![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র।
রাত তিনটা। আমি স্টাডি রুমে। খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু পড়ছি বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু এতো রাত জেগে খুব ভালো কিছু পড়ার ইচ্ছাটাও খুজে পাচ্ছি না।রাত জাগার এই অভ্যাসটা আমার অনেক আগের , সেই ইউনিভার্সিটি লাইফ থেকেই।শখের কিংবা অভ্যাসের বশে,রাত জেগে বসে আছি ব্যাপারটা আসলে এইরকম না। আমার আসলে ঘুম হয় না। হয় না অনেকদিন থেকেই।রাত জেগে জেগে শুধু ব্লাড প্রেসারটা বাড়ে, আর কিছু হয় না। প্রিয়ম বড় হচ্ছে। প্রিয়ম আমার ছেলে।এইতো সেইদিন হল,পিচ্চি ফুটফুটে একটা বাচ্চা। কি সুন্দর,নরম তুলতুলে। আজকে সে মাকে বলে, “মা, টেক কেয়ার। আমি স্কুল এ গেলাম।ঠিকমত লাঞ্চ করে নিও।ভালো থাকো মামনি। আমাকে নিয়ে টেনশন করো না।” না, ছেলেকে নিয়ে আমি কখনই টেনশন করি না।প্রিয়ম এর রুমের পাস দিয়ে বেডরুমে যাই । বেডরুমে ঢুকেই দেখি অনয় ঘুমুচ্ছে। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে,বউটা কোথায়,কি করতেছে কোন চিন্তা নাই।থাক, ঘুমাক।এই বাড়ির সবাই শান্তি মতো ঘুমায়,আমার ঘুম আসে না।কি করা যায়? ড্রেসিং টেবিল এর সামনে বসলাম অনেক দিন পড়।মনটা কেমন জানি ছিল, আরও কেমন জানি হয়ে গেল। বয়সের ছাপ পড়ে যাচ্ছে মুখে,কি বিপদ। কেবল তো ৩৫ ই পার করতে পারলাম না।হবেই না কেন? রাতের পর রাত জেগে থাকলে তো অবস্থা এইরকম হবেই।ঘুম না হওয়ার একটা ব্যবস্থা হওয়া দরকার। ডাক্তার দেখালাম তো অনেক । লাভ হয় না,খালি গাদা গাদা ঘুমের ট্যাবলেট পেটে পুরে দেয়া হয়, ঘুম আমার আসে না।
সমস্যাটা আমার আসলে মানসিক।খুব ছোট একটা সমস্যা ,আবার অনেক বড়।অনেকদিন আগের একটা ঘটনা খুব ঝামেলা করছে,ইচ্ছা করলেই ছেঁটে ফেলা যায়। কিন্তু পারতেছি কোথায়? নিজের উপর নিজের বিরক্তি বাড়ছে। সমস্যাটা আমার ভার্সিটি লাইফের। তখন ছোট ছিলাম, বাস্তব বুঝতাম না। দেখতে ভয়াবহ রূপসী ছিলাম,অনেক কিছু এড়িয়ে চলতে পারতাম। স্টেজে আগুন ঝরানো পারফরমেন্স দিতে পারতাম,ভাল পড়াশুনা করতে পারতাম। অনেক কিছুই করতে পারতাম।কিন্তু অনেক কিছু বুঝতে পারতাম না।বুঝতে পারতাম না,এই বয়সে একটা ছেলের প্রেমে পাগলের মতো পড়লে কি হয়।এখন বুঝি।এখন বুঝি, মানুষের বেঁচে থাকাটা আসলে কতো বীভৎস।তখন এগুলা কিছুই বুঝতাম না।বুঝি নাই, দুইটা মানুষ নিয়ে একটা পৃথিবী তৈরি করলে কি ধরনের বিপদ হতে পারে। হ্যাঁ আমি সব করতে পারি এই মানুষটা একটা সময় আর কিছুই করতে পারি নি। কারন, আমার আর কিছুই করতে ভালো লাগতো না।আমার আশে পাশের মানুষদের অসহ্য মনে হতো। তারা যে আমার ভালো চাইতো না, তা না।সবাই আমাকে সেই পুরনো ফর্মে দেখতে চাইছিল।দুই একজন ছিল যারা আমার ভয়াবহ শুভাকাঙ্ক্ষী ছিল। তারা মনে করত আমি তাদের অনেক কাছের মানুষ ছিলাম। পুরাই ভুল ধারনা।আমার কাছের কোন কাছের মানুষ ছিল না,না, শুধু একজনই ছিল, যাকে আমি ভালবাসতাম।অন্যদের সাথে শুধু ভদ্রতা করে কথা বলতাম। বুঝতে পারি নাই কি পরিমান অসুস্থ ছিলাম সেই সময়।আমি বুঝি নাই,নিজের পৃথিবী নিজেই ছোট করে আনলে একটা সময় গভীর খাদে পড়ে যেতে হয়। হ্যাঁ আমি কূপের অতল গহ্বরে হারিয়ে গিয়েছিলাম।কতোটুকু ভালবাসলে একটা মানুষের জন্য এতো পাগল হতে পেরেছিলাম আমি? অবাক লাগে আজকাল।
আমি জানতাম ওদের বাসায় হয়ত আমাকে মেনে নিবে না।ছেলে ডাক্তার ছেলের বউ তো ডাক্তার হতেই হবে।কি বিপদ আমি ডাক্তার হবো কেমনে?? আরো অনেক কিছু হতে হবে। একটা মানুষকে পেতে হলে কেন এতো কিছু হতে হবে?
আমি সেই সময় এতো কিছু বুঝি নাই। আবেগের বশে অন্ধ ছিলাম, দিন দিন আরো অন্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম। আমি যে দিন দিন শেষ হয়ে যাচ্ছি সেইটা তখন বুঝি নাই।সব মানুষকে আসলে বুঝা যায় না। আমিও বুঝি নাই। আমি শুধু নিজের দিক দিয়ে সব কিছু দিয়ে যাচ্ছিলাম। একটা মেয়ে হিসাবে আমি যা কিছু দিয়েছি ঐ বয়সে আমার চিন্তা করলেও গা শিউরে ওঠে। হা,আমি ওর থেকে ৩৫০ কি মি দূরে থাকতাম। তাই বলে তাকে কি আমার দেখতে ইচ্ছা করবে না,হাতটা ধরার ইচ্ছা করবে না? এই হাত ধরার ইচ্ছাটা যে কখন গভীর শারীরিক সম্পর্কে রুপ নিয়েছে বুঝে উঠতে পারি নাই। মানুষটাকে বুঝতে পেরেছিলাম এই রকম একটা ঘটনা এর মধ্যে দিয়ে। আমি মনে করেছিলাম, ছেলে ডাক্তারি পড়ে, বুঝতে পারবে একটা মেয়ে কতোটুকু কষ্ট পায় তার লাইফ এর ফার্স্ট টাইম কারো সাথে এইরকম গভীর সম্পর্কে গেলে। না সে বুঝে নাই, এইটা নাকি তার মাথায় ছিল না। যে কষ্ট টা আমি পেয়েছিলাম, আমার সারা জীবন মনে থাকবে। আমার সেই দিন ই উচিত ছিল, ওকে একটা লাথি দিয়ে নিজের জীবনটা কে লাইন এ নিয়ে আসা। কেন জানি পারি নাই , আজো বুঝতে পারি না। মানুষ টাকে অনেক বেশি ভালবাসতাম। তাই সুযোগ দেয়ার কথা চিন্তা করেছিলাম। ওইটাও আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল শেষ পর্যন্ত।
প্রত্যেক বার ভালোবাসার আশ্বাস নিয়ে বুকে বিশাল পরিমাণ ভালবাসা নিয়ে আমি ৩৫০ কি মি একা একা একটা মেয়ে তার কাছে যেয়ে কি পেতাম? কিছুই পেতাম না। পেতাম রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সারা শরীরে তীব্র ব্যথা। নিজের কাছে নিজেকেই অদ্ভুত বলে মনে হতো। যেন, আমি একটা মাংসের টুকরা, সেইটা নিয়ে একটা কুকুর কামড়াকামড়ি করতেছে। আমার কোন কিছুই তার ভালো লাগতো না, শুধু ভালো লাগতো এই চকচকা শরীরটা। এইরকম শারীরিক নির্যাতন করা আমার কেন, কোন মেয়ের পক্ষেই সম্ভব না। প্রত্যেক বার শারীরিক মিলন আমার কাছে এক একটা ধর্ষণ এর সমান মনে হতো। আমি এই ভয়াবহ অত্যাচার সহ্য করে নিতে চাইছিলাম, কারন ওকে আমি ভালবাসতাম। প্রত্যেকবার একি ঘটনার পুনরক্তি আর ঘটনার পর ওকে যেভাবে ক্ষমা চাইতে দেখতাম, আমি একটু হলেও স্বপ্ন দেখতাম ওকে নিয়ে, ঘর বাধার । কিন্তু এতো কিছুর পরেও আমাকে যে পরিমাণ মানসিক অত্যাচার সে করছিল সেগুলা আর মনে করতে চাই না। এতো কিছু করে কি হবে? কি হয়েছিল আসলে আমার? সব মিলায়ে আসলে কিছুই হয় নাই।আমার জীবন থেকে মূল্যবান দুইটা বছর চলে গিয়েছিল,আমার সত্তা নামক জিনসটা চলে গিয়েছিল । পুরুষজাতির উপর আমার বিশ্বাস নামক জিনিসটা উঠে গিয়েছিল । নতুন করে কাউকে ভালোবাসার ইচ্ছাটা বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছিল । আর কি? কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে পড়াশুনাটা শেষ করে ফেলেছিলাম বলে রক্ষা। আশে পাশে কিছু মানুষ ছিল যারা আমাকে বেশ ভালো সাপোর্ট দিয়েছিল সেই সময়টায়। না হলে হয়ত হতাশায় কবেই কোথায় হারিয়ে যেতাম। সেই মানুষ গুলার কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ।
লেখাপড়া শেষ করে, বাবা মা ধরে বেঁধে একটা সুপাত্র দেখে কন্যা দান করলেন। সুপাত্র হল মি অনয় কুমার পাল। আমি আবিষ্কার করলাম,সব ছেলে এক রকম্ না। অনয় ছেলেটা এতো বেশি ভালো, আমাকে কখনই জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করেনি ,আমার অতীত কি? আমি জীবনে যা চেয়েছি ,সেইটা অনয়ের কাছ থেকে পেয়েছি।ভালবাসা পেয়েছি,কেয়ার পেয়েছি,সম্মান পেয়েছি,পরম নির্ভরতা পেয়েছি। আর বিনিময়ে অনয়কে আমি কি দিয়েছি?
না কিছুই দিতে পারি নাই। আজো ভালবাসতেই পারলাম না। প্রত্যেকবার যখন স্বামী স্ত্রী হিসেবে আমরা যখন অন্তরঙ্গ কিছু মুহূর্ত কাটাই, তখন নিজেকে খুব ভালো অভিনেত্রী বলে মনে হয়। ভালবাসা জিনিসটা আসলে আমাকে দিয়ে আর হবে না। বিয়ের এতগুলা বছরপরেও তাই আমি নিজেকে ভয়ংকর অপরাধী বলে মনে করি। এই অপরাধবোধ আমার অতীত কে নিয়ে নয়, অতীত কে ভুলতে না পেরে বর্তমানের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে না আক্ষেপ আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়। প্রতিনিয়ত অভিনয় করতে করতে আমি ক্লান্ত। ইচ্ছা করেসব কিছু ছেড়ে একা কোথায়ও পালিয়ে যাই।বাচ্চা ছেলেটার মামনি ডাকটা মাথায় অ্যালার্ম বেল এর মতো বেজে ওঠে। এতো মানসিক স্ট্রেস আমাকে ঘুমাতে দেয় নাই প্রায় দশ বছর হচ্ছে। আমি তো আর পারছিনা।কি করা উচিত আসলে আমার? আত্মহত্যা করবো? না, ওটা করতে চাইলে অনেক আগেই করতে পারতাম আমি। কি করবো আমি এখন? কবে একটু শান্তি করে ঘুমুতে পারবো?
©somewhere in net ltd.