নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

____লেখাটা জীবন হয়ে গেছে। জীবনটা রণাঙ্গন হয়ে গেছে। রণাঙ্গনে পদ্ম ফুটানোর পায়তারা চলিতেছে। পদ্মবনে স্বাগতম হে প্রিয়, হে বন্ধু!

মুহম্মদ নিজাম

গল্পকার, ঔপন্যাসিক, স্ক্রিপ্ট রাইটার। শিক্ষানবিশ গবেষক ও চলচ্চিত্রকার।

মুহম্মদ নিজাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

তিন্নি কি- কুত্তি কি- প্রহসনী

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:২৯



___তিন্নি আত্মহত্যা করেছে, এই খবর পেয়ে আমার কান্না করা উচিত ছিল। কিন্তু আমি কাঁদতে পারি নি।

আমার মনে পড়ে গেল পুরনো কথা। তিন্নি প্রায়ই জানতে চাইত,'আমি চলে গেলে তুই কি করবি?'
'কিছুই করব না।'
'কান্না করবি না আমার কথা ভেবে?'
'না।'
'কেন?'
'তুই অনেক আগেই খরচের খাতায় নাম তুলে ফেলেছিস। তোকে নিয়ে কান্না করে লাভ কি?'

তিন্নি রাগ করত না। আহত চোখে তাকিয়ে থাকত আমার দিকে। মনে মনে হয়ত ভাবত, আমি পাষাণ। কিন্তু তিন্নির ভাবনাটা সত্যি ছিল না। আমি ওর জন্যে অনেক কেঁদেছি। গোপনে অনেক চোখের জল ফেলেছি। তিন্নি ছিল একজন রূপ উপজীবিনী। দেহ ভাঙিয়ে টাকা ইনকাম করত।

আশ্চর্য, আমার হাত কাঁপছে! লিখতে কষ্ট হচ্ছে। অথচ তিন্নি নিজেই বলেছিল, 'আমি মারা গেলে তুই সুন্দর একটা গল্প পাবি। লেখকদের জীবনে নানা জাতের মানুষের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। আমি তোর জীবনে একটা বিচিত্র অভিজ্ঞতা!'

তিন্নির সাথে আমার পরিচয় কলেজে পড়ার সময়। আমরা একই সেকশনে ছিলাম। আমি লিখতাম কবিতা, তিন্নি করত অভিনয়। মঞ্চ নাটক করত। টিভিসিতে সাইড ক্যারেক্টার পেত। ইচ্ছে ছিল একদিন খুব বড় স্টার হবে। তিন্নির আগুনের মতো রূপ ছিল। কিন্তু বুদ্ধি ততটা পাকা ছিল না। কেউ সামান্য একটু প্রশংসা করলেই গলে যেত।

মিডিয়া জগতে ব্রেইন ওয়াশ করার মত অনেক রকম থেরাপী আছে। সবচেয়ে কমন একটা থেরাপী হল,"সৌন্দর্যই শক্তি!" তিন্নিকে এই থেরাপী দিয়েই প্রলুব্ধ করা হয়েছিল।

প্রথম দিকে এই নিয়ে তিন্নির সাথে আমার খুব ঝগড়া হত। তিন্নি বলত,' সৌন্দর্যই শক্তি !'
আমি বলতাম,'ভুল চিন্তা।'
'তুই বিশ্বাস করিস না?'
'উহু।'
'চল তোকে প্রমাণ দিয়ে দেখাচ্ছি।'
'কিভাবে প্রমাণ দিবি?'
'আমরা দুজন একটা লোকাল বাসে উঠব। কন্ডাক্টর যখন ভাড়া নিতে আসে বলব টাকা নেই। তুইও বলবি, আমিও বলব।'
'তাতে কি হবে?'
'কন্ডাক্টর তোকে একটা রাম ধমক দিবে। কিন্তু আমাকে ধমক দিবে না। বরং আমার দিকে তাকিয়ে মধুর করে হেসে বলবে, ভাড়া লাগব না আফা--।'

তিন্নির কথা শোনে আমার খুব রাগ হত। করুণাও হত। করুণা হত কারণ আমি ওদের পরিবারের ভেতরের খবরটা জানতাম। তিন্নির বাবা ছিলেন সামান্য একজন সিকিউরিটি গার্ড। অল্পই বেতন পেতেন। কিন্তু মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে হঠাৎ একদিন একটা এক্সিডেন্ট হল। বাবা পঙ্গু হয়ে গেলেন। ছোট ছোট তিনটা ভাই বোনকে নিয়ে তিন্নি পড়ল অথৈ জলে। এই সময় সে পড়ালেখা বাদ দিয়ে পুরাদমে মিডিয়ায় নেমে গেল। বোকা একটা মেয়েকে একেবারে হাতের মুঠোয় পেয়ে গেল ওরা। ফলাফল যা কাম্য তাই হয়েছে।

কিন্তু এইসব হচ্ছে বাইরের খবর। এই জন্যে তিন্নি সুইসাইড করে নি। সে সুইসাইড করেছে অন্য করণে।

মিডিয়া পাড়ায় দীর্ঘ দিন ঘুরাঘুরি করেও কিছুতেই সে ভালো রোল পাচ্ছিল না। উপরন্তু বিভিন্ন ক্লাবে, ঘরোয়া পার্টিতে ডাক পড়ত দাদাবাবুদের আমোদ গতিশীল করতে। তিন্নিকে যেতে হত। না গেলে টাকা আসবে কোথা থেকে? টাকা না পেলে খাবে কি? ভাই বোনদের পড়ালেখা চলবে কীভাবে?

ততদিনে তিন্নি স্টার হবার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছে। কেবল একটা পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার দায়বদ্ধতা থেকে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছে।

না, হচ্ছে না। তিন্নিকে নিয়ে গল্প লিখার ক্ষমতা বিধাতা আমাকে দেয় নি। নিজের লিখা পড়ে নিজেরই হাসি পাচ্ছে। অথচ কি বিচিত্র খেলায়ই না নিয়তি এই মেয়েটাকে নিয়ে খেলল!

তিন্নির ছোট বোন মায়া ইদানীং পড়ালেখা শেষ করে একটা ভালো জব করছে। সে তিন্নিকে খুব ঘৃণা করত। তিন্নিকে একদিন 'বাজারে কুত্তি' বলে গালি দিয়েছে। তিন্নি নিজেই এই কথা আমাকে বলেছে। বিপন্ন স্বরে জানতে চেয়েছে,"আমি কি আসলেই একটা বাজারে কুত্তী? তুই আমাকে সান্ত্বনা দিস না প্লিজ, সত্যটা বল!"

কিছুই বলতে পারি নাই আমি। সত্য কিংবা সান্ত্বনার চেয়েও বড় কিছুর আশা নিয়ে এসেছিল হয়ত মেয়েটা। কিন্তু-- এক জীবনে, এক মানুষের সকল আশা পূরণ হয় না।

তিন্নির ছোট ভাই আশিক কলেজে পড়ে। আশিকের বন্ধুরা ইন্টারনেট থেকে কিছু ক্লিপ্স নামায়। সেখানে একটা মেয়ে দেখতে নাকি হুবুহু তিন্নির মতো। আড়ালে আশিকের বন্ধুরা এই নিয়ে হাসাহাসি করে।

পরশুদিন তিন্নি এসেছিল শেষবারের মতো আমার সাথে দেখা করতে।

'চলে যাচ্ছি নিজাম, ভালো থাকিস। এই জীবনে আর হয়ত দেখা হবে না। যদি অন্য একটা জীবন থাকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করব, যেন সেই জীবনেও তোর মত একটা বন্ধু পাই।'

আমি অবাক হয়ে জানতে চেয়েছিলাম, 'কোথায় যাবি?'

তিন্নি কোন জবাব দেয় নি। কাতর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষণ।

আমি চাইলেই তিন্নিকে ফেরাতে পারতাম। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাতে পারতাম। কিন্তু আমার ইচ্ছে হয় নি। কেন ইচ্ছে হয় নি, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে একটা জীবন কেটে যাবে।

কিছু কিছু মানুষের জীবন বড় বেশি আনন্দময়। কিছু কিছু মানুষে জীবন বড় কষ্টের ও গ্লানিময়।

© মুহম্মদ নিজাম। বাংলাভূমি

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৫৬

বিজন রয় বলেছেন: গল্পের নায়ক তিন্নিকে বাঁচাতে পারতো। কিন্তু মধ্যবিত্ত মন এখনো সত্যের মুখোমুখি হতে শেখেনি!

ঘটনা পুরানো হলেও উপস্থাপনা ভাল হয়েছে।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫২

মুহম্মদ নিজাম বলেছেন: নায়কের অক্ষমতাই নায়কের কান্না। অনেক অনেক ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা সুন্দর মন্তব্যের জন্য

২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:১৮

নীল আকাশ বলেছেন: শুভ অপরাহ্ন,
মন খারাপ করা এই লেখাটা খুবই চমৎকার হয়েছে। কাহিনী আমাকে মুগ্ধ করেছে। লেখার গতিশীলতাও যথেষ্ঠই ভালো হয়েছে। খুবই বাস্তব একটা ঘটনা, যা আমাদের চারপাশে অহরহই ঘটে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মিডিয়া জগতের সামাজিক অবক্ষয়ের এই নোংরা দিকটা তুলে ধরার জন্য।

তবে আমি আপনাকে বিনীত অনুরোধ করব নামকরন টা পরিবর্তন করুন। খুব ভালো কোন একটা নাম দিন। লেখাটা খুবই সুন্দর হয়েছে কিন্তু নাম করনটা লেখাটার সাথে মানাচ্ছে না.......।
তিন্নির হঠাৎ চলে যাওয়া বা কষ্টের অপর নাম জীবন, জীবন যেখানে যেমন বা সুন্দর কোন নাম ইত্যাদি........
ধন্যবাদ আর আপনার জন্য শুভ কামনা রইল!

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫৭

মুহম্মদ নিজাম বলেছেন: খুব গভীর একটা কান্না ও কষ্টের গল্প অল্প কথায় বলতে গিয়ে উপলব্ধি করলাম, গল্প হয়েছে বটে কিন্তু ভেতরের ক্ষরণ থামে নাই। তাই এই বিতিকিচ্ছিরি নামকরণ। নাম বদল করতে ইচ্ছে হচ্ছে না, তবে গল্পটা যেন নামের মতোই ধারালো হয় সেই চেষ্টা করব। অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা মূল্যবান মন্তব্যের জন্য

৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: এতবাত তিন্নি তিন্নি করার খুব দরকার ছিল না।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:০০

মুহম্মদ নিজাম বলেছেন: অবচেতনভাবেই নামটা বারবার চলে এসেছে। এডিট করার সময় বাদ দিয়ে গিয়েও পারলাম না। মায়া পড়ে গেছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা বিষয়টা ধরিয়ে দেবার জন্যে। পরের বার আরও বেশি সচেতন থাকব

৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৪০

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: @ বিজন রয়ের শুরেই আমাকেউ বলতে হয় গল্পের নায়ক তিন্নিকে বাঁচাতে পারতো। কিন্তু মধ্যবিত্ত মন এখনো সত্যের মুখোমুখি হতে শেখেনি! ভালো লেগেছে লেখাটি।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:০১

মুহম্মদ নিজাম বলেছেন: জ্বি, নায়কের সীমাবদ্ধতা আমাকেও পীড়া দিচ্ছে। গল্পটি ভালো লেগেছে জেনে প্রীত হলাম

৫| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৪৮

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: গল্পটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেছে। এমন তিক্ত একটা অভিজ্ঞতা আমারও আছে। জানিনা, মেয়েটা কই আছে! ক্যামন আছে। নাকি.....

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:০২

মুহম্মদ নিজাম বলেছেন: তিন্নিরা কেন জানি ভালো থাকে না, জীবন সবাইকে করুণা করে না, এইটাই কষ্ট

৬| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:২৪

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: গল্পটা খুব ভালো লাগল। প্রশ্নের উত্তরটা তো আমরা সবাই মোটামুটি জানি। বিজনদা বলে দিয়েছেন।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:০৪

মুহম্মদ নিজাম বলেছেন: জ্বি। এই উত্তরটা যদি আমাদের বাস্তবের নায়কেরা গ্রহণ করতো, তিন্নিদের বেঁচে থাকাটা সহজ হয়ে যেত

৭| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:০২

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: প্লট একটা গল্প হওয়ার যোগ্যতা পুরাই রাখে। বাহুল্যতা শুধুই নামকরণে। তবে গল্প যে ভাল লেগেছে তা বলতে বাধা নেই।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:০৬

মুহম্মদ নিজাম বলেছেন: গল্পটি খুব বড় প্লটে সাজিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে, আশাকরি নামকরণের বাহুল্যতাটুকু তখন খাপ খাইয়ে নেবে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.