নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক ভাল মানুষ ছিলো
মূলঃ রাকেশ তিওয়ারি
(হিন্দি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। ভুলক্রুটি মাফ করবেন।)
অনেক ভাল মানুষ ছিলো, তাই না? অনেক ভাল মানুষ ছিলো। ধরো, এই কথা তুমি বলে দিয়েছো বিশ্বাস করে অথবা অনুমান করে। কারণ কিছু না কিছু বলা কর্তব্য আছে তো তোমার তার জানাযায় বলার জন্য। না বললে তোমার ভালোমানুষির উপর পৃথিবীর সংশয় জাগতো। আর তোমার এই কথা আজ যদি সে শুনতো তাহলে সে খুশিতে নিঃসন্দেহে পাগল হয়ে যেত। বাদ দাও, এটা তো বলো যে, “যদি ভাল-ই থাকত তাহলে ভাল থাকার মূল্যায়ন কেন করলেনা?” সপ্তাহ জুড়ে তোমাকে তো সে অনেক প্রশ্ন করতো কিন্তু সেসবের উত্তর কেন দিলে না? যখন সে বলতো, “বন্ধু, আমার জীবনে দুঃখ ছাড়া আর কিছু কি পাবো না!” আর তুমি হাসি দিয়ে বলতে, “বন্ধু, এসব ছাড়া তোর অন্যকিছু কি বলার আছে?”
উইশ, এই হাসিটার সময় তার দুঃখ ও কান্নার কারণ খুঁজতে একবার। উইশ, সে যতবার বিদায় বলতো তখন অন্তত একবার পিছনে ফিরে তাকালে জানতে যে, তোমার সাথে দেখা করার পর আর কোনদিন সে ঘরে ফেরেনি। তার চেহারা থেকে দুঃখের ছাপ তখনও মুছে যায়নি। ঐ রাস্তার পাশে এক গাছের নিচে একা বসে সে কাঁদত। তুমি নিশ্চয় জানতে যে, সে আমাদের থেকে আজকাল দূরে-দূরে থাকত। একটু উদাসীন হয়ে থাকত। কিন্তু এটা কি জানতে যে, সে একা একা বদ্ধ রুমে শুয়ে থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা সিলিং ফ্যানের ঘূর্ণন গণনা করতো? সে তো বলেছিলো, বন্ধু চলো একবার দেখা করি। বিশেষ কিছু কথা তার শুধু তোমায় কাছে বলার ছিলো। আর তুমি? জীবনে কীভাবে চলতে হয় সেজন্য ম্যাসেঞ্জারে কিছু মজার-মজার কথার সাথে হাসির ইমুটিকন দিয়ে ভেবে নিয়েছিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর যদি এতেও কাজ না হয়?
তাতে কি! সে বেশ সমঝদার মানুষ, বুঝে যাবে। কিন্তু তোমার ঐ ম্যাসেজ থেকে সে ভাবতো এমন কি হলো যে, আমার জীবনে হাসির কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছি না? আর ভাবতো আমার বেঁচে থাকাটা খুব বেশি জরুরী নয় হয়তো। কিন্তু জরুরী ছিলো, উইশ! সেই জরুরী থাকাটা তাকে বুঝিয়ে দিতে পারতে এবং তাকে ভাল অনুভব করাতে পারতে। উইশ, তুমি তাকে এই অনুভব দিতে পারতে এবং কোন শর্ত ছাড়াই তাকে বুকে জড়িয়ে নিতে। উইশ, তুমি জানতে যে, সে প্রতিদিন কিছু না খেয়ে কেন বেহুশ হয়ে পড়েছিলো? উইশ, তুমি জানতে সে কথা বলতে বলতে হঠাৎ থেমে যেত কেন? উইশ, ওর ফেসবুক টাইমলাইন না ঘেঁটে একটু ওর ডায়েরি পড়ে নিতে? তাহলে জানতে তার চোখে বিশেষ কোন স্বপ্ন ছিলো না। বরং তার অনেক কাছের মানুষ থাকলেও মূলত কেউ কাছের ছিলো না। উইশ, আমাদের মধ্যে কেউ অন্তত ওর ঘরে সময়মত পৌঁছাতে পারতাম তাহলে অন্তত সে ঐ ঔষুধের শিশি খোলার পূর্বে একবার ভাবত। উইশ...
মানুষ বলে সম্পর্ক আমাদের জড়িয়ে রাখে, তার ঘরেও সেই বন্ধন ছিলো। যে ঘরে ঐ ঔষুধের শিশি ছিলো ঠিক ঐ একই ঘরে তার বাবা-মায়ের ছবিও ছিলো। কিন্তু সেই সময় কেউ ছিলো না, হৃদয়ের রাখা বন্ধু অনেক ছিলো কিন্তু আশেপাশে কেউ ছিলো না। এবার সে মৃত্যুর দিকে যাওয়াটায় জীবনের গন্তব্য বলে মনে করেছিলো। ভেবেছিলো এটাই সঠিক সময় সবকিছু থেকে উধাও হয়ে যাবার। যাবার সময় সে একটা জিনিস শিখে গিয়েছিলো আর চিরকুটে লিখে রেখেছিলো, “আমি আমার নিজের ইচ্ছায় আত্মহত্যা করছি তাই এতে আমার বন্ধুদের কোনভাবে শামিল করবেন না”। আর তুমি যখন ওর চলে যাবার খবর শুনলে তখন মনে হলো, ইশ! সে যা বলতো তা কত সত্য ছিলো। যা সে বলতো তা হৃদয় থেকে বলতো। এখন এসেছো সাদা কাপড়ে শুধু এটা বলার জন্য যে, সে কত ভাল ছিলো? তুমি এখন এখানে এসেছো নিজেকে শুধু এটা প্রমাণ করার জন্য যে, তুমি তোমাদের বন্ধুত্ব কত সুন্দর ভাবে নিভাতে ঠিক যেমনটা আল্লাহ্ বা ফেরেশতা করে থাকেন! যখন সে ছিলো তখন তো ওর সাথে দেখা করোনি এখন শেষ বিদায় জানাতে এসেছো। যখন পুরনো স্মৃতির ফ্লাশব্যাকে যাবে, যখন ওর কবরে ফুল দিবে তখন অসহায়, নারাজ এবং গম্ভীর আওয়াজ তার আত্মা থেকে শুনতে পাবে। তার বিদেহী আত্মা বলবে, এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী আমরা নিজেরাই তবে এখনো আমার মত ভাল মানুষ তোমার আশেপাশে খুঁজে পাবে। সুতরাং আবার কোন এক ভাল মানুষের সাথে যদি দেখা হয়েই যায় তাহলে তার সাথে কথা বলো, তাকে হৃদয়ে রেখো। আর ঘরে গিয়ে কিছু উপহার দিও আর ঐ ঔষুধের শিশি জানালা দিয়ে বাহিরে ফেলে দিও। হতে পারে তোমার এইটুকু তাকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করবে এবং তাকে সুখে থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া শেখাবে। এতে তোমার কিছুটা পূন্যের কাজও হয়ে যাবে এবং দেখবে সে তোমাকে তার বন্ধু তালিকায় প্রথমে রেখেছে।
এই কথাগুলো আমরা সবাই জানি, সবাই মানি। কিন্তু আজ এই কথাটুকু এজন্য বলা জরুরী ছিলো যেন কাউকে তার বন্ধুর শেষকৃত্যে উপস্থিত হয়ে না বলতে হয়,
“ভাল মানুষ ছিলো!”
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: ঝামেলা বিহীন সুন্দর অনুবাদ করেছেন। পড়ে ভালো লাগলো।