغُلُولُ فَلْتُبَايِعْنِي قَبِيلَتُكَ . فَبَايَعَتْهُ - قَالَ - فَلَصِقَتْ بِيَدِ رَجُلَيْنِ أَوْ ثَلاَثَةٍ فَقَالَ فِيكُمُ الْغُلُولُ أَنْتُمْ غَلَلْتُمْ - قَالَ - فَأَخْرَجُوا لَهُ مِثْلَ رَأْسِ بَقَرَةٍ مِنْ ذَهَبٍ - قَالَ - فَوَضَعُوهُ فِي الْمَالِ وَهُوَ بِالصَّعِيدِ فَأَقْبَلَتِ النَّارُ فَأَكَلَتْهُ . فَلَمْ تَحِلَّ الْغَنَائِمُ لأَحَدٍ مِنْ قَبْلِنَا ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى رَأَى ضَعْفَنَا وَعَجْزَنَا فَطَيَّبَهَا لَنَا "
পূর্বের যামানার নবিগণের মধ্যে কোন এক নবি [ইউশা' ইবনু নুন () যিনি লাম (বাহরাইন) দেশে মুসা ()-এর প্রতিনিধি ছিলেন] জিহাদে রওনা দিলেন। তিনি তার লোকদের বললেন, এমন লোক যেন আমার সাথে অভিযানে না আসে, যে ব্যক্তি সদ্য বিবাহ করেছে এবং বাসর যাপনে ইচ্ছুক, কিন্তু এখনো তা সম্পন্ন হয়নি। সে ব্যক্তি যেন না আসে যে গৃহ নিৰ্মাণ করেছে এবং এখনো তার ছাদ দেয়নি এবং সে ব্যক্তি যেন না আসে যে গর্ভবতী ছাগল বা উটিনী ক্রয় করেছে এবং সেগুলোর বাচ্চা প্রসবের অপেক্ষায় আছে।
রাবি বলেন, তারপর তিনি জিহাদে গমন করেন এবং আসরের সালাতের সময় যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিকটবর্তী এক গ্রামে পৌছেন। তখন তিনি সূর্যকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমিও আদিষ্ট এবং আমিও আদিষ্ট। ইয়া আল্লাহ! তুমি একে আমার জন্য কিছুক্ষণ থামিয়ে রাখো (সূর্যাস্তের পূর্বেই বিজয় পাওয়ার জন্য)। সূর্যকে থামিয়ে দেয়া হলো। অবশেষে আল্লাহ তা'আলা তাকে বিজয় প্রদান করলেন। রাবি বলেন, তারা গনীমাতের মাল একত্রিত করল। তখন তা খাওয়ার জন্য আগুন এগিয়ে এলো। কিন্তু অগ্নি তা খেতে অস্বীকার করল।
তখন সে নবি বললেন, তোমাদের মধ্যে আত্মসাৎকারী রয়েছে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে আমার কাছে বাই’আত করবে। সুতরাং তারা তার কাছে বাই’আত করল। এতে এক ব্যক্তির হাত নবির হাতের সাথে লেগে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আত্মসাৎকারী রয়েছে। কাজেই তোমাদের গোত্রের লোকেরা আমার কাছে বাই’আত করুক। অতঃপর তার ঐ গোত্রের লোকেরা বাই’আত করল।
রাবি বলেন, তখন নবির হাত দু' বা তিন ব্যক্তির হাতের সাথে লেগে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আত্মসাৎকারী রয়েছে। তোমরা আত্মসাৎ করেছ। রাবি বলেন, তারপর তারা নবির কাছে একটি গাভীর মাথার পরিমাণ স্বর্ণখণ্ড বের করে দিলো। আর তারা সেটিও ঐ সম্পদের সাথে রাখল। তারপর আগুন এগিয়ে এসে তা খেয়ে ফেলল। আমাদের পূর্বে কারো জন্য গনীমাতের মাল হালাল ছিল না। আল্লাহ তা'আলা আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখে আমাদের জন্য গনিমতের মাল হালাল করে দিলেন।
যখন বনি ইসরাইল বাইতুল মাকদিসকে বিজয় করে নিলো, তখন বাইতুল মাকদিসকে নিজেদের আবাসস্থল বানিয়ে নিলো। আল্লাহ তাআলার নবি ইউশা () তখন তাওরাতের আলোকে তাদের মধ্যকার বিচার ফয়সালা করতেন। ১২৭ বছর বয়সে নবি ইউশা ইবনে নুন () মৃত্যুবরণ করলেন। নবি মুসা ()-এর মৃত্যুর পর তিনি ২৭ বছর জীবিত থাকেন।
(গল্পটি শাইখ ইবরাহিম ইবন আবদুল্লাহ আল-হাযেমি লিখিত একটা বই থেকে অনুবাদ করা হয়েছে।)
©somewhere in net ltd.