![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্পকার, ঔপন্যাসিক, স্ক্রিপ্ট রাইটার। শিক্ষানবিশ গবেষক ও চলচ্চিত্রকার।
ইমদাদুল হক মিলন- বোধহয় বাংলাদেশের একমাত্র লেখক, যার বই কেনার জন্যে স্বয়ং হুমায়ুন আহমেদ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।
মিলন কিন্তু হুমায়ূন আহমেদকে চিনতে ভুল করেন নি। নিজে স্টল থেকে বেড়িয়ে এসে হুমায়ূন আহমেদকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন।
ইমদাদুল হক মিলন বোধহয় বাংলাদেশের একমাত্র লেখক, যিনি চরম দুঃসময়েও লেখালেখি করে জীবন ধারণের চেষ্টা করেছিলেন এবং সফলও হয়েছিলেন।
দুঃসময় বলছি, কেননা, সত্তুরের দশকে কোন একজন লেখকের বই ৪ থেকে ৫ শত কপি বিক্রি হলেই লেখক এবং প্রকাশক উভয়েই তুষ্ট গলায় বলতেন, খুব ভালো বিক্রি হয়েছে!
আজকাল আমাদের লেখক বন্ধুদের অনেকেই বলেন,
"ইমদাদুল হক মিলন তাঁর নিজের জীবদ্দশায় নিজের মৃত্যু দেখেছেন। মিলনের বস্তাপচা সস্তা রসগোল্লা কেউ খায় না!"
অথচ আমরা অনেকেই জানি না, মিলনের প্রথম উপন্যাস "যাবজ্জীবন" বাংলা একাডেমির "উত্তরাধিকার" থেকে যখন ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয় তার বয়স তখন মাত্র একুশ।
একুশ বছরের এক তরুণ তার প্রথম উপন্যাসে যে গভীর জীবন-বোধ ও ভাষাশৈলীর কারিশমা দেখিয়েছেন, তাতে সমকালীন পাঠক এবং সাহিত্যঘেষা মানুষজন বিস্ময়ে তব্ধা খেয়ে গিয়েছিলেন!
ইমদাদুল হক মিলনের দ্বিতীয় উপন্যাস "ও রাধা ও কৃষ্ণ" এখন অবধি এই শহরের যুবক-যুবতীর জীবনের সবচেয়ে স্মার্ট ও গতিশীল জীবনের আখ্যানগুলোর একটি!
বাংলাদেশে, বাংলা সাহিত্যকে জনপ্রিয় করার পেছনে যে-কজন সাহিত্যিকের নাম নিতে হয়, মিলন নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে অন্যতম। মিলনের কোন কোন বই ত্রিশ-চল্লিশ হাজার কপি অবধি বিক্রির রেকর্ড আছে!
ইমদাদুল হক মিলন বোধহয় বাংলাদেশের একমাত্র লেখক- যিনি এক মেলায় একইসঙ্গে পনেরটা-ষোলটা বই প্রকাশ করার হিম্মত দেখিয়েছেন। আখেরে যা হবার তাই হয়েছে। উপন্যাসের গুণগত মান, নামতে নামতে একেবারে তলানিতে নেমে গেছে!
এই কাজটা তিনি অবশ্যি সচেতনভাবেই করেছেন।
হুমায়ূন আহমেদ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, লেখকগণ আর পাঁচটা মানুষের মতোই - তুচ্ছ মানুষ। চাঁদের আলো ভক্ষণ করে জীবন ধারণের ক্ষমতা তাদের নেই। খাদ্য-খাবারের জন্য টাকা লাগে।
নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ইমদাদুল হক মিলন যখন লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন, তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ছিল একেবারেই তথৈবচ। শুধুমাত্র ক্ষুন্নিবৃত্তির তাগিদে কাঁচা যৌনতা আর সুরসুরি-মাখা বিষয় নিয়ে তিনি ডজন-ডজন উপন্যাস রচনা করেছেন- কারণ এই ধরণের উপন্যাস তখন খুব চলে! তিনবেলা খাদ্য-খাবারের যোগান হয়।
মিলনের "যাবজ্জীবন" টাইপ উপন্যাস যদি জনপ্রিয় হত তবে রাধা-কেষ্টর লীলা নিয়ে এতবেশি অখাদ্য প্রসব করার দরকার হত না।
কিন্তু আফসোস, বাংলাদেশের মেচিউরড এবং জীবন-ঘেষা উপন্যাসের পাঠক তখনও বেশি ছিল না, এখনও খুব বেশি একটা নেই। মিলনকে আমাদের পাঠক সমাজই টেনে-হিচড়ে নিচে নামিয়েছে... কিংবা নামতে বাধ্য করেছে!
এরফলে একটা বিচিত্র ঘটনার জন্ম হয়। মিলন তাঁর অল্পবয়সী পাঠকের জন্য সস্তা প্রেম ও যৌন সুরসুরানিতে ভরা গল্প লিখেছেন, আর নিজের বা লেখক সত্ত্বার দায়বদ্ধতা থেকে লিখেছেন, নিরন্নের কাল, পরাধীনতা, বাঁকা জল কিংবা নূরজাহানের মতো মাস্টারপিস কিছু উপন্যাস!
আমার তো প্রায়শই মনে হয়, ইমদাদুল হক মিলন বোধহয় বাংলাদেশের একমাত্র লেখক, যিনি নিজের জীবদ্দশায় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেও নেমে যেতে বাধ্য হয়েছেন এবং মৃত্যুর পর তিনি আবার এতই উচ্চতর আসনে উন্নিত হবেন যে, তার সমসাময়িক কেউ এতটা কল্পনাও করতে পারেন না!
"তাকেশি কায়েকো মেমোরিয়াল এশিয়ান রাইটার্স লেকচার সিরিজ" নামে জাপানে প্রতি বছর একটা অনুষ্ঠান হয়।
এশিয়ার দেশগুলো থেকে প্রতি বছর কোন এক দেশের একজন লেখককে তারা আমন্ত্রণ জানায় সেই অনুষ্ঠানে অংগ্রহণের জন্য।
জাপানের চারটি ইনটারন্যাশনাল সেন্টারে সেই লেখক তাঁর দেশের সাহিত্য এবং নিজের লেখা সম্পর্কে ৪টি বক্তৃতা দেন। ২০০৫ সালে জাপান ফাউন্ডেশন মুখ্যত "পরাধীনতা" এবং "নূরজাহান" উপন্যাসের জন্য ইমদাদুল হক মিলনকে নির্বাচিত করেছিলেন।
এই বক্তৃতার মধ্য দিয়ে লেখক বাংলাদেশের জন্য এক বিরল সম্মান বয়ে নিয়ে আসেন। বাংলা সাহিত্য নিয়ে বিশদ আলোচনার পর, নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে সেই বক্তৃতার শুরুতেই মিলন বলেন,
"আমি যদি আমার লেখালেখিকে দুটো ধারায় ভাগ করি, তাহলে একদিকে থাকবে কিছু পাঠকভোলানো রচনা। অন্য দিকে থাকবে আমার মূলধারার রচনাগুলো।"
ইমদাদুল হক মিলনের মূলধারার গল্প এবং উপন্যসাগুলির মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য:
- নিরন্নের কাল, তাহারা, বারো রকম মানুষ, গোপনন দুয়ার, দেশভাগের পর, জোয়ারের দিন, বাঁকা জল, জীবনযাত্রা, অধিবাস, সোনাদাস বাউলের কথা, ভূমিকা, এক দেশে, নদী উপাখ্যান, ভূমিপুত্র, যাবজ্জীবন, কালাকাল, লীলাদের কথা, পরাধীনতা, নূরজাহান ইত্যাদি!
নিরন্নের কাল নামে এক গল্পে মিলন দেখিয়েছেন,
একটি অল্প বয়সী অনাহারী মেয়ে তার শিশু ভাইকে নিয়ে পথে নেমেছে।
নিজের পেটের ক্ষুধা চেপে রেখে কিশোরী মেয়েটি তার ক্ষুধার্ত ভাইকে লোভনীয় সব খাদ্যের গল্প বলছে। ধোঁয়া উড়া ভাতের গল্প, সর্ষে ভাঁজা ইলিশের গল্প।
এই বোনটিকেই সামান্য চালের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ করে এক পাষণ্ড।
আঁচলে চাল নিয়ে রক্তাক্ত বোনটি যখন ফিরে আসে, ছোট ভাইটি চাল দেখে যতটা বিস্মিত হয়, তারচেয়ে বেশি বিস্মিত হয় রক্ত দেখে। মেয়েটির রক্তমাখা জামার দিকে তাকিয়ে ভাইটি কারণ জানতে চাইলে, বোনটি নির্মোহ গলায় বলে,
"ওসব কিচ্ছু নয়, পেট ভরে খেতে হলে রক্ত দিতে হয়।"
এই গল্প যতখানি না ঐ মেয়েটির গল্প, তারচেয়েও বেশি বোধহয় একজন ইমদাদুল হক মিলনের নিজের গল্প। একজন লেখকের গল্প।
উচ্চতর আদর্শ আর সুকুমার শিল্পের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়তি ওদের লেখক বানায়।
এরপর, খাদ্য-খাবারের আকাল নিয়ে আসে। এরপর শুধুমাত্র ক্ষুন্নিবৃত্তির তাগিদে নিজের উচ্চতর ক্ষমতা এবং আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে যেখানে-সেখানে তাকে ধর্ষিত হতে হয়।
এবং তা হাসি মুখে মেনেও নিতে হয়!
কেননা, আমরা খুব ভালো করেই জেনে গেছি... এই নিরন্নের তল্লাটে... পেট ভরে খেতে হলে আমাদের সবাইকেই রক্ত দিতে হয়!
২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫৭
মুহম্মদ নিজাম বলেছেন: ইমদাদুল হক মিলনের সস্তা লেখার পরিমাণ বেশি বলেই ভালো লেখাগুলি খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য। এইহন্যেই হতাশার পরিমাণটা বেশি বেশি
২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৩০
কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: যথার্থই বলেছেন-ফেবু আর ট্যাবুতে নিমজ্জিতদের বই পড়ার সময় কোথায়?
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:০০
মুহম্মদ নিজাম বলেছেন: এইটা দুঃখজনক হলেও সত্যি ! এইটাই কষ্ট
৩| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৩৬
ল বলেছেন: অনেক অনেক ভালো লিখেছেন।
অনেক ধন্যবাদ
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:০১
মুহম্মদ নিজাম বলেছেন: স্বাগতম ও ভালোবাসা জানবেন প্রিয়
৪| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৪৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: 'ওসব কিচ্ছু নয় - পেট ভরে খেতে হলে রক্ত দিতে হয়।' একটা ভয়াবহ সত্য উক্তি।
ইমদাদুল হক মিলনের দুর্দশাগ্রস্ত জীবনের একটা ভালো বর্ণনা দিয়েছেন। তবে, তার খুব বেশি লেখা আমার পড়া হয় নি, কারণ, যেগুলো পড়া শুরু করেছিলাম, খুব চটুল ও শস্তা বলে আর এগোতে পারি নি। 'নূরজাহান' যখন পড়া শুরু করি, তখন এর উপর ধারাবাহিক নাটক হচ্ছিল। গল্প ভালো।
গোটা পাঁচেক বইমেলায় আমি নিয়মিত যাতায়াত করেছি। তাঁর হাত থেকে বইও নিয়েছি- (২০০০-২০০৫), কিন্তু কখনো কোনো লাইন দেখি নি। হুমায়ূন আহমেদ মিলনের বই কেনার জন্য লাইনে দাঁড়াতে পারেন মিলনকে ভরকে দেয়ার জন্য, কিন্তু বই কেনার জন্য নয়। অবশ্য, এ গল্পটার সত্যতা নিয়ে আমি নিশ্চিত হতে পারছি না।
ইমদাদুল হক মিলন যাই হোন না কেন, আপনি দারুণ লিখেছেন।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:০৫
মুহম্মদ নিজাম বলেছেন: বয়সে ছোট হলেও হুমায়ূন আহমদের আগেই ইমদাদুল হক মিলন সাহিত্য জগতে নাম করে ফেলেছিলেন। হুমায়ুন আহমেদ এই ছেলেটির লেখার প্রতি আগ্রহী হয়েই লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও ভালোবাসা জানবেন
৫| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫১
প্রামানিক বলেছেন: আপনার যৌক্তিকতামূলক লেখা ভালো লাগল। ধন্যবাদ
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:০৮
মুহম্মদ নিজাম বলেছেন: স্বাগতম ও ভালোবাসা প্রিয়
৬| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি দুইবার পড়লাম।
খুব সুন্দর লিকেহছেন লেখক মিলন সম্পর্কে।
তার প্রচুর বই আমি পড়েছি। সবচেয়ে বড় কথা তার এবং আমার গ্রামের বাড়ি একই অঞ্চলে।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:১০
মুহম্মদ নিজাম বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানবেন স্যার
আপনার গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর অঞ্চলে এইটা জানতাম না, জেনে ভালো লাগল
৭| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫৬
আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: সুন্দর লেখা.....
জীবনটাই যুদ্ধ...
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:১২
মুহম্মদ নিজাম বলেছেন: থ্যাংকইউ
৮| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৪৮
সুমন কর বলেছেন: ভালো লিখেছেন। গুড পোস্ট।
+।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:১৩
মুহম্মদ নিজাম বলেছেন: ধন্যযোগ ভালোবাসা রইল
৯| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:১২
একজন অশিক্ষিত মানুষ বলেছেন: অসাধারন লিখেছেন।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:১৪
মুহম্মদ নিজাম বলেছেন: থ্যাংকইউ
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২৮
নাহিদ০৯ বলেছেন: এক নিঃস্বাসে পড়ে ফেললাম। এত সুন্দর করে লিখেছেন।
তারপরে বলবো ইমদাদুল হক মিলন স্যার এর লিখা নিয়ে আপনার নিজস্ব যে ধারনা প্রকাশ করেছেন তা অনেকটাই স্পষ্ট এবং যৌক্তিক বটে। আমিও উনার কিছু লিখা পড়ে আহত হয়েছি। এত শক্তিমান একটা লেখকের সস্তা লিখা পড়তে গিয়ে যে কোন পাঠক ই হোঁচট খেয়েছে বোধয়।