![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্পকার, ঔপন্যাসিক, স্ক্রিপ্ট রাইটার। শিক্ষানবিশ গবেষক ও চলচ্চিত্রকার।
মেয়েটার নাম শুনেই অবাক হয়েছিলাম, কিন্তু ওর পড়াশোনার বিস্তৃতি দেখে তাজ্জব বনে গেছি।
সে আমাকে দুইঘন্টা সময় দিয়েছিল। দুইঘন্টার মধ্যে এমন একটা বাংলা বই দেখাতে হবে, যা ওর পড়া হয় নি।
সুদীর্ঘ দুই ঘন্টায় আমি প্রায় দেড় হাজার বই দেখালাম। অবাক বিস্ময়ে আবিষ্কার করলাম, প্রতিটা বই ওর পড়া!
"চর্যাপদ?"
-পড়া হয়ে গেছে।
"পুতুলনাচের ইতিকথা?"
-পড়েছে।
"শ্রীকৃষ্ণকীত্তন?"
-পড়া শেষ।
"শব্দকল্পদ্রুম?"
-হা, বাল্যকালেই পড়েছে।
"শেষের কবিতা?"
-প্রতিটা লাইন মুখস্থ।
"গণদেবতা?"
-এখনো পড়ছে।
"ওমেগা পয়েন্ট?"
-খুবই পছন্দের বই।
"আরণ্যক?"
-অসাধারণ।
"যাবজ্জীবন?"
-মন্দ না।
"চিলেকোঠার সেপাই?"
-মাস্টারপিস।
"তিতাস একটি নদীর নাম?"
-পড়েছে। ছবিটাও দেখেছে।
"আনন্দমঠ?"
-দুর্দান্ত।
"গৃহদাহ?"
-পড়া হয়েছে।
"ইছামতী?"
-প্রায় মুখস্থ।
"সেইসময়?"
-পড়া শেষ।
"ওঙ্কার?"
-হু। খুবই ভালো লেগেছে।
গল্প উপন্যাসের নাম বলে আটকাতে পারছি না দেখে কবিতার দিকে ধাবিত হলাম। তাতেও লাভ হল না।
শাহ মুহাম্মদ সগীরের "ইউসুফ জুলেখা" হতে শুরু করে রকিবুল হাসান ইবনের "উপমানব।" সবই গিলে রেখেছে।
"দস্যু কেনারামের পালা?"
-প্রায় মুখস্থ।
"সোনালি কাবিন?"
-পুরোটাই মুখস্থ।
"অর্কেস্ট্রা?"
-পড়া হয়ে গেছে।
"একদিন, নষ্টদিন?"
-এই নামে কোন বই এখনো লেখা হয়। "একদিন, চিরদিন" নামে বুদ্ধদেব বসুর একটা কাব্যগ্রন্থ পড়েছি। আপনি বোধহয় ওর কথাই বলছেন।
কবিতার জারিজুরি শেষ। ইতিহাসের কিছু ডাকসাইটে বইয়ে নাম বললাম,
"প্রাগৈতিহাসিক পান্থজন?"
-পড়েছি।
"বাঙ্গালীর ইতিহাস, আদিপর্ব?"
- ওর জীবনে পড়া শ্রেষ্ঠ বইগুলির একটি।
"সোনারগাঁ হতে ঢাকা, প্রাকৃতজ ইতিকথা?"
-ভালো লেগেছে।
এইবার সত্যি সতিই মাথা আউলা হয়ে গেল। মেয়েটা বাংলাভূমিতে এসেছিল বই কিনতে। এমন একটা বই দেখাতে পারছি না, যা সে পড়ে নি। নিরুপায় হয়ে উল্টাপাল্টা বই দেখাতে লাগলাম,
"ভাষা সৌরভ?"
-হ্যা, এখনো মাঝেমধ্যে নেড়েচেড়ে দেখে।
"পরিবেশ পরিচিতি সমাজ?"
-স্কুলে পাঠ্য ছিল। পড়েছি।
"শূন্যপুরান?"
-পড়া হয়েছে।
"কৃত্তিবাসের রামায়ণ?"
-সংগ্রহে আছে। বহুবার পড়েছি।
"কবর কি পহেলি রাত?"
-উর্দু ভাল্লেনা। অনুবাদ পড়েছি।
"কামাসূত্র?"
-ফালতু বই। পড়ে দেখেছি।
"হেন্ডারসন দ্য রেইন কিং?"
-ইংরেজি পড়তে পারি না। তবে সৈয়দ শামসুল হকের অনুবাদ পড়েছি। শ্রাবণ রাজা।
"অনন্ত নক্ষত্র বীথি?"
-হ্যা। পড়া হয়ে গেছে।
"বসন্তকুমারী?"
-পড়েছি।
"দেবযান?"
- চারবার পড়েছি। পথিক দেবতা নামে একটা চরিত্র আছে, ওর প্রেমে পড়ে গেছি।
"কাঁদো নদী কাঁদো?"
-ভালো লেগেছে। আবার পড়তে হবে।
"সংশপ্তক?"
-বই পড়েছে। নাটকও দেখেছে। কানকাটা রমজান ওর প্রিয় চরিত্র!
"মেঘে ডাকা তারা?"
-এই নামে অনেকগুলি বই লেখা হয়েছে। একটাও ভালো লাগে নি। তবে ঋত্বিক ঘটকের "মেঘে ঢাকা তারা" নামে একটা মুভি দেখেছে। ওর জীবনে দেখা বেস্ট মুভিগুলার একটা!
আমি রণে ভঙ্গ দিলাম। বালিকা আমার ক্লান্ত বিধ্বস্ত মুখের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসল। বিদায়ের আগে জানতে চাইলাম,"এই অসাধ্য কাজটি তুমি কীভাবে সাধন করেছো?"
মেয়েটা বলল,"আপনারা হলেন পাঠক। বই পড়া আপনাদের নেশা। আর আমার জন্য ওটা পেশা। আমি বই পড়ি না। বইয়ের ভেতর হেটে বেড়াই। এইজন্য সকলেই আমাকে বলে পান্থদেবী। মা বলেন, উড়ন্তিকা। বাবা বলেন, চলন্তিকা। বন্ধুরা বলে,গুণবতী ডাকিনী।"
মনে মনে বললাম,"তুমি ডাকিনী কিংবা যোগিনী যাই হও, আমারে সঙ্গে নিয়ে যাও প্লিজ।"
মেয়েটা আমার মনের কথা বুঝতে পারল কিনা জানি না। যাবার সময় নিজে থেকেই আমার নাম্বার নিয়ে গেল। ওর নিজের নাম্বারটাও দিয়ে গেল। নরম গলায় বলল,"মাঝেমধ্যে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করতে চাই, রাগ করবেন না তো?"
"উহু।"
"একলা চলতে ভাল্লাগেনা। সঙ্গী হবেন, প্লিজ?"
উত্তর দিতে গিয়ে রীতিমতো কেঁপে উঠেছি। মাথাটা কিঞ্চিৎ আউলায়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
#চলন্তিকা_উপাখ্যান
© মুহম্মদ নিজাম। বাংলাভূমি
©somewhere in net ltd.