![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুঁজে বেড়াই নিজেকে হাজারো মানুষের ভিড়ে।
ঘুম আসছে না নাহিদের। চোখ বন্ধ করলেই সেই মায়াবী চোখ দুটোকে দেখতে পাচ্ছে। কেমন জানি একটা অস্হিরতা কাজ করছে। এমনিতে বিছানায় যাওয়ার সাথে সাথেই ঘুম চলে আসে নাহিদের, কিন্তু আজকে চোখটাও বন্ধ করতে পারছে না সে। আর সব দিনের মতই তো আজ সকালে দিনটা শুরু হয়েছিল স্বাভাবিকভাবে। কিন্তু কে জানতো যে আজকের দিনটা নাহিদের মনে সারাজীবন গেঁথে থাকবে। আজ ভার্সিটিতে নতুন ব্যাচের ভর্তি ছিল। নাহিদ ক্লাসের পর আড্ডা দিচ্ছিল চায়ের দোকানে বসে। হঠাৎ ওর চোখ আটকে গেলো একটা নীল রং-এর জামা পরা মেয়ের দিকে। নিশ্চয়ই নতুন ভর্তি হতে এসেছে। মুখটা নিচু করে রেখছিল, তাই চেহারা দেখতে পাচ্ছিল না। কিন্তু ওর চেহারাটা দেখার জন্য নাহিদের খুব ইচ্ছা হচ্ছিল। তাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। একসময় হঠাৎ মেয়েটা মুখ তুলল। আর মুক তুলতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো মেয়েটার সাথে নাহিদের। নাহিদের চোখ আটকে গেলো ঐ মেয়ের চোখে। কি মায়াবী চোখ দুটো! জীবনে অনেক মেয়ের চোখই দেখেছে সে, কিন্তু এই মেয়েটির চোখ যেন তাকে আকর্ষণ করছে। ফেঁসে গেলো নাকি সে শেষ পর্যন্ত?
তারপর সারাদিন সে ঐ চোখের কথা ভুলতে পারেনি। নাহ, এই মেয়েটার নাম জানতে হবে। জীবনে প্রথম কাউকে এতো ভালো লেগেছে। পড়াশুনার চাপে প্রেম ভালোবাসার কথা সে ভাবতেই পারেনি। আশপাশে বন্ধুরা সব ফার্স্ট ইয়ার থেকেই প্রেমনগরে বাসা বাধলেও ও একাই কাটিয়ে দিয়েছে এই চার বছর। বইয়ে মুখ গুজে থেকেছে দিন রাত। এইবার হয়তো ভাগ্যও চায় তার একা জীবনটার অবসান। সকালে উঠেই মেয়েটার খোঁজ করবে সে। এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে সে।
মেয়েটার নাম স্বরূপা। ভর্তি হয়েছে নাহিদেরই ডিপার্টমেন্টে। আজ একমাস হয়ে গেছে ওদের ক্লাস শুরুর । নাহিদ ইতিমধ্যে ওর ব্যাপারে সব জেনে ফেলেছে খোঁজখবর নিয়ে। আজ ওর সাথে কথা বলে ওর নম্বর নিয়েছে নিজেই। সন্ধ্যার সময় কল দিলো ও স্বরূপাকে । "হ্যালো, আমি নাহিদ বলছি।"ওপাশ থেকে একটা রিনিঝিনি কণ্ঠ ভেসে আসলো, হ্যা, স্বরূপার কণ্ঠ।
এভাবে কথার শুরু। ওদের কথা চলতে থাকলো, কিন্তু নাহিদের সমস্যা হলো সে কিছুতেই রোমান্টিক কথাবার্তা বলতে পারেনা। আর সারাদিন কথা বলাটাও ঠিক ওর ধাঁচের না। আর এই মুহূর্তে ও শেষ পরিক্ষাগুলো নিয়ে খুবই ব্যস্ত। ভার্সিটি লাইফের শেষে এসে যদি ওর রেজাল্টটা খারাপ হয়ে যায় তাহলে ওর এতোদিনের সব কষ্ট ভেস্তে যাবে। তাই কথা বলার সময়টা ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে। তবে নাহিদ মনে মনে ভাবে পাশ করার পর একটা চাকরি পেলেই এইসব সময় পুষিয়ে নিবে সে।
দুইমাস হয়ে গেছে নাহিদের ক্যাম্পাস ছাড়া। অফিসে বসে কি একটা কাজ করছিলো। ফোন বেজে উঠলো। সিয়াম, ওর ক্যাম্পাসের ছোট ভাই। "ভাইয়া কেমন আছেন?" "ভালো, তুমি? পড়াশুনা কেমন চলছে?" "ভালো ভাইয়া। একটা প্রশ্ন করি?? মাইন্ড করেন না তো?" " আরেহ মাইন্ড করবো কেন? বলো।" " ভাইয়া, স্বরূপার সাথে কি আপনার যোগাযোগ আছে?" " হ্যা, কেনো?"" নাহ, ওকেতো দেখি একটা ছেলের সাথে ঘুরতে। মনে হয় ওর সাথে ঐ ছেলেটার প্রেম চলছে।" খুব অবাক হল নাহিদ। কিন্তু সামলে নিলো নিজেকে। বলল," কই আমাকে তো বলল না ও এই ব্যাপারে কিছু।" " আচ্ছা ভাইয়া , পরে কথা বলব। " ফোন কেটে গেলো। একটু ঘোর লাগার মতো লাগল নাহিদের।
দুই বছর কেটে গেছে। এখনও নাহিদ স্বরূপাকে ভুলতে পারেনি। মাঝে মাঝে হঠৎট করেই বোকার মতো ফোন করে বসে সে স্বরূপাকে। জানে এতে ও খুব বিরক্ত হয়। তবুও ওর কণ্ঠটা শুনতে চায় নাহিদ। অনেক চেষ্টা করেছে সে ওকে ভুলার। কিন্তু পারেনি । এখনও মাঝে মাঝে স্বপ্নে ওর সেই মায়াবী চোখ দুটো দেখতে পায়। মনে মনে মাঝে মাঝে চায় সে যাতে স্বরূপার সাথে ঐ ছেলেটার ব্রেকআপ হয়ে যায়। কিন্তু এটা শুধুই দুরাশা। মেয়েরা যে আসলে কি চায় তা বোধহয় নাহিদের কখনও জানা হবে না। ও জানে রোমান্টিসিজমটা একটু কম হয়তো ওর, কিন্তু ওর ভালোবাসার গভীরতাটা তো কম ছিলো না। হয়তো আর কোনোদিন কাউকে ভালোই লাগবে না ওর।
সামনের মেয়েটা একনাগারে বকবক করেই যাচ্ছে। খুব বিরক্ত লাগছে নাহিদের। মেয়েটার নাম মিতু। নাহিদের ফেসবুক ফ্রেন্ড। অনেকদিন থেকেই কথা বলে নাহিদের সাথে । মিতুর আবদারে ওর সাথে মুভি দেখতে এসেছে নাহিদ। এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছে। মাথাটা ব্যথা করে দিল মেয়েটা। এত কথা বলে কিভাবে। মিতু বলেই যাচ্ছে," আমি জানি আপনি বিরক্ত হচ্ছেন। কিন্তু আমি তো আর আপনার মত বোরিং না যে কারোসাথে ঘুরতে এসে চুপ করে বসে থাকবো। এই জন্যই ঐ মেয়েটা আপনাকে ছেড়এ চলে গেছে।" " দেখো সবসময় ওকে নিয়ে বলবা না। আমার ভালো লাগে না।" " তো কাকে নিয়ে বলবো? আমাকে?? হিহিহিহি।" হাসিতে লুটিয়ে পড়ে মিতু। ওর দিকে তাকিয়ে থাকে নাহিদ। কিভাবে এতো হাসে মেয়েটা?
ফেরার পথে রিকশায় উঠে দুইজন। মিতু কথা বলেই যাচ্ছে।হঠাৎ বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। নাহিদ রিকশার হুড উঠাতে চাইলো। মিতু বলে উঠল, " আরেহ, হুড উঠাচ্ছেন কেনো? কি সুন্দর বৃষ্টি পড়ছে, আজকে আমরা ভিজব। ঠিক আছে??" নাহিদের হাতে কোনো অপশন নাই। মেয়েটা পাগল, কি না কি করে বসে। থাক। খুব জোরে বৃষ্টি শুরু হল। নাহিদ রিকশাটাকে একটা দোকানের সামনে থামাতে বলল। দোকানের ছাউনিতে গিয়ে নামল দুইজন। মেয়েটা এখনও বৃষ্টির পানিতে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। ওর দিকে তাকিয়ে ওকে দেখতে থাকে নাহিদ। একটা লাল কামিজ পরেছে ও, আর নীল ওড়না আর চুড়িদার। খুব সুন্দর লাগছে ওকে। এতক্ষণ কেনো এটা চোখে পরেনি নাহিদের? মিতুর চোখে গাঢ় করে কাজল দেওয়া। কপালে লাল টিপ। চুলগুলো পানিতে ভিজে গেছে। নাহিদকে ওর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিতু হেসে উঠে, " কি হলো বোরিং মানুষ, ঘুমাচ্ছেন নাকি?" "নাহ। ঘুমালাম কই? আর আমাকে তুমি বোরিং বলো কেনো? আমি মোটেও বোরিং না। একটু কম কথা বলি। তোমার মতো বাচাল না।" " কি? আমি বাচাল??" তেড়ে আসে মিতু। নাহিদ হেসে উঠে ওকে রাগতে দেখে।
বিছানায় গা এলিয়ে দেয় নাহিদ। আজকে অনেক ঘুরাঘুরি হয়ে গেছে। খুব ক্লান্ত লাগছে ওর। চোখটা বন্ধ করে সে। একটু ঘুম চলে এসেছিল ওর। হঠাৎ হাসির শব্দে ঘুম ভেঙগে যায়। মনে করার চেষ্টা করে কার হাসির শব্দ শুনলো সে। হুমম, মনে পড়েছে। মিতুর হাসির শব্দ। মোবাইলটা হাতে নেয় সে। এবার সে আর যেতে দিবে না মায়াবী হাসিকে। মোবাইলের ওপাশ থেকে ভেসে আসে হাসির শব্দ। " ঘুম আসেনি এখনও?" আবারও এক মায়াবিনীর জালে আটকে গেষে নাহিদ। এবার তাকে পাবেই সে।
২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩১
মামুন রশিদ বলেছেন: বাস্তব-কল্পনা মিলিয়ে সুইট গল্প ।
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪৮
মৌমিতা আহমেদ মৌ বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২০
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: সুইট গল্প , সুন্দর।
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৫১
মৌমিতা আহমেদ মৌ বলেছেন:
৪| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৫
Iluminity বলেছেন: কেন যেন মনে হচ্ছে স্বরুপা এখন খুব একটা ভালো নেই।
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৫৬
মৌমিতা আহমেদ মৌ বলেছেন: ভালোই আছে। মেয়েটাতো ঐ ছেলেটাকে বিয়েও করতে চায় পাশ করে।
৫| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১৯
খেয়া ঘাট বলেছেন: মৌমিতা আহমেদ মৌ- এর গল্পটি মৌ মৌ হয়েছে। অনেক ভালো লাগলো।
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৯
মৌমিতা আহমেদ মৌ বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার কমেন্টও আমার অনেক ভালো লাগলো।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৮
মৌমিতা আহমেদ মৌ বলেছেন: গল্পটা বারবার এডিট করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। তাই গল্পের নোটটা এখানেই লিখছি। এই গল্পটার প্রথম অংশ একজন মানুষের সত্যি কাহিনী নিয়ে, আর শেষের দুই প্যারা আমার কল্পনা। আমি আশা করি তার জীবনেও এমন একজন মিতু আসবে অনেক হাসি নিয়ে।
।