নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হচ্ছে আশরাফুল মাখলুকাত। সৃষ্টির সেরাজীব হিসেবে ধরণীতে কেন মানুষ তার আদর্শ গুনাবলী প্রদর্শন করতে পারে না সেটা ভাবার বিষয় । আল্লাহ তাওয়ালা ভালোবেশে দুনিয়ার তাঁর প্রতিনিধিত্ব করতে মানুষ সৃষ্টি করলেন কিন্তু মানুষ ফেরেস্তাদের আশংকা সত্য প্রমাণ করে ফেতনা-ফ্যাছাদ করে যাচ্ছে। এর মূলে রয়েছে ষড়রিপু। মানুষ সৃষ্টির শুরুতে অহংকারী শয়তান আদমকে সিজদা না করে আল্লাহর অভিশাপে শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রুতে রূপান্তরিত হয়। আল্লাহর নিকট থেকে কিছু ক্ষমতা নিয়ে শয়তান ছয়টি অস্ত্রদিয়ে মানুষকে ঘায়েল করে বিপথে পরিচালনা করে যাতে মানুষ তার আদর্শ গুনাবলী প্রদর্শন করতে না পারে। অর্থাৎ মানব সন্তান কে মানুষ হতে বাধা দেওয়া শয়তানের ছয়টি অস্ত্র হলো ষড়রিপু। ষড় মানে ছয় আর রিপু অর্থাৎ শত্রু বা মনের কুপ্রবৃত্তি। মানুষ হতে হলে এই ষড়রিপু বা মনের ছয় শত্রু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে এবং তাদের সম্পূর্ণ পরাজিত করে মানবীয় গুনাবলী ফুটিয়ে তুলতে হবে। আদর্শ মানুষ হতে হলে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে হবে। জিহাদ দুই প্রকার। জিহাদে আসগর বা ছোট জিহাদ যা ইসলামের প্রকাশ্য শত্রু দমনের জন্য করতে হয় আর জিহাদে আকবর বা বড় জিহাদ করতে হয় মনের কুপ্রবৃত্তি দমনের জন্য। অর্থাৎ মানুষের প্রকাশ্য শত্রু শয়তানের অস্ত্র থেকে নিজেদের হেফাজত রাখতে ষড়রিপু বা মনের কুপ্রবৃত্তি দমনে জিহাদে আকবর বা বড় জিহাদে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক।
যুদ্ধে জয়লাভের জন্য যেমন শত্রু সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা জরুরী তেমনি মানুষ হওয়ার লক্ষ্যে জিহাদ করার পূর্বে মনের শত্রু সম্পর্কে সম্যক ধারনা দরকা। ষড়রিপু বা মানুষের ছয়টি গোপন শত্রু হচ্ছে ১) কাম ২) ক্রোধ/রাগ ৩) লোভ ৪) মোহ ৫) মদ/অহংকার ও ৬) মাৎসর্য/হিংসা।
১)কামঃ কাম হচ্ছে নারী পুরুষের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত আকর্ষণ যা মানুষের সকল ভালোগুন ধ্বংস করে ফেলে। কামভাব নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মানুষ সঠিক পথে থাকতে পারে না। প্রয়োজনীয় শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য বিয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। মনটাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ধর্মীয় ও পারিবারিক বিধিনিষেধ মেনে চললে এই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। পর্দা প্রথা মেনে আমাদের হ্রদয় ও দৃষ্টি সংযত রাখলে এই অপরাধ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়। আমাদের সামনে দিয়ে যদি কেউ এক ঝাকা পাকা আম যা সুস্বাদু,দৃষ্টি নন্দন ও সুঘ্রাণযুক্ত নিয়ে যায় তবে কি আমরা তা থেকে কেড়ে খাই? তা না করে নিজের গাছের থেকে পেড়ে খাই বা সাধ্যের মধ্যে বাজার থেকে কিনে খাই। কামভাব জাগলেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় করতে হবে।
২)ক্রোধঃ ক্রোধ বা রাগ হচ্ছে হঠাৎ করে কারো কথা বা কাজে উত্তেজিত হওয়া বা কারো প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করা। রাগ মানুষের সকল নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, "তোমরা রাগান্বিত অবস্থায় কোন সিদ্ধান্ত নিবে না। তোমরা দাঁড়িয়ে রাগ হলে বসে পড়, বসে রাগ হলে শুয়ে পড়। রাগ না কমলে অযু করো"। রাগ হলে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়। তাই রেগে গিয়ে মন্দ কাজ করার সম্ভাবনা বেশি। কথায় আছে রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। আমাদের হারা যাবে না তাই রাগ নিয়ন্ত্রণ করে আদর্শ মানুষ হতে হবে।
৩)লোভঃ লোভ হচ্ছে কোন কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। লোভ মানুষকে ধ্বংস করে। তাই যার যা আছে তাতেই সন্তষ্ট থাকা উচিৎ। কথায় আছে অতি লোভে তাতী নষ্ট। লোভের তাড়নায় মানুষ ভুল পথে চলে এবং ফাঁদে আটকা পরে সব কিছুই হারায়। তাইতো বলা হয়, "লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু "। তাই সঠিকভাবে বেঁচে থাকতে এবং মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সকল ধরনের লোভ পরিহার করতে হবে।
৪)মোহঃ মোহ হচ্ছে কোন কিছুর সান্যিধ্যে যাওয়া বা কোন কিছুকে নিজের মতো পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। মোহ নেশার মতো সাময়িকভাবে কোন কিছুকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। যা দ্বারা নেশাগ্রস্ত হয় তা ধরা যায় কিন্তু যা দ্বারা মোহগ্রস্থ হয় তা ধরা যায় না। মোহ ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য মরীচিকার মতো আমাদের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে। তাই মন নিয়ন্ত্রণ করে মোহ থেকে মুক্ত হতে হবে।
৫)মদ/অহংকারঃ মদ বা দম্ভ বা অহংকার বোধ মানুষের মনটা নষ্ট করে ফেলে এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়। কাথায় আছে অহংকার পতনের মূল। তাই আমাদের মিথ্যা অহংকার করা যাবে না। এর জন্য আমাদের প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। জনৈক মনীষি বলেছেন," শিক্ষার স্তর তিনটি যখন কেউ প্রথম স্তরে প্রবেশ করে তখন সে অহংকারী হয়ে ওঠে, যখন সে দ্বিতীয় স্তরে প্রবেশ করে তখন বিনয়ী হয় আর যখন শিক্ষার তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করে তখন বুঝতে পারে জানার কোন শেষ নাই এবং সে সামান্যই জানতে পেরেছে"। তাই প্রকৃত মানুষ হতে হলে সু শিক্ষা গ্রহণের বিকল্প নাই।
৬)মাৎসর্য/হিংসাঃ মাৎসর্য বা হিংসা একটি নেতিবাচক মনোভাব যা আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে। অপরের ভালো সহ্য করতে না পারা বা পরশ্রীকাতরতা নিজের সৃজনশীলতা নষ্ট করে। হিংসা করে অপরের ক্ষতি করার চেষ্টা যা সকলের জন্য অশুভ। এ যেন নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গ করা। হিংসার আগুনে সকল ভালো কাজ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তাই হিংসা পরিহার করে নিজ কাজে মনোযোগ দেওয়াই মানুষের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।
অবশেষে বলা যায় যে মানুষের মতো মানুষ হতে হলে ষড়রিপু নিয়ন্ত্রণের কোন বিকল্প নেই। মনের কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করে জয়লাভ করলেই মানবীয় গুনাবলী প্রস্ফুটিত হবে সোনার মানুষের দেখা পাওয়া যাবে এই সোনার বাংলায়।
আল্লাহ আমাদের সবাই কে মানুষ হওয়ার তৌফিক দিন। আমিন।
আমু
©somewhere in net ltd.