নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তোমার সাথে পরিচিত হবার পর আমার গল্প ওখানেই আটকে গেছে। ঠিক যেন পুরনো টেপ রেকর্ডারে “Pause” বাটনে প্রেস করা হয়েছে। তোমাকে নিয়ে কল্পনার বিস্তৃতি থেকে অবকাশ মিললে তো জীবন নামের এই ট্রেন সামনে যেতে পারবে। স্টেশন থেকে স্টেশন পরিবর্তন হলেও পুনরায় একই ষ্টেশনে নিজেকে আবিষ্কার করার মত বিড়ম্বনা বোধহয় আর নাই।
ইতি
আবির
চিঠি হলে বরং ভালো হত, হোয়াটস্যাপে এর চেয়ে দীর্ঘ কিছু লিখলে মহাকাব্য লিখেছি বলে সবাই হাসবে সাথে কুসুমও। আবির ট্রেনে ফোন হাতে নিয়ে এসব ভাবছে। কিন্তু গল্পটা একটু পুরনো।
কুসুম আর আবিরের জীবন প্রায় একই সাথে শুরু হয়েছিলো। একই বয়েস ওদের। আবির উচ্চাভিলাসী ছেলে আর কুসুম বাস্তবতায় বিশ্বাসী একজন মেয়ে। সম্পর্কে আবির আর কুসুম হচ্ছে খালাতো ভাই বোন। কিন্তু আবির কুসুমের সাথে কখনো দেখা করেনি। আবিরের কাছে সেটা খুব প্রয়োজন বলে মনেও হয়নি। না কখনো সেই খালার বাসায় আবির গেছে। না কুসুম নামের কারো অস্তিত্ব নিয়ে আবিরের মধ্যে কোন ব্যাকুলতা আছে।
এখন আবিরের স্নাতক শেষ। অন্যদিকে কুসুমেরও স্নাতক শেষ। দুইজন জীবন যুদ্ধে বেশ লড়াই করছে, একটা চাকরী দুজনের-ই খুব দরকার। কিন্তু আত্মীয়-স্বজন ভাবলেন এই দুই স্নাতক পাশ বেকারদের কাজে লাগানো যায় কিনা। মানে সংসার। যেটাকে আমরা অনেকে ভাবি, জীবন বদলানোর হাতিয়ার। আর কেউ কেউ ভাবেন, জীবনের অভিশাপ। কিন্তু গুরুজনেরা যা ভাবেন তা সব ক্ষেত্রে হয়তো ভুল হয় না।
পূর্ব-পরিকল্পিত একটি কৃত্রিম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আবির ও কুসুমের দুই পরিবার। আবিরের কাছে ওর মা খুব প্রিয়, অন্যদিকে কুসুমের কাছে ওর বাবা খুব প্রিয়। স্লাইড করে নাটকের পর্দায় এভাবে দেখানো যেতে পারতো যে, কীভাবে আবিরের মা আর কুসুমের বাবা তাদেরকে উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করছেন। যাইহোক, শেষমেশ দুইজন রাজি হলো।
অনুষ্ঠানের নাম “বিশেষ দোয়া ও মাহফিল”। এই অনুষ্ঠানটি চলছে পুরো গ্রামে। মূলত আবিরের পরিবার কেন্দ্রিক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উপস্থিত হয়েছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা তিনজন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার, যারা ইসলামিক বিভিন্ন কায়দা ও কানুন সম্পর্কে সাধারণদের জানিয়ে থাকেন। চারপাশে খুশীর ঢল। একে একে উপস্থিত হচ্ছেন আবিরের পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত অনেক আত্মীয়-স্বজন। দাওয়াত দিতে কার্পণ্য বোধ করেন না আবিরের পরিবার। তাই আত্মীয়-স্বজনদের ঢলও কম নয়।
কিছুবাদে কুসুমও তার পরিবার সমেত হাজির হয়। কুসুম মাশাল্লাহ দেখতে অনেক সুন্দরী। আবিরের মা কুসুমকে এক দেখায় যেন পছন্দ করে ফেলেছেন। ভাবছেন, দোয়া ও মাহফিল শেষে তাদের বিয়েটাও হয়ে যাক, এতেই তিনি অনেক খুশী হবেন। এর একটু বাদেই আবিরের আগমন। বলতে গেলে এই অনুষ্ঠানে আবির হচ্ছে সবকিছুর মধ্যমণি। তাকে জুড়েই তো এত আয়োজন। কিন্তু কোথাও না কোথাও এই দুই পরিবার কুসুমের কথা ভুলে যাচ্ছেন।
অনেক আত্মীয়-স্বজন দেখে একরকম হাফ-ছাড়তে আবির সিঁড়ি বেয়ে উপর তলায় চলে গেল। হ্যাঁ, সোজা নিজের রুমে। উপরে যাবার সময় বেশ কয়েকজনের পরিচিত মুখ দেখে সালাম দিতেও ভুললো না। আর আবিরের এই আচরণ ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ আত্মীয়-স্বজনের নারী সমাজ। অসাধারণ চাহনি আর লম্বা ও পাতলা গড়ন মেয়েদের আজীবনের আদর্শিক সুন্দর পুরুষের উদাহরণ যেন। আর চোখটা একটু নীল হওয়ায় বাকিটা কমতি থাকলেও নিভে গেল। আবির যেন রাতারাতি সবার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
কিন্তু একি! আবিরের রুমে জায়গা করে নিয়েছে কুসুম! আবির থাকবে কোথায়? ধরে নেওয়া যেতে পারে এতে কুসুমের কোন দোষ নেই। কারণ এই অনুষ্ঠানের মত করে এটাও পূর্ব-পরিকল্পিত। এই প্রথমবার দুটো মাছ জালে আটকা পড়েছে। বাকি রুমগুলো অন্যদের কব্জায়। চলছে খোশগল্প বেশ চুটিয়ে। উপায়ান্তর না পেয়ে আবির এক পাশে ব্যাগ রেখে একটা চেয়ারে বসলো। খুব সম্ভবত এটাই ওদের প্রথম কথোপকথন।
আবির: আস-সালামু আলাইকুম, কুসুম
কুসুম: ওয়ালাইকুম সালাম
এরপর কিছু সময়ের নিস্তব্ধতা। কুসুমের সৌন্দর্যে মুগ্ধ আবির কথা বলার সময় শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না। কুসুমের হাতে তখন প্লেটোর “রিপাবলিক” বই। কুসুমের যেন কিছুই আসে না অথবা জরুরী মনে করছে না আবিরের সাথে কথা বলতে। তাই পরবর্তী পদক্ষেপ আবিরের দিক থেকেই আসলো।
আবির: তুমি কি দর্শন বিভাগে পড়েছো?
কুসুম: জি, জনাব। তুমি?
আবির: আমি নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে। পাশাপাশি আমি একজন স্ট্রিট ফটোগ্রাফার।
কুসুম: তোমার তোলা কিছু ছবি দেখাবে?
আবির একটু ঘাবড়ে গিয়ে: নিশ্চয়, কি ধরণের ফটো তুমি দেখতে চাও?
কুসুম: তোমার আর তোমার বন্ধুদের।
আবির: ঠিকাছে, আমি ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করি? আর তুমি পড়াশোনার পাশাপাশি কি করছো?
কুসুম: আমি একজন সোশ্যাল এক্টিভিস্ট।
আবির ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে কুসুমের হাতে দেয়। হালকা স্পর্শ লাগে আবিরের হাতে। হঠাৎ আবির ভাবতে থাকে এমন তুলতুলে মেয়েটা রাস্তায় নেমে শ্লোগান কীভাবে দেয়? সেটাও কি খুব নরম সুরে?
কুসুম গলা খাকারি দিয়ে: হ্যালো আবির? তুমি ঠিক আছো?
আবির একটু থতমত হয়ে: জি, আমি আসলে ক্যাম্পাসের কথা ভাবছিলাম।
কুসুম: ফটোগুলো দুর্দান্ত তুলেছো। একি! এখানে আমার ছবিও দেখছি!
আবির: হোয়াট? সেটা কীভাবে সম্ভব?
কুসুম: নিজে দেখ? তবে একটু জুম করতে হবে।
আবির তখন ঢাকায়। কি যেন আন্দোলন হচ্ছিলো সেখান থেকে কিছু ফটো রিক্সা থেকে তুলে নেয়। পরে আর সেসব পরখ করার মত সময় পায়নি সে।
আবির: ঢাকার এই মুভমেন্টে তুমি ছিলে?
কুসুম: হ্যাঁ, কিন্তু স্ট্রিট ফটোগ্রাফারেরা তো ল্যাম্পোস্টের ছবি তুলতেই ব্যস্ত থাকে। কিন্তু তুমি মানুষের ছবিও বেশ ভালো তুলতে পারো।
আবির: খোঁচা ছিলো? না কি প্রশংসা?
কুসুম: দুটোই।
একটুবাদেই কুসুমের বাবা আসলেন। কিছুক্ষণ আবির ও কুসুমের সাথে কথা বললেন তারপর আচানক চলে গেলেন। ওদিকে ঘড়িতে সময় প্রায় রাত ১০টা। রাতের খাবার দেওয়া শুরু হয়েছে।
আবির: চলো, রাতের খাবারটা খেয়ে নেই? তারপর থাকার ব্যবস্থা। তুমি বরং এখানেই থাকো। আমি ফুপির কাছে থাকবো।
কুসুম: মানে কি? এতবড় ছেলে ফুপির কাছে এখনো থাকে?
আবির: বাবা-মায়ের কাছে সন্তানেরা বড় হয় না, কুসুম!
কুসুম: আরেহ্, সিরিয়াস কেন হচ্ছো? আমি এমনিই বলছিলাম।
অতঃপর আবির আর কুসুম একসাথেই খাবার খেলো। সবাই ওদের দিকে হা… করে তাকিয়ে আছে। কি অদ্ভুত মানিয়েছে দুজনকে। এসব সিক্রেট কথা ফিসফিস করতে করতে অকপটে এক ছোট খালাতো ভাই বলেই দিলো, “কুসুম আপু তোমাকে আবির ভাইয়ার সাথে বেশ মানাবে। তুমি চাইলে আবির ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারো।”
এরপর লজ্জায় আবির আর কুসুম খাবার কোনমতে শেষ করে দুজনেই পুনরায় আবিরের রুমে হাজির।
আবির: ছোট ভাই… অত ভেবে বলেনি…
কুসুম: কেন? যদি ভেবেই এই কথা বলতো কেউ?
আবির: তাহলে নির্ঘাত তুমি রাগ করতে।
কুসুম: আমি কেন রাগ করবো? তুমি রাগ করতে না!
আবির একটু সময় নিয়ে: ইয়ে মানে… এ ব্যাপারে দর্শন কি বলছে?
কুসুম: ভন্ড স্ট্রিট ফটোগ্রাফার!
তারপর দুজনের অকৃত্রিম হাসি কখন জানি রুম থেকে বেড়িয়ে সবার কানে চলে গেল। সবাই সব জানে তাই রাত যে বাড়ছে সে ব্যাপারে কারো তোয়াক্কা নেই। যেন একটা রুম তাদের জন্যই রাখা। আর ওদের খালারা ব্যাপারটা জাস্টিফাই করছে, “ওরা ভাইবোন, অনেকদিন পর দেখা, একটু-আধটু ভালো সময় কাটলে তোমাদের মেনে নিতে সমস্যা হয়। তাছাড়া আনন্দ করার সময়ও তো ওদের, দু’দিন পর সংসার করবে।”
খালা-খালুরা ঠিকই বলছেন। কিন্তু ঘড়ির কাটায় এখন রাত ১২টা। আবির আর কুসুমের খুনসুটি চলছে। এক পর্যায়ে অবস্থা চরম। একে অন্যের সাথে মারামারি করছে। একদিকে ওয়াজ মাহফিলে যৌনতার ব্যাপারে সংযত থাকার কথা বলছে আর অন্যদিকে আবির আর কুসুম একে অপরের চোখে যৌনতা ছাড়া এখন আর কিছুই জানি দেখতে পাচ্ছে না। একসময় কুসুমের আত্মসমর্পণ।
কিন্তু সব গল্পে ভিলেন থাকা জরুরী। নতুবা গল্পের পূর্ণতা পেয়েও স্বস্তি পাওয়া যায় না বোধহয়। আবির আর কুসুমের বেলায় সেটার অন্যথা ঘটবে কেন?
সকালবেলা আবির আর কুসুমের পর্যায়ক্রমে গোসল দেখে একপক্ষ যেমন নীরব থাকলো অন্যপক্ষ তেমনি তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করালো। আবিরের দাদু এই বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তার বাড়িতে তার মেহমান তার দুর্নাম করে যাবে এমন হতে পারে না। মেহমানদের মেহমানের মত করে থাকা উচিত ছিলো।
আবিরের দাদু: সত্যি করে বল দাদু? গতকাল রাতে কি হয়েছে?
আবির: ওটা একটা আক্সিডেন্ট ছিলো দাদু। আপনি বুঝবার চেষ্টা করুন।
কিন্তু না আবিরের দাদু একেবারেই বুঝতে রাজি নন। এই সত্যটার বিচার হওয়া জরুরী। একসময় তিনি কুসুমের বাবা ও মাকেও অপমান করতে ভুললেন না। সবাইকে এক কাতারে ফেলে দোষারোপ করতে লাগলেন।
আর এটা দেখে কুসুম তার ব্যাগ গুছিয়ে এনে বললো, “দাদু, আমি চলে যাচ্ছি। আর এই সমস্ত দোষ আমি আমার মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছি। আর কখনো এই বাড়িতে পা রাখবো না। আমায় মাফ করে দিবেন। আস-সালামু আলাইকুম।”
- মেহেদি হাসান(Mehedi Hasan)
২| ২১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৬
মিরোরডডল বলেছেন:
লেখাটা পড়লাম কিন্তু কেমন যেনো খাপছাড়া।
বাস্তবসম্মত মনে হয়নি, সিনেমাটিক হয়ে গেছে।
আর হঠাৎ করেই যেনো শেষ হয়ে গেলো, কোন সেন্স মেইক করেনি।
যাইহোক, আগের পড়া গল্পগুলো ভালো লেগেছে।
বাকিগুলো পড়বো।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: না গল্পটা জমে নি।