নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

VPN মানে “Virtual Private Network”, শুধু পর্নোগ্রাফি দেখার মাধ্যম নয়

২৩ শে জুন, ২০২২ ভোর ৫:৩১



এমন শিরোনাম লিখতে আমি একরকম বাধ্য হয়েছি। কারণ, কারো স্মার্টফোনে বা ল্যাপটপে অথবা, পিসি-তে ভিপিএন (VPN) থাকলে আমাদের মাথায় প্রথমে যে বিষয়টি খেলে যায় সেটা হচ্ছে, “এই ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি দেখেন এবং পর্নোগ্রাফি’র সাথে সম্পৃক্ত” । একই সাথে বাংলাদেশে হাজারো পর্ন সাইট বন্ধ করা হয়েছে। ভিপিএন (VPN) এর মাধ্যমে আমরা যে ঐ সকল সাইটে এক্সেস পেয়ে থাকি সেটাও অস্বীকার করা যায় না, করছিও না।

কিন্তু ভিপিএন (VPN) যদি কেউ বা কোনো বিচারে ক্রিমিনাল অফেন্স হয় তবে এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের জানার দরকার আছে বৈকি। কারণ, ভিপিএন (VPN) এর কাজ শুধু বিভিন্ন লকড্ বা বন্ধ হয়ে যাওয়া সাইটে প্রবেশ করার জন্য ব্যবহার করা হয় না। না, ভিপিএন (VPN) দিয়ে কারো চরিত্র বিশ্লেষণ এবং সেটাকে ক্রিমিনাল অফেন্স হিসেবে নেওয়াটাকে আমি মূর্খতা বলবো।


ভিপিএন (VPN) কি?

ভিপিএন (VPN) এর পূর্ণরুপ হচ্ছে, “Virtual Private Network” । আমি এখানে তিনটি শব্দ যথাক্রমে- “Virtual”, “Private” এবং “Network” কে আলাদা আলাদা ভাবে বিশ্লেষণ করবো।

ভার্চুয়াল (Virtual): ভার্চুয়াল মানে হচ্ছে, যার অস্তিত্ব নেই। যেমন ধরুন, ইন্টারনেট দুনিয়ায় বসে গুগল ম্যাপে আপনি অ্যামেরিকার বিভিন্ন শহর, রাস্তা অথবা, রেস্টুরেন্ট দেখতে পারবেন। শুধু তাই নয়, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর হতে কত সময় লাগবে সে ব্যাপারেও বিশদ ধারণা পাবেন।

কিন্তু আপনি বসে আছেন তো বাংলাদেশে! হ্যাঁ, এক অর্থে, এসবের অস্তিত্ব আছে কিন্তু ফিজিক্যাল কোন অস্তিত্ব নেই বা আপনার সামনে নেই। এসবের এক্সেস বা যোগাযোগ পাচ্ছেন আপনি একটি ডিভাইসের মাধ্যমে।

প্রাইভেট (Private): আপনি যখন আপনার কাছের বন্ধু কে বলেন, “বন্ধু, তোর সাথে আমার কিছু প্রাইভেট কথা আছে?” তাহলে এর অর্থ কি দাঁড়ায়? এর অর্থ হচ্ছে, এমন কিছু কথা যা আপনি সবার সামনে বলতে চান না। এবং ব্যাপারটা ব্যক্তিগত বিষয়। তাই উক্ত বিষয়টিকে আপনি এবং আপনার বন্ধুর মধ্যেই রাখতে চান বা এক ধরণের প্রাইভেসি চান।

বিভিন্ন ডিভাইসের ক্ষেত্রে যখন তথ্য ট্রান্সফার করা হয় তখন তথ্য চুরির ভয় থাকে। আজকাল হ্যাকারদের ভয়ে তথ্য শেয়ার করা খুব মুশকিল হয়ে পড়েছে। কিন্তু ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করে তথ্য শেয়ারের ক্ষেত্রে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারবেন হ্যাকারদের থেকে।

নেটওয়ার্ক (Network): এখানে নেটওয়ার্ক বলতে বুঝায় দুটি ডিভাইসের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে একটি যোগাযোগ। সেটা হতে পারে আপনার মোবাইল ডিভাইসের নেটওয়ার্ক অথবা, ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক। আমরা বিভিন্ন জায়গায় বা বাড়িতে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে থাকি।

সাধারণত, ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক হলো, এক ধরণের পাবলিক নেটওয়ার্ক। এখানে ডাটা চুরির ভয় থাকে। পাসওয়ার্ড থেকে আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য পর্যন্ত চুরি হতে পারে। এখানে ভিপিএন (VPN) এর কাজ হচ্ছে, যখন আপনি উক্ত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করছেন তখন আপনার নেটওয়ার্ক কাউকে বা কোনো হ্যাকার কে ট্র্যাক করতে বা ধরতে না দেওয়া।

ভিপিএন (VPN) মানে হচ্ছে, যে কোনো পাবলিক নেটওয়ার্ক কে প্রাইভেট করা, প্রাইভেসি দেওয়া এবং তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সুরক্ষাও প্রদান করা (হ্যাকারদের থেকে) ।


কীভাবে ভিপিএন (VPN) ক্যানেকশন কাজ করে?

ভিপিএন (VPN) ক্যানেকশন ৩টি স্টেপে কাজ করে,

১. Network Access Server (NAS)
২. Secure VPN Connection
৩. Client software (Remote Location)

অর্থাৎ আপনি যদি অ্যামেরিকার কোন অবস্থান ব্যবহার করেন তাহলে আপনাকে ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করতে হবে। এতে সুবিধা কি? এতে সুবিধা হচ্ছে, আপনি আপনার অবস্থান বা IP (Internet Protocol) লুকিয়ে রাখতে পারবেন এবং আপনার স্মার্টফোন/ল্যাপটপ/ডেস্কটপ ডিভাইসে ISP (Internet Service Providers) -এর মধ্যে একজন “Middleman” পেয়ে যাবেন।


ভিপিএন (VPN) কত প্রকার?

ভিপিএন (VPN) ৩ প্রকার –

১. Remote Access VPN
২. Intranet VPN
৩. Extranet VPN

এই ধরণের ভিপিএন (VPN) আমরা সাধারণত ব্যবহার করে থাকি। তবে এ নিয়ে আজকের আলোচনা নয়। শুধুমাত্র জানিয়ে রাখার সুবিধার্থে উল্লেখ করা হলো।

ভিপিএন (VPN) এর সুবিধা কি?

হ্যাঁ, আমার আজকের পয়েন্ট বা আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে (VPN) এর সুবিধা নিয়ে। কেন ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করা খারাপ নয়? ক্রিমিনাল অফেন্স নয়? বরং প্রয়োজন!


১. আপনি কি পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করেন?

আপনি যদি পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করেন তবে ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করা প্রায় জরুরী হয়ে পড়ে। কারণ পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারে আপনার তথ্য সম্পর্কে যে কোনো বেসিক লেভেলের হ্যাকার এক্সেস নিতে পারবেন। ঠিক এখানেই ভিপিএন (VPN) আপনাকে সুরক্ষা দেয়। আপনি যদি পাবলিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন তবে উঁচু লেভেলের হ্যাকারদের জন্যও আপনার তথ্য ক্র্যাক করা কঠিন হয়ে যাবে, অনেকসময় অসম্ভব হয়ে পড়বে।

পাবলিক ওয়াই-ফাই সাধারণত বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেট, ক্যাফে, ইত্যাদি জায়গায় পাওয়া যায়। এখন ফ্রি ইন্টারনেট পেয়ে ইচ্ছেমতো ব্রাউজ করতে যাবেন না। হতে পারে তার পেছনে একটা ফাঁদ থাকতে পারে। এমনকি এই নিয়ে বিভিন্ন স্ক্যাম ইতোমধ্যেই ধরা পড়েছে।


২. প্রাইভেসি

আমাদের সবারই মৌলিক অধিকার আছে নিজের প্রাইভেসি রাখা। আমি বিশ্বাস করি, আমি আমার প্রাইভেসি কোন বিষয়ে রাখবো আর কোন বিষয়ে রাখবো না সেটা একান্তই আমার ব্যাপার। কিন্তু এখানে ভিপিএন (VPN) এর কাজ কি?

এখানে ভিপিএন (VPN) এর কাজ হলো, আমার “IP Address” -কে লুকিয়ে রাখা। পাশাপাশি ভিপিএন (VPN) আমাদের ডাটা কে “Encrypted” রাখে। এতে করে আমাদের ইন্টারনেটে ব্যবহ্নত কোনো তথ্য বাইরে যাবার বা হ্যাকারদের দ্বারা হ্যাক হওয়া সম্ভব হয় না। যেমন, পাসওয়ার্ড, গভ. তথ্য, ক্রেডিট কার্ড, ব্যক্তিগত সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে ইন্টারনেট জগতে নিরাপদ থাকা যায়।


৩. মূল্যবান তথ্য এবং ভিডিও পাওয়া যায়

ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করে আমি অন্য দেশের বিভিন্ন জার্নাল এবং আর্টিকেল পড়তে সক্ষম। এমনকি প্রায় ৪০% শতাংশ ভিডিও কন্টেন্ট যা শুধু অ্যামেরিকা ছাড়া দেখা যায় না এই ধরণের ক্ষেত্রেও উক্ত ভিডিও দেখার জন্যও ভিপিএন (VPN) প্রয়োজন হয়ে পড়ে।


৪. অফার পাওয়া

বিভিন্ন অনলাইন কন্টেন্ট কিনতে আমাদের বেগ পেতে হয়। ভিপিএন এর মাধ্যমে ঐ একই কন্টেন্টে ভিন্ন দেশ হলে আমরা মূল্য ছাড় কিছুটা হলেও পাই। সুতরাং আমরা শুধু কন্টেন্ট এক্সেস করছি না; অফারও পাচ্ছি। সুতরাং কেন ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করবো না?


৫. ক্যানেকশন ও গতি

ভিপিএন (VPN) আমাদের ক্যানেকশন বা নেটওয়ার্ক আই.এস.পি গোপন রাখার পাশাপাশি আমাদের ব্রাউজিং গতি বৃদ্ধি করে দেয়। সুতরাং কারো ব্যান্ডউইথ খুব খারাপ হলে তিনি ভিপিএন (VPN) এর মাধ্যমে কিছুটা হলেও স্পীড-আপ করতে পারবেন।

এছাড়াও আমরা যারা পাবলিশার আছি আমাদের প্রায় প্রায় ভিপিএন দিয়ে আমাদের ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে হয়ে। “DNS Propagation” সহ নানাবিধ বিষয় ভিপিএন (VPN) ছাড়া সম্ভব নয়।

যদিও ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করা এখন কন্ট্রোভার্সি’র মধ্যে পড়ে গেছে। বিভিন্ন তথ্য বলছে, ভিপিএন (VPN) সার্ভারও তথ্য চুরি করতে পারে। তাই বিশ্বস্ত ভিপিএন (VPN) ছাড়া ইন্টারনেট দুনিয়ায় না যাওয়াই ভালো।


শেষকথা

অনুগ্রহ করে কারো ডিভাইসে ভিপিএন (VPN) দেখেই তার ব্যক্তিত্ব নিয়ে চর্চা-কর্চা করবেন না। এমনকি দীর্ঘসময় ধরে “somewhereinblog.net” পর্যন্ত পর্ন সাইটের আওতায় নিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছিলো। এখনো আমি এই ব্লগে সব আই.এস.পি থেকে প্রবেশ করতে পারি না।

আর ঐ দীর্ঘ সময় ভিপিএন (VPN) ছিলো আমার একমাত্র ভরসা। তবে এটাও সত্য ভিপিএন (VPN) দিয়ে পর্ন সাইটেও প্রবেশ করা যায়। তাই চোখ বন্ধ করে ভিপিএন (VPN) ব্যবহারকারীদের ক্রিমিনাল অফেন্সে নেবেন না, তাহলে ভুল করবেন। আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

* আপনি চাইলে আমার ওয়েবসাইট থেকে একবার ঘুরে আসতে পারেন: https://www.backspace-journal.com

মন্তব্য ০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.