নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ব পুরুষের ওই বসতভিটা হচ্ছে বাংলাদেশের খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগ গ্রাম। পিঠাভোগ এবং ঘাটভোগ ভৈরব তীরবর্তী প্রাচীন জনপদ। ভৈরব অববাহিকার স্রোতধারা ধরে যেসব জনপদ গড়ে ওঠে তার অন্যতম প্রাচীন জনপদ পিঠাভোগ-ঘাটভোগ। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় খানজাহান আলীর আগমনের প্রায় দুই শতাব্দী আগেই এখানে জনপদ গড়ে ওঠে। কুশারী বংশের ইতিহাসও বেশ বিস্তৃত। ইতিহাসবিদদের মতে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ যখন বাংলাদেশ ছেড়ে কলিকাতার জোঁড়াসাকোয় বসতি স্থাপন করেন। তখন সেখানকার অধিবাসিরা সম্মানের সাথে তাদেরকে ঠাকুর অভিহিত করতেন। সেই থেকেই রবীন্ত্রনাথের পরিবার/ কুশারীদের পদবী ঠাকুর হিসেবে পরিণত হয়।
খুলনা জেলায়ই আবার রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ী। খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি গ্রামে অবস্থিত একটি দেড়তলা পাকা বাড়ী ও সন্নিহিত ১ দশমিক ৪০ একর জায়গা জুড়ে রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ী অবস্থিত। ২০০৫ সালে দক্ষিণডিহি গ্রামের বাড়ীটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হয়।
এদিকে সতীশচন্দ্র মিত্র প্রণীত এতদাঞ্চলের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ‘যশোর-খুলনা ইতিহাসের ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে পয়োগ্রাম কসবা অধ্যায়ে বিশ্বকোষের পীরালী বিষয়ক অংশ এবং টি ডব্লিউ ফ্যাবেলের ‘দি টেগোর ফ্যামিলি’সহ বিভিন্ন গ্রন্থে বলা হয়েছে রবীন্দ্র পরিবারের পূর্ব পুরুষ পঞ্চানন কুশারী পৈত্রিক বাড়ীঘর ছেড়ে কোলকাতা চলে যান। উদ্যমী কুশারী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীতে চাকরি নেন। তিনি ফোর্ট উইলিয়ামে বসত গাড়েন। পঞ্চানন পুত্র জয়রাম ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গ নির্মাণের জন্য পৈত্রিক ভিটা দেন। তার পুত্র দুর্গনারায়ণ ও পৌত্র গোপীমোহন জমিদারী কিনে জোড়াসাঁকোতে বিখ্যাত ‘ঠাকুর এস্টেট’ পত্তন করেন। তবে কোনো কোনো ইতিহাসে বলা হয়ে থাকে রবীন্দ্র-পূর্ব পুরুষেরা প্রথমে যশোরের নরেন্দ্রপুরের বাসিন্দা ছিলেন। ইতিহাস বলছে, খ্রীষ্টীয় চতুর্দশ শতকে খলিফাতাবাদের প্রতিষ্ঠাতা তুর্কি বংশজাত হযরত খানজাহান (রহ.)-এর সময়ে পীরালী ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ভুক্ত রবীন্দ্র পরিবারের বিকাশ।
রবীন্দ্রনাথের বংশ ও শিকড় সম্পর্কে সুনীলের "সেই সময়" উপন্যাসে গল্প আছে মজার তবে গাজাখুড়ি নয়।রবীঠাকুরের পরিবার কলকাতার সবচেয়ে প্রাচীন বামুন পরিবার।তাদের পূর্বপুরুষদের বলা হত পীরালীর বামুন।কারন তাদের পরিবারের সাথে একজন মুসলমান পরগনাদারের নাম(যদিও সে আগে হিন্দু ছিল) যুক্ত আছে।
যশোরের সেনাপতি খান জাহান আলীর জনৈক হিন্দু কর্মচারীর(নাম জানা যায় নি) গভীর প্রনয় হয়েছিল এক মুসলিম নারীর সাথে।তাকে বিয়ে করায় কর্মচারীটির জাত যায় এবং সে মুসলীম হতে বাধ্য হয়।কর্মচারীটির জন্ম পশ্চীমবংগের নবদ্বীপের পিরল্যা গ্রামে ছিল বলে পরে তার মুসলামানী নাম হয় পীর আলী।যদিও মুসলমান হবার পর তার খাতা কলমে নাম ছিল মামুদ তাহির।তবু তিনি পীর আলী নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন(কারণ তখনকার দিনে বাংগালীদের নামের সাথে পদবীর বদলে গোত্র ও গ্রামের নাম যুক্ত থাকার রেওয়াজ ছিল)।এই পীর আলীকে খান জাহান আলী ভালবেসে "চেন্গুঠিয়া"নামে একটি পরগনা মুসলীম হওয়ার পুরস্কারসরূপ দান করেন।পরগনাদার হিসেবে তিনি বেশ খ্যাতি কুড়ান।
কামদেব ও জয়দেব নামে দুই দেওয়ান কাজ করত তার পরগনায়।তারা একদিন এক ভয়ানক রসিকতা করে বসল পীর আলীর সাথে।রোজার মাস।রোজাদার পীর আলীর হাতে ছিল ১টি গন্ধ লেবু,মাঝে মাঝে তিনি তা শুকছেন এবং সবার সাথে কথা বলছেন।এমন সময় জয়দেব ও কামদেবের মাঝে কেউ ১জন বলল,"উজির সাহেব,আপনার আজকের রোজা তো ভংগ হয়ে গেল।"
পীর আলী বিষয়টি জানতেন না।অবাক পীরকে তখন ব্যাখ্যা দেয়া হল ঘটনার,শাস্ত্রমতে,"ঘ্রাণেন অর্ধ ভোজনম্"মানে গন্ধেই আহার হয়।তাই রোজা হল না।
চালাক পীর আলী কামদেব ও জয়দেবকে জব্দ করার জন্য এক কৌশল নিলেন।১দিন পীর আলী দরবারে ভু হিন্দুকে নিমন্ত্রন করলেন।কথাবার্তার এক ফাকে ভৃত্যকে ইসারা করলেন।একটু পরই দরবার কখখে আনা হল কয়েকটি জলন্ত উনুন।উনুনের উপর কড়াইতে গরুরমাংস রান্না হচ্ছে।গরুর মাংসের গন্ধ পেয়ে অনেক হিন্দু নাকে কাপড় দিলেন,সভা ছেড়ে পালালেন,কিন্তু পীর আলী চেপে ধরলেন কামদেব আর জয়দেবকে।বললেন"তোমরা পালাচ্ছ কেন?শাস্ত্র মতে তোমাদের ও অর্ধ ভোজন হয়েছে।এবং সে অনুযায়ী তোমাদেরও জাত গ্যাছে।"
ধর্মান্তরিত হবার পরে তাদের নাম হল জামালউদ্দীন ও কামালউদ্দীন।কিন্তু ধর্মান্তরিত হবার পরও ততকালীন রকখনশীল ও কড়া হিন্দু সমাজের হাত থেকে তাদের আত্মীয় স্বজন কেউ নিস্তার পেল না।তারা মুসলমান হয়ে বাচলেও তাদের আত্মীয় স্বজনরা কেউ হল কোনঠাসা কেউ হল একঘরে।তাদেরকে কেউ পুরো বামুন বলত না,বলত পীরালীর বামুন।কামদেব আর জয়দেবের দুই ভাই রতিদেব ও সুখদেব সমাজের অত্যাচার সইতে না পেরে একজন করে গৃহত্যাগ আরেকজন টাকার জোরে সমাজে টিকে থাকলেও পীরালী অপবাদ ঘোচাতে পারল না।প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তারা বয়ে চলল এ অপবাদ।
সপ্তদশ শতকের গোড়ার দিকে এই বংশের ই দুই ভাই পন্চানন ও শুকদেব কাজের সন্ধানে আসে স্বগ্রাম ছেড়ে।ঘুরতে ঘুরতে তারা আসে গোবিন্দপুর খাড়িতে।সেখানে ছিল তখন কেবল কয়েকঘর জেলে,মালো কৈবর্তের বাস।পরিধানে পটবস্ত্র,মাথায় শিখা,অতিশয় গৌর বর্ন ও ললাটে চন্দন পরিহিত বামুন দেখে সেখানকার অধিবাসীরা এসে সাস্টান্গে প্রনাম করতে লাগল।গ্রামে বামুনদের আশ্রয় দেয়া পুন্যের কাজ।সেখানে তাদের ঠাই হয়ে গেল।তখন গ্রামের মানুষ ভক্তিভরে তাদের ডাকতো "ঠাকুর" বলে।
গোবিন্দপুর,সুতানটি ও কলকাতা নামে তিনটি গ্রাম জুড়ে ইংরেজরা তখন কেবল নতুন একটি শহরের পত্তন করেছে ।গোবিন্দপুর খাড়ি দিয়ে জাহাজ চলাচলের জন্য এটিকে কেটে পশস্ত করা হচ্ছে।গ্রামের লোকদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য সাহেবরা যখন আসে তখন গ্রামের লোকেরা তাদের সাথে কথা বলার সাহস না পেয়ে এগিয়ে দেয় তাদের "ঠাকুর"দের।সাহেবরা সঠিক উচ্চারণ করতে পারে না,বলে 'টেগোর'সেই থেকে ঘুচল তাদের বংশীয় অপবাদ ''পীরালীর বামুন" ।সেই থেকে পরিচিত হল তারা ঠাকুর নামে।এভাবেই শুরু।পরবর্তীতে ইংরেজদের সাথে যোগাযোগ ও কর্ম দখখতার সুবাদে প্রজন্মান্তর ধরে ঠাকুর পরিবার হয়ে গেল শ্রেস্ঠ ধনী।
১৬ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৮
রবিন.হুড বলেছেন: আমিও সত্যিটা জানার চেষ্টা করছি।
২| ১৬ ই জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২২
জটিল ভাই বলেছেন:
সুলিখনী। তা কেমন আছেন প্রিয় ভাই?
১৮ ই জুলাই, ২০২৪ সকাল ১১:৫১
রবিন.হুড বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ । আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন? পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। আমি আসলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশের পূর্ব ইতিহাস জানতে গিয়ে এই টুকু জেনেছি। সত্যমিথ্যা যাচাই করার জন্য আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি।
৩| ১৮ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১২:০৬
রবিন.হুড বলেছেন: রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের পূর্ব পুরুষ এবং আবেদ চৌধুরীর পূর্ব পুরুষ নাকি একই।
রামানন্দ এর চার ছেলে----
কামদেব- কামাল উদ্দিন চৌধুরী-----------------------আবেদ চৌধুরী
জয়দেব- জামাল উদ্দিন চৌধুরী
শুকদেব-
মহেশ্বর/পঞ্চনান/---জয়রাম----------------------------রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
পলাশীর যুদ্ধে বাংলার নবাব সিরাজ উদ দৌলাকে পরাজিত করে ব্রিটিশরা ক্ষমতা দখলের পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ব পুরুষ ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গের ক্ষতিগ্রস্থ হিসেবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী থেকে মোটা অংকের ক্ষতিপূরণ পেয়ে লবনের ব্যবসা করে পরবর্তীতে জমিদার হয়।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৮
শেরজা তপন বলেছেন: অনেকদিন বাদে আসলেন। ঘটনা কতটুকু সত্যি বলে আপনার নিজের মনে হয়?