নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘বার্ডস অব এ প্যারাডাইস’ – যেখানে সিদ্ধান্ত অর্থহীন, তবুও অপরিহার্য

১৫ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:১১



কল্পনা করুন, আপনি একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে একটি মহাসমুদ্রে চলা বিশাল জাহাজে খুঁজে পেলেন। আপনি এই সমুদ্রের নাম জানেন না। জাহাজ সম্পর্কেও জানেন না। যেদিকেই তাকান সেদিকেই শুধু জল আর জল। বিশাল মানব শূন্য জাহাজে আপনি একা। সময় এখানে থমকে গেছে। গন্তব্য জানা নাই। হাতে কোন মানচিত্রও নাই। এখানে নাই কোন ডিজিটাল ডিভাইস (যেমন: স্মার্টফোনে গুগল ম্যাপ)। কোনো স্থলভাগ, নক্ষত্র, সূর্য, চাঁদ, বাতাসের দিক বা অন্য কোনো রেফারেন্স পয়েন্ট (নির্দেশক বিন্দু) নাই। সম্পূর্ণ প্রতিসম (Symmetric) পরিবেশ।

আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন আপনাকে নির্দিষ্ট দিকে যেতে হবে। হতে পারে উত্তর/দক্ষিণ/পূর্ব/পশ্চিম অথবা যে কোন কোণে। আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন উত্তর দিকে যেতে। হতে পারে উত্তর দিকে একটি দ্বীপ আছে বা একটি শহর আছে বা একটি দেশ আছে। আবার এও হতে পারে উত্তর দিকে কিছুই নাই; শুধুই অসীম শূন্যতা মানে স্থলভাগের কোন অস্তিত্বই নাই। আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে, আপনি কোনদিকে যাবেন এবং কোনদিকে যাবেন না। কিন্তু আপনি নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না যে, নির্দিষ্ট কোন দিকে গেলে আপনি এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাবেন?

মানে হলো, কোনদিকে গেলে আপনি অন্তত একটি দ্বীপ বা একটি শহর বা একটি দেশ খুঁজে পাবেন তা আপনার জানা নাই। আপনি নির্দিষ্ট দিকে যেমন ‘উত্তর’ দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এজন্য যে, সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরী ছিলো। কিন্তু এই পরিস্থিতি বিবেচনায় আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়া বা না নেওয়াতে কিছুই আসে বা যায় না। জাহাজ সমুদ্রের জলের ঢেউয়ে কোথাও না কোথাও গিয়ে একদিন এমনিও পৌঁছাতে পারে আবার নাও পারে। এখানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতাকে দক্ষতা হিসেবে গণ্য করা সম্ভব নহে। এই বিচক্ষণতাকে বিচক্ষণ হিসেবে মান্য করা যায় না। আপনি যা-ই সিদ্ধান্ত নেন তা পুরোপুরি-ই আপনার ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল। এখানে কিছুই আপনার হাতে নাই।

এখন এই পুরো পরিস্থিতি বিবেচনায় আপনি যদি আবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করতে পারেন তাহলেও হতাশ হতে পারেন। আপনি মনে করতে পারেন, অন্তত নির্দিষ্ট দিকে গেলে আপনি কোথাও না কোথাও পৌঁছাতেন। মানে সম্ভাবনা আছে; হোক সেটা ০.০০০০০০১% মাত্র। কিন্তু এই একই পরিমাণ সম্ভাবনা আছে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলেও। সমুদ্রের স্রোতে আপনি কোথাও না কোথাও এমনিতেও পৌঁছাতে পারেন। অথবা, একজন উদ্ধারকর্মী এসে আপনাকে উদ্ধারও করতে পারেন। আবার এসব নাও ঘটতে পারে।

মনে হয় একটু জটিল হয়ে গেল, তাই না?

আচ্ছা, একটু সহজ করে উপস্থাপন করছি। আপনার কাছে দুটো যুক্তি আছে,

১. কোন নির্দিষ্ট দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া।
২. জাহাজে একা একা চুপ করে বসে থাকা।

এখানে এই দুই যুক্তি একে অন্যকে খারিজ করে দেয়। যেহেতু যে কোন দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলাফল একই আসতে পারে সুতরাং সিদ্ধান্ত নেবার প্রয়োজন কোথায়? আবার জাহাজে বসে থাকাটাও তো কোন সমাধান নয়, এক্ষেত্রেও অবশ্যই কিছু না কিছু করতে হবে। জাহাজে চুপ করে বসে থাকাটাও কিন্তু একটি সিদ্ধান্ত। যুক্তি দুটো, কিন্তু একটি যুক্তি আরেকটি যুক্তি কে পুরোপুরি যুক্তিহীন করে তুলছে।

কথা বলছিলাম, ‘বার্ডস অব এ প্যারাডাইস (Birds of a Paradise)’ প্যারাডক্স নিয়ে। এই পারাডক্সের নির্দিষ্ট কোন জনক বা আবিষ্কারক নাই। যুক্তিবিদ্যায় যুক্তিহীনতার দর্শন এই পারাডক্সের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়। আরো ভালো করে বললে নিরপেক্ষতার দর্শনও এখানে খুঁজে পাওয়া যায়। অ্যালবার্ট ক্যামু’র অ্যাবসার্ডিজম-এর মতো – যদি জীবন শেষ পর্যন্ত মৃত্যুতেই শেষ হয়, তাহলে প্রতিটি প্রচেষ্টাই/সিদ্ধান্ত-ই কি স্বেচ্ছাচারিতার নয়? এই প্রশ্নই জীবনের “অর্থ খোঁজার সংগ্রাম”-কে আরো তীব্র করে তোলে।

আমরা অসীম সম্ভাবনার সমুদ্রে ভাসছি, কিন্তু অভিন্নতা আর রেফারেন্সের অভাব আমাদের আতঙ্কিত করে তোলে। তবুও প্রতিদিন স্বেচ্ছাচারিতার সাথে পথ বাছাই করাই জীবনের অলঙ্ঘ্য সত্য – আর এখানেই জীবনের ট্র্যাজিক-সুন্দর সৌন্দর্য নিহিত। প্যারাডক্সটি মনে করিয়ে দেয়: পছন্দের/সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা বাহ্যিক নয়, এসব আমরা নিজেরাই সৃষ্টি করি।

ছবি: Gemini 2.5 Flash

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ২:৫৫

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: খুব যুক্তি পুর্ন কথা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.