নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মান্টোর অনন্য কালো সীমানা

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩২


সাদত হাসান মান্টোর ছোটগল্প টোবাটেক সিং অবলম্বনে মঞ্চ নাটক ‘ভাগের মানুষ’ দেখে বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম। নাটকে দেশভাগের কয়েক বছর পরের ঘটনাকে তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর রচনার সিংহভাগ জুড়েই সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প সংক্রান্ত প্রকাশ রয়েছে। নিজেকে দেশত্যাগ করতে হয়েছিল বলে এর মর্মজ্বালাটা তিনি ভালই বুঝেছিলেন তবে তার মতো প্রকাশ আর কেউ করতে পারেননি। দুবছর আগে প্রথম আলোতে মান্টোর কতোগুলো গল্প প্রকাশিত হয়েছিল যা অনুবাদ করেছিলেন জাভেদ হুসেন। সেই গল্পগুলোসহ তার অনুবাদে মান্টোর ৩২টি গল্প নিয়ে ছোট বই কালো সীমানা পড়ে আবারো সেই মুগ্ধতা ফিরে এলো। এবারো ফিরে এলো সাম্প্রদায়িকতার উপর তীব্র ঘৃণা, মৌলবাদী হিংস্রতার বিষয়গুলো ভেসে উঠল চোখের সামনে।

তাঁর গল্পগুলো ঈশপের গল্পের মতোই তবে তার চরিত্রগুলো সত্যিকারের মানুষ। হতভম্ব হওয়ার মতো উপস্থাপনা, অনন্য কটাক্ষ, একেবারেই পরিমিত উপস্থাপন আর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয়াবহ প্রকাশ। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মানবিক বিপর্যয়ের কথা এরচেয়ে তীব্র কটাক্ষ করে উপস্থাপন করা অসম্ভব বলেই মনে হবে। নামে ৩২টি গল্প হলেও বস'ত এগুলো অনুগল্প। কোনটি কয়েক লাইনে মাত্র। কয়েকটি গল্প তুলে দিচ্ছি মন্তব্যগুলো আমার-

লোকসান

দুই বন্ধু মিলে দশ-বিশজন মেয়ের মধ্য থেকে একটা মেয়েকে বেছে বেয়াল্লিশ টাকায় কিনে নিল। রাত শেষ হলে পরে এক বন্ধু সেই মেয়েকে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার নাম কী?’
মেয়ে তার নাম বলল। নাম শুনে সেই বন্ধু হতবাক হয়ে রইল। বলল, ‘আমাদের তো বলর তুমি অন্য ধর্মের!
মেয়েটি জবাব দিল, ‘ওরা মিথ্যে বলেছে।’
এই কথা শুনে সে ছুটে তার বন্ধুর কাছে গিয়ে বলল, ‘ওই হারামজাদারা আমাদের ধোঁকা দিয়েছে। চল মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিয়ে টাকা নিয়ে আসি।’

মন্তব্যঃ গল্পটি পড়ে আমরা বুঝতে পারি সহজেই কি হয়েছে। মেয়েটি ছিল একই ধর্মের। ওরা অন্য ধর্মের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে। দালালও বুঝেছিল ভিন্ন ধর্মের মেয়েকেই ওরা ভোগ করবে। কিন্তু ওদের সাথে সাপ্লায়ার প্রতারণা করলে ওরা ক্ষুব্ধ হয়। ওদের কাছে পতিতারও জাত বড় হয়ে উঠে অথচ কোন পতিতাকে রক্ষা করতে কাউকে দেখা যায় না। এটাই ধর্মান্ধদের ভাবাদর্শ।

জবাই আর কোপ

‘আমি লোকটার গলায় ছুরি ধরলাম, ধীরে ধীরে পোঁচ দিয়ে জবাই করলাম।’
‘এ তুই কী করলি!’
‘কেন?’
‘জবাই করলি কেন?’
‘এভাবেইতো মজা!’
‘মজার বাচ্চা, তুই কোপ দিয়ে মারলি না কেন? এই ভাবে ...।’
যে জবাই করেছিল তার গলা এক কোপে আলাদা হয়ে গেল।

মন্তব্যঃ মৌলবাদীদের প্রতিক্রিয়াশীলতা এমনই। দেশভাগের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তারা বিধর্মীদের অহরহই খুন করতো। আমরা তাদের চিনি। তুচ্ছ কারণেই তারা যেমন অন্যদের খুন করতে পারে আবার নিজেদের মধ্যেও তা করতে পারে। দানবদের হাতে মানবতা বলতে কিছু থাকে না। মৌলবাদীদের মধ্যে কোন মানবতাও থাকে না।

আতিথেয়তা

চলন্ত গাড়ি থামানো হলো। অন্য ধর্মের সবাইকে বের করে করে তলোয়ার আর গুলি দিয়ে নিকাশ করা হলো। এই সব কাজ শেষ করে গাড়ির বাকি যাত্রীদের হালুয়া, দুধ আর ফল দিয়ে আপ্যায়ন করানো হলো। গাড়ি আবার ছাড়ার আগে আপ্যায়নকারীরা যাত্রীদের সামনে এসে বলল, ‘ভাইয়েরা আর বোনেরা! গাড়ি আসার খবর আমরা অনেক পরে পেয়েছি। এই জন্য মনমতো আপনাদের খাতির করতে পারলাম না।’

মন্তব্যঃ একই বাসের অন্য ধর্মের যাত্রীদের খুন করার দৃশ্য দেখে নিজের বেঁচে থাকাটাই বড় বিষয়। সেখানে আতিথেয়তাটা খুবই তুচ্ছ। মনমতো খাতির যত্নের চেয়ে বেঁচে থাকাটাই বড়। যদি অন্য ধর্মের দাঙ্গাবাজদের কবলে পড়তো তবে ওরাই মারা পড়তে আর বেঁচে থাকতো মৃতরা। সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা এতোটাই পাষণ্ড আর দানবীয়।

জুতো

জটলা দিক বদলে স্যার গঙ্গারামের মূর্তির দিকে রওনা হলো। মূর্তির ওপর লাঠির বাড়ি পড়ল, ইট ছোড়া হলো। একজন গিয়ে আলকাতরা মেখে দিল মূর্তির মুখে। আরেকজন অনেকগুলো পুরোনো ছেঁড়া জুতো জমা করে মালা বানিয়ে মূর্তির গলায় পরানোর জন্য সামনে এগোলো। কিন' এর মধ্যে পুলিশ এসে পড়ল। গুলি চলা শুরু হলো।
জুতোর মালা বানানেওয়ালা জখম হলো। চিকিৎসার জন্য তাকে পাঠানো হলো ‘স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে’।

মন্তব্যঃ সবগুলো গল্পই পাকিস্তানের। একজন হিন্দুর মূর্তি তারা সহ্য করবে না। তিনি কতোটা মহৎ তার কোনই মূল্য থাকে না মৌলবাদীদের কাছে। তারা কেবল বিবেচনা করে লোকটি কোন ধর্মের। এজন্যই মাহাত্মা গান্ধীকে খুন করে গর্ব করতে পারে মৌলবাদী নথুরাম গডস। স্যার গঙ্গারামকে আধুনিক লাহোরের পিতা বলা হতো। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও আর্কিটেক্ট হিসেবে লাহোর বিনির্মানে তাঁর বিশাল অবদানের কথা বলা হয়। তিনি মারা যান ১৯২৭ সালে। অথচ তাকেও মুসলিম মৌলবাদীরা ছাড়তে রাজি নয়।

পাঠানিস্তান

‘জলদি বলো, কে তুমি?’
‘আমি ... আমি ...’
‘শয়তানের বাচ্চা, জলদি বল ... হিন্দু না মুসলমান।’
‘মুসলমান।’
‘তাহলে বল তোর নবীর নাম কী?’
‘মোহাম্মদ খান।’
‘ঠিক আছে ... যা।’

মন্তব্যঃ যে বল সেও ঠিকমতো নবীর নাম বলতে পারে না আবার যে খুন করছে সেও জানে না তার নবীর শুদ্ধ নাম কি। শুধু জানে ধর্মের নামে খুন করতে হবে আর তা করতে পারলেই বেহেস্তে যাওয়া যাবে। আরো কয়েকটি গল্পেও এমন অজ্ঞতার প্রকাশ রয়েছে। বইটিতে পাজামা খুলে নুনু দেখে মুসলমান কিনা তা যাচাই করার কয়েকটি তীব্র কটাক্ষের গল্প আছে।

অসাধারণ গল্পগুলো পড়তে পারেন সাদত হাসান মান্টোর কালো সীমানা গল্পগ্রনে'। বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা। মূল্য ১৮০/- টাকা।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:০৬

ঢাকার লোক বলেছেন: বইটা পরিচয় করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। সুযোগমত কিনতে চেষ্টা করব। সাদত হাসান মান্টো আরেকজন ছিলেন কৃশন চন্দর, উভয়ই সামাজিক অনাচারকে তীব্র কটাক্ষ করে লিখেছেন এবং শক্তিশালী লেখক!

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:২৬

মুজিব রহমান বলেছেন: ভারত ভাগ নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে দুজনেই ভাল লিখেছেন।

২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:১৮

ঢাকার লোক বলেছেন: ও একটা কথা, শিরোনামে মান্টু হয়ে গেছে! মান্টো করে দিলে ভাল হয়!

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:২৯

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৫৭

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: দেশ ভাগের কারনে যে মর্মান্তিক সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটে তার উপর মান্টোর অনেক মর্মস্পর্শী গল্প আছে।সেই যে সাম্প্রদায়িক বিষবাস্প ছড়িয়ে পড়ে তার জের আজো শেষ হয় নাই।১৯৪৬ সালে এমনি একটি গনহত্যা হয় হিন্দুদের উপর।যেখানে ৫০০০ হিন্দু নিহত হয়।শুধুমাত্র স্থানীয় একজন পীরের কারনে।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৩১

মুজিব রহমান বলেছেন: নোয়াখালীতে একজন ধর্মান্ধর কারণেই দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিল। দাঙ্গাগুলোতে পীর/ভণ্ড ধর্মান্ধ নেতার কূটকৌশলেই সাধারণ মানুষও উগ্র হয়ে উঠতো। এজন্য দ্রুত মতাদর্শ বদলাতে কাজ করা দরকার আমাদের সম্মিলিতভাবে।

৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:০৫

নাসরীন খান বলেছেন: শুভকামনা রইলো।

৫| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: যেহেতু এই বই নিয়ে আপনি লিখেছেন, সেহেতু বইটি অবশ্যই ভালো হবে।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৩২

মুজিব রহমান বলেছেন: পড়লে আপনার ভাল লাগবে বলেই মনে করি। পড়েই বলুন।

৬| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৪০

কল্পদ্রুম বলেছেন: এত অল্প পরিসরে নিজের ভাবনা প্রকাশের ক্ষমতা মান্টোকে অনন্য করেছে। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ মান্টো মেনে নিতে পারেননি।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:২৮

মুজিব রহমান বলেছেন: মান্টো শিকড়চ্যুত হয়ে বেদন বুঝেছিলেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.