নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্যামেরার আলোয় মিথ্যা প্রেম: মাহমুদ ও মাহজাবিনের জীবনের ট্রানজিট

১২ ই জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৬



সিগারেট হাতে মাহমুদ। কিছুটা অস্থির ও চিন্তিত। একটু পর টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যাবে মাহমুদ কে একটি ব্রেকিং নিউজের খবর জানাতে, চ্যানেল ‘ক খ গ’ তে। সাম্প্রতিক সময়ে একটার পর একটা ঘুন হয়ে চলেছে। আর এই সমস্ত সংবাদ টেলিভিশনের পর্দায় উপস্থাপন করতে করতে একরকম মানসিক ট্রমার দিকে যেতে চলেছে সে। তার উপর মাহমুদ এসব বিষয়ে রোজ রোজ টকশো উপস্থাপন করতে করতেও বিরুক্ত। এই সমস্যার কোন হাল-ই মিলছে না। এতগুলো খুন কিন্তু প্রশাসনের গতি কচ্ছপের মতন। আর কত খুন-খারাবি হলে এদের ঘুম ভাঙবে কে জানে!

এই শহরে মাহমুদ এই উপস্থাপক হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়েছিলো মাহজাবিনের কাছ থেকে। ওরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচিত এবং ওদের মধ্যে কোন বন্ধুত্ব নেই আবার কোন শক্রুতাও নেই। কিন্তু কেন জানিনা ওরা একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে বেড়ে উঠেছে। এখন তো মাহমুদ আর মাহজাবিন দুজনই দুটো প্রধান বাংলা চ্যানেলের উপস্থাপক ও উপস্থাপিকা হিসেবে কাজ করছে। কে জানে আজ এই একই খবর ওদের দুজনকে ব্রেকিং নিউজে উপস্থাপন করতে হবে আর পেছনে থাকবে একাধিক রিপোর্টার।

মাহমুদ যতদূর জানতে পেরেছে তা হলো, জামাল নামের একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু মাহমুদ মোটেই অঙ্ক মেলাতে পারছে না যে, একজন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছেলে শুধুমাত্র সিজিপিএ কম হবার কারণে কীভাবে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে? ধ্যাত! এরা তো এমনিই তেমন পড়াশোনায় মনোযোগী হয় না, আর রেকর্ড দেখে তো মনেও হচ্ছে না এই ‘জামাল’ খুব মন দিয়ে পড়ছিলো মানে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ফলাফল অনুযায়ী। তাই হাতে থাকা একটি ফাইল মাহমুদ তার চায়ের টেবিলের একপাশে রেখে দিলো।

ব্যস্ত শহরের ব্যস্ততা সকাল হওয়ার সাথে সাথে বাড়ছে। চারপাশে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কম কিন্তু প্রাইভেট কারের সংখ্যা অগণিত। দেখে মনেই হয় না যে, এই ঢাকা শহর বাংলাদেশের কোন শহর। মনে হয় মাহমুদ জার্মানিতে আছে। কিন্তু জার্মানীতেও তো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এরচেয়ে অনেক বেশি। হাতে সময় আর ৩০ মিনিট। এরমধ্যেই মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। ক্যামেরা ভীতি সব উপস্থাপকের কমবেশি থাকে কিন্তু রোজ রোজ খুন-খারাবির খবর জানানো তারচেয়ে বেশি বিব্রতকর। কিছু বাদে মাহমুদ লক্ষ্য করলো একটা মেয়ে কোট-টাই আর সাদা শার্ট পরে ওর দিকে আসতে।

মাহমুদ কিছুটা চমকে গেলো, “এটা মাহজাবিন! সেন্টি খাইছে নাকি! আমার কাছে আসতেছে কেন? পুরনো দুশমনি! নিশ্চয় এই সুন্দরী আর হালকা শ্যামলা মেয়ের মাথায় আজও ঢোকে নাই যে, আমি তারে কোনদিন পাত্তা দেবো না! তার উপর ওর চেয়ে আমি বেশি ফর্সা। তাছাড়া এখন আমরা দুজনই সমান, দুজনই উপস্থাপক তাও প্রথম শ্রেনীর চ্যানেলে।” মাহজাবিন মাহমুদের কাছে আসতেই অনুমতি নিল, “বসবো?”

মাহমুদ: হ্যাঁ, বসতে পারো।
মাহমুদের দিকে একটি সিগারেট এগিয়ে দিয়ে মাহজাবিন বললো: সিগারেট চলবে, তোমার হাতেরটা তো প্রায় ফুরে গেছে!
মাহমুদ: হ্যাঁ, চলবে... তারপর?
মাহজাবিন: আমার এপয়েন্টমেন্ট লেটার। ভাবলাম... তোমাকে একবার দেখালে ভালো লাগবে। সিগারেটে আরো একটা টান দিয়ে মাহমুদ মাহজাবিনের দিকে ফিরিয়ে দিলো আর ওর লেটার হাতে নিয়ে দেখলো অনেককিছু লেখা আছে তাই মাহজাবিন কে জিজ্ঞেস করলো: চ্যানেল ‘ক খ গ’...
মাহজাবিন মাহমুদকে থামিয়ে দিয়ে সিগারেটের আস্ট্রে কাছে টেনে নিয়ে বললো: চ্যানেল ‘ক খ গ’ তে এখন থেকে দিনের বেলায় আমি নিউজ উপস্থাপন করবো। শুনেছি তোমার এই কাজে স্ট্রেস অনেক বেড়ে যাচ্ছে তাই রাতের শিফট তুমি নিতে পারো সাথে টকশোতে তোমার সাথে আমি থাকবো।
মাহমুদ: এই চাকুরী আমি করতে চাই-না! এমনিতেও ছেড়েই দিতাম।
মাহজাবিন: না, আমি প্রযোজকের সাথে কথা বলেছি। তিনিও চান যে, আমরা একসাথে কাজ করি। কারণ এই শহরে আমরা দুজনেই জনপ্রিয়।
মাহমুদ: কেন? তোমার লক্ষ্য তো একসাথে কাজ করা নয়, বরং আমার বরাবর হওয়া। এখন এতবড় চ্যানেলে প্রমোশন যখন মিলেই গেছে তখন সব কাজ তুমিই করো। আমি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর নিতে পারছি না, যথেষ্ট টায়ার্ড!
মাহজাবিন সিগারেটের ধূয়া আস্তে করে ছেড়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো: তোমার কি মনে হয়? শুধুমাত্র আমাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক সম্পর্ক আছে বলে এই চ্যানেলে জয়েন করছি? আমি যেখানে ছিলাম ঠিক ছিলাম, ভালো বেতনও ছিলো কিন্তু এসব রোজ রোজ আমিও নিতে পারছি না! আমিও অনেক ক্লান্ত।
মাহমুদ: পয়েন্ট কি? যে খেলা তুমি শুরু করেছিলে সে খেলা তুমিই শেষ করতে চাইছো?
মাহজাবিন: নাহ্, আমাদের সব জায়গায় নিজেদের প্রমাণ করবার প্রয়োজন নাই। কিন্তু কিছু জায়গা এমন থাকে যেখানে নিজেকে প্রমাণ না করতে পারলে একসময় অস্তিত্ব সংকটে পড়তে হয়।
মাহমুদ: ওহুম, আমি এখনো আমার পয়েন্ট পাচ্ছি না? তা তোমাদের ব্রেক-আপ হয়েছে নাকি?
মাহজাবিন: তোমার কি মনে হয় আমি অদৌ কোন সম্পর্কে আছি? বা কখনো ছিলাম?
মাহমুদ: তাহলে? আমার ক্লাসমেট তোমার কাছে এত পাত্তা পেলো কীভাবে!
মাহজাবিন: সবই সাজানো। অবশ্য তোমার এসব বিশ্বাস করবার কোন প্রয়োজন নেই। এমনিতেই আমার মাথা থেকে তোমার স্মৃতি সহজে উধাও হবে না।
মাহমুদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো: এখনো আমি আমার পয়েন্ট পেলাম না...
মাহজাবিন: তুমি কি ‘হৃদয়’ নামক শব্দের সাথে মোটেও পরিচিত নাকি টকশোতে পয়েন্ট... পয়েন্ট... নিয়ে চেল্লানোতে বিশ্বাসী?
মাহমুদ: তুমি আমাকে সিগারেট ছাড়তে বলেছিলে, অথচ লুক এট ইউ, তুমি আমার সামনে সিগারেট টানছো। আমার সামনে আমার ক্লাসমেটকে চুমুও খেয়েছো। তো, পয়েন্ট খুঁজবো না? তার উপর সোশ্যাল মিডিয়ায় কবে কি যেন কারণে রাগ করে ব্লক করেছিলাম তাই চুল পর্যন্ত কেটে ছোট করেছো!
মাহজাবিন: সেটাই! আমি তো শ্যামলা বর্ণের। তোমার মত এত ফর্সা নই। ক্লাসের হট মেয়েদের প্রোপোজালে তুমিও তো হ্যাটট্রিক করেছো! তাও সাধারণ মেয়ে না ওদের প্রোফাইলিং যেভাবে করেছো তা দেখে হা হয়ে যেতে হয়!
মাহমুদ: তুমি সিগারেট খাবে, আমার উপর রাগ করে তোমার চুল ছোট করবে, সাজানো কোন নাটকের প্রেমিককে চুমু খাবে আর আমি জীবনে প্রেম তো দূর সেটার চেষ্টাই করতে পারবো না!
মাহজাবিন: হ্যাঁ, সবই পারবে কিন্তু শুধু আমার সাথে। আর এখন আমাদের ব্রেকিং নিউজের টাইম হয়ে গেছে। এখানে নতুন আমি। তাই আমি চাই এই নিউজ আমরা দুজনে মিলে উপস্থাপন করবো।

একটুবাদেই স্টুডিওতে দেখা গেলো মাহমুদ ও মেহজাবিন কে। দুইজন নিউজ টেবিলে বসে রয়েছে। চারপাশে একের অধিক ক্যামেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ব্রেকিং নিউজের জন্য কাউন্ট-ডাউন শুরু ১০…৯…৮…৭…৬…৫…৪…৩…২…১…

মাহজাবিন: প্রেমের ব্যর্থতার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী গতকাল আনুমানিক রাত তিনটার সময় আত্মহত্যা করেছে।
মাহমুদ: কিন্তু অনুমান করা হচ্ছে, আত্মহত্যা নয়। খুন করা হয়েছে জামাল কে।
মাহজাবিন: প্রমাণ হিসেবে পাওয়া গেছে, ঐ শিক্ষার্থীর মেসে অনেকগুলো ঘুমের ট্যাবলেটের পাতা ছিলো।
মাহমুদ: এমনও তো হতে পারে, আমরা এই একটি খুনকে স্রেফ আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিচ্ছি। কারণ মৃত্যুর পূর্বে খুনীরা যদি এমন পরিকল্পনা করে যেটা সচরাচর ঘটছে বা বিশ্বাসযোগ্য। তাই তারা ইচ্ছে করেই কিছু ঘুমের ট্যাবলেটের পাতা ঐ রুমে রেখে এসেছে।

প্রযোজক শুধু আস্তেধীরে বললো, “মি. মাহমুদ ও মিস. মাহজাবিন! আমরা কোন তর্ক-বিতর্ক শো করছি না, আপনারা একে অন্যের সাথে লড়াই করলে টিআরপি তো বাড়বে কিন্তু মানুষ আমাদের উপর হাসবে। একটি প্রথম শ্রেনীর চ্যানেল হিসেবে আমাদের উচিত আমরা যা বলছি সে বিষয়ে সতর্ক থাকা।”

মাহজাবিন: একটি বিজ্ঞাপনের পরেই আমরা আবার ফিরছি...

কিন্তু এরপর আর মাহমুদ কে ঐ চ্যানেলে কাজ করতে দেখা যায় নি। সে ঢাকাতেও খুব সম্ভবত নাই। তারও কিছুদিনবাদে মাহজাবিনও চ্যানেল ছেড়ে চলে যায়।

২ বছর পর…
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাহমুদ মাহজাবিনকে আন-ব্লক করতেই দেখতে পেলো, মাহজাবিন অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করেছে। আর ঐ চ্যানেলে এখন কাজও করে না। আর মাহজাবিন একদিন হঠাৎ তার ফেসবুক ফিডে দেখতে পেল, মাহমুদ নতুন একটি চাকুরীতে জয়েন করেছে এবং মাহমুদের সাথে মিষ্টি করে একটা মেয়ের সেল্ফিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। খুব সম্ভবত মাহমুদ জীবনে শেষমেশ কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবশ্য মাহজাবিনের এতে কিছুই যায় বা আসে না। ঠিক তেমন করে মাহমুদও জানে না এই জীবনে আসলে কি হবার ছিলো? আর ঠিক কি হচ্ছে?

তবে মাহমুদ এটুকু বুঝতে পেরেছে, সম্পর্কে চাই অভিমান যত বড়ই হোক, ওদের একসাথে থাকা তার চেয়ে বেশি জরুরী ছিলো। সামনের দিনগুলো এখন শুধুমাত্র মৃত্যুর জন্য কাউন্ট-ডাউন চলবে ১০…৯…৮…৭…৬…৫…৪…৩…২…১…

ছবি: Bing Enterprise (Copilot Ai)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৪

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: একা থাকাই ভালা। :)

১৪ ই জুলাই, ২০২৪ সকাল ৭:৩২

মি. বিকেল বলেছেন: Exactly! আমার কাজ লেখালেখি করা। রোজ রোজ কে মারামারি করবে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.