নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ খুব সহজ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। কিন্তু এই বিষয়টি আপনার জীবনের বিভিন্ন সময়ে খুঁজে পাবেন, দেখতে পাবেন। আমার আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, অভিজ্ঞতা বনাম জ্ঞান। এটা অনেক কমন বিষয় যা আপনি চারপাশে লক্ষ্য করবেন। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে আমি আজকের এই টপিক নির্ধারণ করেছি। আশা করছি কাজে দেবে তাই শেষ অবধি পড়বার অনুরোধ রইলো।
প্রথমেই আসা যাক, অভিজ্ঞতা (Experience) কাকে বলে?
যখন আমরা কোন কাজ করি এবং সেই কাজে বেশ সময় দেই। হতে পারে সেটা দুই বছর, চার বছর, পাঁচ বছর বা তারও বেশি। এখন এই কাজ করতে গিয়ে আমরা অনেক ভুল বা ঠিক করে থাকি। কিছু সিদ্ধান্ত ঠিক হয় তো কিছু সিদ্ধান্ত ভুল হয়। এখন এই কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির সাথেও মুখোমুখি হতে হয়। এখন এই সমস্ত কিছু যখন আমরা নির্দিষ্ট সময় পর একই কাজে লাগাই তখন সেটাকেই আমি অভিজ্ঞতা বলবো।
উদাহরণস্বরুপ, মানুষ অনেক সময় বলে থাকেন, “এই পেশায় আমার ১০ বছরের অভিজ্ঞতা আছে।” অথবা, একটি ব্যাংকে জব করার জন্য আবেদন করতে গেলে অনেকসময় দেখা যায় সেই নিয়োগপত্রে দুই বছর, তিন বছর বা তারও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা চেয়ে বসে।
এই অভিজ্ঞতার মানে হচ্ছে কোন স্পেসিফিক ফিল্ডে বা কাজে কোন বিশেষ ব্যক্তি নির্দিষ্ট কিছু সময় ব্যয় করেছেন। হতে পারে সেটা এক বছর, দুই বছর, তিন বছর বা দশ বছর। যেমন আমি প্রায় পাঁচ বছরের বেশি ব্লগিং করছি। অনেকে আছেন দশ বছর পর্যন্ত ব্লগিং করছেন বা লেখালেখির সাথে যুক্ত আছেন। ফলত তাদের মধ্যে এক ধরণের ধারণা তৈরি হয় সেখানের পরিবেশ নিয়ে। আর এটাই হচ্ছে অভিজ্ঞতা।
এখন আসা যাক, জ্ঞান (Knowledge) কাকে বলে?
জ্ঞান হচ্ছে তাত্ত্বিক বিষয়। যা আমরা পড়ে থাকি, যে ট্রেইনিং আমরা নিয়ে থাকি, যে দক্ষতা সম্পর্কে আমরা জেনে থাকি বা আমরা যা অর্জন করে থাকি ইত্যাদি বিষয়গুলো হচ্ছে “জ্ঞান”।
অভিজ্ঞতা বনাম জ্ঞান এর উদাহরণ
খুবই সাধারণ একটি উদাহরণ টানছি যাতে করে আমাদের বুঝতে সুবিধা হয়। পাশাপাশি আমাদের আশেপাশে এই উদাহরণ বেশ কমন। তো ধরুন, আপনি একটি ফলের দোকানে গেলেন। এখন দোকানদারকে জিগ্যেস করলেন, “ভাই, আপনি আপেল কত কেজি দরে বিক্রি করছেন?” এখন দোকানদার বলছেন, “স্যার, ১২০ টাকায় ১ কেজি বিক্রি করছি।”
এখন এই দোকানদার যখন বেশ কয়েকটা আপেল একসাথে মেপে দেখলেন। এটা দেখে খুব দ্রুত দোকানদার বললেন, “স্যার, সোয়া কেজি হয়ে যাচ্ছে। আপনি ১৫০ টাকা দিয়ে দেন।” ঠিক একই ভাবে আপনি বারবার আরো আপেল যুক্ত করছেন সেখানে আর দোকানদার পটাপট বলে দিচ্ছেন কত টাকা দাম পড়বে।
আপনার মাথায় আসতেই পারে, দোকানদার এত দ্রুত কীভাবে হিসেব করে ফেললো? এখন ধরুন, ঠিক ঐ দোকানদারের জায়গায় একজন লেখাপড়া জানা গণিত বিভাগে পাশ দেয়া ছেলেটা বসে আছে। তাকে যখন বলা হবে, “ভাই, কতটাকা হলো?” তিনি তৎক্ষণাৎ ১.১৫ কেজি কে ১২০ টাকার সাথে গুণ করবেন তারপর যেটা পাবেন সেটা আপনাকে বলবেন। এজন্য কিছু সময়ও লাগবে।
এখানেই অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য আছে। একটা জিনিস তো বড়ই কমন। অভিজ্ঞতা থাকলে জরুরী নয় যে, ঐ সম্পর্কে আপনার বিশেষ কোন জ্ঞান থাকতেই হবে। আর জ্ঞান হয়ে হয়ে যায় বিনা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একটি দক্ষতা মাত্র। আপনি মার্কেটে যান, চাকুরীতে যান, ব্যবসায় যান সব খানেই অভিজ্ঞতার বিশেষ প্রয়োজন পড়ে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, বর্তমান চাকুরীর বাজার অভিজ্ঞ লোক দিয়ে ভর্তি। সার্কুলারে অভিজ্ঞতা প্রায় সবাই চান। আপনাকে কাজ শিখিয়ে দিয়ে, কাজ করিয়ে নেবার মত বিড়ম্বনায় আর কেউ পড়তে চায় না। আর ঠিক এখানেই অভিজ্ঞতার কাছে জ্ঞানের হার।
চলুন, এতেও যদি কনভিন্স না হোন তবে আরো একটি বিষয় তুলে ধরা যাক। লোকাল বাসে বা লোকাল মার্কেটে যারা কাজ করেন তাদের কিন্তু কোন বিশেষ ডিগ্রী নেই, জ্ঞান নেই ঐ বিষয়ে। কিন্তু আপনি ১০০ টাকা ধরিয়ে দিলে ৩০ টাকার ভাড়া নিয়েও ঐ ভিড়ের মধ্যে যথাসময়ে ৭০ টাকা ফেরত দিতে সক্ষম হয়। লোকাল মার্কেটে খুব দ্রুত হিসেব করে বলে দেয় আপনার বিল কত হয়েছে।
হ্যাঁ, এটা সত্য তিনিও কিন্তু জ্ঞান অর্জন করছেন। কোথা থেকে? ঐ পার্টিকুলার ফিল্ডের জন্য ঐ পার্টিকুলার ফিল্ড থেকে। ঠিক তেমনি একজন সবজিওয়ালা, একজন বাসের কন্ডাক্টর, লোকাল মার্কেটের টোকাই তারা কিন্তু অভিজ্ঞতা দিয়েই কাজ করছেন। তাই তাদের হিসেব করতেও সময় লাগে না, ভুলও হয় না।
জ্ঞান হচ্ছে এক ধরণের দক্ষতা ও তাত্ত্বিক বিষয়। প্রথমে আপনাকে এই জ্ঞান নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে। তারপর যে ধারণা মিলে ওটাই অভিজ্ঞতা। একজন সদ্য এম.বি.বি.এস ডিগ্রী ধারী কে প্রথমে কোন হাসপাতালে আগে রোগী দেখতে হয়। তারপর দশটা রোগী দেখলে এক ধরণের অভিজ্ঞতাও তৈরি হয়। তিনি তারপর বুঝতে পারেন কোন মেডিসিন কোন রোগীর জন্য বেশি কার্যকরী। মানে জ্ঞান তখনই কার্যত কাজের হয় যখন সেটা অভিজ্ঞতায় রুপান্তরিত হয়।
একটি হাসপাতালে দেখবেন, ওয়ার্ড বয় বা নার্স যে কিনা কোন ডাক্তারের সাথে কাজ করছেন একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে। এক সময় তিনিও অভিজ্ঞ হয়ে যান বা বিশেষ অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন। একসময় কোন নার্সের এত অভিজ্ঞতাও হয়ে যাওয়া সম্ভব যে, তিনি ডাক্তারের কাছাকাছি রোগীর জন্য মেডিসিন নির্ধারণ করতে পারেন। আমার মনে হয়, এমন উদাহরণ আপনিও নিশ্চয় কোথাও না কোথাও দেখেছেন। আর এটাই হলো অভিজ্ঞতা।
অপারেশন থিয়েটারে ডাক্তার তো অপারেশন করেন কিন্তু এর পরবর্তীতে আপনার যত্ন কে নেন? হ্যাঁ, ওয়ার্ড বয় বা নার্স। যেখানে সেলাই ছিলো সুস্থ হবার পর অনেকসময় তারাই সেটা খুলে দেন। এর জন্য পুনরায় ডাক্তারের প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া ইঞ্জেকশন দেওয়া, সময়মত প্রয়োজনীয় মেডিসিন তো নার্সরা-ই দিয়ে যায়। অনেকক্ষেত্রে একজন ওয়ার্ড বয়ের কাছে তেমন কোন ডিগ্রী থাকে না। থাকে স্রেফ এবং স্রেফ অভিজ্ঞতা।
এই যে বিদেশী রেমিট্যান্সে ভরে যাচ্ছে বাংলাদেশের রিজার্ভ। প্রশ্ন হলো, যেসব কাজ তারা বিদেশে গিয়ে করছেন তার কোন ডিগ্রী তারা এদেশ থেকে নিয়ে গেছেন কি! উত্তর হলো, “না”।
একজন ওয়ার্ড বয়ের মেডিক্যালের মোটা বই পড়ার সুযোগ বা সৌভাগ্য হয়নি কিন্তু তার কাছে অভিজ্ঞতা আছে। একজন লোকাল বাসের কন্ডাক্টরের নেই কোন গণিতে ডিগ্রী কিন্তু অভিজ্ঞতা আছে। আর এভাবেই আমাদের আশেপাশে হাজারো সফল মানুষদের কাছে বিশেষ কোন ডিগ্রী নেই, অভিজ্ঞতা আছে। আর এই অভিজ্ঞতা তাদেরকে নির্দিষ্ট ফিল্ডে সুক্ষ্ম ও নির্ভুল কাজ করার ক্ষমতা এনে দিয়েছে। একজন সাধারণ নার্স ছোট খাটো অসুখের জন্য নিজেই কিছু কার্যকরী প্রেসক্রিপশন প্রদান করতে পারেন। এটা কোন ডিগ্রী বা জ্ঞান নয়, অভিজ্ঞতা।
আমি আসলে যা বলতে যাচ্ছি, অভিজ্ঞতা যার কাছে আছে মানে হলো ঐ বিষয়ে জ্ঞানও তার কাছে আছে। এই ব্যক্তির জন্য মোটা মোটা বই পড়ে আরো জ্ঞান অর্জন করা জরুরী হয়ে পড়ে না। তিনি এখন বিনা ডিগ্রী বা জ্ঞান ছাড়াই কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু উক্ত বিষয়ে ডিগ্রী বা জ্ঞান থাকলে তার অভিজ্ঞতার দরকার হয়ে পড়ে। আমি মানি যিনি বড় ডিগ্রিধারী বা অনেক জ্ঞান যার আছে কোন বিষয়ে তার মার্কেট ভ্যালু বেশি থাকতে পারে। কিন্তু অভিজ্ঞতা ছাড়া এই জ্ঞান কোন কাজের নয়।
ঠিক তেমনি একটি দেশ চালাবার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে কোন উচ্চ পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ কোন ডিগ্রী থাকতেই হবে তেমন নয়। হ্যাঁ, থাকলে ভালো। কিন্তু যিনি অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ তার কাছে থোড়াই সেই জ্ঞান কাজে লাগে। তিনি বাস্তব বিষয়টি জানেন। আর এই অভিজ্ঞতা তাকে রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে সাহায্য করে।
ধন্যবাদ
২৮ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:৩৩
মি. বিকেল বলেছেন: সহমত
২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:২৮
শায়মা বলেছেন: প্রথমে জ্ঞান তারপর অভিজ্ঞতা আর তারপর দুইটাই।
আর জ্ঞান না থাকলে অভিজ্ঞতা অর্জন ছাড়া উপায় নেই।
২৮ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:৩৪
মি. বিকেল বলেছেন: সহমত
৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: আমি কিন্তু একজন অভিজ্ঞ মানুষ। কিন্তু জ্ঞানী না।
২৮ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:৩৪
মি. বিকেল বলেছেন: আমরা নিজ সম্পর্কে নিজেরাই ভালো জানি।
ধন্যবাদ
৪| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ২:০১
মৌরি হক দোলা বলেছেন: সুন্দর লেখা।
++++
২৮ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:৩৫
মি. বিকেল বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৩৩
গফুর মিয়া১৯১ বলেছেন: খুব ভালো লিখেছেন। ভালো লাগলো লিখাটা।
২৮ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:৩৫
মি. বিকেল বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
৬| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১১
কালো যাদুকর বলেছেন: দুটাই দরকার। একটির পরিপুরক আরেকটি ৷ তবে অভিজ্ঞতার পাল্লা একটু ভারি।
২৮ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:৩৬
মি. বিকেল বলেছেন: নিশ্চয়!
মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
৭| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৭:৪০
সোহানী বলেছেন: ভালো আলোচনা।
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৪২
মি. বিকেল বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০৯
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জিত হয়।