নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্পের নামঃ জোনাকিরা সব ঘুমিয়ে গেছে
প্রকাশিত ছোট গল্পের ক্রম নম্বরঃ ২৭
শব্দ সংখ্যাঃ ২০৩২
ওর নাম মৌনতা।এমন এক মৌনতা যাকে খুঁজে ফিরছে আমার হৃদয় ও শরীর, দুটোই।যতদূর মনে করতে পারছি, আমি এক হিম শীতল বরফের রাজ্যে ছিলাম।যেখানে মানুষকে বন্দি করে রাখা হয় কোন এক বদ্ধ কুঠরিতে।তারপর তার মনকে চাবুক মেরে শেখানো হয় অধ্যবসায়, নির্লিপ্ততা, অহিংসা, আত্ম-নিয়ন্ত্রণ এরকম আরো কত কি! আমি অপেক্ষা করা শিখেছি।ভালোবাসার জন্য, অঙ্গিকার রক্ষার জন্য এবং খানিকটা তোমার জন্য।আমাকে শেখানো হয়েছে জীবনের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে।কিন্তু উত্তরটা জানানো হয়নি।হতে পারে উদ্দেশ্য থাকাটা জরুরী আবার নাও হতে পারে এমনটা।কারণ সেখানে কোন ধরণের মত জোর করে কারো উপর স্থাপিত করা হত না।কেউ সারাদিন ঘুমিয়ে কাটাচ্ছে আর কেউ সারাদিন কাজ করে যাচ্ছে।যদিওবা একে অপরের জন্য সবাই বেঁচে আছে কিন্তু সময় আর রুটি ভাগাভাগি নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।কারো প্রতি কারো কোনো রাগ নেই।কেউ কাজ করে সুখ পাচ্ছে আর কেউ কাজ না করে সুখ পাচ্ছে।কিন্তু সবাই কাজ করছে আর এই ব্যাপারটা বেশ ম্যাজিকাল।
আমাকে একদিন আমার গুরু(ঐ রাজ্যে শিক্ষকদের সাধারণত গুরু বলেই সম্বোধন করা হত) বললেন, ‘নিবিড় তুমি বুঝতে পারছো? এই রাজ্যে নিয়ে তোমার কোন আপত্তি নেই তো?’
হঠাৎ এমন কথা কেনো বললেন বুঝলাম না।আমি বললাম, ‘আপত্তি নেই।বেশ তো আছি।কিন্তু একটা প্রশ্ন আছে!’
গুরু চুপ করে চাদর জড়িয়ে নিয়ে আমার সামনের কেদারায় আস্তে করে বসলেন।বললেন, ‘বল নিবিড়? কি এমন প্রশ্ন তোমার মনে জেগে উঠেছে?’
তারপর জানো মৌনতা আমি সব কথা খুলে বলা শুরু করলাম,
‘গুরু আমার বয়েস কত আমি জানিনা।কিন্তু আঠারো বলে মনে হচ্ছে।আর কতদিন ধরে এই বরফের রাজ্যে আছি তাও জানিনা।অবশ্য এসব আমার প্রশ্ন নয়।আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কোনো এক সুদূর থেকে কেউ একজন আমাকে কাছে ডাকছে।বেশ মিষ্টি লাগছে, জীবন্ত লাগছে।বলতে পারবেন কেন এমন হচ্ছে?’
গুরু একটু গম্ভীর হলেন।তাছাড়া গুরুদের একটু গম্ভীর-ই দেখা যায়।তিনি বললেন, ‘আমার কাছে তোমার এই প্রশ্নের একটা উত্তর আছে।দেখ নিবিড়! তুমি যেখানেই থাকো না কেন সেখানে থাকতে গেলে অবশ্যই তোমাকে সেখানের কিছু নিয়মের মধ্যে থাকতে হবে।আমি তোমাকে একটা শব্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়নি।শব্দটি হলো, “হত্যা”।আজ তোমাকে সেই শব্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।’
এটা বলে গুরু আমার হাতে এক তরবারি তুলে দিলেন আর তারপর বললেন, ‘তুমি এখন মুক্ত’।কিন্তু ব্যাপারটা আরো ঘোলাটে হতে শুরু করলো আমার কাছে।বললাম, ‘মাফ করবেন।আপনি এই মুক্ত শব্দ দিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছেন?’ গুরু তখন উঠে দাঁড়ালো।তারপর বজ্রকন্ঠে বললো, ‘তুমি তৈরি।এখন যাও।আমাদের এখানে কারো কাছে যখন ঐ মিষ্টি আহ্বান আসে তখন আমরা তাকে এই রাজ্য থেকে বিদায় দেই’।
‘কিন্তু গুরু! আমি এখান থেকে কোথাও যেতে চাই না।আমি এখানে বেশ আছি।আমি তো শুধু আপনার কাছে আমার প্রশ্নের উত্তর চেয়েছি’- হঠাৎ কেন জানিনা অধৈর্য্য হয়ে কথাগুলো নিক্ষেপ করলাম গুরুর দিকে।কারণ কোথাও না কোথাও মনে হচ্ছিলো আমার যাওয়া উচিত।সেখানে যাওয়া উচিত যেখান থেকে আমার নামে বেশ মিষ্টি সুরে ডাকা হচ্ছে।গুরু তখন আস্তে করে বললেন, ‘শান্ত হও’।
এরপর গুরু আমাকে কিছু মানুষকে তরবারি দিয়ে আঘাত করতে বললেন।আর আমি তাই করলাম।একটার পর একটা মানুষের হাত-পা কাটলাম।কারো বুকে আবার কারো পিঠে তরবারি চালালাম।কারো গলাটা এক কোপে কেটে ফেললাম।শুভ্র বরফের উপর লাল তরল পদার্থের একটা আচ্ছাদন পড়ে গেলো।কিন্তু কেউ থামতে বললোনা, কেউ নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করলোনা এই আঘাত থেকে বাঁচার জন্য।বরং পরম মমতায় আমার কাজে সবাই সাহায্য করছে।প্রায় দশ থেকে পনেরোজন মানুষের দেহ পড়ে থাকলো বরফের উপর।তারপর আস্তে আস্তে বরফ দিয়ে ঢাকা পড়ছে সেই জায়গাটাও।আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার সেই জায়গাটা পরিষ্কার করছে।আবার কেউ কেউ দেহগুলো টেনে নিয়ে যাচ্ছে দূর দূরান্তে আবর্জনার স্তূপে ফেলে দেবার জন্য।
এই দৃশ্যটা আমার কাছে শুধু একটা দৃশ্য হিসেবে-ই মনে হচ্ছে।কিন্তু কোথাও না কোথাও ভুল লাগছে।অন্যায় লাগছে।একসময় গুরু আমার কাছে আসলেন।আমি তখন খুব দ্রুত শ্বাস নিচ্ছিলাম।তিনি কাছে এসে আমার কানে কানে বললেন, ‘তুমি এখন যেটা করলে এর নাম-ই হচ্ছে “হত্যা”।আর নিঃস্পৃহ হয়ে পড়ে থাকা ঐ দেহগুলো আর এখানে নেই।ওরা আছে, কোথাও না কোথাও আছে।একসময় ওরা প্রকৃতির সাথে মিশে যাবে।আবার হয়তো ফেরত আসবে অন্য কোন রুপে এবং অন্য কোন সাজে।আর তোমাকে দেখে বুঝলাম তুমি প্রস্তুত! তুমি পারবে।অবশ্য আমি আগেও এটা টের পেয়েছিলাম’।
এরপরের গল্পটা একটু অন্যরকম।গুরুর পরামর্শ অনুযায়ী আমি ঘুমাতে গেলাম।গুরু আমাকে কিছু নির্দেশনাবলী দিলেন।একটা বইও দিলেন।বইটির নাম “হিউম্যান ওয়ার্ল্ড”।খুব যত্ন নিয়ে আমি বইটি পড়ছিলাম।এরপর কখন জানি আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।তারপর বিশাল একটা আলোকের ঝলসানি আমার চোখে লাগলো।যখন ঘুম থেকে উঠলাম তখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম ছোট্ট একটি ফ্লাটের একটি রুমে।মনে হচ্ছিলো কয়েকবছর ধরে ঘুমাচ্ছিলাম।গলায় একটি কলেজের আইডি কার্ড।ওখানে আমি আমার নামটা খুঁজে পেলাম, “নিবিড়”।এছাড়া কলেজের নাম এবং আমার জন্ম তারিখ।জন্ম তারিখ অনুযায়ী আমার বয়েস এখন বিশ বছর।বালিশের একপাশে একটা ছোট যন্ত্র আবিষ্কার করলাম।পরে জেনেছিলাম ওটার নাম স্মার্টফোন।স্মার্টফোনে থাকা তথ্য অনুযায়ী আজ আমার কলেজের প্রথম দিন।এছাড়া রুমে আরো একটি বস্তু খুঁজে পেলাম।আর সেটা হলো একটা ফটোগ্রাফ।যেখানে আমি সহ একজন পুরুষ এবং একজন নারীর ছবি রয়েছে।একটু পরেই এক বৃদ্ধ লোক আমার ঘরে প্রবেশ করলেন আর বললেন, ‘নিবিড় তোমার কলেজে যাবার সময় হয়ে গেছে।ফ্রেস হয়ে এসে নাস্তা করো তারপর আমি তোমাকে কলেজে ড্রপ করে দিবো’।খুব সম্ভবত এই বৃদ্ধ লোকটিই আমার বাবা।“হিউম্যান ওয়ার্ল্ড” বইয়ে একটা বিষয় উল্লেখ ছিলো যে, একজন ছোট্ট শিশুর জন্মের আগে-ই একটা গল্প তৈরি থাকে এবং সে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বাকি গল্পের অংশ সে হয়ে যায়।খুব সম্ভবত আমার ব্যাপারে বিষয়টি অন্যরকম।মানে আমার গল্প শুরু হচ্ছে বিশ বছর বয়েস থেকে যেভাবে ছোট্ট শিশুর গল্প শুরু হয় সেভাবে তবে এখানে কিছু ভিন্নতা রয়েছে।এই যেমন, সাধারণ মানুষের আচরণের সাথে আমার আচরণের বিস্তর তফাৎ রয়েছে।
যাইহোক, কলেজের প্রথম দিন।প্রায় শ’খানেক ছাত্রছাত্রী জড়ো হয়েছে এক ক্লাসরুমে।আমি শুধু নির্বাক হয়ে দেখছি সবাইকে।সবাই কত আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে রয়েছে।কিন্তু এখানে কোনো আনন্দ পাওয়ার বিষয় আমি অদৌ লক্ষ্য করছিনা।সংবর্ধনার এক পর্যায়ে সবাই নিজে হতে এসে আমাকে পরিচয় দিতে লাগলো।পরিচয় দেবার সময় সবাই হ্যান্ডশেক করছে।একসময় একটা মেয়ে এগিয়ে আসলো আমার দিকে।হ্যাঁ, ওর নাম মৌনতা।হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে সে বললো, ‘এই মি. ডট..ডট..ডট..! আমি মৌনতা।আপনি?’
এখানে আসার পর আমি অনেকের সাথে পরিচিত হয়েছি এবং হ্যান্ডশেকও করেছি অনেক ছেলে ক্লাসমেট এবং মেয়ে ক্লাসমেটের সাথে।কিন্তু মৌনতার ব্যাপারটা যেনো একটু আলাদা।ওর হাতে হাত রাখতেই কেমন জানি বিদ্যুৎ চমকানোর মত একটা বিষয় দেহে খেলে গেলো।আমি একটু অবাক হলাম তারপর আস্তে করে বললাম, ‘আমি নিবিড়’।
বাকি দিনগুলো খুবই সাধারণভাবে কাটলো।এর মধ্যে আমার এক বন্ধু জুটে যায়।ওর নাম, ‘কৌশিক’।কৌশিকের মতে আমি ওর জীবনের সবচেয়ে কাছের বন্ধু।এছাড়া বাকি সময়গুলো কাটতে লাগলো মৌনতার সাথে।আমরা একসাথে অনেক সময় ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়ালাম।স্ট্রীট ফুড খেলাম, বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে বসলাম, কফি শপে বসলাম।তাছাড়াও জানতে পারলাম এই শহর সম্পর্কে, এই শহরের মানুষদের সম্পর্কে আর আমার পড়াশুনা এবং কলেজ সম্পর্কে।কেন জানিনা মৌনতাকে আমার খুব ভালো লাগে।ওর সাথে সময় কাটাতে খুব ইচ্ছে করে।রাতের বেলা ফোনে কথা বলতে ইচ্ছে করে।মোটকথা, মৌনতাকে চোখের আড়ালে রাখতে আমার একদম ইচ্ছে করে না।জানিনা কি আছে ওর মধ্যে।হয়তো এটাই সেই মানুষ যে আমাকে দূর থেকে ডাকছিলো।কারণ আমি যখন মৌনতার সাথে থাকি তখন খুব পূর্ণতা অনুভব করি।আর যখন সে দূরে চলে যায় তখন শূন্যতাবোধ কাজ করে প্রকটভাবে।কিন্তু কেন এটা আমার সাথে হচ্ছে আমার কাছে তার কোন উত্তর নেই।
একবছর পর...
মৌনতা আর আগের মত নেই।আমার সাথে আর সে কথা বলে না।শুনলাম ওর না কি নতুন একটা বয়ফ্রেন্ড জুটে গেছে।আর সে আর কেউ নয়, আমার ক্লাসমেট এবং সবচেয়ে কাছের বন্ধু কৌশিক।এসব গুঞ্জন শোনা যায় চারপাশে।আমার সাথে কৌশিকও আর আগের মত করে মিশে না।কথা বলে না।কিন্তু আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না যে আমার ভুলটা কোথায়।তবে একদিন মৌনতা আমার উপর রাগ করে কিছু কথা বলেছিলো,
“আচ্ছা নিবিড়! তুই আমার ব্যাপারে কিছু অনুভব করিস না?”
“অনুভব বলতে কি বুঝাচ্ছিস?”
“এই যে আমাকে তুই মিস করিস না?”
“ওহ্, হ্যাঁ করি তো।কিন্তু কেন?”
“মানে তুই একটু বেশিই রোবোটিক... আবেগ-টাবেগ বলে কিছু নেই না কি!”
“মৌনতা তুই রাগ করছিস কেন?”
এরপর মৌনতা আমাকে কাছে টেনে নেয়।আর তারপর ওর ঠোঁটদুটো স্পর্শ করায় আমার ঠোঁটে।যদিওবা আমার ঠোঁট একটু আদ্র হয়ে যায় তবুও ব্যাপারটা ভালোই লাগছিলো।আমি বললাম, ‘তুই এসব কি করছিস?’
মৌনতা রেগে গিয়ে বললো, ‘তোর এখনো কিছু অনুভব হচ্ছে না!’
বিনীত সুরে আমি বললাম, ‘হ্যাঁ হচ্ছে তো।তলপেটের দিকে ক্যামন ক্যামন জানি করছে!”
এরপর মৌনতা ওর ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো আর চিৎকার করে বললো, ‘আমি একটা মেয়ে হয়ে একটা ছেলেকে কিস করছি আর তার তলপেটে ক্যামন ক্যামন জানি হচ্ছে! বিরুক্তিকর!’
এরপর মৌনতা চলে যায়।এবং এটাই ছিলো মৌনতার সাথে আমার শেষ দেখা।তারপর আর কোনদিন মৌনতা আমার সাথে আর কোন যোগাযোগ করেনি।
এরপরের সময়গুলো আমার খুব খারাপ কাটতে লাগলো।মৌনতাকে ছাড়া একটা শূন্যতাবোধ বাসা বাঁধলো আমার হৃদয়ে।আজকাল প্রায় দেখি মৌনতা আর কৌশিক হাত ধরে ক্যাম্পাসে হেঁটে যেতে।ওরা একে অপরকে চুমু খেতো, মিষ্টি গল্পে হাসতে হাসতে রাস্তা হাঁটতো।এমনকি আমি সামনে দিয়ে গেলেও আমার সাথে ওরা কেউ কথা বলতো না।বিশেষ করে মৌনতা আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে কৌশিককে জড়িয়ে ধরতো।এই বিষয়গুলো আমি কেমন জানি মেনে নিতে পারতাম না।যে আকর্ষণবোধ ছিলো আমার মৌনতার প্রতি সেটা যেনো ঘৃণা নামক এক নতুন শব্দে রুপান্তরিত হয়েছে।আমার কেন জানিনা রাগ হচ্ছে মৌনতার প্রতি।কিন্তু কেন? কেন এই রাগ হচ্ছে? আমি তো কখনো রাগ করি না!
এরপর একদিন খুব সকালে একটা এম.এম.এস পেলাম।এম.এম.এস-টি পাঠিয়েছে মৌনতা।সেখানে দেখতে পাচ্ছি কৌশিক আর মৌনতা খুব ঘনিষ্ঠভাবে বস্ত্রহীন অবস্থায় রয়েছে।আর মৌনতা হাসতে হাসতে বলছে, ‘ইউ আর ইম্পোটেন্ট, নিবিড়....ইউ আর সিক...গ্রো-আপ...’।আমি এই শব্দটার সাথে এই প্রথম পরিচিত হলাম।তারপর স্মার্টফোনের বদৌলতে জানতে পারলাম আমার কমতি ঠিক কোথায়।কিন্তু আমার তো সেরকম মনে হয় না।তাই সে দিন রাগে ফেটে পড়েছিলাম।অনেক কষ্ট করে নিজেকে সামাল দিতে হয়েছিলো।এখন আমি মৌনতাকে সব প্রমাণ করতে চাই।কিন্তু কীভাবে? মৌনতা কি আমার কথা শুনবে?
এর ঠিক এক সপ্তাহ পরে আমি মৌনতাকে সন্ধ্যার সময় ফোন করি।আমাদের মধ্যে সংলাপগুলো ছিলো এরকম,
“হ্যালো মৌনতা! কেমন আছো?”
“ভালো।তুমি?”
“ভালো আছি।একবার দেখা করবে আমার সাথে?”
“এখন! এখন তো সন্ধ্যা!”
“শুধু একবার দেখতাম তোমায়।প্লিজ!”
“না, তোমার যা বলার আছে ফোনেই বলো?”
“ধর, একটা পুরনো বন্ধুর জন্য তুমি তোমার জীবনের পাঁচ মিনিট সময় নষ্ট করলে।এটুকু তো চাইতে পারি! কি পারি না?”
খুব বিনীত স্বরে বলায় একসময় মৌনতা রাজী হয়ে গেলো।দেখা করতে চাইলো আমার সাথে।ওদের বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে বললো।আর আমি ঠিক তাই করলাম।তবে যাবার আগে ডাইনিং থেকে একটা চাকু নিতে ভুললাম না।
সাথে একগুচ্ছ বাহারী রকমের ফুল নিয়ে ওর বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।আমাকে এভাবে দেখবে সেটা হয়তো মৌনতা প্রত্যাশা করেনি।তাই বেশ হাসিখুশি মনে এসেই দরজা খুলে দিলো।তারপর যত্নের সাথে ফুলগুলো গ্রহণ করলো।আর বললো, ‘বাসায় কেউ নেই নিবিড়।একজন বাঙালী মেয়ে হয়ে রাতেরবেলা অপরিচিত কাউকে কীভাবে বাসায় ঢোকার অনুমতি দেই বল! হা হা হা...’।যদিওবা ওর এই হাসির ধরণ আমার কাছে বিচ্ছিরি লাগছিলো তবুও হাসিমুখে বললাম, ‘এক কাপ কফি?’
মৌনতা সায় দিলো।একসময় ওর রুমে দুজনেই প্রবেশ করলাম।মৌনতা ফ্রেস হয়ে আমার জন্য এক কাপ কফি আনলো, অবশ্য নিজেও এক কাপ কফি নিয়ে আমার পাশে বসলো।এরপর বাকি সময়টা আমি খুব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলাম।কারণ পরিকল্পনামত আজ আমায় এগুতে হবে।
ওর চোখ দুটো ভারি সুন্দর।আর ওর দেহের গঠন যে কোনো পুরুষকে কাবু করে দেবার জন্য যথেষ্ট।শুভ্র শরীর।বুঝতে পারছিলাম নীরবতা আমাদের কাছে আনছে।প্রথম স্টেপ মৌনতা নিলো।হালকা বাঁকা হয়ে ওর মাথাটা আমার কাঁধে রাখলো।আর আমি ওর চুলের গন্ধ শুঁকতে লাগলাম।যেটা আমায় পাগল করে দিচ্ছিলো।একসময় ওর মিষ্টি ঠোঁট জোড়ায় আমি একটা চুপু এঁকে দিলাম।মনে হচ্ছিলো সে এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো।তারপর উপহার স্বরুপ আরো একটা চুপু পেলাম মৌনতার কাছে থেকে।এরপর আলতো করে ওকে আমার কোলে তুলে নিলাম তারপর শুইয়ে দিলাম খাটেতে।ও দু’চোখ বন্ধ করতেই নিজের ভিতরে আমি ওকে যেনো শুষে নেওয়া শুরু করলাম।
অর্গাজম এর শেষ প্রান্তে এসে আমাকে সে খামচে জড়িয়ে ধরলো।আর আমি আমার ধারালো চাকুটা চালিয়ে দিলাম ওর গলা বরাবর।আর্টারি কেটে যাওয়ায় প্রচুর রক্তে আমার প্রায় ভেসে যাবার মত অবস্থা হলো।ঠিক তখন মনে হচ্ছিলো, সেই বরফে পড়ে থাকা পনেরোজন মানুষের লাশের কথা।সেই রক্তের কথা।যা শুভ্র বরফকেও লাল রঙে রুপান্তরিত করেছিলো।আর আজ মৌনতার শুভ্র শরীর লাল রঙে রঞ্জিত।
কিছুক্ষণ মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করলো সে।একসময় ওর শীতল হাত পড়লো আমার কাঁধে।আড়ষ্ট হয়ে আসলাম আমি।যতদূর মনে পড়ছে পিছনের অনেকগুলো বছর আমি হিম শীতল বরফের রাজ্যে ছিলাম।তাই লাল রাঙা উষ্ণ হাত একটু বেশিই উষ্ণ লাগছে।কে আমি? কি করছিলাম? আর এসবের কি উদ্দেশ্য?
প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর নেই আমার কাছে।কিন্তু একটা জিনিস খুব করে সত্য যে আমি তোমাকেই খুঁজছিলাম।তোমার ঐ চোখদুটো আমায় অনেক দূর থেকে টানছিলো।ভয়ানক নেশা মেশানো তোমার চেহারা, মাতাল আমি সে চিন্তায়।
কিন্তু এত দুরত্ব কেনো ছিলো!
তুমি জানো তোমাকে নিয়ে লিখতে লিখতে আমি এখন ডায়েরীর শেষ পাতায়, জানালা খোলা।বাহিরে তাকাতেই বুঝলাম ভোর হয়ে গেছে আর জোনাকিরা সব ঘুমিয়ে গেছে।
ছবি কৃতিত্বঃ বন্ধু ইন্টারনেট
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০৭
রাজীব নুর বলেছেন: কৌশিক নয় আপনিই ভিলেন।
মউনতারা এরকমই হয়।